নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতা প্রেমী; একটু এলোমেলো; উড়নচণ্ডী; আর বই ভালবাসি। শব্দ নিয়ে খেলা আমার বড্ড প্রিয়। গল্প-কবিতা-মুক্ত গদ্য সব লিখতেই ভালো লাগে। \"কেননা লেখার চেয়ে ভালো ফক্কিকারি কিছু জানা নেই আর।\"

শিখা রহমান

পুরনো ইমেজারির ব্যবসা করি। চিত্রকল্প সস্তায় বানাই। টান টান রিমেকশিল্প, ওপরে ঝকঝক করছে স্কাই।.........লোকে পড়ে ভাবে এ তো নতুন, আনকোরা কৌটো। কিন্তু সেই একই, সেই একই বন্দিপ্রাণ ছটফট ভ্রমর....

শিখা রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জুঁইফুলের চেয়ে শাদা ভাতই অধিক সুন্দর

০১ লা মে, ২০১৮ রাত ১:৫২


১.

“আফা!! ভাইয়ার জন্য ফুল নিবেন না?” মহাখালীর রেল ক্রসিংয়ের কাছে জ্যামে গাড়ীতে বসে থাকা অরনী একটু চমকে গেলো। একটু হাসিও পেলো, ওকে দেখেই কি বোঝা যাচ্ছে যে সে একজন ভাইয়ার? জ্যামে আটকালে গাড়ীর জানালায় সবসময়েই টোকা পড়ে। ও সাধারনত তাকায় না; তাকালেই ফকিরদের কাকুতি মিনতি বেড়ে যায় আর ওর মন গলে যায়। ও টাকা না দিয়ে পারে না। অনেকবার এ জন্য শাহেদের কাছে বকুনি খেয়েছে “ভিক্ষা দিয়েতো তুমি ওদের কাজ না করার ইচ্ছাটাকে বাড়িয়ে দিচ্ছো…ওদের কাজের ব্যবস্থা করা দরকার…দীর্ঘস্থায়ী পুনর্বাসন…” অরনী জিজ্ঞাসা করতেই পারে যে কি ব্যবস্থা আছে কিন্তু আরো কিছুক্ষন লেকচার শুনতে হবে বলে চুপ করে থাকে।

আজ ও আরো জানালার টোকা শুনে তাকাচ্ছে না কারণ আসার পথে ভিক্ষা দিতে দিতে ও সব খুচরো টাকা শেষ করে ফেলেছে। শাহেদ সাথে নেই বলে ও যেই ভিক্ষা চেয়েছে তাকেই ইচ্ছে মতো টাকা দিয়েছে। জানালায় নাক চেপে দাঁড়িয়ে আছে একটা দশ বারো বছরের ছেলে; খালি গা; উস্কুখস্কু ঝাকড়া চুল; বড় বড় চোখ; খুবই মিষ্টি একটা চেহারা। গায়ের রঙ কোন একসময় উজ্জল থাকলেও এখন রোদে পুড়ে আর ময়লার আস্তরে ঢেকে গেছে। তার দুপাশে কাছাকাছি বয়সের আরো দুজন। অরনী কাঁচ নামিয়ে বললো “এই তোমার নাম কি?” “হৃদয় আফা…” ও উত্তর দেয়া শেষ করতে না করতেই অন্য দুজন কোথায় জানি দৌড়ে চলে গেলো।

- ওরা কি ভয় পেলো নাকি?
- না আফা...ওরা আনসার ক্যাম্পে খাওন আনতে গেলো।
- তুমি যাবে না?
- ওইখানে প্রেত্যেকদিন খালি ভাত আর ডাইল দেয়...ডাইলও পানির মতোন...খাইতে ভালা লাগে না আর...মাজে মাজে সবজী দেয়...তখন খাইতে মজা লাগে।

- তাহলে কি আজ খাবে না?
- আফা আপনি এই ফুল কয়টা কিন্যা লন...মাত্র ৫০ টেকা...আমি তাইলে দোকান থে আজ ভাত আর মুরগীর গোস্ত কিন্যা খামু...
- কিন্তু আমার কাছে যে আজ টাকা নাই রে...
- নেন না আফা...নেন না...

অরনীর খুব খারাপ লাগছে, এতো মিষ্টি করে বলছে।

- এই ছেলে শোন তুমি আমার সাথে বাসায় চলো...আমি ফুলের দাম দেবো আর তোমাকে মাংস দিয়ে ভাতও খেতে দেবো? যাবে?
ছেলেটা একটু দ্বিধাগ্রস্থ।
- মুরগীর গোস্ত? আফনার বাসা কই?
- হ্যা...মুরগীর মাংস আর সবজীও। এইতো বনানী এগারো নম্বরে...যাবে?
- আইচ্ছা...কিন্তু ফুলের দাম ১০০ টেকা দিয়েন আফা...

অরনী হেসে ফেললো “আচ্ছা দেবো...গাড়ীতে ওঠো...” ড্রাইভার অনেকক্ষন থেকেই বিরক্ত মুখে ওদের কথাবার্তা শুনছে। এতোক্ষনে সে বললো “আপা এইসব পুলাপান রে আস্কারা দিয়েন না…এরা বড় বজ্জাত…” “লিটন ভাই…এতো চিন্তা করেন না তো…এইটুকু ছেলে আবার কি করবে?” আপার মাথা একটু আউলা, মানা করে লাভ নাই। ড্রাইভার লিটন নিঃশ্বাস ফেলে হৃদয়কে বললো “ওই ছেমড়া সামনে আমার পাশে আইসা বস...” প্যাসেঞ্জার সিটে টাওয়েল বিছাতে যেতেই অরনী বললো “আমাকে টাওয়েলটা দেন লিটন ভাই... হৃদয় আমার পাশে পেছনে বসুক।“ লিটন হতাশ চোখে তাকিয়ে টাওয়েলটা দিলো; আপা বড় ঝামেলা করে।

২.

ভাগ্যিস আজ শাহেদ বাসায় নেই!! থাকলে হৃদয়কে বাসায় নেয়া যেতো না। ও ঠিক ঠিক বকা দিতো। এমনিতেই অরনী অনেক বকা খায় ওর এলোমেলো কাজের জন্য। একবার একটা লোক জ্যামের মধ্যে এসে গাড়িতে লিফট চেয়েছিলো; অরনী লিটন ভাইকে দরজা খুলে দেবার কথা বলতেই শাহেদ খুব রেগে গিয়েছিলো “আশ্চর্য!!! তুমি রাস্তার একটা উটকো লোককে হুট করে গাড়ীতে তুলবে? লোকটা যদি গাড়ীতে উঠে ছোরা বা বন্দুক ধরে? তখন কি করবে শুনি?” “বাহ...তা করবে কেন? লোকটা বললো না যে তার বাবা খুব অসুস্থ হাসপাতালে যেতে হবে...আমরা তো ওই দিকেই যাচ্ছি...তাই না?” “Grow up Oroni please…Life is not that simple. একটু ম্যাচিওরড হওয়ার চেষ্টা করো।“ অরনী বোঝে না যে ম্যাচিউরিটি বাড়ানোর জন্য এতো চেষ্টা কেন? সময়ের সাথে সাথে একসময় তো ম্যাচিউরিটি আসবেই।

অরনী চারপাশের দুনিয়া থেকে একটু ঘেরাটোপে বড় হয়েছে। একমাত্র মেয়ে; বাবা মা ছাড়াও আগলে রাখার জন্য পাঁচ বছরের বড় ভাই। ও খুব কমই কোথাও একা গেছে। বাবা, মা বা ভাইয়া সবসময় সাথে গেছে বা নামিয়ে দিয়েছে আবার পরে তুলে নিয়েছে। ওর আসলেই পৃথিবীর বা মানুষের জটিলতার সাথে কমই পরিচয়। কিন্তু ঠিক সেই কারনেই ওর মধ্যে এক ধরনের সরলতা আছে যা মনকে ছুঁয়ে যায়; গুমোট দিনগুলোতে যেন হঠাৎ এক পশলা হাওয়া।

শাহেদের কথা মনে হতেই অরনীর একটু মন খারাপ হলো। এতো রাশভারী মানুষটা; ওদের মাত্র মাস ছয়েক হলো বিয়ে হয়েছে; এখনো মধুচন্দ্রিমার গন্ধমাখা সময়টা। বছর আটেকের বড় এই মানুষটাকে ও এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। অরনী একটু আল্লাদী; একটু অস্থির; একটু ছেলেমানুষ আর খোলামেলা। শাহেদ ঠিক তার উল্টো; উচ্ছাস কম; বেশ অন্তর্মুখী একজন মানুষ। বিয়ের পরে একদিন ওর বুকের কাছে গুটিসুটি হয়ে এলোমেলো কথা বলতে বলতে অরনী খেয়াল করলো মানুষটা মোটেও শুনছে না, হাতে বই ধরে মন দিয়ে পড়ছে।

- এইইই যে আমাকে তোমার কেমন লাগে? ইশশ্ বই পড়া থামাওতো...
শাহেদ বই নামিয়ে খুব নির্বিকার ভাবে বললো “তোমাকে আমার বিড়ালের মতো লাগে...আদরে নষ্ট বিড়াল...”
অরনী উঠে বসেছিলো “মানে কি?”
- মানে আবার কি? সারাক্ষণ এতো ঘেঁষাঘেষি আমার পছন্দ না।

অরনীর এতো রাগ লেগেছিলো; ও মনে মনে বললো “তুই কি? নাকের ডগায় চশমা লাগিয়ে একটা শিয়াল...পাঠশালার মাষ্টার মশাই...ছোটলোক শিয়াল...“ রাগ হলে ও শাহেদকে মনে মনে তুই করে বলে...মুখের ওপরে বলা...ওরে বাপরে!!

শাহেদ আসলেই মাষ্টারি করে, একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ইকোনমিক্সে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। ডক্টরেট করে দেশে ফেরার পরেই অরনীর সাথে বিয়ে হলো। খুবই ডেডিকেটেড একজন শিক্ষক; পড়াশোনা তার ধ্যানজ্ঞান। মাঝে মাঝে অরনীর মনে হয় শাহেদের জীবনে বা মনে কি ওর জন্য কোন জায়গা খালি আছে?

সেদিন শাহেদ বললো “শোনো মেয়ে আমি না একটা বই লিখবো ভাবছি...” “তাই!! কিসের বই? গল্প, উপন্যাস না কবিতা?” শাহেদের কপালে ভাঁজ পড়ল, অরনী মনে মনে প্রমাদ গনলো “উহহ হু!!” “আশ্চর্য!! এসব আমি লিখবো কেন? আমার ইচ্ছা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে লিখবো। কিভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা যায়? রাজনৈতিক আর সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু কিভাবে মানুষের জীবনের মানদন্ডকে নিয়ন্ত্রন করে? বর্তমানকে অতীতের প্রেক্ষাপটে বিচার করতে হবে...না হলে ভবিষৎ প্রেডিক্ট করবে কি ভাবে? কার্যকরী নীতি নির্ধারণ হবে কি ভাবে?” আরও অনেক কিছু বলেছিলো...ঝাড়া পয়তাল্লিশ মিনিট। এই একটা ব্যাপারেই শাহেদের কথার ফুলঝুড়ি ফোটে...চোখ মুখ আগ্রহে ঝলমল করতে থাকে। অরনী কথাগুলো না বুঝলেও মুগ্ধ হয়ে শাহেদকে দেখে। ইশশ্ ওর কথা ভেবে যদি শাহেদের চোখে এমন আলো ঝিলিক দিতো!!

বিয়ের পরে এই প্রথম শাহেদ আর অরনী একসাথে নেই। শাহেদ দু’দিনের জন্য ঢাকার বাইরে একটা সেমিনারে গিয়েছে; অবশ্য আজ রাতেই চলে আসবে। যাওয়ার দিন অরনীর খুব মন খারাপ লাগছিলো; বলবে না বলবে না করেও বলে ফেললো “আমি না তোমাকে খুব মিস করবো!!”

- তোমার এই মিসিং দিন দিন বাড়লেতো প্রব্লেম। আমার কাজের চাপ কিন্তু দিন দিন বাড়বে।
অরনীর ঠোঁট ফুলে গেছে অভিমানে; চোখে হালকা জলের পর্দা তিরতির করে কাঁপছে।
- প্রব্লেম হবে না। আমি মিস করবো। তুমি তো আর করবে না।
- কিছু কিছু মানুষ আছে যারা মিস ইউ বলার পরে পাল্টা শোনার জন্য অপেক্ষা করে থাকে, জোরাজুরি করে। তুমিতো দেখি তাদের দলে।

- জোরাজুরি করলাম কই? তুমি বললে প্রব্লেম হবে তাই বললাম...
- কিছু কিছু ব্যাপার বুঝে নিতে হয়, কিছু কিছু জিনিষ বোঝা যায়। সবসময় এতো হুলস্থুল করে বলার দরকার নেই। সবসময় বলা যেমন ভালো না, আবার একদম না বলাও ভালো না। মাঝে মাঝে বলা ভালো। আমি মাঝামাঝির দলে।
- একটু বলেছিতো কি হয়েছে? তোমাকেতো বলতে বলিনি...
- আমিতো শুনতে চাইনি।

অরনীর একটু জেদ চেপে গিয়েছিল “কিন্তু আমি বলতে চেয়েছি।“ মানুষটা কপালে ভাঁজ নিয়ে বাসা থেকে বিদায় নিলো। কেন যে ও এমন করলো? অরনীর মন দু’দিন থেকে বেশ খারাপ।

৩.

তিনতলার এপার্টমেন্টে উঠে কলিং বেল বাজাতেই আয়েশার মা দরজা খুলে দিলো। আয়েশার মা বেশ বয়স্ক আর বিশস্ত; অরনীর শ্বশুরবাড়ীর পুরোনো লোক।

- বউমা সাথে এইটা কে?
- ওর নাম হৃদয়...নামটা সুন্দর না খালা?
- তা বুঝলাম কিন্তু ওরে পাইলেন কই?
- রাস্তায়...রেললাইনের কাছে ফুল বিক্রি করে। আমার কাছে ফুল কেনার টাকা ছিলো না তো তাই বাসায় নিয়ে আসলাম।
- কি যে করেন আপনি? এইসব রাস্তার টোকাইরে কেউ বাসায় আইনা তুলে? ট্যাকা দিয়া শীঘ্রই বিদায় করেন।
- বিদায়ের আগে ওকে ভাত খেতে দেন...কি তরকারী আছে? আমার সাথে খেতে দেন আর কাল রাতের মাংসটাও গরম করে টেবিলে দিয়েন।

আয়েশার মা গরগর করতে করতে রান্নাঘরের দিকে রওনা দিলো “ছেলের বিয়া টিকলে হয়...আউলা মাথা বউ লইয়া কি সংসার করা যায়? ওই ছেমড়া এদিকে আয়।“ “না খালা...আপনি খাবার রেডি করেন। ও ড্রয়িং রুমে থাক...আমি একটু হৃদয়ের সাথে গল্প করি...”

- আফা...ফুলগুলা কই রাখুম?
- এই সেন্টার টেবিলের ওপরে রাখো...বসো...তোমার গল্প শুনি.....আরে মাটিতে না চেয়ারে বসো...
- না আফা আমার গায়ে অনেক ময়লা...আমি এই কার্পেটে বসতেছি...

- তোমার বাবা মা কোথায়?
- আমার অবুঝ বয়সে মা মারা যাওনের পর বাপ বিয়া করছিলো। সৎ মা ঠিক মতোন খাওন দিত না। পড়তে চাইছি পড়তেও দেয় নাই। বাপ তো আমারে মাইরা ঘর থাইক্যা বার কইরা দিয়া আর খোঁজই নেয় নাই। তাই টোকাই হইছি।
- একা একা থাকো ভয় লাগে না?
- নাহ্ ওই যে আমার সাথে দুইজনরে দ্যাখলেন না...আমরা খুব ভালা ফেরেন্ড...একসাথে থাকি...
- তোমরা সবাই ঢাকার?
- আমার বাসা আছিল খিলক্ষেতে। নরসিংদী থেইক্যা আসছে শাহ আলম। আর ওই সুমন নীলফমারীর।

- ওরা কেন টোকাই হলো?
- অভাবের ঘর আফা। অদের বাপ মা খাওন চাইলে কইতো ঘর থাইক্যা বার হইয়া যা। তাই রাগ কইরা একদিন বাইর হইয়া ট্রেনে উইঠা এইহানে চইল্যা আইছে।
- তোমাদের কোথায় দেখা হলো?
- রেল স্টেশনে দেখা হইছে আফা। আমরা রেললাইনের পাশে রাইতে একসাথে ঘুমাই। দিনের বেলা শুইলে স্টেশনের পুলিশ তাড়া করে। যা মশা আফা...রাতের বেলাও একটু শান্তিতে ঘুমাইতে পারি না...আরো দুনিয়ার পোকা মাকড় গাঁয়ের ওপরে হাইট্যা বেড়ায়। পোকার যন্ত্রণায় ঘুমানো যায় না।

অরনীর মায়া লাগছিলো; এত্তোটুকু একটা ছেলের কি কষ্ট!! একা একা সমস্ত পৃথিবীর মুখোমুখি; এই শিশুবয়সেই রূঢ় বাস্তবতার সাথে কি কঠিন যুদ্ধ! একটু জিজ্ঞাসা করতেই কি খুশী হয়ে গড়গড় করে বলে যাচ্ছে “আফা একেতো শান্তি মতন ঘুমাইতেই পারি না। তার উপরে ঘুমাইলে তো চোর আইসা শার্ট-প্যান্ট খুইলা লইয়া যায় গা, পকেটের টাকা চুরি কইরা লইয়া যায়গা। পকেটে তো ১০ টেকাও রাখন যায়না। স্টেশন ভর্তি চোর। দেহেন না আমার গায়ে শার্ট নাই।“

- খাওয়া দাওয়া কি আনসার ক্যাম্পেই করো?
- ওরাতো আফা খালি একবেলা খাওন দেয়...
- তাহলে অন্যবেলা কোথায় খাও?
- কামাই কইরা কিন্যা খাই আফা। তয় সবদিন হয় না। রেললাইনের পাশে থেইকা বোতল কুড়াই। পচিঁশ টাকা কেজি কইরা বেচি। দুই দিন ধইরা বোতল টোকাইলে এক বস্তা হয়। তহন একশ, একশ বিশ টেকার মত বেচা হয়। মাঝে মাঝে মাইনষের মালও টাইনা দেই। তয় কুলিরা দেখলে মারে। তাই মাল টানার কাজ বেশি করতে পরিনা।

আর আজতো দ্যাখলেনই ফুল বেচতেছিলাম। তয় ফুল সবসময় পাওন যায় না। আশেপাশের বাসা থনে চুরি করি। যখন খিদা লাগে রে আফা দুনিয়া আন্ধার! আমারতো বেলী ফুল গুলারে মালা না গাইথা ভাত মনে কইরা খায়া ফেলতে ইচ্ছা করে।
- বড় হলে কি করবে? তখনতো আর এভাবে চলবে না।

- আমার কিছু হইতে ইচ্ছা করে না। তয় লেখা পড়া করনের ইচ্ছা হয় খুব। এই যে কি সোন্দর সোন্দর সব বই, খবরের কাগজ, সাইন বোর্ড...সব পইড়া ফেলতে ইচ্ছা করে।
- তুমি থাকবে এ বাসায়? আমি পড়া শিখিয়ে দেবো।

বড় বড় চোখের তারায় ব্যঙ্গ কি ঝিলিক দিলো “না আফা খোলা আকাশের তারা না দ্যাখলে ঘুম আসে না। রাস্তায় থাইকা অব্যাস হয়া গেছে, বাসায় বেশীক্ষণ থাকলে দমবন্ধ লাগে। রাস্তায় বড় হইতাছি, রাস্তায়ই থাকতে অইবো। পেটের কষ্ট সহ্য করতে হইবো। কেউ কিচ্ছু দিব না আমগো।“

কি আগ্রহ করে খেলো ছেলেটা...ক্ষুধার্ত মানুষের তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া দেখতেও ভালো লাগে। খেতে বসে আবার কাঁচা মরিচ চেয়ে নিলো “বুজলেন আফা মাঝে মাঝেই শুদাই লবন মরিচ ডইলা ভাত খাইতে খাইতে ঝাল খাওন অব্যাস হয়া গেছে। খালাম্মা আপনার মুরগীর মাংসটা ভালো হইছে তবে একটু লবন কম হইছে...বেশী না সামান্য কম।“ আয়েশার মার রাগী চেহারা দেখে খাওয়ার সময় বিষম খাওয়ার জোগাড় হলো অরনীর।

৪.

অরনী চুপচাপ বিছানায় হাঁটুতে মুখ রেখে বসে আছে। সন্ধ্যা নেমে গেছে, প্রায় সাতটা বাজে। শাহেদের সাথে কথা হয়েছে; আর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই বাসায় পৌঁছে যাবে। অরনীর মাথায় হৃদয়ের ওই কথাটা ঘুরছে “আমারতো বেলী ফুল গুলারে মালা না গাইথা ভাত মনে কইরা খায়া ফেলতে ইচ্ছা করে।“

ছেলেটাকে ও দুইশ টাকা আর শাহেদের একটা পুরোনো শার্ট দিয়ে দিলো। পরার পরে দেখতে মজা লাগছিলো; মস্ত লম্বা শার্টের ঝুলে ছেলেটাকে বাউল বাউল দেখাচ্ছিলো। অরনী হৃদয়কে আর থাকতে বলেনি; ছেলেটার কথায় এমন একটা দৃঢ়তা ছিলো যে ও জানতো বলে লাভ নেই। তবে কখনো ইচ্ছে হলে আসতে বলেছে; কিন্তু অরনী জানে ও আর কখনোই আসবে না। আজ হঠাৎই শাহেদের কথাগুলো খুব ঠিক মনে হলো; ওর লেকচারগুলোও খারাপ মনে হলো না; ঝাপসা ভাবে হলেও শাহেদের সমাজ বদলের স্বপ্নটা অরনী বুঝতে পারছে।

বাসায় আসতে আসতে শাহেদ রাস্তা থেকে একটা বেলী ফুলের মালা কিনলো। কি সুন্দর একটা বিষণ্ণ গন্ধ!!! অরনী পছন্দ করে। শাহেদের এ দু’দিন ওর জন্য কেমন জানি খালি খালি লেগেছে, একটু মন খারাপও, বই পড়ার সময় বার বার আনমনা হয়ে গেছে। রাতে ঘুমানোর সময় মনে হয়েছে বুকের কাছটা একটু ঠাণ্ডা লাগছে; কেউ ঘেঁষে এসে ওম দিলে মন্দ হতো না।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ডিনারের পরে শোবার ঘরে শাহেদ অপেক্ষা করছিলো। অরনী আয়নার সামনে মস্ত এলোখোঁপা খুলতে দাড়াতেই ও জড়িয়ে ধরলো “তোমাকে মিস করেছি আমার বিল্লীটা!!” শাহেদের বুকে নাক ঘষতে ঘষতে আর আদরে গলে যেতে যেতে অরনী বললো “বলতে হবে না...আমি বুঝে নেবো...আমি জেনে গেছি ফুলের চেয়ে শাদা ভাতই বেশী সুন্দর!!!”

© শিখা (১লা জানুয়ারী, ২০১৬)

বিঃ দ্রঃ কবিদের কাছে ঋণখেলাপী হতেই হবে মনে হচ্ছে। গল্পের নাম মহাদেব সাহার কবিতার নামে।

মন্তব্য ৪৯ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (৪৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ২:০৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: বরাবরের মতোই, ইউনিক। আপনার গল্প পড়তে আমার ভাল লাগে। খুব সুন্দর সাবলীল ভাষায় লেখা। এ গল্পটিও তার ব্যতিক্রম নয়। শুভ কামনা আপনার জন্য।

০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৫

শিখা রহমান বলেছেন: কাওসার চৌধুরী গল্প পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। ব্লগে বড় গল্পের পাঠক কম।

সুন্দর মন্তব্যের জন্য শন্যবাদ। আপনাকেও শুভকামনা।

২| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ২:০৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: Click This Link

৩| ০১ লা মে, ২০১৮ সকাল ৯:০৯

জাত বলেছেন: ভালো লাগলো।

০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৫

শিখা রহমান বলেছেন: জাত আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা থাকলো।

৪| ০১ লা মে, ২০১৮ সকাল ১০:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: অবশ্যই এটা বস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা।

০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৯

শিখা রহমান বলেছেন: রাজীব নুর কার বাস্তব অভিজ্ঞতা? আপনার নাকি লেখকের? :) গল্পটাতো জীবনের। কারো না কারো নিশ্চয়ই এমন অভিজ্ঞতা আছে। তবে কল্পনার ঘোড়া বাস্তবের প্রান্তরে না ছোটালে লেখার আনন্দ কোথায়?

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা। ভালো আছেন আশাকরি।

৫| ০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ১:২০

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: অলরাউন্ডার, হরফনমৌলা না সব্যসাচী কোনটা বলব? আপনি কবিতা আর গল্প দুটোতেই সমানতালে দৌড়ুচ্ছেন! কোনটা রেখে কোনটার প্রশংসা করব? তাই প্রশংসা বাদ, শুধুই মুগ্ধতার প্রকাশ!

০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ১:২৮

শিখা রহমান বলেছেন: সম্রাট আমি অলরাউন্ডার, হরফনমৌলা বা সব্যসাচী কোনটাই নই। একা একা নিজের মতো দৌড়াচ্ছি আর কখনোবা আপনার সাথে পথে দেখা হয়ে যাচ্ছে বলে হয়তো মনে হচ্ছে সমনাতালে দৌরাচ্ছি। আসলে কিন্তু Jack of all trades but master of none :(

কবিদের মুগ্ধতা অনেক বড় পাওয়া। ধন্যবাদ সবসময় মন্তব্য করে উৎসাহ দেবার জন্য।

আপনি নতুন কবিতা দেননি :( ব্লগে গিয়ে খুঁজে এলাম। ভালো থাকবেন। শুভকামনা।

৬| ০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ১:২৩

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: অরনী নামটা ভালো লেগেছে, আপু :)

০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ১:৩১

শিখা রহমান বলেছেন: প্রান্তর পাতা ধন্যবাদ পড়ার জন্য। 'অরণী' আমার অনেকগুলো গল্পের চরিত্রের নাম। 'বহ্নি' 'অরনী' আর 'রিমঝিম' নামগুলো আমার গল্পে ঘুরে ফিরেই আসে।

আপনার ব্লগের গল্পটা পড়লাম। 'পদ্ম' নামটা ভালো লেগেছে।

শুভকামনা। ভালো থাকবেন।

৭| ০১ লা মে, ২০১৮ বিকাল ৩:১১

মাহের ইসলাম বলেছেন:
আমার কাছে অসাধারন লেগেছে।
মনে হয়েছে আমি নিজেই অরণী, সব কিছু নিজেই করছি। আর আমার সাথেই এমনটি হচ্ছে।

লেখনিতে ঘটনাপ্রবাহকে অসম্ভবরকমের বাস্তবতায় এনে, প্রতিটি চরিত্রকে জীবন্ত এবং অতি পরিচিত ঢঙে ফুটিয়ে তুলতে পারাতেই আপনার মুন্সিয়ানা প্রকাশ পেয়েছে।

তবে, আমার শাহেদের চরিত্র বেশী পছন্দ হয়েছে।
এলোমেলো কিন্তু অত্যন্ত ভালো হৃদয়ের অরণীর পরিবর্তে আমি রাশভারী শাহেদ হতে বেশী পছন্দ করবো; যার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ অন্য অনেকের তুলনায় কম। যদিও একে আপনি, ‘জেন্ডার ডিজক্রিমিনেসন’ এর প্রেক্ষিতে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ বলতে পারেন।

০২ রা মে, ২০১৮ সকাল ৯:৪১

শিখা রহমান বলেছেন: মাহের ইসলাম আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। এতো গুছিয়ে এমন সুন্দর করে লিখেছেন যে মন ভালো হয়ে গেলো। আপনি পাঠক হিসেবে যে কোন চরিত্রকেই বেছে নিতে পারেন। আমারতো কেবল গল্প বলার কাজ। লেখার সময়ে কখনো আমি 'অরণী আর কখনো আমি 'শাহেদ।' :)

শুভকামনা। আপনিও বেশ ভালো লেখেন। লেখককে পাঠক হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

ভালো থাকবেন। ব্লগে দেখা হয়েই যাবে কখনো।

৮| ০১ লা মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৫২

ভুয়া মফিজ বলেছেন: অরণী আরেকটু প্র্যাকটিকাল, আর শাহেদ আরেকটু রোমান্টিক হলে ভালো।
তবে আমার স্বভাব-চরিত্র কিন্তু অরণীর মতো!! :)

গল্প ভালো লেগেছে।

০২ রা মে, ২০১৮ সকাল ৯:৪৪

শিখা রহমান বলেছেন: ভুয়া মফিজ হয়তোবা :) কিন্তু অরণীর মতো মানুষও যে আছে, যেমন আপনি।

পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। বড় গল্পের পাঠক কম। অথচ অনেক গল্পই যে ছোট করে লেখা যায় না।

শুভকামনা। ভালো থাকবেন।

৯| ০১ লা মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অরনীর অনুভবে চোখ মাঝে মাঝৈই তিরতির করে জলে ভরে উঠতে চাইছিল!

এত নরম মন হলে কি চলে????

আপনার গল্পের ধরনই এমন মনটা নরম করে ফেলল! :)

ভাললাগা একরাশ
+++++++++

০২ রা মে, ২০১৮ সকাল ৯:৪৭

শিখা রহমান বলেছেন: বিদ্রোহী আমার সামান্য লেখা যে আপনার চোখে জলের আভাস এনে দিতে পেরেছে সেটা বিরাট পাওয়া। আমার গল্প কারো মন এমন ছুঁয়ে গেছে জানলে লেখার উৎসাহ পাই।

আপনি সবসময় পড়ে সুন্দর শব্দমালায় অনুপ্রাণিত করেন। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা কবি।

শুভকামনা। ভালো থাকবেন সুন্দর সব স্বপ্ন নিয়ে।

১০| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৮:৪৪

অদ্ভুত_আমি বলেছেন: ভালো লাগলো।

০২ রা মে, ২০১৮ সকাল ৯:৪৮

শিখা রহমান বলেছেন: অদ্ভুত_আমি মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো। পড়ার জন্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

১১| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৮:৪৮

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: "জুঁইফুলের চেয়ে শাদা ভাতই অধিক সুন্দর"???
--- লেখক সাদাকে শাদা বানালো কেন????


##অরনীর সাথে লেখকের কি মিল আছে???

(I am fine. Thanks)

০২ রা মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৫

শিখা রহমান বলেছেন: নিজাম 'শাদা' আর 'সাদা' দুটো বানানই ব্যবহার হয়। মহাদেব সাহা কবিতার নামে 'শাদা' লিখেছেন। আমি কবিদের ওপরে খবরদারী করি না। ওনারা যাই বলেন তাই মেনে নেই। কবিরা কথার যাদুকর।

আপনার কি মনে হয়? অরনীর সাথে লেখকের মিল আছে? পাঠক হিসেবে আপনার মতামতটাই আগে শুনি। :)

শুভকামনা। আশাকরি ঠিকভাবে গন্তব্যে পৌছেছেন। ভালো থাকবেন। আপনি থাকলে ব্লগবাড়ী ঝলমল করে। আপনাকে ব্লগের সবাই খুব মিস করবে। কাজ শেষে দ্রুত ফিরে এসে ব্লগ আলোকিত করবেন।

(Good to know that you are doing well. Thanks)

১২| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৮:৫৩

সুমন কর বলেছেন: মুগ্ধতা রইলো। +।

০২ রা মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭

শিখা রহমান বলেছেন: সুমন ধন্যবাদ কবি। আপনি পড়েছেন জানলে ভাল লাগে। সবসময়েই পাঠক হয়ে পাশে থাকেন সেজন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।

শুভকামনা। ভালো থাকবেন কবি।

১৩| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ১১:৩৯

শামচুল হক বলেছেন: গল্প পড়ে মুগ্ধ হলাম। ধন্যবাদ

০২ রা মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭

শিখা রহমান বলেছেন: শামচুল হক আপনার মুগ্ধতা মন আলো করে দিলো। পড়ার জন্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

১৪| ০২ রা মে, ২০১৮ রাত ১২:১৪

সনেট কবি বলেছেন: ভাল গল্প।

০২ রা মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৮

শিখা রহমান বলেছেন: সনেট কবি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আমার ব্লগে স্বাগতম।

শুভকামনা। ভালো থাকবেন।

১৫| ০২ রা মে, ২০১৮ দুপুর ১:১১

আখেনাটেন বলেছেন: প্রকৃত অরনী ও শাহেদদের সংখ্যা এই ঘুণেধরা সমাজে খুবই কম। কিন্তু বিপরীতটার অভাব নেই। তাই সমাজও বদল হয় না আর বেলী ফুলকে ভাত হিসেবে খাওয়ার মানুষের সংখ্যাও কমে না।

গল্প বেশ মনে ধরেছে। ++

০৩ রা মে, ২০১৮ সকাল ১০:০৭

শিখা রহমান বলেছেন: আখেনাটেন অনেকদিন পরে আপনাকে আমার ব্লগে পেলাম। সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার শ্যামল্কে নিয়ে লেখাটা পড়েছি। আর আপনার হতাশাটাও বুঝতে পারছি।

গল্প মনে ধরেছে জেনে ভালো লাগলো। শুভকামনা। ভালো থাকবেন।

১৬| ০২ রা মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে। টোকাইদের জীবন তো এরকমই।

অরনীর ব্যাপারে শাহেদের আপাত উদাসীনতা, শেষে এসে অরনীকে মিস করার জন্য আকুতি ও অনুভূতি ফুটে উঠেছে, সেটা ভালো লেগেছে।

ছেলেটার নাম 'হৃদয়' এবং ওদের জন্মস্থান খিলখেত না হয়ে অন্য কোথাও হলে আরেকটু ভালো লাগতো আমার কাছে। তবে খিলখেতে জন্ম হওয়ার কিছু ইঙ্গিত থাকলে সেটা আরো বেশি ভালো লাগতো।

শুভেচ্ছা রইল।

০৩ রা মে, ২০১৮ সকাল ১০:১৩

শিখা রহমান বলেছেন: সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই সুন্দর গুছিয়ে মন্তব্য করেছেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ। গল্প কেউ এতো মন দিয়ে পড়েছে ভাবলেই মন ভালো হয়ে যায়।

অরণীর ব্যাপারে শাহেদকে উদাসীন মনে হলেও ভালোবাসাতো আছেই। কেউ কেউ ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে না। শাহেদ তেমনই একজন আর তাদের সম্পর্কের বয়সওতো মাত্র মাস ছয়েক।

"ছেলেটার নাম 'হৃদয়' এবং ওদের জন্মস্থান খিলখেত না হয়ে অন্য কোথাও হলে আরেকটু ভালো লাগতো আমার কাছে। তবে খিলখেতে জন্ম হওয়ার কিছু ইঙ্গিত থাকলে সেটা আরো বেশি ভালো লাগতো।" কেন বলুনতো? আসলে সে যময় গল্প লিখেছিলাম সেইসময় পত্রিকায় 'হৃদয়' নামে এক পথশিশুর ওপরে প্রতিবেদন পড়েছিলাম। তাই নামটা মাথায় আটকে গিয়েছিলো।

আপনাকেও শুভকামনা। আমি আপনার কবিতার প্রেমে পড়েছি। ভালো থাকবেন কবি।

১৭| ০২ রা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৫

মিথী_মারজান বলেছেন: গল্পটা যে কয়বার পড়লাম আপু!!!
উফ!!!
এত সুন্দর করে কিভাবে লিখেন???
নিখুঁত ক্যারেক্টারাইজেশন, সহজ সরল প্রতিটি সূক্ষ্ম বর্ণনা অথচ কত গভীর উপলব্ধি! গল্পের থিম! সবকিছু!!!
কি বলব! একদম অ্যামেজিং!
আই জাস্ট লা--ভ অরনি, আপু।
আর হোৎকা পঁচা শাহেদ সাহেবটাকে প্রথমে অরনির সাথে মিলে আমিও যে কতটা বকেছি!!!:P
(স্যরি শাহেদ সাহেব! আপনিও খুব খুব ভালো):)
শাহেদ সাহেবের শেষের অনুভূতিগুলোতো জাস্ট ওয়াও!!!
দারুন একটা রোমান্টিক টুইস্ট ছিলো এখানটায়।

অনেকগুলো ম্যাসেজ আছে গল্পটায়।
শাহেদ সাহেবের মত করে দেশের জন্য পার্মানেন্টলি কিছু করার তাগিদ থাকতে হবে।
অরনির মত করেও ভালোবাসতে জানতে হবে।
হৃদয়ের মত বাচ্চাদের জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার দায় আমরা কখনোই এড়াতে পারিনা।
গল্পের শেষটা খুব সুন্দর! তবে আমি একটু অন্যভাবে ভেবে একটুখানি উদাসও হয়েছি কেনো যেনো।
আমি মোটেও চাইনা অরনিটা গভীর করে বুঝতে শিখুক।
শাদা ভাতের গুরুত্ব যেমন অপরাসীম ঠিক তেমন করে শাদা জুঁইকে ফিল করার মত মানুষদেরও প্রয়োজন আছে আমাদের।
ইনফ্যাক্ট, আমিতো চাই প্রতিটা মেয়েই অরনি হোক।

অন্নেক সুন্দর আরেকটা গল্প আমাদেরকে উপহার দিলেন আপু।
আর আপনার জন্য অনেক অনেক ভলোবাসা প্রিয় জারুল ফুল আমার।

০৩ রা মে, ২০১৮ সকাল ১০:১৯

শিখা রহমান বলেছেন: মিথী মনি বাপরে!! কি দারুন বিশ্লেষন আমার গল্পের। আমার মতো সামান্য লেখিকার গল্প নিয়ে কেউ এমন ভেবেছে, কেউ এমন সব খুটিনাটি খেয়াল করেছে ভাবলেই সব পাওয়া হয়ে যায়, মনে হয় লেখালেখি সার্থক।

"শাদা ভাতের গুরুত্ব যেমন অপরাসীম ঠিক তেমন করে শাদা জুঁইকে ফিল করার মত মানুষদেরও প্রয়োজন আছে আমাদের।
ইনফ্যাক্ট, আমিতো চাই প্রতিটা মেয়েই অরনি হোক।" সহমত!! অরণীরা কিন্তু কখনোই তেমন বদলায় না। :)

আর মিথীমনিদের ভালোবাসা পেলে অরণীরা জুঁইফুল না হোক জারুল ফুল হয়ে ফোটে।

অনেক অনেক আদর আর ভালোবাসা মিষ্টি মিথীমনি। তুমি পড়ো বলেই লেখা দিতে ইচ্ছে করে, ব্লগে আসতে ভালো লাগে। ভালো থেকো আর ভালোবেসো।

১৮| ০২ রা মে, ২০১৮ রাত ৯:০৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: শিখা রহমান ,





টোকাইদের বাস্তব চিত্র এঁকেছেন ।
ডিটেইলস বেশী হয়েছে বলে "জুঁইফুলের চেয়ে শাদা ভাতই অধিক সুন্দর" এই মর্মভেদী কথাটির আবেদনটা হালকা হয়েছে বলে মনে হলো । শাহেদের বেলীফুলের মালা কিনে আনা আর হৃদয়ের দু'মুঠো ভাতের ক্ষুধা নিয়ে অরনীর মনের টানাপোড়েন ঝট করে একটি বাক্যে শেষ করে দিলেন মনে হলো । এদুটো বিষয়কে এক সুতোয় গেঁথে আরো হৃদয়গ্রাহী করা যেতো হয়তো ।

মিথী_মারজান এর মন্তব্যের মাঝের অংশটুকু ভালো লেগেছে ।

শুভেচ্ছান্তে ।

০৩ রা মে, ২০১৮ সকাল ১০:৩০

শিখা রহমান বলেছেন: আহমেদ জী এস গল্পটাতে আমি পথশিশুদের কথাই বলতে চেয়েছি। মনে হলো একটা গল্পকে আরেকটা গল্পে মুড়ে দেখি কেমন হয়। আর তাই অরণী আর শাহেদ চরিত্রদের এনেছিলাম। হয়তো বা সে কারণেই "জুঁইফুলের চেয়ে শাদা ভাতই অধিক সুন্দর" এই মর্মভেদী কথাটির আবেদনটা হালকা হয়ে গেছে।

গল্পটা হয়তো আরো বিস্তৃত করা যেতো। আপনি ঠিক বলেছেন। কিন্তু লেখিকা বড্ড ছটফটে। মাঝে মাঝেই সে নিজেকে কান ধরে লিখতে বসায়। তাড়াহুড়া করে গল্প শেষ করে ফেলে। :(

আপনার মন্তব্য মানেই নিজের লেখাকে অন্যভাবে দেখা। ভাগ্যিস আপনি আমার লেখা পড়েন। আপনার মন্তব্যগুলো আমাকে লেখার সময়ে অনুপ্রেরণার পাশাপাশি ভুল শুধরে নিতে শেখায়।

শুভকামনা। অনেক ভালো থাকবেন।

১৯| ০২ রা মে, ২০১৮ রাত ১০:২২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ইশ এত এত সুন্দর কিভাবে লিখো !!!!
আসাধারন সব সময়ের মত ;সব লেখার মত !!! তোমার মত।
মিথী ও কি চমৎকার মন্তব্য করলো দেখেছো !!!
তোমাদের দুজনের জন্য ভালোবাসা।

০৩ রা মে, ২০১৮ সকাল ১০:৩৭

শিখা রহমান বলেছেন: নীরা তোমার ভালোবাসা হাত পেতে নিলাম। আমি আজকাল সুনীলের প্রতিদ্বন্দ্বী। :)

তুমি যে কি দারুন কবিতা লেখো!! কবিরা যখন বলে লেখা ভালো লেগেছে আকাশে উড়তে থাকি জানতো মেয়ে!!

মিথীমনি আর তুমি দুজনকেই এত্তো ভালোবাসা। আমি ভাগ্যবান যে ব্লগে লেখালেখির সুত্রে তোমাদের মতো অসাধারণ মানুষদের সাথে পরিচয় হয়েছে আর তোমাদের ভালোবাসা পেয়েছি।

ভালো থেকো প্রিয় কবি। আর ভালোবেসো নীরা।

২০| ০৬ ই মে, ২০১৮ সকাল ৮:১৫

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: আশা করি নতুন গল্পের জন্য বেশিদিন অপেক্ষায় রাখবেন না। হোপ, ভাল আছেন।

০৮ ই মে, ২০১৮ রাত ১:৪০

শিখা রহমান বলেছেন: কাওসার চৌধুরী ধন্যবাদ খোঁজ নেওয়ার জন্য। পড়ানোর কাজে মাঝে মাঝে খুব ব্যস্ততা যায়। সময় করে উঠতে পারি না। লেখা দিয়ে তো আর চলে যাওয়া যায় না। মন্তব্যের উত্তর দিতে হয়। তাছাড়া ঘন ঘন লেখা দিয়ে আপনাদের বিরক্ত করতে লজ্জা লাগে। আমি যে আপনাদের মতো প্রতিদিন এমন সময় করে উঠতে পারি না।

গল্প দেবার আগে কবিতা বা কাব্যকথা দিতে পারি। ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য। শুভকামনা।

২১| ০৮ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:০৯

জাহিদ অনিক বলেছেন:



ব্লগের কয়েকজন লেখকের সাথে আমার কিছু কাকতালীয় ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে। কি হচ্ছে সেটা বলব না। এটা ভালো লাগছে।

যাইহোক, বেলী ফুলের চেয়ে সাদা ভাতই সুন্দর। চমৎকার লেগেছে কথাটা।
অরণী মেয়ে'টা বড্ড ভালো।

লেখায় ভালোলাগা রইলো শিখা রহমান

০৯ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:০২

শিখা রহমান বলেছেন: জাহিদ ভালোলাগাটাই বড় ব্যাপার। ভালো না লাগলে হয়তো জানতে চাইতাম কি হচ্ছে। কাকতালীয় ব্যাপারগুলো আমার বেশ ভালো লাগে। এই ব্যাপারগুলোর জন্যেই জীবন রহস্যময় মনে হয়।

পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। শুভকামনা ও ভালো থাকবেন কবি।

২২| ০৮ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:৫১

সামিয়া বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম পড়ে পড়বো ।

২৩| ০৮ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৯

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: অসাধারন গল্প

০৯ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:০৩

শিখা রহমান বলেছেন: শাহারিয়ার ইমন পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আমার ব্লগে স্বাগতম।

শুভকামনা। ভালো থাকবেন।

২৪| ০৮ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:০২

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: আপা! :) কেমন আছেন????



অরনী কিন্তু লেখকই!:)

আমার গানের পোস্ট কই????

০৯ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:০৬

শিখা রহমান বলেছেন: নিজাম ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? ভুবন ভ্রমিয়া শেষ মেষ ফিরলেন? :)

আপনার জন্য গান নিয়ে আমার লেখাটা দিলাম। পড়ে ভালো না লাগলেও বলবেন কিন্তু যে ভালো হয়েছে। =p~

ভালো থাকবেন। সবাইকে জ্বালাতন জারী রাখবেন। শুভকামনা।

২৫| ০৯ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:৫৩

সামিয়া বলেছেন: সুন্দর গল্প। তুমি সবসময় গল্প অনেক সুন্দর করে লিখ,অনেকগুলো চরিত্র সাবলীল ভাবে ফুটিয়ে তোলো, বর্ণনাগুলো এত চমৎকার হয় যেন নিজের চোখে দেখতে পাই। তুমি একজন ভালো গল্পকার।।

০৯ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:১০

শিখা রহমান বলেছেন: ইতিমিতি মনি ব্যস্ততার মাঝেও পড়ার জন্য অনেক ভালোবাসা। তোমার গল্প ভালো লেগেছে জেনে মন ঝলমলিয়ে উঠলো।

অনেক আদর আর শুভকামনা। ভালো থেকো পাগলী মেয়েটা!!

২৬| ০৯ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:১৫

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: ওকে! ওকে! ঠিক আছে!!!!!:):):)



আপনাদের দোয়ায়, আমি ভাল আছি।

পোস্টের জন্য আগাম থ্যাঙ্কু ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.