নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক, লেখক, স্থির চিত্রগ্রাহক। কবি, গবেষক, গ্রন্থকার, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলন কর্মী। সাধারণ সম্পাদক, ভারতীয় বঙ্গসমাজ। ধর্মহীন সাম্যের সমাজের স্বপ্ন দেখি ও দেখাই।

শমীন্দ্র ঘোষ

সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী

শমীন্দ্র ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হীরের দ্যূতি চাই

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫১

শিক্ষা মানে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়। একটা চোরও শিক্ষিত। সে শিখেছে চুরি। দুঁদে অপরাধীরা সাহসী। এটা শেখে সঙ্গ থেকে জীবন অভিজ্ঞতায়। এভাবে দেখলে অশিক্ষিত মানুষ নেই। এই পৃথিবীই হলো বড় পাঠশালা। তবে, আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভকারীকে শিক্ষিত বলি। এবং স্তরবিন্যাসও করি।
প্রতিবেশ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয় শৃঙ্খলাপূর্ণ করে। আমরা এটাকেই শিক্ষা বলে থাকি সাধারণভাবে।

কামারশালায় কাটারি তৈরি করতে ইঞ্জিনীয়ারিং পড়তে হয় না। বরং কামারের সঙ্গে থেকে দেখে হাতেকলমে শেখে। আবার, কৃষক পরম্পরাগত ভাবে কৃষিকাজ শেখে। সে আমার থেকে ভালো জানে, কখন কোন মাটিতে কী চাষ করতে হবে এবং কখন কতটুকু সেচ দেবে ইত্যাদি। এইরকম বহু কৃষকের এবং বহু ক্ষেতের প্রয়োগ অভিজ্ঞতাগুলো থেকে আরোহিত জ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সূত্রবদ্ধ করার ফল কৃষিবিজ্ঞান। এইবার এই কৃষিবিজ্ঞানের নিয়মগুলো ওই কৃষককে শেখালে তার জ্ঞানটি শৃঙ্খলাপূর্ণ হবে, পরিশীলিত হবে। ফলে শ্রম বাঁচবে, খরচ বাঁচবে, কাজটি সহজ হবে, দূর্ভাবনা থাকবে না ইত্যাদি। এই শৃঙ্খলাপূর্ণ করাটাকে শিক্ষিত করা বলা হয়, স্কুলিং।

বিশুদ্ধ ধারণাগত জ্ঞান ছাড়া সমস্ত তত্ত্বজ্ঞানই প্রয়োগ অভিজ্ঞতা থেকেই প্রাপ্ত এবং তা পরিবর্তনশীল। যদিও ধারণাগত জ্ঞানেরও বাস্তব পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করা হয়। যেমন অপেক্ষবাদ, কোয়ান্টামবাদ ইত্যাদি একমাত্র বিশুদ্ধ গণিত ছাড়া।
৭৫ বছর পূর্বে হাওড়া ব্রিজ বানাতে যে জ্ঞান ব্যবহৃত হয়েছিল, এই কিছু বছর আগে দ্বিতীয় হুগলিসেতু বা যমুনাসেতু বানাতে সেজ্ঞান প্রয়োগ হয়নি।

জ্ঞান (wisdom), জানা (knowledge), শিক্ষা (learning) বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষই জ্ঞানী। তার জ্ঞান প্রতিবেশ থেকে প্রাপ্ত। জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত।
তেমনি সকলেই শিক্ষিত।
জানাটাকে তথ্যজ্ঞানী বলা যেতে পারে। এজন্য পড়তে হয়। এটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিশীলনগত। ব্যাতিক্রম হলো ঘরে বসে প্রচুর বই পড়ে নিজে বুঝে স্বশিক্ষিত হওয়া। এতে রবীন্দ্রনাথ, গোর্কি, শেক্সপীয়ার প্রমুখ সফল।
আবার, কোনো খুনিকে ফরেন্সিক বিজ্ঞান, অপরাধবিজ্ঞান, ফলিত মনস্তত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, ফলিত রসায়ণ, এনাটেমি, ফিজিওলজি, আর্মস ইঞ্জিনীয়ারিং ও প্রয়োগ ইত্যাদি শেখানো হলে, সে খুন করলে কখনোই ধরা পড়বে না। মজার ব্যাপার হলো, এসব শিখে সে কখনোই খুন করবে না। আরো মজার হলো খুনি কখনোই ওসব শিখতে চাইবে না। কারণ, তার মস্তিষ্ক ওসব শেখার মতো নয়।

বর্তমান ভারত ও বাংলাদেশে শিক্ষা মানে রোজগেরে করার প্রচেষ্টা। জ্ঞানপিপাসু করার, মেধার উত্‍কর্ষসাধন, মননশীলতার চর্চা করা নয়। মূল্যবোধ, সমাজবোধ, সততা, পরার্থপরতা ইত্যাদি মানবিক গুণ শিক্ষা দেওয়া হয় না। সুন্দর মনের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হয় না। শুধু প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করিয়ে ভিক্ষা করার শিক্ষা দেওয়া হয়। এর সপক্ষে প্রচারমাধ্যমে রকমারি প্রচার চলে। নানান চকমকে মোড়কে ঢেকে আবর্জনার ধারণা মাথায় গেঁথে দেওয়া হয়। মানুষ অজান্তেই সেসব ধারণা, শিক্ষা নিজের বলে চালায়। এবার চলে মৌখিক প্রচার থেকে পারিবারিক নিয়ম পালনে প্রচার। চর্চা। অভ্যাস। ভরসা। স্থায়ী প্রভাববেড়ি। এভাবে শেখানো হয় পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর হলো মেধার পরিচায়ক। অথচ তা নয়। পরীক্ষায় প্রথম হওয়াটা মননশীলতা, সমাজবোধের মাপুনি নয়।

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাটাই ভিক্ষার শিক্ষা। বহু বইয়ে সঠিক তথ্য থাকে না, অর্ধসত্য, অসত্য তথ্য থাকে। অনেক কিছু চেপে যাওয়া হয়। যেমন, ১৫ আগস্ট ১৯৪৭-এ ভারত স্বাধীন হয়নি। অথচ পড়ানো হয় স্বাধীন হয়েছে। শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু নয়। অথচ পড়ানো হয় তিনি বঙ্গবন্ধু। এরকম হরেক মিথ্যা পড়ানো হয়। এসব মিথ্যা পড়ে মনে গেঁড়ে বসে। আস্থাশীল হয়ে পড়ে। সত্য তথ্য খুঁজে দেখার স্পৃহা হারায়।
বাংলার প্রকৃত ইতিহাস স্কুলপাঠ্যে পাওয়াই যায় না। বাঙালি হয়ে আত্মপরিচয় জানতে পারে না একজন বাঙালি। কী দুর্দশা!

শোষণযুক্ত সমাজে সামগ্রিক ব্যবস্থাটাই শোষণের পক্ষে কাজ করে। এটা করায় শোষক শ্রেণি। শিক্ষাব্যবস্থাও তারই একটা অঙ্গ। শোষক শ্রেণিই ঠিক করে কী পড়ানো হবে, কতটা জানানো হবে। ফলে পাওয়া যায় ব্যাপক একদল মধ্যবিত্ত ঢাল। যারা নিজেরাই স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চায় নিজ স্বার্থে এবং বিচ্ছিন্নভাবে। সঙ্গে এই একই শিক্ষা অজান্তে শিখিয়ে যায় পরবর্তী প্রজন্মকে। বেগড়বাই হলে দালাল মন্ত্রী ও ঠাঙারে আছে এবং তাদের স্যাঙাত দলীয় মস্তানবাহিনী আছে। এরাই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়। কখনও বা দু'এক ছিটা প্রসাদ ছিটায় মধ্যবিত্তদের ও শোষিতদের। এই নিয়ে তাদের মধ্যে কাড়াকাড়ি মারামারি চলে। কেউ মরে। কেউবা বাঁচে। এই কিছুদিন আগে দেখলাম, ট্রেনে মহিলা কামরা ও পুরুষ কামরা নিয়ে কামড়াকামড়ি করলো সাধারণরা। আসল কারণ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে এঅবস্থা সৃষ্টি।
এতে না হলে আবার কিছু নতুন তাঁবেদার মধ্যবিত্ত তৈরি করে। দরকারে তা গ্রাম থেকে হয়। বঞ্চিত গ্রাম উদাহরণ দেখে আশায় জোহুজুর হতে চায়। যেমন এখন গ্রামের স্কুল থেকে উচ্চ নম্বরপ্রাপক তৈরির হিড়িক উঠেছে। প্রচারমাধ্যমের দাদাগিরিতে তা তুঙ্গে। কেউ পেয়ে হাসে। কেউ হাসে দেখে। কেউ হাসে আশায়। গর্বে হাসে কেউ। শোষক হাসে বোকাদের বোকামি দেখে আর নিশ্চিন্ত হয়। হাসাহাসিতেই হাঁস হয়ে কাজ হাসিল। হাসতে হাসতেই কম্মসাবার। হাসতে হাসতেই এভাবে শোষণের পথ মসৃন ও গতিশীল রাখে শোষকশ্রেণি।

এরমধ্য থেকে গুটিকজন ছিটকে বের হয়। তারাই চিহ্নিত করে সমাজের অবস্থা, রোগ। প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে সচেষ্ট হয়। চায় সমাজবদল। নিজের মেধা, বোধ, মননকে সমাজ উত্‍কর্ষের কাজে লাগায়। মানুষের চেতনার উত্‍কর্ষের কাজে লাগায়। নিজের বলতে কিছু থাকে না তাদের। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়। আত্মত্যাগ করে সমাজবদলের জন্য। জীবন বাজি রেখে শোষণমুক্তি ঘটাতে চায়। এই এঁরাই হলো প্রকৃত শিক্ষিত, চেতনাদীপ্ত মানুষ।
জীবন থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান হলো আনকোরা হীরে। শিক্ষা তাকে ঘষে মেজে পলকা কেটে স্তরে স্তরে সাজায় দ্যূতি আনার জন্য। এবার যে দ্যূতি বেরোলো সেটাই শিক্ষার ফল, চেতনা। এই চেতনাই বিপ্লব আনে; করে সমাজবদল। ছিটকে বেরোনো মানুষগুলো হীরের দ্যূতিসম।
#শমীন্দ্র ঘোষ
০৫/০৯/১৫

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.