নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস এম ইমদাদুল ইসলাম

গহীনে রক্তক্ষরণ

ধার্মিক, সৎ, যোগ্য এবং মেধাবী তরুনদের আমি ছাত্র

গহীনে রক্তক্ষরণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জুমআ’র খতিবের কাছে হাদিয়া সহ দোয়ার স্লিপ এবং ----

২৮ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:০৬

আজ এই বিশেষ বিষয় নিয়ে লিখতে বসে আমার উপমহাদেশের একালের একজন খ্যাতিমান দায়িল্লাহ্ ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাংগীর (রাহিঃ) এর কথা মনে পড়ে গেল । তিনি প্রায়ই বলতেন, “আমাদের দেশের মুসলমানেরা বড়ই বেকুব । কত সহজে , বিনা পয়সায় আল্লাহর কাছে দোয়া করে আল্লাহর সাহায্য হাসিল করা যায়, এটা তারা বোঝেই না । বুঝালেও বুঝতে চায় না । আর এই মানুষগুলো বোঝেনা বা বুঝতে চায়না বলেই এদের দোয়ার দরখাস্থ তথা হাদিয়া সহ দোয়ার স্লিপ কালচারকে পুঁজি করে এই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশাল পীর বাহিনীর বাণিজ্যিক কারবার গড়ে উঠেছে ”। আল্লাহ মরহুম ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাংগীরের কবরকে জান্নাতের বাগিচা বানিয়ে দিন এবং তাঁর বারযাখের জিন্দেগীকে ইল্লিয়্যিনবাসীদের দলভুক্ত করে দিন ।

আজ একটা নামকরা বড় মসজিদে জুমআ’র খুতবাহ্ দেবার আগে সম্মানিত খতিব সাহেব এরকমই কিছু কথা বলছিলেন । “ আপনারা হাজার হাজার দোয়ার স্লিপ খতিবের কাছে পাঠিয়ে থাকেন । দয়া করে কেউ হাদিয়া পাঠাবেন না । দোয়ার সাথে হাদিয়ার কোন সম্পর্ক নেই । হাজার হাজার মানুষের নাম স্মরণে রেখে প্রত্যেকের নাম ধরে ধরে দোয়া করাও সম্ভব নয়, আপনাদের সকলের দোয়ার বিষয়ে উল্লেখ করে সকল মু’মিন-মু’মিনাতের জন্যই দোয়া করা হয় । আপনারাই বলেন, প্রত্যেকর নাম কি স্মরণে রাখা সম্ভব ? তাই দয়া করে দোয়াতে কেন আপনাদের নাম উল্লেখ করা হলো না- এই নিয়ে আপনারা মন খারাপ করবেন না ।”

খতিব সাহেবের এই কথা শুনে আমার খুব আফসোস হলো । আমাদের মুসলিম সমাজ এই অধুনা যুগে এসেও, জ্ঞান চর্চার এই অবাধ যুগের বাসিন্দা হয়েও কতটা মুর্খ, আহম্মকই রয়ে গেলে ! আহারে ! বেচারা খতিব সাহেব ! কতটা সহজ হতে পারত আপনার এই বিষয়ে দলিল দস্তাবেজ দিয়ে এই শিক্ষিত সমাজকে বুঝিয়ে দেয়া, দোয়া কিভাবে করতে হয় ? কিভাবে দোয়া করলে মানুষ সবচেয়ে বেশী লাভবান হতে পারে ? এ বিষয়ে আপনার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকলেও অন্ততঃ ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাংগীর(রাহিঃ)কেই না হয় অনুকরণ করতেন? কিন্তু আপনি কি বললেন ? আপনার কথায় অধিকাংশ শিক্ষিত সচেতন মানুষ কি মেসেজ পেলেন ? একটু চিন্তা করে দেখুন তো, আপনার কথায় মানুষ এটুকু বুঝেছেন, কিছু ভিভিআইপি দোয়ার দরখাস্থকারীদের কাছে আপনি আসলে কতটা অসহায় ? কতটা দুর্বল আপনার অবস্থান ? মানুষতো এটাও বুঝেছেন, দোয়ার স্লিপের সাথে সাথে হাদিয়া কি হাজার হাজার লোকেই দেয় ? দিলেও ৫০ , ১০০ না হয় তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু ৫০০- ১০০০ অথবা তার চেয়েও বেশী টাকার নোটগুলোর সাথে যে নামগগুলো রয়েছে, তাদের সামাজি মর্যদার বিষয়টাও কি আপনাকে তারা বুঝিয়ে দেয়নাই ? তারা কি অমনি অভিমান করেছেন ? সোসাইটির কত বড় বড় হ্যাডমওয়ালারা আপনাদের পালেন, এটা বুঝি দেশের সাধারণ মানুষ এখন অবগত নয় ?

অথচ আল্লাহ দোয়া করতে বলেছেন, প্রত্যেক মানুষ তার নিজের জন্যই নিজে দোয়া করবে প্রত্যেক স’লাতের মাধ্যমে । ২ নম্বর সূরা আল্- বাক্বরহ্ এর ১৫৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “ হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” রাসুল(সঃ) শিখিয়েছেন, যে কোন মুছিবতে, অথবা আল্লাহর কাছে যে কোন কিছু চাইবার জন্য দোয়া করবে ২ রাকাত স’লাত আদায়ের মাধ্যমে ।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“কোন বান্দা যখন সিজদাবনত অবস্থায় থাকে, তখন ঐ বান্দা তার রব’এর সর্বাধিক নিকটবর্তী হয়। সুতরাং তোমরা সিজায় গিয়ে অধিক দু‘আ করো।” [ মুসলিম হাদীস নম্বর ৪৮২ ]

বলুন ? আল্লাহ যেখানে শিখিয়ে দিচ্ছেন দোয়া কি ভাবে করতে হবে ? রাসুল(সঃ) যখন শিখিয়ে দিলেন, বিনা টাকায়, বিনা পরিশ্রমে কত সহজে একজন মু’মিন তার নিজের দরখাস্থ আল্লাহর কাছে পেশ করে সিজদায় গিয়ে তার চাওয়া পূরণ করে নিতে পারে ! সেই সুযোগ কনফার্ম জানার পরও মানুষ কি করে এভাবে দোয়ার জন্য হাদিয়া সহ স্লিপ পাঠায় ? এই সুযোগটাই বিভিন্ন পীরের ব্যাবসা সেন্টারগুলো গ্রহণ করেছে কি না ? সহজেই বোঝা যায়, নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাযের সাথে যাদের কোন সম্পর্ক নেই, ইসলামের সাথে যাদের আদৌ কোন সম্পর্ক নেই, কিন্তু সপ্তাহে একদিন জুমআ’র জামাতে শরীক হয়ে নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে, তারাই এই হাদিয়ার বিনিময়ে দোয়ার দরখাস্থ্ করে থাকেন ( ব্যতিক্রম ব্যতিত) । অথবা অনেকে দোয়া করার এত সুন্দর পদ্ধতি না জানার কারণে এইভাবে ভুল করে যাচ্ছেন ।

অনেকেই মনে করেন, পীরদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে বলেই নাকি ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাংগীরকে সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়ে হত্যা করা হয়েছিল ( আল্লাহই ভালো জানেন ) ।

আমি মরহুম ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাংগীরের সেই কথাগুলো স্মরণ করে আল্লাহ এবং রাসুল(সঃ) এর বাণী কোট করে এই আহবান জানাচ্ছি, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে নিজেরা কিছু না জেনে, না বুঝে এভাবে অন্ধের মত কেন হাদিয়া সহ দোয়ার দরখাস্থ করবেন ? নিজেরাই নিজেদের জন্য দোয়া করে আল্লাহর ডাইরেক্ট সাহায্য লাভ করার সুযোগ কেন গ্রহণ করবেন না ? কোন মিডিয়ার মাধ্যমে হাদিয়া দিয়ে দোয়ার স্লিপ পাঠালে তা কোন কাজে আসবে না । এর চারপয়সা মূল্য নেই আল্লাহর কাছে । এই কথা যতকাল না বুঝবেন, ততকাল এই হাদিয়া বাণিজ্যের কাফেলা যেমন বিলুপ্ত হবে না, তেমনি পীরদের কেবলাও বন্ধ হবে না । আর তার জন্য দায়ী থাকবেন আপনারাই, যারা এইসব হাদিয়ার বিনিময়ে দোয়ার কারবার সমাজে জারী রাখবেন ।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.