নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস এম ইমদাদুল ইসলাম

গহীনে রক্তক্ষরণ

ধার্মিক, সৎ, যোগ্য এবং মেধাবী তরুনদের আমি ছাত্র

গহীনে রক্তক্ষরণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোকুলে বাড়িছে সে [ ধারাবাহিক ]

০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬

[ পটভুমি নির্বাচনের সময়কাল- ২০০৫ সাল ]
ইতিহাসে সব তথ্য প্রকাশ হয়নি যুগে যুগে । এই সত্যটিরও কোন কোন অংশের সংরক্ষিত দলিল নেই । কিন্তু ঘটনার স্থান, কালের সাক্ষী মানুষের দৃষ্টি, চিন্তার বিকাশ এবং একালে এসে ঘটনার পুনরাবৃত্তি সত্যতা প্রকাশের সহায়ক । সেই সত্যের আলোকে নির্বাচিত এই লেখাটা লেখকের নিজস্ব কিছু কল্পণার মিশ্রণে মূলতঃ সত্য প্রকাশ ।
==============================================================================
আমি রাহুল বর্মণ । বাবরী মসজিদ যখন ভাংগা হয়, তখন আমার বয়স ছিল ৭ বছর । তখন আমি ক্লাস টু এর ছাত্র । আমার বাবা মসজিদ ভাংগার কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে স্নান সমাপন করে এসে আহা ! সে কি উল্লাস ! -----

আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র । নানা রকম রেফারেন্স যোগাড় করে যখন একটা থিসিস রেডি করছিলাম, তখন কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা জানার পর আর তা লুকোতে পারিনি । লুকোতে পারিনি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠা আমার বাবার সেই উল্লাসের ঘটনা । আমি যতই বইয়ের পাতা উল্টাই আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে কতগুলো সত্য । অমোঘ সত্য । সেগুলো আমার চারপাশে খিল খিল করে উপহাসের হাসি হাসে, আর সেই অট্টহাসির ভেতরে দেখতে পাই আমার বাবার সেই উল্লসিত হাসির সাথে বেরিয়ে আসছে দুষিত কালো রংগের রক্ত !!!

আমার মাথায় প্রশ্নের উদয় হয় প্রথম ইন্ডিয়া গেইটে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের নামের তালিকা দেখে । 'দিল্লিতে, যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থাকেন, সেখানেই আছে ইন্ডিয়া গেট। সেখানে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের নাম লেখা আছে। মোট নামের সংখ্যা ৯৩৩৬৩ জন। যার মধ্যে ৬২,৯৪৫ জনই মুসলমান !! এই চিরস্থায়ী লিখিত সত্যকে কি কোনদিনও মিথ্যে বলা যাবে ? ঐ তালিকায় কোনো আরএসএস বিজেপি নেতাদের পূর্বশূরীদেরতো একটি নামও নেই।

যে বৃটিশদের হাত থেকে ভারত স্বাধীন করতে প্রায় ৬৮% মুসলমান শহীদ হয়েছেন ; তার মানে তথাকথিত সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দুর দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা প্রাণ বিলিয়েছেন অকাতরে, সেই ভারতে মুসলিমদের নিয়ে এন আর সি আর সি এ এ এর প্রবর্তকরা যে মুসলিম শহীদদের ট্যাগ লাগাচ্ছে ? তারা না কি ছিল সন্ত্রাসী , দস্যু , মানুষ হত্যাকারি এবং জোর করে হিন্দুদের ধর্মান্তকারি ? এসব কি করে বিশ্বাস হয় ? যদি তাই হত, তাহলে মোদিদের জন্ম হলো কি করে হিন্দুর ঘরে ?? হিন্দু জনগোষ্ঠীইতো বিলুপ্ত হবার কথা । ৮০০ বছরের মুসলিম শাসনের ইতিহাস তাই বলছে ।

আমার থিসিসের অংশ হিসেবে ৮০০ বছরের মুসলিম শাসনের ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে আমার কৌতুহল হলো, সারা পৃথিবী জুড়ে মুসলিমদেরকে এন্টি মুসলিমরা সবাই একজোট হয়ে ইসলামী টেরোরিস্ট ট্যাগ লাগিয়ে তাদেরকে কোণঠাসা করে, তার কারণ কি ?
আমি তাই প্রথমে সিদ্ধান্ত নিলাম, ওদের ধর্ম নিয়ে কিছু লেখাপড়া করার । আমি হোচট খেলাম একটা আয়াতে এসে-
সূরা রুম এর আয়াত ৩০ এ বলা হয়েছে-" সত্যিকারের বিশ্বাস এবং সেই প্রকৃত প্রকৃতিকে মেনে চলা (অর্থাৎ আল্লাহর ফিত্বরাত) যার উপর আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন" । এই বাক্যটার মানে চট করে বোঝা মুশকিল । তবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শ্রষ্টার ফিত্বরাতের উপর ? মানে শ্রষ্টার “প্রকৃত প্রকৃতিকে মেনে চলার নীতির উপর” ? মানে তার কাছেই আত্ম সমর্পণকারী তার সকল সৃষ্টি- এটাইতো শ্রষ্টার ফিত্বরাত ? সুতরাং আমাদের নাস্তিক বন্ধুরা যতই চিৎকার করে এই সত্যটি নিভিয়ে দিতে চেষ্টা করুন না কেন, আমি অন্ততঃ এটা বুঝতে পারছি যে, প্রতিটি শিশুকে শ্রষ্টা তার কাছে আত্ম সমর্পণকারি হিসেবেই সৃষ্টি করেন । অতএব এ বিষয়ে যে হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে, তা সঠিক । তোলপাড় শুরু হয়ে গেল নিজের মধ্যে । তবে আরো লেখাপড়ার আগ্রহ বাড়িয়ে গেল।

এর মধ্যে এক মুসলিম মেয়ের একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখলাম । সে লিখেছে, ” মানুষ যে যতই আল্লাহকে অস্বীকার করুক না কেন, তার সমস্ত শরীরটাই যাকে সে অস্বীকার করে সেই তাঁরই অনুগত । তাঁরই হুকুমের গোলামী করে । তার শরীরের উপর ঐ নস্তিক বা মুশরিকের কোনই নিয়ন্ত্রন নেই । তার মানে তার পুরো শরীর মুসলিম ( আল্লাহর কাছে ১০০% আত্ম-সমর্পণকারি ) ?
মানে কি ? কি বোঝালো সে ? আমি আমার শরীরের অংগ প্রত্যংগুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। কি বলল সে ? আমার শরীরের উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রন নেই ?? তবে কি !!!!

আমি যতই তাদের ধর্ম গ্রন্থগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করছি, ততই আমার বাবার বাবরী মসজিদ ভেংগে বাড়িতে এসে আমাদের সবাইকে নিয়ে আনন্দে উল্লাস করার দৃশ্যটি আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে ।

ইন্ডিয়া গেট এর শহীদদের তালিকা থেকে উঠে আসা শহীদদের আত্মাগুলো যেন প্রত্যেকের দেহে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে আমাদের সামনে হাজির করা হয়েছে । তারা উপহাস করে বলছে- “ তোমরা যার সৃষ্টি , আমরাও তারই সৃষ্টি । তোমাদের শরীরে যা কিছু আছে, আমাদের শরীরে তাই ছিল । এই শরীরকে তোমাদের আর আমাদের শ্রষ্টা এভাবেই আবার খাড়া করে তার বিচার করবেন । তোমরা এটা বিশ্বাস কর না, আমরা এটা করি । দেখছ ? আমাদেরকে তোমার সামনে পাঠিয়েছেন শ্রষ্টা । যেমন করে শ্রষ্টা আসহাবে কাহাফ থেকে আমাদের একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন জনপদে । তুমিইতো সেটা এখন বার বার পাঠ করছ, খুঁজে ফিরছ সত্যকে, অস্থির হয়ে উঠেছ, নয় কি ? কেন শ্রষ্টা এটা করেন ? বুঝতে পারছ তুমি এখন ?

তোমার পূর্ব পুরুষরা ৮০০ বছরের শাসকদের মানবীয়, দুনিয়াবী কিছু ভুল -ত্রুটিকে পুঁজি করে যে নাটক করে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করেছিলো, তা তোমাদের ইতিহাস লেখকরা প্রকাশ করেন নি ঠিকই, কিন্তু শ্রষ্টা কিভাবে তোমাদেরই কিছু বুদ্ধিজীবি, সাহিত্যক, লেখক, কলামিস্টদের কলম দিয়ে তা একটু একটু করে প্রকাশ দিচেছন , দেখতে পাচ্ছ কি ?তাহলে তুমি হিসাব মিলাও হে পাগলা !! নতুন করে আবার যে নাটক তোমাদের বাবা খুড়ারা করছে, তার পরিণতি কি হতে পারে ?

অনেকদিন হয়ে গেল প্রমিলা রাহুলের টিকিটি ছুঁতে পারছে না । থিসিস করছিস, কর, আমিতো তো তোর পথের বাঁধা নই ? তাহলে একেবারে এড়িয়ে চলছিস , কেন ? পাগোল হয়ে না যায় বেচরা ! সাতপাঁচ নানা রকম ভাবনায় ক্লান্ত হয়ে আসে তার দু’চোখ । সে ভালো করেই জানে এ সময়ে একমাত্র লাইব্রেরীতেই তাকে পাওয়া যাবে । অন্য কোথাও নয় । তো ? চট জলদি ব্যাগটা ঘাড়ে ঝুলিয়ে নিত্য দিনের মত মাকে মিথ্যে বলে লাইব্রেরীতে জরুরী রেফারেন্স সংগ্রহের জন্য যাচ্ছি বলে বেরিয়ে পড়ল ।

রাহুলকে ঘিরে তার অনেক স্বপ্ন । সেইতো তাকে স্বপ্ন দিখতে শিখিয়েছে ।
তার প্ররণায়ইতো লেখাপড়ার প্রতি অনিহা থেকে আগ্রহ জন্ম নিয়েছে । অথচ সেই রাহুল দিন দিন কেন জানি না পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে ! থিসিস করে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করতে যাচ্ছে, সেই আত্মঅহংকারে ভুগছে না তো ? নাকি আর কোন অন্ধ থিসিসভক্ত কেউ জুটেছে ? আজ কোন কল না দিয়ে চুপি চুপি সেটাই আঁচ করার জন্য তার এই যাত্র । যাত্রার শুরুতে প্রার্থনা করে নিল, “হায় ভগবান ! যেন বিপজ্জনক কিছু নজরে না পড়ে, তাহলে ওখানেই হয়তো হার্ট-ফেইল করে জীবনের লীলা সাংগ হয়ে যাবে ।
হুম ! বাছাধন মাথা গুজে পড়ে আছে বইয়ের মধ্যে । পেছন থেকে বিড়ালের মত নিঃশ্বব্দে চুপচাপ ঘাড়ের কাছে এসে একটা নিঃশ্বাস ছাড়া ! ঘাড়ের উপর এই আচমকা গরম হাওয়ার পরশ যে আর কারো হতে পারে না, এটা বুঝেই বই থেকে মাথা না উঠিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,”প্রমিলা, তুমি এখন যাও । আমার থিসিস নিয়ে খুব ব্যস্ত আছি । আমি ফ্রি হতে পারলে তোমাকে কল দিব, তুমি এই লাইব্রেরীতেই চলে এস । তখন কথা হবে ।”

বাব্বা ! মশাই যে বিশাল দার্শনিক হয়ে উঠেছেন ! আজ আর না তাকিয়েই ধরে নিলেন আমি আর কেউ নই ? কী জানি , ভয় হয় এমন নিঃশ্বাসের তপ্ত হাওয়া কি সবার নাসিকা থেকে একই তাপমাত্রায় নির্গত হয় ?
ধ্যাত ! কী যা, তা বলছ ? তোমাদের মেয়ে জাতের এই এক স্বভাব । সন্দেহ বাতিক । দেখ, আমার এসব ছিচকে আলাপের সময় নেই । প্লীজ, এখন যাও লক্ষ্মীটি, কাল আমি কল দিলে এস ।

অতঃপর সেদিনও শূণ্য হাতে বিদায় হলো প্রমিলা । মনে তার অনেক শংকা ! ইকনোমিক্স ছেড়ে কেন সে বস্তা পচা ইতিহাস নিয়ে থিসিস করছে ? কি পেয়েছে সে এর মধ্যে ? আর এতে ডক্টরেট করে কি বেনিফিট হবে বর্তমান এই এডভান্সড্ পৃথিবীতে ? নানা রকম ভাবনা তাকে ক্রমশঃই ভারী করে তুলেছে ।

দিন যতই গড়িয়ে যাচ্ছে রাহুলের ব্রেইনে ততই নতুন নতুন প্রশ্নের জন্ম হচ্ছে । রাতে শুয়ে বালিশের কাছে অনেক কথা বলে রাহুল । মুসলমানরাই কি ভারত ভাংগার জন্য দায়ি ? এটা কোন্ যুক্তিতে ভারতের হিন্দু সমাজ বিশ্বাস করে? মুসলিম শাসকদের ছোট খাট ব্যক্তিগত দুর্বলতা, পারিবারিক সমস্যা বাদ দিয়ে মোটাদাগে তাদের শাসনকাল নিয়ে যদি গবেষনা করা হয়, তাহলে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে, যে ভারতবর্ষ তাদের বলিষ্ঠ বীরত্ব, দক্ষতা, সততা, ইমানদারিতার ফসল হিসেবে সারা পৃথিবীতে এত উচ্চমার্গের একটা উদার ভারত হিসেবে মাথা উঁচু করে জানান দিয়েছিল পৃথিবীতে ভারতীয় উপ মহাদেশ একটা শক্তিশালী, গণতান্ত্রিক ভু-খন্ড, এখানকার মানুষ অতিশয় উদার, গণতান্ত্রিক, সেই ভারতের শাসকরা হঠাৎ কি করে হিন্দু-বিদ্বেষী হলো ? সারা বিশ্বে তাদের সুনাম , সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার পরও সেই ভারতের মুসলিম শাসকরা কেন ইংরেজদের বিতাড়িত করবার পর ওভারনাইট ভারত ভাগ করে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র বানাতে চাইবে ? এটা কি কোন সুস্থ্য মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা সম্ভব ? রাহুলের মাথায় আরো প্রশ্ন জাগে, যে ভারত বর্ষের মুসলিম শাসকরা প্রায় ৮০০ বছরের শাসনকালে কোন হিন্দুকে ঘৃণা করল না, সেই মুসলিম শাসকরা ব্রিটিশ খেদানোর পরপরই কি করে ওভারনাইট হিন্দু-বিদ্বেষী হয়ে গেল ? এই প্রশ্নটা বর্তমান প্রজন্মের মাথায় উদয় না হওয়ার কারণ কি ? এটা নিয়েও তার মনের জগতে ঘূরপাক খায় এর পেছনে রহস্য কি ? অতএব উন্মোচন করতে হবে এই রহস্যের চাদর । এই রহস্য ভেদ করতে খুব বেশী পান্ডিত্যের দরকার আছে ? খুব বড় গবেষণার দরকার আছে ? হ্যা, গবেষণাপত্র কিছুতো লাগবেই । আর তা উন্মোচন করার কাজে হাত দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে রাহুলের কাছে ।

হিন্দু আর হিন্দুত্ববাদ কোত্থেকে উদয় হলো ? এই ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে রাহুলের টাসকি খেয়ে পড়ার দশা । অথচ সারা ভারতজুড়ে হিন্দুত্ববাদীরা ইতিহাসকে বিকৃত করতে করতে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে যে, এ প্রজন্ম ব্যাপকভাবে ইতিহাস নিয়ে লেখাপড়া না করলে তা বুঝতেই পারবে না , তাদের পূর্ব পুরষদের ইতিহাস আসলে কি ছিল ? যে আসল রূপ তাদের ছিল, সেই রূপেরই নানা বরণ দেখা যায় উদারগণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে । বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে যা পাওয়া গেল, তা ধারাবাহিকভাবে রাহুল তার থিসিস রচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে শুরু করল ।

২য় অধ্যায়
-----------------------
ভারত ভু-খন্ডে মুসলমানদের আগমণের পূর্বে এ উপমহাদেশের কোন সাহিত্যে, কাব্যে বা ধর্মীয় শাস্ত্রের কোথাও ‘হিন্দু’ শব্দটির কোন প্রচলনই ছিল না। শুনলে অবাক হবেন, এই নামকরণ করেছিল মুসলমানরাই। যা নিয়ে আজকের হিন্দুত্ববাদের আহা! কী মাতামাতি !! অষ্টম শতকের প্রারম্ভে মুসলিম আরবেরা সিন্ধুতে আগমন করেন এবং এর নামকরণ করেন হিন্দ্। তারা এখানকার জনগণকে ‘হিন্দী’ বলে আখ্যায়িত করেন। এই ‘হিন্দ্’ শব্দটি ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সমগ্র উপমহাদেশই ‘হিন্দ’ নামে পরিচিত হয়ে উঠে। এখনকার যামানায় ব্রাহ্মণ্যবাদীরা নিজেদেরকে ‘হিন্দু’ বলে পরিচয় দেয়। ভারতীয় দর্শনের ছয়টি আদি মতবাদ রয়েছে । এ ছাড়াও চার্বাকের অবিমিশ্র নিরীশ্বরবাদ, আচার্য রামানুজের দ্বৈতবাদ, আচার্য শংকরের সর্বেশ্বরবাদ, রাজা রামমোহন রায়ের একেশ্বরবাদ এবং বহুদেববাদও হিন্দু-ধর্মের অন্তর্ভুক্ত। এভাবে হিন্দু ধর্ম হল কতকগুলো পরস্পরবিরোধী ধর্মীয় মতবাদ ও দর্শনের সমষ্টি। ‘হিন্দুত্ববাদ’ হচ্ছে কঠোর বর্ণবাদী একটি সমাজ-ব্যবস্থা, যাতে মানুষের মর্যাদা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক সুবিচারের কোনো স্বীকৃতি নেই। এই সমাজ-কাঠামোর দার্শনিক ভিত্তিই অদ্ভুৎ। একজন ব্রাহ্মণ পূর্বজন্মে পুণ্যবান ছিল বলেই এখন ব্রাহ্মণরূপে জন্মলাভ করেছে এবং একজন অস্পৃশ্য পূর্বজন্মে পাপী-জীবন যাপন করেছে বলেই এখন অস্পৃশ্য হয়ে জন্মেছে। এ জন্য তারা ব্রাক্ষ্মণের ঘরে জন্ম নিলে তার ব্যক্তিগত চরিত্র যাই থাকুক, সে পূণ্যবান এবং এর বাইরে যে বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদেরকে তারা মনে করে অস্পৃশ্য । এমন সমাজ তারা তৈরী করেছিল, যেখানে ব্রাক্ষ্মণ ব্যতিত অন্য যে কোন অস্পৃশ্য তার নিজের মুক্তির জন্যে অবশ্যই দাসের মতো ব্রাহ্মণের পূজা ও সেবা করতে বাধ্য । যারা এই হিন্দু বর্ণাশ্রমকে মেনে নিয়েছে তারা ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজে স্থান পেয়েছে। পক্ষান্তরে যারা তা মানেনি তাদেরকে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। বৌদ্ধরা ব্রাহ্মণদের এই ডিকটেটোরিয়াল অধিপত্য মেনে নেয়নি। এর ফলে তাদেরকে মাতৃভূমি ত্যাগ করে সুদূর প্রাচ্যে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। দ্রাবিড়, শক ও হুনদের সমবায়ে হিন্দু বর্ণাশ্রমের নিম্নতম বর্ণটি গঠিত, যাদের বলা হয় শুদ্র ও অস্পৃশ্য। আর এখন আরো ছোট করে উপস্থাপন করার জন্য বলা হয় ‘হরিজন’।

মুসলিমরা প্রায় ৮০০ শত বছর এ উপমহাদেশ শাসন করেছে। তারা রাষ্ট্রের নাগরিকদের মাঝে শান্তির বাণি ছড়িয়ে দেয় । মানুষে মানুষের কোন ভেদাভেদ নেই । মানুষ সবাই শ্রষ্টার সৃষ্টি । একই রক্ত মানুষের শরীরে । তারা সমাজে সাম্য, মৈত্রি, শান্তি-শংখলার মাধ্যমে সামাজিকভাবে প্রতিটি নাগরিকের সম অধিকার প্রতিষ্ঠি করে। তাদের সেই সুশাসনের ছায়াতলে শান্তির পরশ পেয়ে বহু নির্যাতিত নিম্নবর্ণের হিন্দুরা স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সম্মানিত হয়েছেন । সে সময়ের ইতিহাসে এমন একটা প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, ব্রাক্ষ্মণদের অত্যাচারে জর্জরিত অমানবিক বৈষম্যের শিকার কোন মানুষকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয় । কোন একটা প্রমাণ নেই । অথচ যা কিছু পরবর্তীতে ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা স্রেফ বানোয়াট । হিন্দু ব্রাক্ষ্মণরা যে ঘৃণার সংস্কৃতি লালন করত, সেই ঘৃণা থেকে তাদের অন্তরে লালিত হতে থাকে মুসলিম শাসকদের প্রতি বিদ্বেষ । কিন্তু তাদের ক্ষমতা অতোটা প্রবল ছিল না বিধায় তারা গোপন কৌশলী কুট-বুদ্ধি লালন করত । অথচ ইতিহাসের সাক্ষ্য শিখরা প্রসার লাভ করেছে মুসলিম ও ব্রিটিশদের শাসনামলেই। এ জন্য ব্রাহ্মণ্যবাদ মেনে নিতে বাধ্য করার অথবা উৎখাত করার ক্ষমতা ব্রাহ্মণদের ছিল না। এর প্রমাণ- ২০০৪ সালে এসে দেখা গিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী একজন শিখ। যারা বর্ণাশ্রম ধর্মের অনুশাসন মেনে চলে না, উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা কখনো তাদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা ভাবতে পারে না। আর তাদের এই মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বৃটিশদের সহায়তায় যখন তারা ক্ষমতার ছিটে-ফোটা স্বাদ-গন্ধ পেতে শুরু করে তখন থেকেই । ভারত ভাগের বীজ বপন শুরু হয় বৃটিশদের করুণায় লালিত হবার পর থেকেই ।

------ চলবে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.