![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার এক জোড়া গোল্ডফিশের স্বপ্ন ছিল।
যখন মাত্র কিশোরী বয়স, তখন কোনও এক টিভি নাটকে দেখেছিলাম – নায়ক নায়িকাকে তার জন্মদিনে এক জোড়া গোল্ড ফিশ উপহার দিচ্ছে । সেই তখন থেকে আমার মধ্যে এক জোড়া গোল্ডফিশের স্বপ্ন বাসা বাঁধতে থাকে......
ধীরে ধীরে স্কুল পেরিয়ে কলেজ, কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হলাম। এতদিনে আমি ততটা বড় হয়ে গেছি যতটা বড় হলে বাসার অনুমতি ছাড়াই নিজের পছন্দের কিছু ছোটখাট জিনিসপত্র কিনতে পারি। এখানে বলে রাখা ভাল যে কলেজ পর্যন্ত কখনই খুব একটা হাত-খরচ আমাকে দেয়া হতোনা। সুতরাং, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আমি সুযোগ বুঝে আমার পছন্দের ২/১ টা জিনিস কিনতে লাগলাম। যদিও সেগুলোও আমার হোস্টেল এর রুম এর বাহিরে বের হতনা। এমনি করে আমার একান্ত আবাসে জমতে লাগল বিভিন্ন শো-পিস, প্রিয় বই, রবি ঠাকুরের মাটির মূর্তি, কাগজের ফুল, মোমদানি-এমনি আরও কত কি! জানালার পাশে ঠাই পেল সবুজ মানিপ্ল্যান্ট আর খেলনা বিড়াল ।
এসবের ভিড়ে কিন্তু আমার গোল্ডফিশের স্বপ্ন হারিয়ে যায়নি। আমার একান্ত আবাসে কেন এক জোড়া গোল্ডফিশ কে জায়গা করে দিতে পারিনি, তার কারন কিন্তু মোটেও অর্থনৈতিক নয়।
আমি ছোট বেলা থেকেই এক জোড়া গোল্ডফিশের মালিকানা চেয়েছি সত্যি কিন্তু নিজে কিনে নয়। আমি চেয়েছি উপহার হিসেবে। যে উপহার টি পাবো আমার নায়কের কাছ থেকে। যে ভালবেসে গল্পের রাজকুমারের মত সমুদ্রের ঝিনুকের বুক থেকে মুক্তো নয়, শহরের কোনও দোকান থেকে এক জোড়া গোল্ডফিশ উপহার দেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সে আমাকে শহরের দামী দামী রেস্তোরা চিনিয়েছে, মেটালিকা এবং ওয়েস্টলাইফ এর পার্থক্য বুঝিয়েছে, প্রোগ্রেসিভ হতে শিখিয়েছে, প্লেটোনিক এবং শেক্সপিঁয়েরিয়ান ভালবাসা বুঝিয়েছে।
আমার একান্ত আবাসে আবারও জমতে থাকে দামী দামী উপহার, পারফিউম, দামী দামী ব্র্যান্ডের ড্রেস, নিত্য-নতুন শো-পিস, বিশ্বের নামী-দামী ব্যান্ডের সিডি, বিখ্যাত সিনেমার ডিভিডি আরও কত কি! চকলেট যেন ফুরুতেই চাইতনা রুম থেকে। হোস্টেলে ফিরতে প্রায়ই আমার রাত ১০ টা/ ১১ টা বেজে যেত। খুব সুখী তখন আমি। তারপর ও কোথায় যেন একটা শুন্যতা!
আমার গোল্ডফিশের স্বপ্ন তখনও বিদ্যমান।
কিছুদিন ধরে আমার ভালোবাসার মানুষটি আমাকে কেন যেন এড়িয়ে চলছে। আগে যেখানে একবার রিং হলেই ফোন রিসিভ করতো, সেখানে এখন কেন যেন হাজারবার রিং হলেও ফোন রিসিভ করেনা। দিনের মধ্যে আগে যেখানে কম করে হলেও দশটা এসএমএস পাঠাতো, সেখানে এখন দশ দিনেও একটা এসএমএস নাই।
এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পরে এক দিন আমার প্রবল কান্নাকাটির শেষে সে আসে। সেদিন অনেক রাত অব্দি তার হাত ধরে বসে থেকে মনে হয় এ ক’দিন তার বোধ হয় অনেক সমস্যা ছিল। এই ভেবে আমি আবার আবেগাক্রান্ত হয়ে যাই। সেই আবেগঘন মুহূর্তে সে কিছু আবদার করে বসে। সেই মুহূর্তে ওই আবদারগুলো আমার কাছে ছিল অকল্পনীয় এবং পাপ-সমিচীন। আমি রাখতে পারিনা আবদারগুলো।
পরেরদিন তার আমাকে হোস্টেল থেকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। আমি নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে তার জন্য অনেক অপেক্ষা করলেও সে আসেনা। তিন দিন পর তার ফোন আসে। সে জানাতে চায় যে সে আমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চায়না। কারন, তার মতে আমাকে নিয়ে তার সমাজে চলা যায়না। আমাকে এতদিন ধরে প্লেটোনিক এবং শেক্সপিঁয়েরিয়ান ভালবাসা কিংবা প্রোগ্রেসিভ হতে শেখানো কোনও কাজেই দেয়নি তার।
...........আজ শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মময় জীবনের দ্বারগোঁরায় আমি। এখন আমি খানিকটা মার্কসবাদী,প্লেটোনিক এবং শেক্সপিঁয়েরিয়ান ভালবাসা বুঝতে আর কাঠখড় পুড়াতে হয়না। এখন আমি বেশ প্রোগ্রেসিভও বটে! আর এসবের কারনবশত এখন আমি আর গোল্ডফিশ খুজিনা। এতদিনে আমি বুঝে গিয়েছি যে সবার কপালে গোল্ডফিশ জুটেনা।
আর এভাবেই আমার গোল্ডফিশের স্বপ্ন হারিয়ে গেল।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯
ঋতো আহমেদ বলেছেন: বেশ সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন। ভাল লাগল। শুভ কামনা