![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডাক্তারী বিদ্যায় অধ্যনয়রত শিক্ষানবিস একজন। ছোট বেলা থেকেই সৃজনশীল কাজ ভাল লাগে। বাবার অনুপ্রেরণায় প্রথম লেখালেখির শুরু। ভাল লাগে ছবি তোলতে। বেশ কয়েকবার ছবি প্রদর্শিত ও হয়। এইতো লেখালেখি,ছবি,পড়াশোনা,মানব সেবার ইচ্ছা। সব মিলিয়েই আমি।
_______________________________
ঢং ঢং .... এলার্মের শব্দ। সকাল ৬:৪৫ মিনিট।
ঘুম থেকে উঠে চশমাটা চোখে দিতে দিতে ঘড়ির দিকে তাকালেন হাসান সাহেব। প্রতিদিনের মত বের হয়েছেন প্রাত:ভ্রমণে।এত বয়স হয়ে গেল কিন্তু যুবক বয়সের অভ্যাসটা রয়ে গেছে আজও। দুই ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলে দুইটা দেশের বাইরেই স্যাটেল্ড আর মেয়েটারও বিয়ে হয়ে গেল বেশ কয়েক বছর আগেই।ওদের মা মারা গেছেন আজ ১৫ বছর হলো।
একা পড়ে রয়েছেন বিশাল বাড়িতে।হয়ত স্মৃতিগুলো আজও নি:শ্বাস নিচ্ছে। মোটা ফ্রেমের চশমাটার গ্লাসে মাঝে মাঝে বাষ্প জমে। হয়ত বয়সের দোষেই কিনা রাতগুলো অনেক দীর্ঘ মনে হয়। স্মৃতি শক্তিও খানিকটা কমে গেছে।
নিয়ম করে ব্যায়াম টা করে নিচ্ছেন পার্কে। হঠাৎ করেই চোখ আটকে গেল একজোড়া চোখের উপর। বুকের ভিতরটা হালকা কেঁপে উঠলো।
ধীরে পায়ে এগিয়ে গেলেন তিনি। নাহ,সেই পরিচিত চোখ,সেই পরিচিত চাহুনি।
-এক্সকিউজ মি। আআপনি কি আফরোজা খানম?
-জ্বী..আপনি?
-বকুলতলার আফরোজা??
-জ্বী একসময় ছিলাম। আপনি?
-আমাকে আপনি চিনবেন না। আমি হাসানুজ্জামান। আপনাদের বকুল তলার বাসার ৩/৪ বাসা পড়েই থাকতাম।
-সে তো অনেকদিন আগের কথা। কত হবে?? ৩৫/৪০ বছর তো হবেই। তাই না?
-হুম। আপনারা পরে কোথায় চলে গিয়েছিলেন?? দেশ স্বাধীনের ১মাস আগে?
-গ্রামের বাড়িতে।আব্বা,বুবু,আম্মা সেইফ ভাবে নি। আচ্ছা একটা প্রশ্ন ছিলো? আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে? চেহারা পরিবর্তন হয়েছে,গায়ের চামড়া পাতলা হয়েছে,চোখে উঠেছে চশমা।
-সে না হয় থাক। প্রতিদিন আসা হয় পার্কে?
-না। আমরা নতুন করে এই বকুলতলায় এসেছি সপ্তাহ খানেক হলো। মেয়েটার জামাই বাড়ি কাছেই। শুধু কান্না কাটি করে। তাই এদিকেই চলে এলাম।
-ভাল করেছেন। আপনার কয় ছেলেমেয়ে?
-এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে, ছেলের বউ আর আমি। মেয়েটার তো এখানেই বিয়ে হলো।
-কিছু মনে করবেন না।
আপনার স্বামী?
-নাহ.. মনে করবো কেন? ও মারা যায় আজ ১৮ বছর হলো।
-ওহ.. আই এম এক্সট্রিমলি সরি।
-না। ইটস ওকে। আপনার ছেলে মেয়ে?
-আমার দুই ছেলে এক মেয়ে।ছেলে দুইটা দেশের বাইরে। কানাডায়। ওখানেই স্যাটেল্ড আর মেয়েটাকেও বিয়ে দিয়ে দিলাম।
-আর আপনার স্ত্রী?
-ওই আপনার স্বামীর মতই। অকালে চলে গেল আমাকে রেখে।
-ওহ সরি। আচ্ছা আজ আসি তবে।
-কিছু যদি মনে না করেন প্রতিদিনই কি আসবেন??
-আসতে পারি।
-ধন্যবাদ।
মুখে ধন্যবাদের হাসি দিয়ে চলে গেলেন আফরোজা খানম। অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন আনমনে সেই পথে ।
বাসায় আজ একটু তাড়াতাড়িই ফিরে এলেন। সকালের নাস্তা শেষে সোজা চলে গেলেন স্টোর রুমে। পুরোনো ট্রাঙ্কটা খুঁজে ধুলোবালি পরিষ্কার করে নিলেন।।পুরোনো অনেক কাগজ ছিলো। সাথে একটা পুরোনো খাম।
"এই তো সেই চিঠি" বিড়বিড় করে বলে উঠলেন।
পরদিন সকালে--
প্রাত:ভ্রমনে দেখা হয়ে গেল আবার আফরোজার সাথে। টুকটাক কথাবার্তা। একটু বুড়ো বয়সের হাসাহাসি।
দিন ঘুরিয়ে পেরিয়ে গেল সপ্তাহ। দু'জন নি:সঙ্গ মানুষ উপভোগ করতে লাগলো একে অন্যের প্রতিটি মূহুর্ত। নি:সঙ্গতার চাদরটা একটু সময়ের জন্য হলেও খুলে ফেলে দু'জন।
১ মাস পর....
হাসান সাহেব পুরোনো খামের চিঠিটা একটানে পড়ে ফেললেন। সেই কলেজ জীবনের প্রথম প্রেম। প্রথম উচ্ছ্বাস। প্রথম হারিয়ে যাওয়া কারো চোখে। যেদিন চিঠিটা দিতে যাবেন সেদিনই দেখলেন আফরোজাদের বাসার দরজায় মস্তবড় তালা। খোঁজ নিয়ে জানলেন গত সপ্তাহে সবাই মিলে কই জানি চলে গেছেন বাড়ি ছেড়ে। এদিকে দেশের অবস্থাও ভালো না। তুমুল যুদ্ধ পাক বাহিনীদের সাথে।
অনেকদিন আগের পুরোনো সব স্মৃতি মনে পড়ে গেল। সিদ্ধান্ত নিলেন যার জন্য চিঠি লেখা তাকে ফিরিয়ে দিবেন।
আগামিকাল সকালেই । অনেকদিন ধরে আগলে রেখেছেন।আর না...
যদিও এ বৃদ্ধ বয়সে এসব পাগলামিকে কেউ ভাল চোখে দেখবে না।
"না দেখুক। কার কি?? আমি কি কারোর টা খাই না পড়ি?"
হাসান সাহেব ভাবছিলেন।
অন্য সব কাজ বাড়ির মালি করলেও আজ তিনি নিজেই বাজারে গেলেন। সুন্দর দেখে মোটা চকচকা একটা খাম কিনে আনেন। পুরোনো খামটা জায়গায় জায়গায় ছিঁড়ে গেছে।
রাতে ভালো ঘুম হয় নি তার। বারবার দেয়ালে ঝুলানো ঘড়ির কাটাটা দেখে নিচ্ছিলেন। ২ টা,৩টা,৪:৩০ টা....
হঠাৎ ঘুমিয়ে গেলেন । নাহ.. আজ আর এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙে নি তার। দেয়ালে ঝুলানো ঘড়িটা জানান দিলো সাড়ে ছয়টা বেজে গেছে।
তাড়াতাড়ি উঠে তৈরি হয়ে নিলেন হাসান সাহেব। আজকে আর ট্রাউজার, জামা না। পাঞ্জাবী পড়েছেন তিনি ।নতুন মাড় দেয়া পাঞ্জাবী। পকেটে সেই পুরোনো চিঠি।
পথে যেতে যেতে সবাই একবার করে ঘুরে তাকাচ্ছিল । সেদিকে থোরাই কেয়ার হাসান সাহেবের। প্রকৃতি দেখতে দেখতে ঠিক ৭ টায় পৌছে গেলেন পার্কে।
বেঞ্চটিতে বসে অপেক্ষা করছিলেন। ওই যে দূর থেকে কে যেন আসছে মনে হলো হাসান সাহেবের।
বুকটা একটু কেমন জানি করে উঠলো।
হাজারটা চিন্তায় আচ্ছন্ন তিনি।আজকের পর যদি আর না আসে আফরোজা? যদি বাচ্চামি ভেবে ছুঁড়ে মারে চিঠিটা? কি করবেন উনি? ছুঁড়ে ফেলা চিঠিটা তুলে নিবেন নাকি যে পথে ফিরে যাবে আফরোজা সেদিকে এক মনে তাকিয়ে থাকবেন?
হঠাৎ ডাকে সম্বিত ফিরে পান হাসান সাহেব।
-হাসান ভাই, কি হে?? আজ সকাল সকাল পাঞ্জাবীতে?
-আরে রফিক ভাই যে। আপনাকে তো দেখিই না।আছেন কেমন?.
-হাজারটা অসুখ। কেমন আর থাকি বলেন? সবাই তো আর আপনার মত ফিট না? হা হা হা
-তা যা বলেছেন। হা হা হা
হাসান সাহেব হাত ঘড়ির কাটাটায় একবার চোখ রাখলেন। ৭:৩০ মিনিট।
সকালের সূর্যের তেজ ক্রমে বাড়ছে। ঘড়িতে সময় এখন ৯টা। হাসান সাহেব ঠায় বসে রইলেন।
সকাল ১০টা। একে একে সবাই চলে যাচ্ছেন পার্ক থেকে।শুধু একা বসে আছেন হাসান সাহেব। নিরন্তর সে অপেক্ষা।
সকাল গড়িয়ে দুপুর। না.... কেউ আসে নি।
এবার আর পারলেন না হাসান সাহেব। উঠে দাঁড়িয়ে চলে আসলেন নিজ বাসায়।
পরদিন সকালে আবারো অপেক্ষা...
নাহ। আজো কেউ আসে নি।
দিন পেরিয়ে সপ্তাহ,সপ্তাহ পেরিয়ে মাস।
প্রতিদিন নিয়ম করে হাসান সাহেব চিঠিটা পকেটে রেখে দেন। প্রতিদিনই ভাবেন আজ হয়ত দেয়া হবে চিঠিটা প্রাপকের হাতে।
অপেক্ষার পালা শুধুই দীর্ঘ হয়। সাথে দীর্ঘ হয় দীর্ঘশ্বাসের সকালগুলো।
নতুন খাম আবারো পুরোনো হয়। মলিন হয় চিঠির অক্ষরগুলো।
না.. কেউ আসে নি। কেউ আসে না । শুধুই অপেক্ষা..........
২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৭:০৯
সায়ান তানভি বলেছেন: আরো লিখুন।
৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৫৫
বিজন রয় বলেছেন: অঅর কত অপেক্ষা? এখন তো আর চিঠির দিন নেই। তাই হয়তোবা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৪৮
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: ভাল লিখেছেন। ধন্যবাদ