নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস বি কে

খারাপ কপাল

অনেক আগ্রহ নিয়ে অখাদ্য লিখি :(

খারাপ কপাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমৃতফ্ল

১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৪৩

"এই রিক্সা উত্তরায় যাবে?"

"জে না"

"কেন?"কোন উত্তর না দিয়েই রিক্সা ওয়ালা চলে গেল।ড্রাইভারের উপর প্রচণ্ড বিরক্ত হাসান সাহেব।অবসর নেয়ার পর থেকে কারণে অকারণে অযথা মানুষের উপর রেগে যাচ্ছেন তিনি।গতকাল রাতে স্ত্রীর উপর খুব রেগেছিলেন।কারণটাও ছোট।বাসার গেস্ট দের সামনে সম্পূর্ণ কলা একসাথে ছিলে হাতে উলঙ্গ কলা নিয়ে খেয়েছিলেন তার স্ত্রী।এই নিয়ে ঝগড়া এতদূর গড়াল যে ঝগড়ার পর সারারাত কথা বলেন নি স্ত্রীর সঙ্গে।তাতে অবশ্য বিপত্তি ঘটেছে।আজ সাথে কোন টাকা নিয়ে আসেন নি।প্রতিদিন বাসা থেকে বেরোবার সময় স্ত্রী সুফিয়া সব কিছু ঠিক ঠাক মত গুছিয়ে দেন।আজ দেখা না করেই চলে এসেছেন।

অনেকটা পথ হাঁটা হয়ে গেছে।হাসান সাহেব অসুস্থ অনুভব করছেন।রিক্সা পাওয়া গেলে ড্রাইভার কে বাসায় ফিরে টাকা দেয়া যেত।রিক্সা না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি একটি লোকাল বাসে উঠলেন।শেষ কবে ঢাকার লোকাল বাসে উঠেছিলেন মনে করতে পারছেন না।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার পর মনে হয় উঠা হয় নি।বাসটা জ্যামে আটকা পরলো।প্রচন্ড গরম;সময় ও কাটছে না।দু টাকা মূল্যের একটা পত্রিকা কিনে পড়তে পারলে সময় কিছুটা কাটত।রাস্তার মোড়ে একটি শিশু দাড়িয়ে আম খাচ্ছে।

অদ্ভূত সুন্দর দৃশ্য!হাসান সাহেবের জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনার সঙ্গে আমের সম্পর্ক রয়েছে।

হাসান সাহেব যখন ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করলেন তখন ম্যট্রিক পাশ লোক অনেকটা দুর্লভ ছিল। সারা গ্রামের মানুষ তাকে দেখতে এলো।কিন্তু রেজল্টের পর বাবাকে অনেকে বোঝালেও বাবা তাকে ইন্টারমেডিয়েটে ভর্তি করতে রাজী হন নি।তিনি বললেন,"বাবা নদীর পার যাইয়া দেখ,গাঙ্গে দিয়া ভাইসসা টেকা যায়,ওই গুলা কুড়াইয়া লেখা পড়া কর"

রেজাল্টে খুশি হওয়া এক চাচার দেয়া দুটো আম হাতে নিয়ে নদীর ধারে গিয়েছিলেন হাসান সাহেব।আম খেতে খেতে অবাক নয়নে নদীর স্রোত দেখছেন,তার হাত বেয়ে বেয়ে আমের রস পড়ছে,কিন্তু টাকার দেখা মিলছে না!

আশাহত হয়ে বাড়ি ফিরছেন হাসান সাহেব,সে সময় সুফিয়ার বাবার সঙ্গে দেখা।পরবর্তীতে তিনিই হাসান সাহেব এর পড়ালেখার সমগ্র খরচ বহন করেন।অশিক্ষিত মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন।মেয়ের আবার একমাত্র শিক্ষা আর আধুনিকতা ছাড়া আর কোন যোগ্যতার অভাব ছিল না।স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসার ও কোন সময় কোন কমতি ছিল না।

বাস আবার চলা শুরু করেছে।এর মধ্যে হাসান সাহেব আরেকটি দারুন ঘটনা লক্ষ্য করলেন।ওই পথশিশুদের মধ্যে আম বিতরণ করছে এক দল শিক্ষার্থী।তাদের মধ্যে একজন তার ডিপার্টমেন্টের ছাত্র।মনে পড়ছে একদিন ক্লাসে পড়া না পাড়ায় তিনি ছেলে টিকে গর্দভ বলেছিলেন।তার সেই গর্দভ শিক্ষার্থী যে কাজটি করছে সেটি তার মেধাবী প্রবাসী সন্তানদের করার ইচ্ছে আগ্রহ কোনটাই নেই।



হাসান সাহেব এখন বাসার সামনে,বাস থেকে নামতে ঝামেলা করতে হয় নি,বাসের এক প্যাসেঞ্জার টি ভি তে তার বক্তৃতা শুনেছে বলে খুব সম্মান করলো,বাস ভাড়াও দিয়ে দিল।শেষ মেষ তার সঙ্গে মোবাইলে একটা ছবিও রেখে দিল।এখন আর মানুষকে কষ্ট করে খাতা কলম নিয়ে অটোগ্রাফ নিতে হয় না,ফটোগ্রাফের যুগ।

“আমাকে না বলে গাড়ি,মোবাইল,টাকা পয়সা ফেলে কোথায় গিয়েছিলে?” বাড়ির গেইটে স্বামীকে দেখে কাঁদো কাঁদো ভঙ্গীতে সুফিয়া জিজ্ঞেস করলেন।

“একটু হাঁটতে গিয়েছিলাম”

“আসো তোমার জন্য পাকা আম কেটে রেখেছি”

হাসান সাহেব ভেতরে যাচ্ছেন আর ভাবছেন উনার যে আম খেতে ইচ্ছে হচ্ছে তা তার স্ত্রী কিভাবে বুঝলেন।তার কি সিক্সথ সেন্স ভালো??নাকি তার স্বামীর প্রতি ভালোবাসার জোর সিক্সথ সেন্সের চেয়ে বেশি!!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:১৫

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালো লাগলো , গল্পে ++++++্

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩০

খারাপ কপাল বলেছেন: আপনার ভালো লাগলো শুনে খুশি হলাম :)
আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.