নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রুহ রুহদার

রুহ রুহদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

গরীবের ক্যাসিনো দর্শন

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৩

ক্যাসিনো নিয়ে সবসময় একটা ফ্যাসিনেশন কাজ করত আমার । রুলেতের গোল টেবিল আমার কাছে খুব আকর্ষনীয় মনে হত , সেইসাথে স্লট মেশিনের ঝনঝনানি আমাকে টানত খুব। হলিউড মুভিতে ক্যাসিনো দেখতে দেখতে ভাবতাম কখনও যদি যেতে পারতাম জমকালো এ দুনিয়ায়। ধীরে ধীরে জানলাম আমাদের কাছেই নেপাল,সিংগাপুরে রয়েছে সিনেমাতে দেখা সেই ক্যাসিনো।আগেই সিংগাপুর দুবার ঘুরে আসা হয়েছে কিন্ত ভিন্ন ট্যুর প্লান থাকায় আর যাওয়া হয়ে ওঠে নি। প্রথমবার মালেশিয়া যাওয়ার সময় ই জানতে পারলাম কুয়লালামপুরের অদুরে গেন্টিং হাইল্যান্ডেই আছে আমার স্বপ্নের সেই ক্যাসিনো । । মুসলিম প্রধান এ দেশে ক্যাসিনো আছে শুনে প্রথমে একটু চমকেই গিয়েছিলাম । সেদিন কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টথেকে গ্রাবে চড়ে আমরা চলে গেলাম বুকিট বিনতাং এলাকায় যেখানে আমরা উঠছি টাইমস স্কয়ার হোটেলে।এই এলাকাটা টুরিস্টদের জন্যে খুব পছন্দের এলাকা কারন টুইন টাওয়ার সহ বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান কাছেই পেয়ে যাবেন আর রাতের বেলায়ও এ এলাকাটা জমজমাট থাকে। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে বিকেলে গেলাম পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার , কেএলসিসি পার্ক ও কে এল টাওয়ার দর্শনে। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারে গিয়ে মাথায় হাত, উপরে উঠার টিকেট আগামী ৩ দিনেও এভেইলেবল না।যারা এসেছে তারা সবাই অনলাইনে আগেই বুকিং করে এসেছে। উপায় না দেখে উঠলাম কে এল টাওয়ারের অবজারভেশন ডেকে।৪২০ মিটার উচু এ ডেক থেকে মুটামুটি পুরা শহরেরে বার্ডস আই ভিউ পাওয়া যায়। সন্ধ্যার বেশ কিছু সময় ওখানে কাটিয়ে চলে আসলাম চ্যাংকাট, যেটা মালেশিয়ার নাইটলাইফ হাব । পরেরদিন আমাদের গন্তব্য বাথু কেভ ও গেন্টিং হাইল্যান্ড । সকালে হোটেলে ব্রেকফাস্ট সেরেই বের হলাম বাথু কেভের উদ্দেশ্যে , বাথু কেভ আমাদের প্লানিংয়ে ছিল না তবে যাওয়ার পথে পড়বে বলে এড করে নিলাম। গাড়ী থেকে নামার পর ১৪০ ফিট উচু মুরগান স্টাচু দেখে তো চক্ষু চড়কগাছ। অনেক্ষন তাকিয়ে রইলাম ঘাড় বাকা করে, মুরগান মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যুদ্ধের দেবতা কার্তিক এর তামিল নাম । ছবিটবি তুলে ভাবলাম এটাই বোধহয় মূল স্থাপনা, কিন্ত পরক্ষনেই জানলাম মূর্তির পাশের ২৭০ ধাপের সিড়ি ভেঙ্গে উঠতে হবে মূল গুহায়।

সিড়ি ভাঙ্গার চিন্তা না করে আমরা রওনা দিলাম কাঙ্খিত গেন্টিং এর উদ্দেশ্যে । পাহাড়ি রাস্তা ধরে আমরা এগুতে থাকলাম , আশেপাশে শুধু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। স্কাইস্টেশনে নামতেই ঠান্ডা অনুভূত হল এবং আকাশও দেখলাম মেঘলা হয়ে এল। এখান থেকে ক্যাবল কারে চড়ে যেতে হবে মূল গেন্টিং হাইল্যান্ড এ। ক্যাবল কারে সাওয়ারী করে উপরের দিকে উঠতে থাকলাম আর যেতে যেতে চিন্তা করলাম গহীন এ পাহাড়ের চুড়ায় কিভাবে এ সাম্রাজ্য গড়ে তুলল তারা। মিনিট পনের পরে গন্ডোলা থেকে দেখতে পেলাম এক বিশাল রঙ্গিন সাম্রাজ্যে প্রবেশ করছি আমার। যাবার পথে দুটি স্টেশনে থামল ক্যাবল কার , থিম পার্কের উপর দিয়ে আমরা সরাসরি চলে গেলাম শেষ স্টেশন স্কাই এভ্যিনিউ তে। যাওয়ার সময় চোখে পড়ল ৪৬০০ ফুট উচুতে অবস্থিত চিন শ’ মন্দির। গেন্টিং এ নেমেই এর জাকজমকতা দেখে মনে হচ্ছে লাস ভেগাস এসে পড়েছি, বেশ কিছুক্ষন খোজার পর স্কাই ক্যাসিনো খুজে পেলাম আমরা। অবশেষে এন্ট্রি গেটের সামনে গিয়ে দেখি বিশাল লাইন ,এখানে পাসপোর্ট এর কপি দেখিয়ে মেম্বারশিপ নিচ্ছে সবাই। প্রায় এক ঘন্টা পর ঢুকতে পারলাম আমরা , ঢুকেই দেখি এলাহি কান্ড ভিতরে । ভিতরের ইন্টেরিয়র খুব আকর্ষনীয় করে সাজানো , ছাদের অংশ আকাশের থিমে তৈরী, হঠাৎ দেখলে মনে হবে খোলা আকাশের নীচে চেয়ার টেবিল পাতানো। উপরের ফ্লোরে সারি সারি স্লট মেশিন বসানো , জ্যাকপটের আশায় খেলে যাচ্ছে সবাই। অনেক টেবিলই খালি , তবে যেগুলোতে খেলা চলছে সেগুলোর পেছনে জটলা পাকানো লোকজন। প্রফেশনাল গ্যাম্বলারদের চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই যে তাদের কেউ হয়ত মিলিয়ন রিংগিত হেরে বসে আছে। একটা ব্লাকজ্যাক টেবিলের সামনে অনেক্ষন দাড়িয়ে খেলা বোঝার চেস্টা করলাম, একটা বিষয় খেয়াল করলাম সেটা হল এসব প্লেয়ারদের চেহারায় কোন এক্সপ্রেশন নেই, চেহারা ভাবলেশহীন। বোঝার মধ্যে বুঝি কেবল পোকার খেলাটা তাও পোকার টেবিল সংখ্যায় খুবই কম , যা আছে তাতেও লোক নেই। এখানকার বেশীরভাগ খেলোয়ারই বয়স্ক যারা প্রায় সবার একটি করে সাইডব্যাগ রয়েছে। ওসব ব্যাগে কি আছে তা রহস্যাবৃত,হয়তবা ক্যাশ রিঙ্গিত ,অথবা অন্য কোন মূল্যবান বস্ত। বাকি যারা দাড়িয়ে আছে তারা বেশীরভাগই বিভিন্নদেশ থেকে আগত টুরিস্ট , আমার মতই গরীব যারা শুধু দেখতেই আসছে।রুলেতের সামনেও প্রচুর ভিড়,এদের বেটিং দেখে এরা যে কতটা সাহসী তা ধারনা করা যায়। মুগ্ধতায় শুরু হওয়া গেন্টিংয়ের এ সফর শেষ হয় বিস্ময় দিয়ে,না গেলে হয়ত জানাই হত না এমন মানুষদের কথা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:২০

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: েখাও এক ধরনের আনন্দ, একদম খেলতে হবে তা কোন কথা নয়!

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২৯

রুহ রুহদার বলেছেন: ঠিক বলেছেন

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৩২

সোনালি কাবিন বলেছেন: প্রথম ছবিটা দারুণ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.