নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উড়তে ভালো লাগে,মেঘের সাথে লুকোচুরি ভাল লাগে। ভাল লাগে এক আকাশ তারা কে সাক্ষী রেখে নাবিকের মত পথ খুঁজে নিতে। চোখ বন্ধ করে একটা নীল সমুদ্র আকঁতে ভাল লাগে। আর ভাল লাগে \"তুমি\" তে হারিয়ে যেতে ।

রঙ্গীন ঘুড়ি

ডাক্তারী বিদ্যায় অধ্যনয়রত শিক্ষানবিস একজন। ছোট বেলা থেকেই সৃজনশীল কাজ ভাল লাগে। বাবার অনুপ্রেরণায় প্রথম লেখালেখির শুরু। ভাল লাগে ছবি তোলতে। বেশ কয়েকবার ছবি প্রদর্শিত ও হয়। এইতো লেখালেখি,ছবি,পড়াশোনা,মানব সেবার ইচ্ছা। সব মিলিয়েই আমি।

রঙ্গীন ঘুড়ি › বিস্তারিত পোস্টঃ

"স্বপ্নঘুম"

২৮ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:৪৯



-----------

সাত সকাল থেকে বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে । পাতাবাহার গাছটা ভিজে জড়োসড়ো হয়ে আছে। তার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে সুমি। ভয়ঙ্কর একটা স্বপ্ন দেখে তার ঘুম ভেঙেছে। রাশেদ এখনো ঘুমোচ্ছে দিব্যি।

স্বপ্নটা আবছা আবছা মনে আসছে তার। কি যেন ছিল?? একটা অন্ধকার রুম,বিচ্ছিরি একটা গন্ধ আর কিছু ধোঁয়া। আর কিছু মনে করতে পারে না সুমি। মাথার ভিতরটা জ্যাম মনে হচ্ছে। অস্বস্তি লাগছে। রাশেদ কে ডাকাটা ঠিক হবে?? আজকাল প্রায়ই সুমি এরকম দু:স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে । সমস্যাটা দিন দিন যেন বাড়ছে। সুমি ভাবতে শুরু করেছে কেউ তার স্বপ্ন কন্ট্রোল করছে।সে ইচ্ছা করেই এমন বাজে কাজটা করছে। রাশেদকে প্রথম দিকে বলতো সব। কিন্তু রাশেদ শুনেও "ও কিছু না" বলে পাত্তা দিতো না। খুব খারাপ লাগতো সুমির।

দু:স্বপ্ন গুলোর মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। যেমন তিনদিন আগে সে দেখেছিল একটা ছোট বাচ্চার লাশ। গতকাল দেখলো একটা এম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে ছুটে যাচ্ছে। আজ দেখলো একটা অন্ধকার ঘর,বিচ্ছিরি গন্ধ। বুঝে উঠতে পারছে না সে।

রাশেদ অফিসে চলে গেলে সুমি "খোয়াবনামা" বইটা নিয়ে বসে পড়ে। যদিও আজগুবি ব্যাখা তবুও সুমি বিশ্বাস করে। অনেক গুলো ছোট মাছ দেখা মানে সংসারে টাকা আসা, সাপে কাটা মানে সামনে আসন্ন বিপদ। নাহ... তার স্বপ্ন গুলো কেমন জানি ! খুব বাস্তব মনে হয়।

আজো রাশেদ অফিসে চলে যাওয়ার পর বইটা পড়তে বসেছিল। আজ আর ভাল লাগছে না। একটা প্যারাসিটামল খেয়েও মাথাধরাটা গেল না। স্বপ্ন যত অগোছালো হয় তার মাথাব্যাথাটাও যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ে। কখন ঘুমিয়ে গেল খেয়াল নেই।

-সুমি,কেমন আছিস মা?
-মা, তুমি??
-তোকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল রে।
-আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলে মা?
-একদিন সবাইকেই যেতে হবে মা।

পিছন থেকে সাদা কাপড়ে ফুটফুটে এক শিশু মুচকি হাসি দিয়ে তাকালো।

ঘুমটা ভেঙে গেল সুমির। এটা কি দেখল সে?? মা কে অনেকদিন পর সে স্বপ্নে দেখলো। অনেক অনেক দিন পর....

হঠাৎ সেলফোনটা বেজে উঠলো...
-হ্যালো,সুমি
-হুম বল।
-কি করছিলে??
-কিছু না।
-কি হল? এভাবে কথা বলছ কেন?
-কিভাবে?
-মনে হচ্ছে জোর করে।
-নাহ... রাশেদ শোন..
-হুম বল
-আমার মাথাটা কেমন জানি ঝিম ঝিম লাগে।
-তোমাকে কতদিন বলেছিল ডাক্তারের কাছে চল।
-উহু, এটা ডাক্তার সাড়াতে পারবে না।
-কি বলছ,এসব??
-কিছু না। কখন আসবে?
- সন্ধ্যা হবে। বিকেলে তো জানোই বাংলামোটর রোডে কেমন জ্যাম লাগে !
-আচ্ছা। রাখি..
-খারাপ লাগলে জানিও।
-হুম।

রাশেদ চুপচাপ বসে রইলো বেশ কিছুক্ষণ। সুমি কি তবে জেনে ফেলেছে??

সুমির পেটে তীব্র ব্যাথা । সহ্যের সীমার বাইরে। রাশেদকে ফোন দিতে যাবে। ফোনটা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না। তার কেন জানি মনে হচ্ছে তার পেটে কেউ নড়ছে। অথচ রাশেদ প্রত্যেকবারই না করে কিংবা এড়িয়ে যায়। কি এমন জিনিস যা রাশেদ লুকোচ্ছে?? পরক্ষণেই স্বপ্নে মার সাথে দেখা ছোট শিশুটার কথা মনে পড়ে। সুমি ছটফট করতে শুরু করে। একসময় শুনতে পায়... 'মা'। অজ্ঞাণ হয়ে যায় সুমি।

পাশের বাসার ভাড়াটিয়া রা ধরাধরি করে নিচে নিয়ে আসে। এম্বুল্যান্স নিয়ে আসে। আবার তারা ধরাধরি করে এম্বুলেন্সে উঠায় সুমিকে। রাশেদ কে জানানো হয়। এম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলছে। অন্যদিকে রাশেদ আসছে একটা বেবি টেক্সি নিয়ে।

সুমির প্র‍্যাগন্যান্ট ছিল এটা রাশেদ জানতো। ওকে বলে নি রাশেদ। ডাক্তাররা তখনো নিশ্চিত ছিলেন না সেটা ফিটাস নাকি টিউমার। হয়ত কিছুদিন পর জানা যেত। রাশেদ অপেক্ষা করেছিল। ভেবেছিল যা হবার হবে সেটা পরেই জানাবে সুমিকে।

অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হল সুমিকে। প্রায় দেড় ঘন্টা পর বেরিয়ে এলেন ডা. ইউসুফ সাহেব বিষন্ন মনে। জানালেন বেবিটা ৫ মাসের ছিল। প্রিম্যাচিউর বেবি। মায়ের ফ্লুইড লেভেল কমে গিয়ে ছিল খুব। কোন উপায় ছিল না এবোর্শন করা ছাড়া।

লাশঘরে নিয়ে যাওয়া হল ফিটাসটাকে। সেখান থেকে অন্য একটা অন্ধকার রুমে বিচ্ছিরি রকম গন্ধে ভরা। এ ধরণের প্রিম্যাচিউর বেবিদের ছোট ছোট বোতলে ভরে এনাটমি মিউজিয়ামে রেখে দেয়া হয়।

সুমির জ্ঞাণ ফিরলো প্রায় ৪ ঘন্টা পর। রাশেদ পাশে বসে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। এক ফোটা জল চোখ থেকে কানের পাশ বরাবর গড়িয়ে পড়লো সুমির। খুব দূরে ক্ষীণ একটা আলো আর একটা অস্ফুট 'মা' ডাক ভেসে আসছে তার কানে........ কি জানি !! বোতল বন্দি আত্মাটা হয়ত ছুটে এসেছে মা'কে এক নজর দেখার জন্য.....

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:১৩

সৈয়দ আবুল ফারাহ্‌ বলেছেন: যৌন স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্য জ্ঞান সব মানুষের দরকার। নিয়মিত চেক-আপ, সতর্ক চলাফেরা, হাসি-খুশি থাকা প্রত্যেক গর্ভবতি মায়ের জন্য দরকার।

আমরা এনাটমি মিউজিয়ামের বোতল-এর শিশুর কাছ থেকে স্বপ্নের "মা" ডাকা শুনতে চাই না। সত্য - বাস্তব - চোখে দেখা - হাতে ধরা মা ডাক শুনতে চাই।

কোন সুমির চোখের জল এমনভাবে যেন না পড়ে। মহান আল্লাহ্ আমাদের সহায় হউন।

২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:৪০

রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য । গল্পটা একজন মায়েরও যদি উপকারে আসে তবেই স্বার্থক আমার এই লেখ

২| ২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:১২

কালনী নদী বলেছেন: খুব সুন্দর করে দু:খের গল্প লিখেছেন বোন, আশা রাখি সচেতনতা বাড়বে।

২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:৩৭

রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে । কিন্তু আপনি আমাকে প্রতিনিয়ত বোন বলে যাচ্ছেন । আমি বোন না ত !! ভাই

৩| ২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:৪৭

কালনী নদী বলেছেন: দু:খিত ভাই, আমি মাঝেমধ্যে ব্যাপারটা ভুলে করছি। সত্যি দু:খিত।

২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:৫৩

রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: হা হা হা । ইটস ওকে ভাই । আমি কিন্তু মজাই পাচ্ছি । ;)

৪| ২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ৩:২৫

কালনী নদী বলেছেন: আপনার ব্যবহারে আমি মূগ্ধ ও আবারও দু:খিত, ভাইজান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.