![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী
সত্য বলছি:
বাংলার সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের প্রতিটি বাঙালির মতোই আমার জন্ম হয়েছে মানুষ হিসেবে। বাংলা ভাষা মুখে দিয়েছে বুলি। চেতনা বিকশিত হয়েছে বঙ্গীয় পদ্ধতিতে। বঙ্গসংস্কৃতি করেছে লালন। আমার রক্তে রয়েছে বাঙালির নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্ত্বা। সম্বৃদ্ধ হয়ে চলেছি বঙ্গসংস্কৃতির আবহে। বাংলা ভাষায় ব্যক্ত করি মনের ভাব। বাঙালির উত্তরাধিকার হিসেবে আমার জীবনযাপন ও বেঁচে থাকা। তাই তাকে সম্বৃদ্ধ করা, উত্কর্ষসাধন প্রগতির পথে চালিত করা আমার কর্তব্য এবং দায়িত্ব।
আমি জাতিতে বাঙালি। ভাষায় বাঙালি। সংস্কৃতিতে বাঙালি। খাদ্যাভ্যাসে বাঙালি। পরিধানে বাঙালি। চালচলনে বাঙালি। জীবনযাপনে বাঙালি। রক্তস্রোতে বাঙালি। শ্বাসপ্রশ্বাসে বাঙালি।
আমি বাঙালি জাতীয়তাবাদী। "বাঙালি জাতীয়তাবাদী" হলো প্রত্যেক বাঙালি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হচ্ছেন বাঙালির জাতীয় শিক্ষক। চৈতন্যদেব হচ্ছেন বাংলার প্রথম নবজাগরণের প্রবক্তা। রাজা রামমোহন হলেন নবজাগরণের দ্বিতীয় প্রবক্তা। নবজাগরণের তৃতীয় প্রবক্তা হলেন যুক্তিবাদ দর্শনের পথিকৃত প্রবীর ঘোষ। বাঙালি জাতিকে এখনও কেউ একজোট করেনি; তাই জাতির জনক নাই, বন্ধুও নাই।
ভারত-অংশের বাঙালিরা শুধুমাত্র রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক চক্রান্তে রাষ্ট্র নামক শোষণের হাতিয়ার ভারত রাষ্ট্রের নাগরিক। যার কাজ শোষকের তল্পিবাহক হয়ে ভূখণ্ডের সংস্কৃতিগুলোকে দুমড়ে মুচড়ে একছাঁদে ঢেলে সাজানো। হিন্দি দ্বারা এখন এটা চলছে।
ভারতীয় জাতীয়তাবাদ একটি বিশুদ্ধ গুজব। ভারতীয় জাতি হয় না। আর, জাতিসত্ত্বা সম্বন্ধীয় মতবাদ হলো জাতীয়তাবাদ। তাই, ভারতীয় জাতীয়তাবাদ হয় না। ভারতীয় কোনও জাতিসত্ত্বা নেই, সংস্কৃতি নেই, ভাষা নেই, ঐক্য নেই, ধর্ম নেই, এবং এসব কোনও দিনও ছিল না এবং কোনো দিনও হবেও না।
অনেকে আছেন এসব বলতে ভয় পান। কেন পান, সেটা তাঁরাই জানেন। এদের অনেকেরই আমার প্রতি "ইগো" সমস্যা আছে। যাদের অনেকেই আমার পরিচিত এবং ফেসবুকেও বন্ধু, এটা জানি। তারা বিশাল বিশাল মাপের তাত্ত্বিক নেতা-কর্মী! নরওয়ের নরের প্রতি সমবেদনায় কাঁদেন। বা হল্যাণ্ডের হল-এর উত্কর্ষে হাসেন। বা কিউবার কান্নায় ভিজেন। বা, আইএসআইএস-কে বেশ বেশ করে ঘৃণা ছেটান। এরা ভীষ্ম হয়ে বিশ্বসংস্কৃতির শিষ্য। কিন্তু বঙ্গসংস্কৃতি বললেই বনবন করে মথা ঘোরে তাদের। অনেকেরই এরকম অভিজ্ঞতা আছে হয়ত। বাকিদেরটা জানি না। এগুলো সেই "কাঁকড়া বাঙালি"র মতো; ঈর্ষা-সর্বস্ব আত্মকেন্দ্রিক মধ্যমেধার মধ্যবিত্ত মানসিকতার। মুখসাথ করে বিপ্লবেচ্ছা। এদের অনেকেই নিজেকে মুক্তচিন্তা ইত্যাদি বলে থাকে। তো, সেসব তাদের স্বভাব। আবার, অনেকে আছেন বিশ্বটা এক দেশ... ইত্যাদি বলে এড়িয়ে যান। কেন যান, তাঁরাই জানেন। যার আত্মপরিচয়-বোধ নাই, আত্মমর্যাদা-বোধ নাই তারাই "বাঙালি জাতি" শব্দবন্ধটিকে এড়িয়ে যাবেন। আপন সংস্কৃতিকে না জেনে, না বুঝে, না ভালোবেসে বিশ্বকে ভালোবাসা যায় না। নিজের সংস্কৃতিকে উন্নত না করে বিশ্বসংস্কৃতিকে গড়া যায় না। যে ব্যক্তি স্বসংস্কৃতিকে গড়তে পারে না, তার মুখে বিশ্বসংস্কৃতি-বিশ্বটা একদেশ-বিশ্বটা একখামার ----এসব বালখিল্য শোনায়; যেন কেউ শিখিয়ে দিয়েছে এবং মুখস্থ আওড়াচ্ছে। বাঙালি অবশ্য একন ব্যাপক টুকলি করা শিখেছে। আন্দোলনে কিছু ভুল হলে বই দেখে। সেখানে যা লিখেছে তার বাইরে যাবেই না। অন্ধ অনুকরণ অভ্যাস মজ্জাগত।
অথচ, নিজেকে আন্তর্জাতিকতাবাদী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, প্রথমে নিজেকে জাতীয়তাবাদী হিসেবে গড়তে হবেই। নিজের সংস্কৃতিকে জানতে বুঝতে একাত্ম হতে হবেই। নচেত্ যেটা হবে, সেটা ভণ্ডামী, দেখদারী; মুখস্থ আওড়ানো, আত্মকেন্দ্রিকতা। এগুলো হো চি মিঙের বক্তব্যের সারমর্ম বললাম।
প্রতিটি জাতিসত্ত্বার, সংস্কৃতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বিশ্বে স্বীকৃত। এই নিয়ে দ্বিমত নেই। বাঙালি একটি জাতিসত্ত্বা, এই নিয়েও দ্বিমত নেই। তাই বাঙালিরও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আছে। অখণ্ড বঙ্গসংস্কৃতি গঠন করা এবং তার স্বাতন্ত্র রক্ষা করা, তার প্রসারসাধন, উত্কর্ষসাধন, ঐক্যসাধন করা, তাকে প্রগতির পথে চালিত করা প্রতিটি বাঙালির জন্মগত অধিকার। এই অধিকার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত।
বাস্তিল ভেঙেছে। জার্মান জুড়েছে। রাজনীতি কখনোই সংস্কৃতিকে বিভাজন করে রাখতে পারেনি এবং ভিন্ন সংস্কৃতিকে জোর জবরদস্তি একছাঁদে চালাতে পারেনি। সোভিয়েত দেশ তার বড় প্রমাণ।
অতএব আসুন বাঙালি, আমাদের হারাবার কিছুই নেই। ১৭০০বছরের পরাধীনতা কদাচার আক্রমণের প্রকৃত জবাব দেই। আসুন, গর্জে উঠে বলুন "আমি জাতিতে বাঙালি"। আসুন, নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিয়ে অখণ্ড বঙ্গসংস্কৃতি গড়ার লক্ষ্যে কাঁধে কাঁধ মেলাই। হিংসাহীন, ধর্মবিভেদহীন, কুসংস্কারহীন, জাতপাত বিভেদহীন করে গড়ে তুলি মেধাবী নতুন অখণ্ড সোনার বাংলা।
#শমীন্দ্রঘোষ
২১/০৯/১৫
©somewhere in net ltd.