নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উড়তে ভালো লাগে,মেঘের সাথে লুকোচুরি ভাল লাগে। ভাল লাগে এক আকাশ তারা কে সাক্ষী রেখে নাবিকের মত পথ খুঁজে নিতে। চোখ বন্ধ করে একটা নীল সমুদ্র আকঁতে ভাল লাগে। আর ভাল লাগে \"তুমি\" তে হারিয়ে যেতে ।

রঙ্গীন ঘুড়ি

ডাক্তারী বিদ্যায় অধ্যনয়রত শিক্ষানবিস একজন। ছোট বেলা থেকেই সৃজনশীল কাজ ভাল লাগে। বাবার অনুপ্রেরণায় প্রথম লেখালেখির শুরু। ভাল লাগে ছবি তোলতে। বেশ কয়েকবার ছবি প্রদর্শিত ও হয়। এইতো লেখালেখি,ছবি,পড়াশোনা,মানব সেবার ইচ্ছা। সব মিলিয়েই আমি।

রঙ্গীন ঘুড়ি › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিচ্ছবি

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১০

সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি।থামার কোন নাম গন্ধও নেই। কাক ভেজা মানুষ গুলো নিতান্ত বাস্তবতার খাতিরে ঘরের বাইরে। দু'মুঠো খাবারের আশায় বৃদ্ধ রহিম মিয়া বের হয়েছেন নিজের জমানো টাকায় কেনা রিকশা নিয়ে । অন্যদিনের মত আজ খ্যাপ মারা যাবে না এত। তবে লাভ ও আছে। কম পরিশ্রমে মোটামুটি ভালই খ্যাপ মারা যাবে ।

গুলিস্থানের মোড়ে মাথায় একটা পলিথিন মুড়ে দাঁড়িয়ে আছেন রহিম মিয়া। আরো একটা বিড়ি বের করে ধরাতে ধরাতে একটু উদাস হয়ে গেলেন। বেশি কিছু না শুধু একটু ভালভাবে বাঁচার স্বপ্ন। অনেক দিন হলো আলতা বানু কে কিছু দেয়া হয় না। আলতা বানুও কিছু চায় না আগের মত। হয়তো স্বামীর দুরাবস্তায় এসব আবদার বিলাসিতা। বিলাসিতা করা গরীবের ধর্ম না । ওদের মত মানুষদের মাথা উঁচু করে আকাশ দেখাও অপরাধ। মাথা থাকবে নিচে মাটির দিকে এটাই যেন অলিখিত নিয়ম।

নাহ। আজ রাতে ফেরার সময় আলতা বানুর জন্য কিছু নিয়ে যাবে। বয়স হয়েছে শরীরের কিন্তু মন তো আগের মতই।

হঠাৎ পেছন থেকে ডাক আসে "চাচা মিয়া,যাবেন নাকি? "
একটু ঘুরে তাকিয়ে মাথা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নেয় রহিম মিয়া। মোটামুটি বড় লোকের মেয়েই হবে মনে হল।

"কই যাইবেন? "
"শাহবাগ যাব চাচা। যাবেন?"
"আশি ট্যাহা"
"চাচা,এত বেশি কেন চাচ্ছেন? একটু বৃষ্টি হলো বলে এত চাওয়া কি ঠিক? "
রহিম মিয়ার মনে হল কাজটা সে ঠিক করে নাই। একটু বেশিই বলে ফেলেছে। যাই হোক মেয়েটি রিকশায় উঠলো আশি টাকা দিয়েই। রিকশা চলছে । রহিম মিয়া ভিজে চুপসে গেছেন একেবারে। হঠাৎ ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে মেয়েটি রহিম মিয়ার মাথায় ধরলো।

রহিম মিয়া অবাক হয়ে একবার পিছনে তাকালেন। দরিদ্র শ্রেনীর মানুষদের অবাক হতে নেই। অনেকদিন সে নিজেও অবাক হয় না। আজ এই মেয়েটি তাকে অবাক করে দিল। চোখ থেকে দু'ফোটা পানি বৃষ্টিতে মিশে গেল। নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল।

এই বয়সী একটা মেয়ে ছিল রহিম মিয়ার। সিনেমার নায়িকার নামে নাম রেখেছিল "পূর্ণিমা"। বছর তিনেক আগে বিয়ে হয়ে যায়। ছেলে একটা ওয়ার্কশপে কাজ করে। ভালই চলছিল প্রথম কয়েক মাস। তারপর থেকে শুরু হল অত্যাচার যৌতুকের টাকার জন্য। মেয়ে কিচ্ছু বলে নাই বাবা কে। নীরবে সহ্য করে গেছে সব। শেষমেষ সহ্য করতে না পেরে মাঝে মাঝেই বলত রহিম মিয়া কে। রহিম মিয়া সময় চেয়েছিল একটু। গত বর্ষায় এমন ই কোন একদিন সকালে খবর আসে মেয়ে নাকি বিষ বেদনায় মারা যাচ্ছে তার। তাড়াতাড়ি ছুটে যেয়েও আদরের সেই প্রিয় মুখ আর চোখ মেলে তাকায় নি সেদিন। বোকার মত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। গলা দিয়ে কান্নার আওয়াজ বের হচ্ছিল না তার। চোখ ছিল শূণ্য ।

আজ অনেকদিন পর মেয়ের কথা মনে পরে গেল রহিম মিয়ার। বুকের ভেতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছিল তার।

"চাচা,বামে ওই নীল গেইটের কাছে থামেন।"
"আইচ্ছা "
মেয়েটি একশো টাকার নোট এগিয়ে দিল। রহিম মিয়া টাকা নেয় নি। মেয়ের কাছ থেকে কি টাকা নেয়া যায়? এই মেয়ে যেন তার সেই আদরের মেয়েই, সেই হাসি মুখ। মেয়েটি জোড় করে তাও একশো টাকার নোট পকেটে ঢুকিয়ে দেয়।

রাত ১০ টা বাজে। রহিম মিয়া এক প্যাকেট চুরি, আলতা নিয়ে বাড়ি ফিরছে আলতা বানুর জন্য। তার মনে হয় আলতা জিনিসটা আলতা বানুর জন্যই বানানো। অনেকদিন পর তৃপ্তি লাগলো তার। আলতা বানুর মধ্যেই মেয়েকে খোঁজে পাচ্ছেন তিনি । এক জীবনের ভিতর অন্য জীবনের প্রতিচ্ছবি ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯

বাংলার ফেসবুক বলেছেন: সুন্দর ছোট গল্পো। চালিয়ে যান। তবে বৃষ্টির সময় লেখাটা আরো সুন্দর হতো।

২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৮

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: ভাল লাগল। ও রকম যদি হত সবাই তাহলে গরিব তো আর থাকতোই না। ভাল লেগেছে আমার অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.