![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাবতে খুব কষ্ট লাগল যে, বেশ কয়েকবছর যাবৎ ওআইসি ভুক্ত ৫৭ দেশের ৫৪টা দেশ সূরা বাক্বর’হ এর ১৮৯ নম্বর আয়াত অনুযায়ী নবচাঁদ উদয়ের ঘোষণা শুনে বা দেখে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হয়ে একত্রে সিয়াম পালন, সঠিক সময়ে ঈদ উদযাপন, হজ্জ্ব এর সঠিক তারিখ নির্ধারণ করতে পেরেছে ।
কিন্তু এবার কি হচ্ছে এসব ? কেন আবার উম্মাহ্ বিভাজনের শয়তানী নীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে ?
আমার কাছে এর উত্তর খুব সহজ মনে হচ্ছে । আমরা মুসলিমরা অধিকাংশই মোনাফেকীতে নিমজ্জিত হয়েছি । কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না ( কদাচ ব্যতিক্রম ব্যতিত) ।
এখনো কি অনেকেই মনে করেন, সৌদি আরবের চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে চলছে কথিত ওআইসিভুক্ত ৫৪ টি দেশ ? আর ভারত-পাকিস্তান- বাংলাদেশ ? আমাদের এই ৩ দেশের মুসলমানরাতো মহা পন্ডিত ! আমরাতো উম্মাহ কনসেপ্টকে মানচিত্র দিয়ে ভাগ করে ফেলেছি । তাই আমাদের কথা বাদ রাখি । কিন্তু যারা মানেন, তারা কি মনে করেন ? উম্মাহ্ কনসেপ্ট যারা সত্যিকারভাবে হৃদয়ে লালন করেন, তারা কি সৌদিকেই অন্ধের মত ফলো করেন ? নাকি মুসলিম উম্মাহকে ?
অবশ্যই কুরআনের আয়াত এবং রাসুল(সঃ) এর হাদীস একত্রে মিলিয়ে দেখুন, কোন রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত নয়, “ উম্মাহ্ কনসেপ্টই হচ্ছে একমাত্র সমাধান । এই কনসেপ্টই একটা আন্তর্জাতিক লুনার ক্যালেন্ডার করতে সক্ষম এবং সারা পৃথিবীর মুসলিকে ঐক্যবদ্ধ করে এক শিকলে আবদ্ধ করতে সক্ষম । কেননা সৌদি আরব এর পশ্চিমের কোন দেশ থেকে কোন মুসলিম যদি ঘোষণা করে, নবচাঁদ দেখা গেছে ( যেভাবেই হোক- আকাশ মেঘযুক্ত হলে মেঘের উপর থেকে দেখে হলেও ), তাহলে সমগ্র বিশ্বের মুসলিম এর উপলব্ধিতে আসবে এটাই যে, “ নবচাঁদ দেখেছেন আমার ভাই” ! এর মানে সমগ্র পৃথিবীর মুসলিম ঐ ভাইয়ের চোখেই চাঁদ দেখেছে । সুতরাং সেই দেখার ভিত্তিতে সকল দেশের সরকার সিয়াম পালন, ঈদ এবং হজ্জ্ব এর তারিখ ঘোষণা করবে । বর্তমান টেকনোলজির এ যুগে নবচাঁদ দেখার এ ঘোষণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কি অসম্ভব ? মোটেই অসম্ভব নয় । বরং তাই হচ্ছে ।
তাহলেই কেবল মুসলিম উম্মাহ হবে শক্তিশালী ঐকবদ্ধ একটা জাতি । যে জাতিকে একটা শিকলের মত ঐকবদ্ধ থাকতে বলেছেন আল্লাহ। “ তোমরা একযোগে আল্লাহর রজ্জু সুদৃঢ় রূপে ধারণ কর ও বিভক্ত হয়ে যেওনা, এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর যে দান রয়েছে তা স্মরণ কর। যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনিই তোমাদের অন্তঃকরণে প্রীতি স্থাপন করেছিলেন, অতঃপর তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ হলে এবং তোমরা অনল-কুন্ডের ধারে ছিলে, অনন্তর তিনিই তোমাদেরকে ওটা হতে উদ্ধার করেছেন; এরূপে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করেন, যেন তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হও।” [ ৩ নম্বর সূরা আলে-ইমরান এর আয়াত ১০৩ ] ।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কথা মানছেন না অনেকেই । যারা উম্মাহ্ কনসেপ্ট মুখে মুখে মানছেন, কিন্তু বিজ্ঞান মানছেন না, তারা কুরআনের নির্দেশই অবজ্ঞা করছেন । কেননা কুরআন সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান । যে বিজ্ঞান আমাদেরকে পৃথিবীর দিন রাতের আবর্তন, ২৪ ঘন্টার হিসাব, দিন, মাস, বছর গুনতে শিখিয়েছে, চাঁদ , সূর্যের আবর্তনের মাধ্যমে আমাদের চান্দ্র এবং সৌর বৎসর নির্ধারণ করতে শিখিয়েছে । মুখে বলছেন, “ আমরা মুসলিম উম্মাহ” ! আর কাজে বলছেন, “আমার মানচিত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আমার?” এটা কি হাস্যকর নয় ? এটা কি কুরআনের সাথে , রাসুল(সঃ) এর সুন্নাহর সাথে তামাশা করা নয় ?
উল্লেখ্যে যে, সৌদি আরবের সরকার বিতর্কিত । তাদের ব্যক্তি, পরিবারে আদৌ মুসলিম চরিত্র কতটুকু আছে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন এখন দুনিয়াব্যাপী ঘুরপাক খাচ্ছে । লুকোনোর কিছু নেই । তবে মুসলিম উম্মাহ্ তাদের শরিয়াহ্ কাউন্সিলকে গ্রহণযোগ্য মনে করে আসছে যুগ যুগ ধরে । সেই শরিয়াহ্ কাউন্সিলকে যদি সৌদি রাজ পরিবার নিয়ন্ত্রন করে থাকে, তাহলে অবশ্যই সেটা গোটা মুসলিম জাতিকে ভেবে দেখতে হবে । অনুসন্ধান করতে হবে, আসলে সত্য কি ?
শোনা যাচ্ছে, এবার সৌদি আরবের রাজ পরিবারের হস্তক্ষেপ হয়েছে চাঁদ দেখার ঘোষণা নিয়ে । যদি তাই হয়, তাহলে খুঁজতে হবে, সমাধন কি ? সমাধান কি নেই ? অবশ্যই আছে ।
সমাধানঃ মুসলিম উম্মাহ্’কে নতুন করে “আন্তর্জাতিক মুসলিম উম্মাহ্ কাউন্সিল” গঠণ করতে হবে । যে কাউন্সিল কোন রাষ্ট্র কর্তৃক নির্দেশিত হবে না । সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবে । বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ, জ্ঞানী খাঁটি আলেম-ওলামা এবং ইসলামী জ্ঞানে জ্ঞানী বিজ্ঞানীদের সমন্বয় করে এটি গঠিত হবে । তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে “ পৃথিবীর সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য কোন অক্ষাংশ থেকে “নবচাঁদ” প্রথম দেখা যাবে, সেটি নির্ধারণ করে সেখান থেকে বিশেষজ্ঞ আলেম এবং বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে “নবচাঁদ” দেখার ব্যবস্থা করতে হবে । সেই চাঁদ দেখে যে ঘোষণা হবে, সেটাই সারা পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহ যার যার এলাকার সময় অনুযায়ী বাস্তবায়ন করবে । এর চেয়ে উত্তম সমাধান আর কি হতে পারে ?
কেন আমরা এটা বুঝতে পারব না যে, নবচাঁদ পৃথিবীতে বার বার উদিত হয় না ? একবারই উদিত হয় । রাসুল(সঃ) যদি এ যামানায় থাকতেন, তাহলে তাঁর সেই হাদীস এই যামানার সিদ্ধান্তের সাথে মিলে যেত কি না ? তিনি বলতেন কি না, “যে লোক নবচাঁদ দেখেছে, সে কি আমার ভাই নয়?”
হে আল্লাহ্ ! আমাদের মুসলিম উম্মাহকে আপনি মানচিত্র ভিত্তিক বিভাজন করতে বলেন নি। বরং যারা বিভাজন করবে, তাদেরকে নিয়ে কঠোরভাবে বলেছেন, ৬ নম্বর সূরা আল্-আন-আ’ম এর ১৫৯ আয়াতে- “ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দীনের মধ্যে নানা মতবাদ সৃষ্টি করে দীনকে খন্ড বিখন্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে কোন ব্যাপারে তোমার কোন দায়িত্ব নেই, তাদের বিষয়টি নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সমর্পিত, পরিশেষে তিনিই তাদেরকে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত করবেন।”
হে আল্লাহ । আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তৌফিক দান করুন ।
©somewhere in net ltd.