নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতা প্রেমী; একটু এলোমেলো; উড়নচণ্ডী; আর বই ভালবাসি। শব্দ নিয়ে খেলা আমার বড্ড প্রিয়। গল্প-কবিতা-মুক্ত গদ্য সব লিখতেই ভালো লাগে। \"কেননা লেখার চেয়ে ভালো ফক্কিকারি কিছু জানা নেই আর।\"

শিখা রহমান

পুরনো ইমেজারির ব্যবসা করি। চিত্রকল্প সস্তায় বানাই। টান টান রিমেকশিল্প, ওপরে ঝকঝক করছে স্কাই।.........লোকে পড়ে ভাবে এ তো নতুন, আনকোরা কৌটো। কিন্তু সেই একই, সেই একই বন্দিপ্রাণ ছটফট ভ্রমর....

শিখা রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টিজল আমাকে ঘিরো না

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫২



বহ্নির মেজাজ খারাপ লাগছে। তিন দিন ধরে বৃষ্টি। এ বছরতো প্রকৃতি ছোট্ট বালক (El Niño); সারাক্ষণ কারণে অকারণে খালি চোখের জল ঝরাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার শীতকেলে বৃষ্টিতে আকাশ থেকে জল বেয়ে শীত নেমে আসে। রাত বেড়েছে অনেক; ঘুম আসছে না; আজ ছুটি থাকলেও বহ্নি সারাদিন ঘর থেকে বের হয়নি। শীতকালে বৃষ্টি হলে নিজেকে কেন যেন কয়েদী মনে হয়। কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না, কিচ্ছু করতে ইচ্ছে করে না, কেবল মন কেমন করে। বৃষ্টি ওকে বড় অস্থির, আর উচাটন করে।

বিছানার পাশে মস্ত বড় দেয়াল জোড়া জানালা; ব্লাইন্ড তোলা। কাঁচের ওপাশে রুপসী হাইওয়ে ওয়ান; গাড়ীর হুসহাস শব্দ আর জলের কূলকুল বয়ে চলার আওয়াজ। ঘষা আলোতে জানালার কাঁচে জলের আকাঁবুকি দেখতে ভালোই লাগছে। জলের বিন্দুদের ছোঁযাছুয়ি খেলা; ছোঁয়া মাত্র হুড়মুড়িয়ে গড়িয়ে পড়া; ঠিক যেন পার্কে ঢেউতোলা স্লাইড বেয়ে নামা। জলের বিন্দুরাও কি পরষ্পরের প্রেমে পড়ছে? এভাবেই তো দুজন মানুষ কাছাকাছি আসার পরে সারা দুনিয়া ভুলে প্রেমে পড়ে।

মাঝে মাঝে জোর বাতাসে বৃষ্টির ঝাপটা মুছে দিচ্ছে কাঁচে আঁকা জলের কাব্য। এই বৃষ্টি টিনের চালে গুরু গম্ভীর আওয়াজ তোলা ঝমঝমে বৃষ্টি না; সে বৃষ্টিতে চীৎকার করে কাঁদা যায়; জলের আওয়াজ ঢেকে দেয় সব দুঃখ। এই বৃষ্টি রিমঝিম বৃষ্টিও না; সে বৃষ্টিতে রিক্সায় হুড ফেলে ভালোবাসার হাত ধরা যায়। এই বৃষ্টি চারপাশে বিষন্নতার ঘেরাটোপ আর একাকীত্বের গরাদ তৈরী করে।

জলবিন্দুদের কাছে আসার খেলা দেখতে দেখতে হঠাৎই জানালায় বরফিকাটা গ্রীল। ক্লাস নাইনে পড়া কিশোরী মেয়েটা বৃষ্টি নামাতে দৌড়ে এসে জানালার পাল্লা বন্ধ করতে গিয়ে থমকে গেছে। বনানী কলোনীর চারতলা বিল্ডিংয়ের পাশে কংক্রিটের ভেজা রাস্তা; ছাই সাদা রঙের রাস্তা শেষে কলোনীতে ঢোকার বিশাল দুয়ার। স্ট্রীট লাইটের হলদে আলোয় মায়াবী সন্ধ্যা; বৃষ্টির গুঁড়ো গুঁড়ো জলে কুয়াশার মায়াজাল। সেই ভেজা ভেজা আলো আধারিতে এক যুবক একাকী হেঁটে যাচ্ছে; পিঠে কালো বুকব্যাগ; ঝুকে ঝুঁকে হাঁটছে মানুষটা; বড় ক্লান্ত। কেন কে জানে? ব্যাগের ভারে নাকি জীবনের ভারে? কি বিষন্ন নিঃসঙ্গ একজন মানুষ!!!

বহ্নির ইচ্ছা করেছিলো সব ফেলে ওই অজানা মানুষটার হাত ধরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে হাঁটে। স্মৃতিরা আসলেই বড় উচ্ছৃঙ্খল। আজও এমন বৃষ্টি নামলে বহ্নির সব কিছু ফেলে, এই সাজানো সংসার, সন্তান, নিজের মানুষ, সব ফেলে ওই অজানা যুবকের হাতে হাত রাখতে ইচ্ছা করে।

মানুষটা জানেও না; সে মানুষটাকে বহ্নি চেনেও না। অথচ সেই জলরঙ্গা সন্ধ্যার বিষন্ন একাকী যুবক এতো এতো বছর পরেও বৃষ্টি নামলেই ওকে অধিকার করে। এ সময়টা বহ্নির নিজেকে বড্ড অচেনা মনে হয়; ভীষন ভয় লাগে।

আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে কি দেখবে বহ্নি? বৃষ্টিভেজা রাতে সব পেছনে ফেলে পলায়নপর ওই মানুষটা কি ও নিজেই?

© শিখা রহমান (০৩/১১/২০১৬) (ছবি ইন্টারনেটে সংগৃহীত)

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৬

নূর-ই-হাফসা বলেছেন: সুন্দর লেখা । আজকের প্রকৃতি টাও কেমন যেন । বিষন্নতার ঝড় তুলছে ।
মন খারাপ করা দিনে গল্পটি ভালো লাগলো ।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৫

শিখা রহমান বলেছেন: নূর-ই-হাফসা এলোমেলো এই কথাগুলো গতবছর শীতে লিখেছিলাম। এখানে বৃষ্টি হয় শীতে। খুব বিষন্ন আর নীল এই শীতকেলে বৃষ্টির দিনগুলো।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ আর মন্তব্যের জন্যেও। শুভকামনা।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৯

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে কেন যেন মনে হয় আপনি একজন জাত লেখিকা। আপনি কোন উপন্যাস লিখেছেন? না লিখে থাকলে এখুনি শুরু করতে পারেন। আপনার লেখার পাঠকের অভাব হওয়ার কথা নয়।
আজকের মন বিষণ্ণ করা সন্ধ্যায় আপনার লেখাটা পড়ে মনটা আরও উদাস হয়ে গেল।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪১

শিখা রহমান বলেছেন: সম্রাট ইজ বেস্ট B:-) লেখালেখি করি মাত্র দু'বছর হলো, তাও শখের বশে। আপনার মন্তব্যে একটু অভিভূত, একটু লজ্জিত আর একটু ভালোলাগা!! উপন্যাস লিখিনি কোন। বড্ড অস্থির মানুষ আমি। একটু ধৈর্য বাড়াতে পারলেই লেখার ইচ্ছে আছে।

হুউউউ....বুঝতে পারছি। জানি আজ আপনার মনটা ভালো নেই। কবিতা লিখতে বসে যান অথবা কবিতা পড়ুন। মনখারাপ থাকলে আমি কবিতা পড়ি। কবিতার কষ্ট ভুলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। আর জানেনতো মানুষ কষ্ট দিলেও শিল্পের কাছে সবসময়েই আশ্রয় পাওয়া যায়?

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। শুভকামনা নিরন্তর!!

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: শিখা রহমান ,




এটা যখন আমি পড়ছি তখন আপনার ফেলে আসা দেশটার আকাশেও ঝিরঝিরে জলবিন্দু বেয়ে পৌষ আগমনীর শীত নামছে ।
আজ সারাটা সকাল থেকেই আকাশটা থেকে থেকে কাঁদছে । সমুদ্রে জেগেছে ঝড় । সে ঝড়ের কাঁপন মেঘেদের গায়ে,পাতায়-পল্লবেও । তবে বহ্নির মতো সে মেঘজলের খেলায় একাকী মজেনি কেউ বিষন্নতায় । জানালার ওধারে চোখ রেখে বৃষ্টিধারার মিলেমিশে এক হয়ে যাওয়ার গল্পটুকুও পড়ে দেখছেনা কেউ । ব্যস্ত নগরী জলকাদায় মিশে থকথকে । জীবনযুদ্ধে দৌঁড়ে চলা মানুষগুলোর চোখেমুখে যেন বিতৃষ্ণার ঝাপটা ।
এগুলো, কিছু নেই অথচ অনেক কিছু নিয়ে একটি মন ঘিরে রাখা লেখার অন্যপিঠ।

ভালো লাগলো ।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:০১

শিখা রহমান বলেছেন: আহমেদ জী এস ভাগ্যিস আপনি আমার লেখা পড়ে মাঝে মাঝে মন্তব্য করেন। আপনার মন্তব্যগুলো যে আমার লেখার চাইতেও সুন্দর হয়, এই যেমন এই মন্তব্যটা। আপনার মন্তব্যগুলোও কবিতার মতো। আমি কবি নই। তাই ধার করে কবিতা দিলাম। এত্তো ধন্যবাদ আর বৃষ্টিভেজা শুভেচ্ছা।

"বিরহ ঠিক কেমন হবে... দরজি নিলেন চোখের মাপ
কোথাও একটা মন ভেঙেছে। আমরা ভাবি নিম্নচাপ।

কোন ছাদে কে একলা হলো, জ্বর গায়ে জল কী অন্যায়
মেঘ পাঠালো খেতাব তাদের, ঝড়কে যারা দিব্যি দেয়।

গাছ নুয়ে তার নিচ্ছে খবর, ঝাপটা হাওয়া দিচ্ছে দোষ –
কোথাও একটা চুল ভিজেছে। আমরা ভাবি অসন্তোষ।

হেমন্তে এই ঝমঝমানো, শীত কি তবে বর্ষাতির?
যার তাকানোয় আটকে ঋতু, নাকছাবিতে সময় স্থির,

তার জন্যেই এই ঝামেলা, ঝড়বাদলের পূর্বাভাস
জিদ্দি একটা সকাল তাকে শাসায়, যদি ফের তাকাস -

জল বুঝে নিক সম্মতি, আর ঠোঁট বুঝে নিক ঠোঁটের মন...
কোথাও একটা প্রেম হয়েছে। আমরা ভাবি সাইক্লোন।" --- শ্রীজাত

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বৃষ্টিভেজা দিনে বৃষ্টিজলের লেখা এক অন্যরকম অনুভব জাগাল :)

ভাল লাগল

+++

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১৯

শিখা রহমান বলেছেন: বিদ্রোহী ভৃগু ধন্যবাদ। অনেকদিন পরে আপনার মন্তব্য পেলাম। শুভকামনা। "দূরে অতীতের মেঘ, শহর মানিয়ে নেয় জলে...
বাতাস ছুটেছে জোর। কে যেন বৃষ্টির কথা বলে।"

৫| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৬

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: গল্পটা ক্যালিফোর্নিয়ার, তবে আজকে আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথেও পুরো মিলে গেছে।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:২১

শিখা রহমান বলেছেন: গিয়াস উদ্দিন লিটন ধন্যবাদ। শুনলাম যে দেশেও গত দু'দিন বৃষ্টি হলো। একটু অবাক লেগেছে। এখানে শীতে বৃষ্টি হয়। আমার মোটেও শীতকেলে বৃষ্টি ভালো লাগে না, খুব বিষন্ন।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা।

৬| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা চমৎকার হয়েছে।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:২৩

শিখা রহমান বলেছেন: রাজীব নুর আমার লেখায় আপনার প্রথম মন্তব্য তাই না? আমার ব্লগে স্বাগতম। অনেক ধন্যবাদ আর শুভকামনা।

৭| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৪

জাহিদ অনিক বলেছেন:


বৃষ্টি মানব মনে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বলেছিলেন।


ভালো লাগলো শিখা রহমান।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৪

শিখা রহমান বলেছেন: জাহিদ অনিক বৃষ্টি আমার খুব প্রিয়। বৃষ্টি নিয়ে আমার অনেক গুলো লেখা হয়ে গেছে নিজের অজান্তেই।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা।

৮| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২০

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এই মরুর দেশেও বৃষ্টির দেখা মিলে, এই শীতকালেই।। কারন গরমের ৫০+য়ে কারো কারো কান্না লু তেই মিশে যায়!!
আসলে আমাদের মত এটোকাঁদায় মাখামাখির মানুষদের কি আর ইট-পাথরের জঙ্গলে মন ভরে?? রে না বলেই স্মৃতির পরশ পেলেই, আমরা হারিয়ে যাই, নিজেদের মাঝে, নিজেদের মত করেই।।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৮

শিখা রহমান বলেছেন: সচেতনহ্যাপী বৃষ্টি আমাকে সবসময়ই নষ্টালজিক করে। আর শীতকেলে বৃষ্টি বড় বিষন্ন করে, কষ্টের স্মৃতিই মনে পড়ে বেশী।

আপনি খুব সুন্দর কাব্যিক মন্তব্য করেন সবসময়েই। অনেক ধন্যবাদ আর বৃষ্টি ভেজা শুভেচ্ছা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.