নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উড়তে ভালো লাগে,মেঘের সাথে লুকোচুরি ভাল লাগে। ভাল লাগে এক আকাশ তারা কে সাক্ষী রেখে নাবিকের মত পথ খুঁজে নিতে। চোখ বন্ধ করে একটা নীল সমুদ্র আকঁতে ভাল লাগে। আর ভাল লাগে \"তুমি\" তে হারিয়ে যেতে ।

রঙ্গীন ঘুড়ি

ডাক্তারী বিদ্যায় অধ্যনয়রত শিক্ষানবিস একজন। ছোট বেলা থেকেই সৃজনশীল কাজ ভাল লাগে। বাবার অনুপ্রেরণায় প্রথম লেখালেখির শুরু। ভাল লাগে ছবি তোলতে। বেশ কয়েকবার ছবি প্রদর্শিত ও হয়। এইতো লেখালেখি,ছবি,পড়াশোনা,মানব সেবার ইচ্ছা। সব মিলিয়েই আমি।

রঙ্গীন ঘুড়ি › বিস্তারিত পোস্টঃ

"একটি গোল্ড চেইনের ঘড়ি কিংবা আমার প্রেমের গল্প"

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৫




-বিয়েতে বরকে গোল্ড কালারের ঘড়ি গিফট দেয়ার কারণ কি বলতে পারেন??
-আজব ! কে আপনি?

এইছিল ওর সাথে আমার প্রথম কথা। অনেক ভেবে চিন্তে এই প্রশ্ন করেছিলাম ওকে। উদ্দেশ্য ছিল ভড়কে দেয়া। হুমায়ুন আহমেদ স্যারের একটা বই এ পড়েছিলাম মেয়েরা সেই সব ছেলেদেরই পছন্দ করে যাদের সেন্স অব হিউমার ভাল। ভাল সেন্স অব হিউমার কিভাবে দেখানো যায় সেটা নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গবেষণা করছিলাম। সাত পাঁচ ভেবে কিচ্ছু পাচ্ছিলাম না। শেষ মেষ মাথায় যা ঢুকলো তাই বলে দিলাম।

সুপর্ণা ছিল তার নাম। শুধু এটুকু জানার জন্য পাড়ার এক ছোট ভাই আমার মানিব্যাগের পুরুত্ব কিছুটা কমিয়েছিল। যাই হোক টাকা গেলে যাক। নাম তো জানা হল ! সেটাই বা কম কি?

রহিম মামার টঙে বসে দুইটা টোস্ট আর এক কাপ লাল চা খাওয়ার বদলে প্রায় প্রতিদিন আড়চোখে তাকিয়ে থাকতাম। এমন না যে আমি মেয়েভীতু ছেলে। আমার মেয়ে বন্ধুর সংখ্যাও নেহাত কম না। কিন্তু ওর সাথে কথা বলতে চাইলেই মনে হত এখনই হয়ত বলে বসবে আপনার মত হাজার টা বলদ আমার পিছনে ঘুরে।

নীলক্ষেত মোড়ে কয়েকবেলা "How to propose a girl" নামের কোন বই এর সন্ধান করেছি। ৩০ টাকার সস্তা বই এ কি আর অনুভূতি লেখা থাকে?? তাই এই প্ল্যানও বানের জলের মত ভেসে গেল।

তারপর মাথায় আসল বুদ্ধি। হুমায়ুন আহমেদ স্যারের মৃত আত্মা ভর করলো আমার উপর। আমাকে বুদ্ধি দিলো সেন্স অব হিউমার বাড়াতে। নিয়ম করে ৩ বেলা ইউটিউবে ফানি ফানি সব ভিডিও, জোক্স দেখা শুরু করলাম। খানিক সময়ের জন্য নিজেকে জোকার জোকার লাগছিল। ভেবেছিলাম সুপর্ণার সামনে যেয়ে কথাগুলো জটলা পাকিয়ে বিচ্ছিরি এক অবস্থা সৃষ্টি করে ফেলবো।

গতকাল ছিল সেইদিন। আমি সাহস করে পিছন থেকে সুপর্ণাকে ডেকে গোল্ড ঘড়ির কথা জিজ্ঞাস করেছিলাম। অবাক চাহুনিতে যখন ও আমার পরিচয় জানতে চাইলে আমি বেশি স্মার্টগিরি দেখাতে যেয়ে বলে ফেললাম সেটা জেনে তার কি হবে?? তারপর আমার মাথায় এক আকাশ বজ্রপাত ঘটিয়ে হনহন করে ও চলে গেল।

আজকে আবার ওকে ডাকবো। কিন্তু এই গবেটমার্কা মুখ নিয়ে কিভাবে তাকে সরি বলব?? দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি ও আসছে। আমি চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিলাম। ও আমাকে ক্রস করে হেঁটে যাচ্ছে। মনে হল আড় চোখে আমাকে দেখেছে। আমি রহিম চাচাকে একটা অস্বস্তির হাসি দিয়ে গুটি গুটি পায়ে পিছু নিলাম। আর একটু সামনে এগিয়ে-

-এই যে,শুনছেন?
-ও আপনি? তো আজ কি জিজ্ঞাস করবেন? মুরগীর ডিমের কুসুমের রঙ হলুদ কেন সেটা?

আমি আমতা আমতা করে মিনমিনিয়ে বললাম "সরি"।
-কি বললেন? জোরে বলেন
-না,মানে। কি বলবো... আপনাদের বাসা কই?
-কেন বাসায় যেয়ে আমার ভাই এর বিয়ের গোল্ড চেইনের ঘড়িটা দেখবেন?
-আপনি তো বেশ...
-হুম,বেশ কি?? চটপটে?
-নাহ। আসলে... আমি সরি। কাল আমার অবান্তর প্রশ্ন করাটা উচিত হয় নি।
-এই মিনমিনিয়ে সরি বললে আমি বুঝবো??
-আপনি এই পথেই যাওয়া আসা করেন?
-দেখুন, ঢঙ করবেন না। ঢঙ আমার একদম পছন্দ না। আপনি টঙের দোকানে বসে আমার দিকে ভ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকেন আমি দেখেছি।
-না মানে। রহিম চাচার চা না খেলে সকালটা ভাল কাটেনা।
-কথা ঘুরানোর কি মিথ্যা চেষ্টা। আপনি মিথ্যা বলতে পারেন না তো বলতে আসেন কেন??
-মিথ্যা কই?

এটুকু বলে আমি চুপ মেরে গেলাম। তারপর সাহস করেই বললাম
-চলুন না একটু ওইদিকটায় বসি।
-বসে কি করবেন?? প্রেম নিবেদন করবেন??

আমি ভড়কে গেলাম ওর মুখের শক্ত ভাবভঙ্গি দেখে।

-আচ্ছা। থাক...
-থাকবে কেন? প্রেম নিবেদন করা যাবে না। শর্তে রাজি থাকলে যাবো।
-আচ্ছা।
-চলুন তবে।

বটগাছটার নিচে বিকেল বেলা প্রেমিক-প্রেমিকার আসর বসে। কিন্তু এই ভর দুপুরে কাক পক্ষীও নেই। নীরবতা ভেঙে সুপর্ণাই প্রথম কথা বললো।

-আমাকে এখানে এনেছেন কি বসিয়ে রাখার জন্য?
-না মানে। আপনি বলেন।
-আপনি এত গাধা কিসিমের মানুষ কেন? বলেন তো।
-কেন? আমি করলাম?
-প্রেম নিবেদন করতে না করেছি।।আপনি তো কথাই বন্ধ করে দিলেন।
-তোমার সামনে না মানে আপনার সামনে এলে সব গুলিয়ে ফেলি আমি।
- আচ্ছা আপনার মনে প্রশ্ন জাগে নি অচেনা একটা ছেলে একসাথে বসতে বলল আর একজন বাধ্যমেয়ের মত বসে গেল?
-আহ,তাই তো !
-আপনি R.D barman এর গান শুনেন?
-কয়েকটা শুনেছি।
-আমার প্রিয় অনেক। উনার রুবি রায় গান টা শুনেছেন? ওই যে মনে পড়ে রুবি রায়, কবিতায় তোমাকে...
-হুম শুনেছি।
-লাইনগুলো মনে আছে??
-কিছুটা। কেন বলুন তো?
-শেষদিকের লাইনগুলো খেয়াল আছে?

আমি শেষ দিকের লাইনগুলো মনে করার চেষ্টা করলাম। ইমপ্রেস করার এমন সুযোগ বারবার আসবে না জীবনে। আমার মনে পড়ে গেল একটু চেষ্টায়। বললাম
-পীচ ঢালা দুপুরে,সুর তোলে নুপুরে....এমন ছিলো না??
-হুম। ঠিক ধরতে পেরেছেন। এরপর?
-বাস থেকে তুমি যবে নামতে,একটি কিশোর ছেলে একা কেন দাঁড়িয়ে সে কথা কি কোনদিনও ভাবতে??
-বাব্বাহ....আপনাকে যতটা গাধা ভেবেছিলাম। আপনি ততটা না। একটু কম। এবার বলেন এই লাইনগুলোর মানে কি?
-ছেলেটা অপেক্ষা করত.....

শিট...আমি এটা কি বললাম? মনে মনে হাজারবার গালি দিলাম। সুপর্ণা না করেছিল প্রেম নিবেদন না করতে। এখন যদি রাগ করে চলে যায়?
-এই যে,আপনি কি এই দুনিয়ায় আছেন??
-হুম। বলুন
-থামলেন কেন? বলুন।
-মানে ছেলেটা মেয়েটাকে পছন্দ করত তাই দাঁড়িয়ে থাকতো।
-আপনি ও কি তাই করছেন?
সুপর্ণার এই কথায় আমি রীতিমত আকাশ থেকে ধপাস করে মাটিতে পড়লাম। নতমুখে মিনমিনিয়ে বললাম, "হুম"।
-আবার মিনমিনিয়ে কথা??
-হুম। (এবার একটু ভয়ে জোরে বললাম)
-তো গোল্ড চেইনের ঘড়ি পরতে আপত্তি আছে??
-মানে?? বুঝলাম না।
-আরে বাবা,বাংলাতেই তো বললাম।

কথাটা বুঝতে আমার আরো কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। তারপর....

-সত্যি?? মানে সত্যি??
-হ্যাঁ বাবা সত্যি। বাবা গোল্ড চেইনের ঘড়ি দিতে চাইলে কিন্তু না করতে পারবো না আমি বাবাকে।

শেষ কয়েকটা শব্দ আমার কানে যায় নি। আমি তখন অন্য জগতে রীতিমত উড়ছি। আমাকে আর পায় কে??

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৭

হাবিব বলেছেন: হু হু।খুব ভাল লাগলো।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১

রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো। :)

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১

ছদ্দবেশি লৌকিক বলেছেন: মজার প্রম কাহিনি,,

৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৩

ছদ্দবেশি লৌকিক বলেছেন: হা হা হা ইদানিং কি হয় প্রেম লিখতে গিয়ে প্রম লিখে ফেলি,, পড়ে খেয়াল হয়, দুঃখিত।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৭

রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: হা হা হা। প্রম। ভাল লাগলো। প্রম থেকে যদি দারুনন কিছু হয় তবে প্রমই ভাল। প্রেমের দরকার নেই। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা রইলো। :)

৪| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩

দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: গোল্ড চেইন তো আমারো পড়তে মুঞ্চায়।কিন্তু কপাল সেই,সৌভাগ্য হয় না :(

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৮

রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলেন ভাই। ভাবী কিনে না দিলেও আমরা তো আছি? আমরাই কিনে দিবো।

৫| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৬

এম মুক্তাদির বলেছেন: দারুন লাগলো

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৯

রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো।

৬| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৩৪

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:



খাইছে!!! হয়া গেল???


বুঝছি। এই পদ্ধতি অ্যাপ্লাই করা লাগবে।

প্রথমে এলাকায় রহিম মামা নামক লোককে খুঁজতে হবে। তারপর তাকে দিয়ে চায়ের দোকান খোলাতে হবে। তারপর, পছন্দের পাত্রীকে পরিবার সমেত নিজ এলাকায় আনতে হবে। তারপর এলাকার মাস্তান ভাড়া করে হুমকি দিয়ে মেয়ের নাম সুপর্ণা করতে হবে। তারপর, রোজ সকালে তাকে চায়ের দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করতে হবে। এবং আমাকেও রোজ সকালে সেই চায়ের দোকানে বসে থাকতে হবে।


তারপর হয়ে যাবে। =p~

হাহাহা!!!

যাইহোক, রহিম মামা এক জায়গায় রহিম চাচা হয়ে গেছে। আর, বানানে কিছু ভুল রয়ে গেছে। লেখার সেন্স ভাল আপনার। কাহিনীর ডেপথ বাড়াতে পারলে লেখাগুলো আরো ভাল হবে আশা করছি।

৭| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২১

রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: ভাইয়া,ডেপথ কিভাবে বাড়ানো যায় এ ব্যাপারে কোন টিপস?? আপনার মন্তব্য পড়ে অনেকক্ষণ হাসলাম। ভাল লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। ☺

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.