নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উড়তে ভালো লাগে,মেঘের সাথে লুকোচুরি ভাল লাগে। ভাল লাগে এক আকাশ তারা কে সাক্ষী রেখে নাবিকের মত পথ খুঁজে নিতে। চোখ বন্ধ করে একটা নীল সমুদ্র আকঁতে ভাল লাগে। আর ভাল লাগে \"তুমি\" তে হারিয়ে যেতে ।

রঙ্গীন ঘুড়ি

ডাক্তারী বিদ্যায় অধ্যনয়রত শিক্ষানবিস একজন। ছোট বেলা থেকেই সৃজনশীল কাজ ভাল লাগে। বাবার অনুপ্রেরণায় প্রথম লেখালেখির শুরু। ভাল লাগে ছবি তোলতে। বেশ কয়েকবার ছবি প্রদর্শিত ও হয়। এইতো লেখালেখি,ছবি,পড়াশোনা,মানব সেবার ইচ্ছা। সব মিলিয়েই আমি।

রঙ্গীন ঘুড়ি › বিস্তারিত পোস্টঃ

"একলা লাগে ভারি"

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১১




(এক)


অনেকদিন পর ভার্সিটি যাচ্ছি। সামন্য জ্বর থেকে শুরু। তারপর টাইফয়েড আর ও কি কি বাজে অবস্থায় যে ছিলাম। বিহঙ্গ বাসটায় চড়ে মিরপুর থেকে শাহবাগ তারপর অল্প পায়ে হেঁটে এগুলেই আমার ক্যাম্পাস।

মা বলেছিল তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে। শরীর মাত্রই ভাল হলো। অনেকদিন পর মেঘলার সাথে দেখা হবে। ভাবতেই মনটা ভাল হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা খুব কষ্ট করেছে এই কয়টা দিন। প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ নিয়েছে। আমাকে মানসিক শক্তি দিয়েছে।

কিছুদিন আগে আমাদের সম্পর্কের ২ বছর পূর্ণ হলো। আমার তখন টাইফয়েড। আর দেখা হয় নি। আজ আমাদের দেখা হবে। কাল সারারাত আমরা প্ল্যান করেছি কি কি করবো।ও একটা মেজেন্টা কালারের শাড়ী পড়ে আসবে। ভার্সিটি লাইফের শুরুতে নবীনবরণে ওকে প্রথম দেখেছিলাম শাড়িতে। সেদিনই প্রেমে পড়ে যাই হুড়মুড করে। যদিও বলেছিলাম অনেক দিন পর।


যাক সে কথা ! আসিফ,অরূপ,সামান্থা,নিলয় ওরাও অপেক্ষা করছে আমার জন্য। চারটাই পাগল। আমাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়ি,এই টেস্ট,ওই টেস্ট। কতরাত যে অরূপ টা আমার মাথার কাছে শুয়ে ছিল !

বাস ফার্মগেট ক্রস করলো। আমি আনমনে কানে ইয়ারফোন গুজে গান শুনছিলাম। একটু বৃষ্টি বৃষ্টি দিন। অন রিপিটে চলছিল একটাই গান "আমার ভীনদেশী তারা,একা রাতেরই আকাশে"।

পাশের পাজেরোটা শুধু হর্ণ বাজাচ্ছে কেন জানি। হয়ত কোন ইমার্জেন্সী তাড়া আছে গাড়ির মালিকের। বাংলামোটরের সামনে জ্যামে বসে আছি। কেন জানি আজকের জ্যামটাও ভাল লাগছে আমার। হালকা একটা বাতাসের ঝাপটা মুখে এসে লাগলো। জানালার পাশে বসার এই এক সুবিধা। বাইরের সবকিছু লক্ষ্য করা যায় সহজেই।

সিগন্যাল ছেড়ে দিলেই আর ৩/৪ মিনিট লাগবে শাহবাগে যেতে। আম্মু ফোন দিচ্ছে বারবার। একবার রিসিভ করে বলেছি যে খারাপ লাগছে না। তাও বারবার ফোন দিচ্ছে। আর ফোন রিসিভ করবো না। একেবারে ভার্সিটি পৌঁছেই রিসিভ করবো কল।
মেঘলা টেক্সট দিয়ে জানিয়েছে সে টিএসসিতে আছে। এসে যেন ফোন করি ওকে।

এইতো শাহবাগ প্রায় চলে এসেছি। এখন নামতে হবে।

আমি টিএসসি পৌঁছে মেঘলাকে কল দিলাম। মেঘলা কেন জানি ফোন রিসিভই করছে না। কোথাও পাচ্ছি না ওকে। কই গেল ও??

আমাকে এখানে আসতে বলে এখন নিজেই উধাও। কিছুক্ষণ বসে ছিলাম ভাস্কর্যটার সামনে। একা একাই বসে ছিলাম। নিলয় কে ফোন দিচ্ছি ফোন রিসিভ করছে না। সবগুলোর হয়েছে কি?? একটাও ফোন রিসিভ করছে না কেন?? আমাকে বোকা বানাচ্ছে এভাবে? আমিও কম না আমার সাথে ফাজলামি?? আমি ঠিক ঠিক খোঁজে নিবো। আমাদের সবকয়টা আড্ডার জায়গা শিমুল তলা,লাইব্রেরির সামনে, মধুর কেন্টিনের সামনে, সিনেট ভবনের সামনে ঘুরে আসলাম। কাউকেই পেলাম না।

হঠাৎ আম্মুর কথা মনে হল। আম্মুকে একটা ফোন দেয়া উচিত। অযথা টেনশন করে মহিলাটা। আমি এত বড় হয়েছি তাও কেন এত ভয়??

আম্মুর ফোনে কোন এক অজ্ঞাত কারণে কলই যাচ্ছে না। আমি অবাক হয়ে গেলাম। নিজেকে এলিয়েন টাইপ লাগছে এখন। আমার সাথে কি হচ্ছে এগুলো?? অনেকক্ষণ বসে থেকে কাউকে খুঁজে না পেয়ে আমি আবার শাহবাগ চলে এলাম। নাহ... অনেক হয়েছে। আমাকে নিয়ে ফাজলামি করছে সবাই আমার সেটা বুঝতে আর বাকি নেই।

আমি মিরপুরগামী একটা বাসে আবার উঠে বসলাম। বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। এই ফাজলামির মজা একদিন হারে হারে শোধ করে নিবো। আমাকে আসতে বললে কেউ আসে নাই। তাই না? ঠিক আছে। মাথায় শুধুই এই কথাগুলোই ঘুরছে।
আজ কেউ আমার কাছে ভাড়া নিতেও আসছে না কেন? আচ্ছা কি হয়েছে আসলে? এমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি তো আগে কোনদিন লাগে নি। তবে আজ কি হল?? সকালে বাস থেকে নামার পরই অদ্ভুত সব কাজ হচ্ছে।

শেওড়াপাড়া বাস থামানোর জন্য এই যে হেল্পারকে ডাকছি শালার হেলপার কানেই শুনছে না । আমিই এগিয়ে গিয়ে ওর গায়ে হাত দিলাম। তাতেও ও আমার দিকে তাকাচ্ছে না। বাস অনেক গতিতে যাচ্ছে। আমার তো এখানেই নামা লাগবে। পরের স্টপেজে চলে গেলে আবার ঝামেলা। রিকশায় ফিরা লাগবে বাসায়।

দুইজন মানুষ ও এখানে নামবে। ওদের কথায় ঠিকই বাস থেমে গেল। ওরা নেমে গেল। অদ্ভুত ব্যাপার। আমি ও সাথে নেমে গেলাম।

যাক, বেশি দূরে যেতে হয় নি। বাসার সামনে আসতেই কান্নার আওয়াজ পেলাম। কি হয়েছে আমার বাসায়??
বাসার সামনে নিচে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে আছে কেন?? আমার মায়ের কিছু হয়েছে?? তাড়াতাড়ি ছুটে গেলাম।
কাছে এসে শুনলাম কয়েকজন কি যেন বলাবলি করছে। আরো কাছে যেয়ে দেখলাম এক পাশে মা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কে এটা?? মেঘলা না? ও এখানে কি করছে? ওমা,অরূপ,সামান্থা,নিলয়টাও দেখি এখানেই।

কফিনে কার লাশ এটা?? ভয়ে শিউরে উঠলাম। একি?? এ যে আমি নিজে !


(দুই)


আমি ভার্সিটির জন্য রেডি হচ্ছি। অনেকদিন পর আজ ভার্সিটি যাবো। মেঘলা আসবে, অরূপ, সামান্থা,নিলয়,আসিফও আসবে।
আম্মুকে কেন জানি খুব বেশি আতঙ্কগ্রস্ত লাগছে। বুঝতে পারছি না। জিজ্ঞাস করা উচিত।


-আম্মু, কি হয়েছে তোমার??
-কিছু না বাবা। আজকে না গেলে হয় না ভার্সিটি?
-আম্মু,ওরা সবাই আসবে । এতদিনের প্ল্যান। এত টেনশন কেন কর??
-টেনশন না । গতরাতে একটা খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। বাবা, আজ তুই যাস নে। মা'র কথাটা শুন। আমার কেমন জানি লাগছে বাবা।
-ধূর। টেনশন নিও না তো। আমি তোমাকে টাইম টু টাইম ফোন দিয়ে জানাবো। কেমন? যাই আম্মু আমি?
-সাবধানে যাবি বাবা। বাসে যাবি না। আমি টাকা দিচ্ছি সিএনজিতে যাবি।
-মা,হয়েছে টা কি তোমার? যাই আমি।
-টাকাটা নিয়ে যা। আদিত্য বাবা আমার। শোন একটু। আচ্ছা আর কিছু বলবো না। তাড়াতাড়ি ফিরিস।

আমি গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় শুধু এটুকুই শুনতে পেয়েছিলাম।
বিহঙ্গ বাসটায় উঠে বসলাম। নামবো শাহবাগ। মা বারবার ফোন দিচ্ছে। আমি ফোন রিসিভ করে একবার বলেছি। তাও ফোন দিয়েই যাচ্ছে, দিয়েই যাচ্ছে ।


কালো পাজেরো গাড়ীটা অকারণে হর্ণ দিচ্ছে। গানটাও শুনতে দিচ্ছে না শান্তিতে।
একটু পর নামবো। প্রায় চলে এসেছি শাহবাগ। বেয়াড়া বাস ড্রাইভারটা যেন পাগলের মত চালাচ্ছে।
শাহবাগের মত জায়গাতেই থামাথামি নাই। বাসে আমি একাই শাহবাগে নামা যাত্রি। বাস একটু স্লো করে ড্রাইভার বলছে নেমে যান ভাই।


হেলপার বলছে বাম পা দেন ভাই। বাম পা দিয়ে নামেন। তাড়াহুড়ো করে নামতে যেয়ে ডান পা এগিয়ে দিলাম। গতির সাথে তাল না মেলাতে পেরে আমি ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলাম রাস্তায়। পেছনে সেই কালো দানব পাজেরোটা আমার দিকেই আসছে।
কানে তখনো ইয়ার ফোনটা ছিলো। সেখানে লাস্ট লাইনটা মনে হয় এমন ছিলো-

"আমি পাই না ছুঁতে তোমায়,
আমার একলা লাগে ভারি "


তারপর.....? সব অন্ধকার.....
সত্যিই খুব একলা লাগছে আমার।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫৯

কালীদাস বলেছেন: চমৎকার :)
সম্ভবত বিভূতিভূষণের কাছাকাছি জিনিষ ঘটেছিল। একদিন সন্ধ্যায় নিজের লাশের খাটিয়া নিয়ে কিছু লোককে যেতে দেখে অসুস্হ হয়ে মারা যান বিভূতি।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৪

রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: ধন্যবাদ নিবেন ভাই। বিভূতিভূষণ এর মৃত্যু কাহিনীটা অজানা ছিল। আমার এই গল্পের মত কাছের এক মানুষের সাথে অনেকটা এমন হয়েছিল। উনি Dejavu দেখেছিলেন উনি কিভাবে মারা যাবেন। সেটা বলেও গিয়েছিলেন। আনফোরচুনেটলি উনি ওইভাবেই মারা যায়। ব্যাপারটা কাকতালীয় বা মিরাকল যাই বলেন অদ্ভুত ছিল !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.