![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুরনো ইমেজারির ব্যবসা করি। চিত্রকল্প সস্তায় বানাই। টান টান রিমেকশিল্প, ওপরে ঝকঝক করছে স্কাই।.........লোকে পড়ে ভাবে এ তো নতুন, আনকোরা কৌটো। কিন্তু সেই একই, সেই একই বন্দিপ্রাণ ছটফট ভ্রমর....
১.
“আমরা এখন কোথায়?” চোখ না খুলেই ঘুম জড়ানো গলায় জানতে চাইলো বহ্নি। “এইতো বনানীতে…কামাল আতাতুরক রোডের মুখে…” সেই কখন থেকে জ্যামে আটকে আছে; শুক্রবার বিকেল হওয়াতে যানজট আরো বেশী। সারা সপ্তাহের ঘানিটানা মানুষগুলো প্রিয়জনদের নিয়ে আজ মুক্ত আকাশের নীচে; রাস্তা ছাড়া ঢাকায় এখন আর বেড়ানোর জায়গা তেমন কই?
চোখ খুলে বাম দিকে তাকাতেই প্যাসেঞ্জার সিটে বহ্নি সোজা হয়ে বসলো। এইটা কাকলী বাসষ্ট্যান্ড না? আশ্চর্য!!! এইখানেইতো……এইখানেই!! সামনের ওভারব্রীজটা তখন এমন লাল টকটকে রঙের ছিলো না; লাল রেলিঙ্গের লতিয়ে ওঠা বাগানবিলাসের সবুজ পাতার নক্সা দেখতে বেশ লাগছে। এদিকে আসাই হয় না; আজ অনেকদিন পরে উত্তরাতে এক বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলো ওরা। দুপুরে দাওয়াত সেরে ফিরতেই এই যানবাহনের জঙ্গলে আটকে পড়া।
পলাতক বিকেল; সন্ধ্যা ধীরে ধীরে তার আধারের সুক্ষজাল মশারী নামাচ্ছে। পাশে ষ্টিয়ারিংয়ে দুহাত রেখে মানুষটা বিরক্ত স্বরে একা একা কথা বলে যাচ্ছে “এমনিতেই জ্যাম থাকে…তার ওপরে একটু আগে মিনিট দশেক ঝপ করে বৃষ্টি নামলো…এখনতো গাড়ি আর নড়ছেই না!!!” কি অদ্ভুত!! সেইদিনওতো এমনটাই ঝুম বৃষ্টি নেমেছিলো। দিনের সময়টাও ঠিক এমনই ছিল…সেই সময় যখন দিনটা আলো আধারীর দোলাচলে থাকে। গোধূলির আলোতে পৃথিবীকে মায়াবী নদীর পারের দেশ বলে মনে হয়।
ডাকাতিয়া বৃষ্টিতে বহ্নির শাড়ি ভিজে একসা; শাদা সূতীর শাড়িতে লাল কালো ব্লক প্রিন্ট; দু’পাশে খুব সরু সোনালী জরির পাড়। বর্ষার দিনে বিকেলের আলোতে ওকে অপার্থিব দেখাচ্ছে; আকাশ অবাক হয়ে ভাবছে তার একটা মেঘ দলছুট হয়ে কখন মাটিতে হারালো। “তোমাকে দেখাচ্ছে বৃষ্টি ভেজা কাশ ফুলের মতো...” “তাই বুঝি...” শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ আর গলা মুছতে মুছতে বহ্নি ভাবছে “কে জানে...কাজল লেপটে আমাকে পুরোই হুতোম পেঁচা লাগছে কিনা!!!” “এই চোখ বন্ধ কর...আহহা...করো না!!” হতচকিত বহ্নি চোখ বন্ধ করতেই চোখের পাতায় হালকা বাতাস; নিঃশ্বাসের সুগন্ধ। “এখন চোখ খুলতে পারো...তোমার পাপড়িতে এক ফোঁটা বর্ষা আকটে ছিলো...ওকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলাম...”
ঠিক সেই সময়টাতেই সূর্য হাসলো; অন্ধকারে ডুব দেবার আগে তার মুগ্ধ সোনালী আলো পড়লো মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা এক জোড়া হৃদয়ের ওপরে। চারপাশে হঠাৎ ভিজে যাওয়া বিরক্ত মানুষের কোলাহল; গাড়ীর আওয়াজ; রিক্সার টুং টাং; বাসের তীক্ষ হর্ন। কালচে আলকাতরার বুক থেকে ওঠা ভ্যাপসা গরম; ডিজেলের গন্ধ, ময়লার পচা গন্ধ, ঘামের গন্ধ সব ছাপিয়ে সেই নিঃশ্বাসের গন্ধ, তার গায়ের পুরুষালী সুগন্ধী। সমস্ত পৃথিবীতে শুধু ওরা দু’জন মুখোমুখি; বাতাস কি সুগন্ধের ঘেরাটোপ তৈরী করেছে? ঘণ্টাখানেক ধরে পাশাপাশি রোদে হাটা ওরা দু’জন এই প্রথম চোখে চোখ রাখলো। “এক্ষুনি বিয়ে করে ফেলো না প্লিজ!! একটু ভেবে নাও...” মানুষটার গলায় এমন আকুতি এতো কোথা থেকে? মাত্র মাসখানেকের পরিচয়; আর আজকেই প্রথম সামনা সামনি দেখা। হুউউ...মাসখানেক ধরেইতো ফোনে কথা হচ্ছে।
২.
“এই শোন না...একটু কথা বলে দেখলে কি হয়? প্লিজ!!!” বহ্নি তাকালো “শোন দীপু...আমি পারবো না। তুই সামিনাকে ভালোবাসিস খুব ভালো কথা...বছর দুয়েক ধরে তোর ঘ্যান ঘ্যান শুনছি তাতেও আপত্তি নেই...কিন্তু এটা পারবো না!!!”
- তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল?
- অনেকেই আছে...সামিনাইতো আছে...
- তাকেতো এখনো ঠিকমতো ভালোবাসি কথাটাই বলতে পারলাম না...মধ্যে দিয়ে সে এই ছেলের প্রেমে ফিদা হয়ে গেলো...
- বলিস নাই কেন? এখন গিয়ে বল...আমি এর মধ্যে নেই...
- এমন কি কঠিন কাজ যে তুই এত্তো ভাব নিচ্ছিস? শুধু একটু ফোন করে ওই ছ্যামড়ার সাথে কথা বলবি...
- কথা বলে কি হবে?
- যদি ছেলে ভালো হয় তাহলে আমি আর সামিনাকে কিচ্ছু বলবো না...
- আর খারাপ হলে কি করবি? সিনেমার মতো ঢিসুম ঢিসুম...বাঁচাও বাঁচাও...নায়িকা উদ্ধার...নায়করাজ দীপু...হি হি হি!!
দীপু আর বহ্নি সেই পিচ্চিকালের বন্ধু; বাবারা একই সরকারী সংস্থায় চাকরী করার সুবাদে একই কলোনীতে বড় হওয়া। বহ্নি মাত্র মাস তিনেক হলো বুয়েট থেকে পাশ করে চাকরী শুরু করলো। দীপুরও পাশ করে যাবার কথা ছিলো। এই সামিনার প্রেমে হাবুডুবুর সাথে ল্যাগ খেয়ে খেয়ে এক বছর পিছিয়ে গেলো। আশেপাশের মানুষদের ধারনা, বিশেষ করে দীপুর মায়ের যে বহ্নির কারণেই দীপুর এই অবস্থা। দীপুর মায়ের কাছে এজন্য কয়েকবার বকা খেয়েছে ও “তুমি দেখো না...ও কিভাবে ফেল করে?” আজব!! ভাবখানা যেন দীপুর দেখভালের দ্বায়িত্ব বহ্নির।
দীপুর গোলগাল আদুরে মুখের দিকে তাকিয়ে একটু মায়া লাগছে বহ্নির; এমন পাগলের মতো কেউ প্রেমে পড়ে...তাও আবার একতরফা...সামিনাতো জানেই না। দীপু হাসলো; বড় বড় চোখের নীচে ভাঁজ; দীর্ঘ ছায়াময় পাপড়ি; থুতনিতে ভাঁজ পড়েছে। ছেলেটার হাসিটা এতো সুন্দর; হাসলে চোখগুলোও হাসে; এখন অবশ্য চোখেরা একটু বিষন্ন।
- আচ্ছা...ঠিক আছে...ফোন নম্বর দিস...কিন্তু কল দিয়ে কি বলবো? তোর বা সামিনার কথা বলবো?
- তুই না খুব ভালো কিন্তু গাধী...ভালো গাধী...আমাদের কথা বলবি কেন?
- তাহলে কি বলবো? বলে দে কি বলবো...আমার ভয় লাগে যদি অপমান করে...আজেবাজে কথা বলে?
- তোকে আজেবাজে কথা বলবে? তাও আবার ফোনে? এমন লোক এখনও জন্মায় নাই!! তুই যা সুন্দর করে কথা বলিস...তোর হচ্ছে “প্লেগার্ল মাউথ”...
বহ্নি রাগতে গিয়েও হেসে ফেললো। বুয়েটের পোলাপান এতো ফাজিল!!! কি একটা নাম দিয়েছে “প্লেগার্ল মাউথ”। ও নিজেও জানে না যে ফোনে ওর কন্ঠ শুনে এতো মুগ্ধ হওয়ার কি আছে? ও গুছিয়ে কথা বলে তা জানে কিন্তু ফোনের ব্যাপারটা বোঝে না...হয়তো দূরালাপনি এক ধরনের রহস্য তৈরী করে বলেই সবাই মুগ্ধ হয়।
দীপুর কাছে “প্লেগার্ল মাউথ” শুনে প্রথমে বাজে লেগেছিলো “ছি!! আমি বুঝি প্লেগার্ল!!!” “আরে না তোর যা চেহারা আর ফিগার...তোরে কেউ ভুলেও প্লেগার্ল বলবে...তোর গলাটা যে ফোনে কি দারুন শোনায়!! তুই যে আল্লাদী করে হ্যালো বলিস...হেলাহেলি না আমারতো মনে হয় ফোনের ওই পাশের মানুষের শুয়ে পড়তে ইচ্ছা করে...হা হা!!”
তা ঠিক!! বহ্নি বড় সাধারণ মেয়ে...খুব আটপৌরে...অনেকের ভিড়ে চোখে পরার মতো কিছু নয়। সাদামাটা চেহারা...বাঙ্গালী মেয়েদের মতো মায়াকাড়া একটু সরল চোখ...উজ্জ্বল শ্যামলা, অনেকটা হালকা পোড়া চিনেবাদামের খোসার মতো রঙ...কোমরছোঁয়া সামান্য ঢেউতোলা ঘনকালো চুল। একটু ভারী গড়ন; শাড়ী পড়লে যতটুকু বাঁক থাকলে ভালো দেখায় শরীরে সেটুকু আছে। সুন্দরের মধ্যে ওই চোখ দুটোই যা...আত্মীয়রা বা বন্ধুরা কাজল দিলে চোখের একটু প্রশংসা করে। আর ওই ফাজিল দীপু বলে “তোর চোখতো গরুর মতো...কাজল দিলে অবশ্য একটু হরিণী মায়াবন বিহারিণী দেখায়...”
- ফালতু কথা বন্ধ কর...ছেলের নাম কি? কি করে?
- ছেলে ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ে...সামিনার ডিপার্টমেন্টেই...মাইক্রোবায়োলজি। তবে সামিনার চেয়ে এক বছরের সিনিয়র। আমাদের এক বছরের ছোট হবে। নাম বদিউল।
- বদিউল? ‘বদি’ ‘বদি’ বলে কোন মধুর কথা বলা যায় নাকি? আমি পারবো না...
“আরে ডাকনাম আছেতো...তোর খুব পছন্দের নাম!” দীপুর মুখে রহস্যময় হাসি। “কি নাম? রুদ্র? রুদ্র আমার সবচেয়ে প্রিয় কবি।“
- ধুর!! তোর জীবনে যে প্রতিদিন দীপ জ্বেলে যায় সেই ‘দীপু’...
“হি হি হি!!!” বহ্নি হাসি থামাতে পারছে না। “তোর নামে নাম? দীপু নম্বর টু!! দোস্ত মন খারাপ করিস না। সামিনা তোর না হোক তোর নামের প্রেমেতো পড়েছে।“
৩.
“হ্যালোওও...” বহ্নির নার্ভাস লাগছে; ইচ্ছে করেই গলাটা একটু আদুরে করলো।
- হুমম...কাকে চাচ্ছেন?
- হ্যালোওওও...কে বলছেন?
- আপনি কল দিয়েছেন...আপনি কাকে চাচ্ছেন?
বহ্নি ঠিক করে রেখেছিলো যে রং নম্বর বলবে। কিন্তু এই মানুষটার কণ্ঠস্বর এতো অদ্ভুত সুন্দর যে ওর কথা এলোমেলো হয়ে গেলো।
- আপনি কি দীপু? –হ্যা...আমি কি তোমাকে চিনি?
বহ্নির জানে ওর গলা কিশোরী মেয়েদের মতো শোনায়। “ঘুম থেকে উঠে খুব একা লাগছিলো...চোখ বন্ধ করে আপনার নম্বরে কল দিলাম...ভেবে রেখেছিলাম নাম দীপু হলে কথা বলবো...” কি যে ফালতু একটা কথা!! হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস থেকে কপি মারা। এই ছেলে বুঝে না ফেললেই হয়। ভাবতে ভাবতেই “শোন মেয়ে...আমিতো এখন একটু ব্যস্ত আছি...রাতে ফোন দাও।“
- আপনি আমার সাথে আসলেই আবার কথা বলবেন?
- হুমম...বলাতো যায় না কোনদিন তোমার ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করে...দুপুরে আর ঘুমাবে না কেমন?
বহ্নি নীচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো; হুমায়ুন আহমেদের লাইন...ধরা খেয়েছে!! তবে মাছ বঁড়শিতে গেথেছে মনে হয়। মজা লাগছে কিন্তু ভালোও লাগছে...দীপু নম্বর টুয়ের গলাতো ভয়াবহ সুন্দর।
রাতে ফোন করতেই ওপাশে ফিসফিসিয়ে “হ্যালো...কি খবর?” “আপনি ফিসফিস করে কথা বলছেন কেন?” “তুমি বলছো তাই আমিও বলছি...মনে হচ্ছে মুখোমুখি অন্ধকারে বসে আছি... মনে হয় শুধু আমি, আর শুধু তুমি/ আর ঐ আকাশের পউষ-নীরবতা/রাত্রির নির্জনযাত্রী তারকার কানে কানে কত কাল/ কহিয়াছি আধো আধো কথা!” বহ্নি আসলেই খেয়ালই করেনি যে ও একটু নীচুস্বরে কথা বলছে; কেন কে জানে? রাত বেড়েছে তা ঠিক কিন্তু একটু অপরাধবোধের জন্য, নিষিদ্ধ কোন ভাললাগার জন্যই কি এমন ফিসফিসিয়ে কথা বলা?
ও গলার স্বর যথাসাধ্য স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। এমন সুন্দর কবিতা আবৃত্তির পরে মাতাল মাতাল লাগছে “আচ্ছা আপনি কি কবিতা আবৃত্তি করেন?” “কবিতা পড়ি…কবিতা ভালোবাসি…মাঝে সাঝেতো আবৃত্তি করাই হয়…” “আপনার প্রফেশনালি আবৃত্তি করা উচিত…অদ্ভুত সুন্দর আপনার কণ্ঠ!!”
- আচ্ছা…অদ্ভুত সুন্দর? সেটা কেমন বুঝিয়ে বলতো!
- বোঝানো কঠিন! তবে আপনার কথা শুনলে মনে হয় আমি গভীর অরন্যে টলটলে জলের সামনে বসে আছি…চারপাশে তীব্র নীরবতা। শব্দগুলো জলে কাঁপন তুলে আমার কাছে আসছে…আপনি পাশে অথচ কথাগুলো কেন যেন অনেক দুর থেকে ভেসে আসছ। কি ভাবে এমন হয়?
“বাহ!! তুমিতো খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলো!” ওপাশের কন্ঠে মুগ্ধতা ঝরে পড়লো। “তোমার কথা শুনলে কি মনে হয় জানো?” বহ্নির সমগ্র স্বত্বা উন্মুখ হয়ে উঠলো। “মনে হয় একটা কিশোরী মেয়ে মায়ের বকা খেয়ে গালে হাত দিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। মা এসে আদর না করলে তার অভিমান ভাঙ্গবে না। সরল আদুরে শব্দরা…কিন্তু তারপরেও মন হুহু করতে থাকে…কৈশোরের মতোই অধরা। বিষণ্ণ সুন্দর…হঠাৎ মিলিয়ে যাবে…তুমি কি আসলেই তেমন? অধরা?”
বহ্নি ডুবে যাচ্ছে; খুব সুন্দরের সামনে নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। নিজেকে ধাক্কা দিয়ে জাগালো ও “আমি কিন্তু মোটেও কিশোরী নই…আপনি ইচ্ছেমতো আমাকে তুমি বলছেন!!” বহ্নির দীপুকে কিছু লুকাতে ইচ্ছে করেনি; সব সত্যি বলেছে শুধু দীপু নম্বর ওয়ানের কথা ছাড়া।
- হুমম…বয়সে বড় একজনকে তুমি বলে ফেললাম কিন্তু রুল নম্বর ১৭ তো মানতেই হবে! বহ্নি অবাক “রুল নম্বর ১৭টা আবার কি?” “আমার কিছু নিয়ম আছে…নম্বর দেয়া…কথা বলতে বলতে শিখে যাবে। ১৭ নম্বর বলে যে ‘কাউকে তুমি বা তুই বলা হলে বাকীজীবন সেটাই বলতে হবে’…”
-বাহ…খুব নিজের সুবিধামতো নিয়ম বানানো হচ্ছে!!! হি হি!! এক নম্বর রুল কি বলে শুনি?
- এক নম্বর রুলতো পালন করা সহজ “দীপুকে খুব খুব ভালোবাসো।“
বহ্নি মনে মনে বললো “আসলেই সহজ!!!” কথার পিঠে কথা হেঁটেছে সারারাত সারাদিন। খুব সহজেই ওরা বন্ধু হয়েছে। মাঝে মাঝে ফোনের দু’পাশে চুপচাপ দু’জনে; নিঃশ্বাসের শব্দ কখনো। অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পরও “এই শোন! এখন রাখি?" "না প্লিজ, আরেকটু থাকি?" ওরা পরষ্পরের নিঃসঙ্গতার সতীন আর নিরবতার সঙ্গী! এরও বেশী কিছু কি? নাকি এরচেয়ে বেশী কাছে আসা যায় না?
৪.
- দীপু শোন আমার আর ভালো লাগছে না...আমি আর ওই দীপুর সাথে কথা বলতে পারবো না...
- কেন সমস্যা কি? সে কি সামিনার কথা কিছু বলেছে?
- আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম তার কাউকে ভালো লাগে কিনা। সে বলেছে একজনকে ভালো লাগে কিন্তু নাম বলেনি।
- আচ্ছা ছেলেটাকে তোর কেমন লাগে? সামিনাকে কষ্ট দেবে নাতো? তোর সাথে কি কোন আজেবাজে কথা বলেছে বা প্রেম প্রেম কথা?
বহ্নি কি ভাবে বলবে যে দিপু নম্বর টুয়ের কথা ভাবলে তার অস্থির লাগে। কি অদ্ভুত দোটানায় পড়েছে ও!!! বহ্নি চায় দীপু নম্বর টু ওকে ভালোবাসুক কিন্তু সামিনাকে বাদ দিয়ে ওর কাছে এলে যে ওকে বাজে ছেলে ভাবতে হয়। কথা এড়িয়ে বহ্নি বললো “নারে...ভয় লাগে যদি মা বাবার কানে যায়তো আমার খবর আছে...” “হা হা!! সেই ক্লাস নাইনের মাইর এখনো ভুলতে পারিসনি...হা হা!!”
ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ে রং নম্বরের ফোন এসেছিলো; সেই ছেলে বহ্নির সাথে কথা বলে মুগ্ধ; মাঝে মাঝে ফোন করতো। বহ্নিও বোকার মতো গল্পে গল্পে নাম ঠিকানা সব বলে দিয়েছিলো। কিছুদিন পরে ওই ছেলে তার মামাকে নিয়ে হাজির; সে বহ্নিকে বিয়ে করতে চায়। না দেখে কথা শুনেই সে বিয়ে করতে প্রস্তুত; মা এমন মেরেছিলো যে এখনো ভাবলে ভয় লাগে। “তেমনটা হবে কি ভাবে? তুই কি আর ওই ছেমড়াকে তোর আসল পরিচয় দিয়েছিস।“ বহ্নি মাথা নেড়ে চুপ করে থাকলো...ও যে পরিচয়ের চেয়েও অনেক বেশী কিছু দিয়ে দিয়েছে।
- এই যে শোন...আমার না একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে!!
- তাই নাকি? হুমম...সেকি এই দীপুরামের চেয়েও সুপাত্র?
- ধ্যাত!! খালি ফাজলামি...ছেলে ইঞ্জিনীয়ার...বাইরে পড়তে যাচ্ছে...
- বাইরে? বাইরে তোমাকে মানায় না বহ্নি...বিয়েটা কোর না!!!
- কেন? বাইরে সমস্যা কি?
- তুমি জারুল ফুল মেয়ে...এখানকার উথাল পাথাল জোছনা ছাড়া ফুটবে না যে..
- তাই বুঝি? আর তুমি কি শুনি?
- আমিই যে তোমার জোছনা জাল!!!
বহ্নি ছটফটিয়ে উঠেছিলো “আজ রাখি...খুব ঘুম পাচ্ছে...” ও কি ভাবে বলবে মানুষটাকে? কি ভাবে বলবে যে ও আসলে তার ওপরে গোয়েন্দাগিরি করার জন্য ফোন করেছিলো। বহ্নি খুব বড় একটা ব্যাপার গোপন করেছে; ও জোছনায় জারুল ফুল নয়, ও জোছানার ফাঁকে উঁকি দেয়া নিকষকালো অন্ধকার।
সারারাত জেগে থেকে পরের দিন বাবা মাকে বলেছিলো বিয়ের ব্যাপারে আগাতে ও রাজি। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই বিয়ের কথাবার্তা অনেকদূর এগিয়ে গেলো; বহ্নিকে ওদের পছন্দ হয়েছে বেশ। ছেলেটাকেও বহ্নির খারাপ লাগেনি কিন্তু ছেলেটাতো দীপু নয়। আশ্চর্য!! দীপু নম্বর ওয়ানকে বলতেই সেও একই কথা বললো “বাইরে যাবি ক্যান? বিয়ে করবি ভাল কথা...দেশে থাকা ছেলেকে কর। তুই দুরে গেলে আমার কি হবে? আমার ঘ্যানঘ্যান কে শুনবে?” “তোর ঘ্যান ঘ্যানের জ্বালাতেইতো আমার দেশান্তরী হতে ইচ্ছা করে!!” “আমাকে ছেড়ে কোথায় পালাবি সুন্দরী? মুহাহা!!” অসহ্য!!! বহ্নির দুইটা দীপুকেই অসহ্য লাগছে।
দীপু নম্বর টুকে জানাতেই ”বিয়ে যখন করবেই...তার আগে একবার কি তোমাকে দেখবো না? কবে থেকে দেখতে ইচ্ছা করছে আর এখনতো অনেক দুরে চলে যাবে...” বহ্নির অফিস গুলশানে; বনানীতেই তাই দেখা হলো। সেই বিকেলটা; স্বপ্নের মতো সুন্দর কিছু সময়। বহ্নি আর পারছিলো না; অপরাধবোধের বোঝা বড্ড ভারি হয় যখন কেউ ভালবাসে। আজকেই সব বলে দেবে ও।
রাতে ফোন করতেই “কাশফুল কেমন আছো?” মানুষটা এতো আদর করে কেন কথা বলে। ওর চোখে জল এলো; কিন্তু আজই হোক সব লুকোচুরির শেষ। সব বলার পরে ওপাশে নিস্তব্ধতা; নিঃশ্বাসের শব্দও নেই। বাতাস আজ বড্ড ভারী লাগছে...অনন্তকাল কি ওরা ফোন ধরে আছে। একসময় বহ্নি ধরা গলায় বললো “রাখি তবে?” “শোন মেয়েটা...খুব মন দিয়ে শোন...কেউ কাউকে খুব ভালো না বাসলে তার জন্য মিথ্যে বলে না। তুমি দীপুকেই ভালোবাসো...কোন এক দীপুকে!!!”
৫.
কোন কোন মানুষ শুধু একটা কথা, একটা দৃশ্যের জন্যই সারাজীবন মনের কোথাও না কোথাও থেকে যায়। আজও বাতাস যখন হঠাৎ ফুঁ দেয়, ঘাড়ের পাশের চুল নিয়ে খেলা করে বহ্নিকে সেই নিঃশ্বাসের গন্ধ আচ্ছন্ন করে। কতো বছর হয়ে গেল...অথচ এখনও!!!
“এই মেয়ে...আরে কি ব্যাপার কই ডুব দিলে?” বহ্নি চমকে তাকাতেই দীপুর হাসি হাসি চোখ; চোখেরা বলছে ধরা পড়ে গেছে ও। কিন্তু দীপুর কাছে বার বার ধরা দিতেই যে বহ্নির ভালো লাগে।
(১০/০৭/২০১৬)
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২৪
শিখা রহমান বলেছেন: জুন সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি বলেছেন আর খুব সুন্দর করে বলেছেন বলেই কিন্তু আমি ব্লগে নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছি। শুভকামনা আর অনেক ধন্যবাদ।
২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০৭
সায়ান তানভি বলেছেন: ভালো লেগেছে, নিয়মিত লিখুন
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৩২
শিখা রহমান বলেছেন: সায়ান অনেক ধন্যবাদ আমার এখানে আসার জন্য। আপনি খুব ভালো লেখেন। আপনার ভালো লেগেছে শুনে মন ভরে গেলো। শুভকামনা
৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:২৩
প্রথম স্পর্শ বলেছেন: কোন কোন মানুষ শুধু একটা কথা, একটা দৃশ্যের জন্যই সারাজীবন মনের কোথাও না কোথাও থেকে যায়। আজও বাতাস যখন হঠাৎ ফুঁ দেয়, ঘাড়ের পাশের চুল নিয়ে খেলা করে বহ্নিকে সেই নিঃশ্বাসের গন্ধ আচ্ছন্ন করে। কতো বছর হয়ে গেল...অথচ এখনও!!!
“এই মেয়ে...আরে কি ব্যাপার কই ডুব দিলে?” বহ্নি চমকে তাকাতেই দীপুর হাসি হাসি চোখ; চোখেরা বলছে ধরা পড়ে গেছে ও। কিন্তু দীপুর কাছে বার বার ধরা দিতেই যে বহ্নির ভালো লাগে।
অনেক ভালোলাগা জানবেন
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:২৬
শিখা রহমান বলেছেন: প্রথম স্পর্শ আপনি আমার খুব পছন্দের লাইনগুলোকেই উদ্ধৃত করেছেন। অনেক ধন্যবাদ আর ভালোলাগা পড়ার জন্য ও সুন্দর মন্তব্যের জন্যে।
৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪২
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: দুইটি প্যারা পড়লাম , বড় অনেক গল্পটি তাই প্রিয়তে রাখলাম পরে পড়ব।
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:২৮
শিখা রহমান বলেছেন: মাহমুদুর রহমান সুজন অনেক ধন্যবাদ। সময় পেলে পড়ে জানাবেন কিন্তু কেমন লাগলো। আশা করছি আপনার সময়টার যোগ্য ব্যবহার হবে। শুভকামনা আর ভাল থাকবেন।
৫| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:২৬
বিজু চৌধুরী বলেছেন: ভাল লাগল। আমি আপনার লেখার বরাবরই ভক্ত। ভাল থাকবেন।
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৪
শিখা রহমান বলেছেন: বিজু আমিও তোমার লেখার ভক্ত। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থেকো আর লেখার জন্য শুভকামনা।
৬| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৮
আনু মোল্লাহ বলেছেন: গল্পটি খুবই সুন্দর লেগেছে। পড়ে অনেক আনন্দ পেয়েছি।
শুভেচ্ছা রইল।
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৭
শিখা রহমান বলেছেন: আনু মোল্লাহ আপনি পড়ে আনন্দ পেয়েছেন শুনে ভাল লাগলো। কাউকে আমার লেখা আনন্দ দিয়েছে ভাবলে লেখাটা সার্থক মনে হয়। আপনাকেও শুভেচ্ছা আর সাথে থাকবেন।
৭| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:১৭
জাহিদ হাসান বলেছেন: আহ.. সেই প্রিয় দীপু নাম্বার টু
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:১০
শিখা রহমান বলেছেন: জাহিদ হাসান ঠিক বলেছেন দীপু নাম্বার টু কার না প্রিয় তবে আমার লেখায় কোন দীপু বহ্নিকে পেলো মনে হয় আপনার? নাম্বার ওয়ান নাকি টু?
পড়ার জন্য ধন্যবাদ আর শুভকামনা রইলো।
৮| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২১
লিজালিজা বলেছেন: অসাধারণ লেখনি আপনার,আপনার লেখা পড়ে আমি স্বপ্নের জগতে চলে গেছি। এরকম আরো গল্প চাই।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৮
শিখা রহমান বলেছেন: লিজালিজা অনুপ্রেরণার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার সুন্দর মন্তব্য আর ভালোলাগার জন্য লেখার চেষ্টা করবো। শুভকামনা আর ভাল থাকবেন, সাথে থাকবেন।
৯| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৫
আমি ইহতিব বলেছেন: শেষে এসে কোন দীপু কথা বললো বুঝলামনা মানে কোন দীপুর সাথে আছে বহ্নি ?
ভালো লাগলো গল্প।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪০
শিখা রহমান বলেছেন: আমি ইহতিব ধন্যবাদ পড়ার জন্য। কোন দীপুর সাথে আপনি বহ্নিকে দেখতে চান? আপনি যে দীপুকে বহ্নির পাশে চাইছেন তাকেই ভেবে নিন। শুভকামনা য়ার ভাল থাকবেন।
১০| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০১
Ridwan Raihan বলেছেন: আমার খুব ভালো লেগেছে ।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:৫৬
শিখা রহমান বলেছেন: Ridwan Raihan আপনার ভালো লেগেছে শুনে মন ভালো হয়ে গেলো। অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। শুভকামনা আর সাথে থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:১৪
জুন বলেছেন: আরেকটি অসাধারন গল্প পড়লাম শিখা রহমান । আপনার লেখনীতে মুগ্ধ হচ্ছি বারবার ।
অনেক ভালোলাগা জানবেন
+