![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডাক্তারী বিদ্যায় অধ্যনয়রত শিক্ষানবিস একজন। ছোট বেলা থেকেই সৃজনশীল কাজ ভাল লাগে। বাবার অনুপ্রেরণায় প্রথম লেখালেখির শুরু। ভাল লাগে ছবি তোলতে। বেশ কয়েকবার ছবি প্রদর্শিত ও হয়। এইতো লেখালেখি,ছবি,পড়াশোনা,মানব সেবার ইচ্ছা। সব মিলিয়েই আমি।
জীবনের পড়ন্ত বিকেল পাড় করছেন আলম সাহেব। ছেলে -মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন কয়েক বছর আগেই। তারা নিজ নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। ছেলে মেয়ের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও রয়ে গেলেন পুরোনো ভিটায়। হয়ত সেই পুকুর ঘাট,আম গাছ, জারুল গাছের মায়া কাটাতে পারেন নি । শত হোক পৈত্রিক সম্পত্তি বলে কথা। আলাদা টান থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না।
ছেলে মেয়ে পারিবারিক উৎসবের দিনগুলোতে দেখতে আসে বাবা মা কে। ও আচ্ছা ! আলম সাহেবের স্ত্রীর কথা তো বলাই হয় নি । মিসেস আয়শা খানম । এক কালের অসম্ভব সুন্দরী,সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ে। জীবনের নির্মম বাস্তবতায় আজ পক্ষাঘাত রোগী । আলম সাহেবের এতে কোন সমস্যা নেই। গত ১০ টা বছর মানিয়ে মানিয়ে নিতে নিতে অভ্যাস হয়ে গেছে। নিয়ম করে তিন বেলা খাওয়ানো, গোসল করানো, একবেলা কবিতা পড়ে শুনানোটা যেন অলিখিত অভ্যাসে পরিণত হল।
সেবার ঈদের ছুটিতে আলম সাহেবের একমাত্র ছেলে মানে আকিব ইসলাম তার স্ত্রী, বাচ্চা নিয়ে দাদার বাড়ি বেড়াতে এসেছিল। ছেলে মেয়ে বড় হচ্ছে। গ্রামের ঘর বাড়ি, মাঠ ঘাট চিনানো দরকার ওদের। শহুরে ইট কাঠ পাথরের দেয়ালে ওরা যে সারাদিন বন্দি থাকে। আলম সাহেব দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন কিভাবে তার ছেলে নাতনীদের গাছ দেখাচ্ছে,ফুল দেখাচ্ছে,গরু দেখাচ্ছে ।
দুপুরে খাবার আগে আকিব পুকুর ঘাটে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল। এমন সময় আলম সাহেব পাশে এসে বসলেন।
-কিছু বলবে বাবা?
-না বাবা ।
কিছুক্ষণ পর অল্প দূরে আঙ্গুল দেখিয়ে আলম সাহেব জিজ্ঞাস করলেন-
-আকিব,চোখে দেখতে পারছি না।।ওই টা কি পাখি বাবা?
-কোনটা? ওই লাল গলার পাখিটা?
-হুম।
-ওটা বুলবুলি।
আকিব উত্তরটা দিয়ে আবার পেপারে মন দিলো। কিছুক্ষণ পর আলম সাহেব আবার জিজ্ঞেস করলেন,
- বাবা,ওই যে শব্দ করছে পাখিটা কি?
-বললাম তো বাবা এটা বুলবুলি।
আলম সাহেব কিছু বললেন না। একমনে তাকিয়ে ছিলেন পুকুর টার দিকে। নিরবতা তার ভাল লাগে না। জীবনের অনেকটা সময় পাড় করে ফেলেছেন নিরবে। নিরবতা আর তার সহ্য হয় না। নিরবতার দেয়াল ভেঙে আবারো ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন-
-ওই যে মাত্র উড়ে গেল অন্য ডালে এই পাখিটার নাম কি?
-উফ। বাবা...তুমি শান্তি দিবে না আমাকে। তোমার জ্বালায় তো পেপারটাও পড়তে পারছি না। উফ... বিরক্তিকর। বলছি তো এটা একবার। এটা বুলবুলি। বু-ল-বু-লি... হলো তোমার? যাও তো এখন।
আলম সাহেব শোনে গেলেন এক মনে। কোন সাড়া দিলেন না কথার। আস্তে করে হেঁটে চলে গেলেন বাড়ির দিকে ।
প্রায় ১ ঘন্টা পর একটা ছোট ডায়েরি হাতে আবার পুকুর পাড়ে আসলেন। হাতের ডায়েরীটা এগিয়ে দিয়ে-
-খোকা,এইটা পড়। এই যে এই পৃষ্ঠা টা।
-আবার? উফ...
-জোরে পড় বাবা।
- "আজ ২২ শে জুন, ১৯৮৩ সাল ।
খোকার বয়স আজ ২ থেকে ৩ বছর হল। আমার বাবাটা দিন দিন আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাচ্ছে। খোকা আজ নতুন নতুন অনেক কিছু শিখেছে। জারুল গাছটায় বসে থাকা বুলবুলি পাখিটা দেখিয়ে আজ ৩৮ বার আমাকে জিজ্ঞেস করেছে পাখিটার নাম কি !! গুণে রেখেছি আমি। খোকা বড় হলে একদিন নিশ্চয় পড়ে দেখবে আর মনে মনে হাসবে। ভাল থাকিস আমার আত্মা । দোয়া করি তুই জীবনে অনেক বড় হ বাবা। বাবার দোয়া তোর সাথে সারাজীবন..."
আর পড়তে পারে না আকিব। ঝাপসা চোখে কতক্ষণ পড়া যায়? ডায়েরির মলিন পাতাগুলো ফোটা ফোটা চোখের জলে ভিজে একাকার। অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে যে। এই ভুল যে ক্ষমার অযোগ্য।
আলম সাহেব কে জড়িয়ে ধরে...
-বাবা,আমার ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
-ছি বাবা। এভাবে বলে না।। এখনো ছোটই আছিস খোকা তুই। বাবা মার কাছে খোকারা কোনদিন বড় হয় না রে।এদিকে আয়... তোর চোখের পানি মুছে দেই।
কিছু কিছু অনুভূতির কোন নাম হয় না। অনুভূতি গুলোর জন্ম অচেনা।কিন্তু অনুভূতিগুলোর শক্তি এত বেশি যে এক জীবনও কম মনে হয়।
ভাল থাকুক পৃথিবীর সব বাবারা। ভাল থাকুক ভালবাসা। পৃথিবীর সব বাবাকে অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
১৭ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৮:১৫
রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইলো। আমার ব্লগে স্বাগতম। সময় করে ঘুরে আসবেন।
২| ১৭ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৮:৪৮
বিপ্লব06 বলেছেন: কি লিখলেন এটা? অনেক সুন্দর!
১৭ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৫৯
রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। শুভ কামনা রইলো। আর আমার ব্লগে দাওয়াত রইলো। সময় করে ঘুরে আসবেন।
৩| ১৭ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৬
*পড়ুয়া* বলেছেন: অসাধারণ লেখা। ভাল লাগলো। এরকম লেখা আরো পড়ার আশা করছি।
১৭ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৫
রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ জানবেন। শুভ কামনা রইলো। আমার ব্লগে স্বাগতম।
৪| ১৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৫৫
কালনী নদী বলেছেন: অসাধারণ গল্প লিখেছেন বোন! বাবাকে নিয়ে। অনিমেশ শুভ কামনা জানবেন।
লেখাটা সংগ্রহে নিয়েছি বাসাতে গিয়ে আবার ভালো করে পড়বো। আপনি বড় বড় গল্প লিখেন আর অনুকাব্য কম করে লিখেন আপু।
১৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:২৭
রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: হা হা হা। আপনি আপু বলেই যাচ্ছেন বলেই যাচ্ছেন। আমি আপু না 'ভাইয়া'। আর অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইলো। আর হ্যাঁ,সবটা পড়ে কিন্তু আবার জানাবেন। অপেক্ষায় রইলাম।
৫| ১৮ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৮:১৮
ঈশান আহম্মেদ বলেছেন: কমন একটা প্লট।তবে সুন্দর লিখেছেন।আসলে আমরা বড় হয়ে গেলে বৃদ্ধ বাবাকে বিরক্তকর মনে করি।
১৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:১০
রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: ধন্যবাদ। একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা ছিল। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ অনেক। সময় করে আমার ব্লগে ঘুরে আসার আমন্ত্রণ রইলো। শুভকামনা আপনার জন্য।
৬| ১৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:২৬
জসিম বলেছেন: পৃথিবীর সব বাবাই এমন. সন্তানের জন্য বাবা এমনই.
সব বাবা'র জন্য ভালোবাসা.
ধন্যবাদ.
১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:৪৪
রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। শুভ কামনা রইলো।
৭| ২২ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৭:২৬
কালনী নদী বলেছেন: এই গল্প পড়ার পর পাঠক কখনও বাবাকে অবহেলার চোখে দেখতে পারবে না, এমনটি আমার মনে হয়।
আমার বাবার একটি শখ আছে তিনি সবার জন্ম তারিখ লিখে ফ্রেম বন্ধি করে রাখতে পছন্দ করেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৪:৫৯
ছেড়া বস্তা বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন