![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডাক্তারী বিদ্যায় অধ্যনয়রত শিক্ষানবিস একজন। ছোট বেলা থেকেই সৃজনশীল কাজ ভাল লাগে। বাবার অনুপ্রেরণায় প্রথম লেখালেখির শুরু। ভাল লাগে ছবি তোলতে। বেশ কয়েকবার ছবি প্রদর্শিত ও হয়। এইতো লেখালেখি,ছবি,পড়াশোনা,মানব সেবার ইচ্ছা। সব মিলিয়েই আমি।
কয়েক টুকরা দলা পাকানো কাগজ পড়ে আছে মেঝেতে। আজ কেন জানি সবুর সাহেব লিখতে পারছেন না। অনেকক্ষণ চিন্তা করে একটা গল্পের প্লট তৈরি করেন। কিন্তু মাঝপথে এসে কেমন জানি খাপ ছাড়া হয়ে যায়। যেভাবে মিল করেছিলেন সেভাবে মিলাতে পারছেন না কোনভাবেই। মাথার ভিতরটা ঝিম ধরে আসে কেন জানি। আর আগায় না গল্প।
আগামী বইমেলার আগে যেভাবেই হোক গল্পটা শেষ করতেই হবে। প্রকাশক আমজাদ হোসেন খুব কাছের বন্ধু সবুর সাহেবের। বন্ধুর কথা ফেলার কোন উপায় নেই। এই তো সেদিনও শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে লেখকদের আড্ডায় আমজাদ তাকে "গল্পের জাহাজ" হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। তার অনেক গল্প মানুষকে কাঁদিয়েছে । ট্রেজেডি তার মত করে খুব কম মানুষই লিখতে পারেন। কষ্টটা একদম শিল্পীর তুলির আঁচড়ের মত ফুটিয়ে তোলেন। অথচ আজ কেন জানি তার মাথায় গল্পের প্লটই আসছে না কিংবা আসলেও কাজে লাগাতে পারছেন না।
নাহ। একটু ব্রেক দরকার। সবুর সাহেব উঠে একটু ঘড়ির দিকে তাকালেন। রাত আড়াইটা বাজে। লেখালেখির কাজটা রাত ছাড়া জমে না তার কাছে। কিচেনে গিয়ে এক পাতিল পানি বসালেন চা করার জন্য। বাসার কাজের ছেলেটা মায়ের অসুস্থতার কথা বলে বাড়ি গেল গত পড়শু। আজ ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ফেরে নি। হয়ত মাকে দেখে আর ফেরার ইচ্ছা করে নি। সবুর সাহেব ধরেই নিয়েছেন ছেলেটি আর আসবে না। তিনি গ্রামে লোকজনদের বলে দিয়েছেন মানুষ পাঠানোর জন্য। বিয়ে করেন নি তিনি। একাকী মানুষ তাই খাওয়া দাওয়ার ঝামেলা কম।
পনের মিনিটে চা বানিয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে তিনি বেড রুমের দিকে যাচ্ছিলেন। নাহ কোন সাউন্ড কিংবা মাঝরাতের ভূতুড়ে কোন অভিজ্ঞতা হয় নি তার। ব্যাপার কোন সিনেমার পর্দাতেই মানায়। বাস্তব জীবনে না।
বারান্দায় বসে আছেন এখন সবুর সাহেব। নতুন কোন গল্পের খোঁজ করছিলেন। হঠাৎ মেয়েলি একটা কন্ঠ স্পষ্ট গলায় বলে উঠল -
-আমি কি আপনার পাশে একটু বসতে পারি?
সবুর সাহেব চমকে গেলেন। অনেকটা ভয়ে ভয়ে বলে উঠলেন
-আআআপনি কে??
-আমি আপনার সৃষ্টি লেখক সাহেব। আমি নীলিমা। আপনি এখন যার কথা ভাবছেন।
-নাহ। এ অসম্ভব। সব আমার মনের ভুল। তুমি কেও না। তুমি চলে যাও।
-যদি পারেন আমাকে বের করে দিন না আপনার মাথা থেকে। পারবেন??
-অবশ্যই। অবশ্যই। নীলিমা বলে কিছু নেই। সব ভুল। সব মিথ্যা ।
-আপনি আমাকে চিনেন না? আমার দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখুন তো আমাকে। চেনা যায় কিনা।
-নাহ। এসব কিছু না। সবুর তুমি স্বপ্ন দেখছো। স্বপ্ন এটা।
-হাহাহা। এটা স্বপ্ন না। এই যে আমি।ছুঁয়ে দেখুন আমাকে।
-তোমাকে ছোঁব না আমি।
-আচ্ছা ছুঁতে হবে না। বলুন তো আমাকে চিনেন কিনা।
-নাহ। চিনি না। কে তুমি,কই থাকো। কিছুই জানার দরকার নেই। তুমি বিদেয় হও প্লিজ। আমি আর নিতে পারছি না।
-আমি সেই নীলিমা। যাকে গৌরিপুর স্টেশনে শেষ দেখা গিয়েছিল। কিছু মনে পড়লো স্যার?
-আমার কিছু মনে নেই। কিচ্ছু না। তুমি যাও। প্লিজ....
-স্যার, সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল স্যার। কিন্তু জানেন আমি না আর নিতে পারছিলাম না।
-আমিও আর নিতে পারছি না।
-স্যার, শেষবার যখন পানি চেয়েছিলাম আপনি আপনার ব্যাগ থেকে বের করে পানি দিয়েছিলেন। মনে পড়ে স্যার?
-কি চাও তুমি??
-স্যার ট্রেনে কাটা পড়া দু খন্ড দু দিকে ছিটকে পড়েছিল। স্যার জানেন,ট্রেনে কাটা পড়া মৃত্যু খুব ভয়ংকর । কিছু বুঝে উঠার আগেই শরীরের অন্য অংশ আলাদা হয়ে যায়। কি আজব না স্যার?
-আমার কাছে কি চাও তুমি? তুমি বিদায় হও। আমার খুব মাথা ধরেছে। আমি আর পারছি না।
-স্যার,আমার চোখ দু'টো খোলা ছিল নাকি বন্ধ ছিল?? স্যার... কেউ কি আমার খোঁজ নিতে এসেছিল?
-আমি জানি না।
-আপনি জানেন স্যার। আপনি অবশ্যই জানেন।
কিছুক্ষণ পর.....
-নীলিমা,তুমি আছো??
-জ্বী স্যার,বলুন ।
-আমি ভুল করেছি নীলিমা। আমাকে ক্ষমা করে দাও। প্লিজ।
-স্যার,আমার হাতটা সেদিন কেন ছেড়ে দিয়েছিলেন??
-এ হয় না নীলিমা। এ সমাজ নিষিদ্ধ প্রেম মেনে নেয় না।
-তাই বলে আমাকে মেরে ফেললেন স্যার?
-আমি ইচ্ছা করে করিনি। বিশ্বাস করো।
-একটা স্কুল পড়ুয়া মেয়ে আপনাকে ভালবেসেছিল। আপনি তখন ভার্সিটির লেকচারার । আপনার হাত ধরে বাঁচতে চেয়েছিল। আর আপনি?? মেরেই ফেললেন?
-নীলিমা। প্লিজ তুমি যাও। আমি কিছু করি নি। প্লিজ যাও।
-নাহ। এতো সহজে আপনাকে ছাড়বো না আমি। আমার সব উত্তর চাই। এক এক করে প্রতিটা শব্দ শুনতে চাই।
-আমাকে ক্ষমা কর নীলিমা। ঐ রাতে আমাদের মাঝে যা হয়েছিল তা নিতান্তই আবেগের বশে।
-হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন সবুর সাহেব। আবেগের বসেই সব। আপনাদের কাছে তা ফ্যান্টাসি ছাড়া কিছুই না।
-আমাকে মাফ করে দাও নীলিমা।
-মাফ?? কোন দিনও না। কাটা দেহটা সেদিন থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রতিশোধের নেশায়।
-প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও। প্লিজ।
-তোকে ছাড়বো না। তোকে ছাড়লে অন্যায় হবে। পাপ হবে আমাদের মত মেয়ের।
-কি করছো এসব। প্লিজ আর না। প্লিজ। পড়ে যাব আমি। প্লিজ।
-হা হা হা হা। আজ আমার মুক্তি। আজ আমার মুক্তি হবে। আমি স্বাধীন হবো আজ।
হঠাৎ তীব্র চিৎকার।
পরদিন সকালে লেখকের থেতলে যাওয়া মৃত দেহ পাঠানো হল মেডিকেলের মর্গে। রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয় "Psychotic Disorder- - তীব্র হ্যালোসিনেশন এবং ডিল্যুশান। "
২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪০
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চতুষ্কোন ছবিটার কথা মনে পড়ে গেল| ওখানেও এমন একটা ঘটনা ছিল|
ভাল| আরেকটু সাস্পেন্স দেয়া যেত
৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৪
রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: ধন্যবাদ রাহুল চক্রবর্তী
৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৬
রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: আর একটু চেষ্টা করলে সাসপেন্স দেয়া যেত অবশ্য। ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৬
রাহুল চক্রবর্তী বলেছেন: ভালো লিখেছেন!