নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক, লেখক, স্থির চিত্রগ্রাহক। কবি, গবেষক, গ্রন্থকার, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলন কর্মী। সাধারণ সম্পাদক, ভারতীয় বঙ্গসমাজ। ধর্মহীন সাম্যের সমাজের স্বপ্ন দেখি ও দেখাই।

শমীন্দ্র ঘোষ

সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী

শমীন্দ্র ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিভাবে মানুষ চালাতে হয়

২১ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:০০

একটা সময় ছিল ক্রিকেট মানেই টেস্ট ক্রিকেট। বিশ্বকাপ শুরু হলো প্রথমে ৬০ ওভারের ও পরে ৫০ ওভারের খেলা দিয়ে। এটাই একদিনের ম্যাচ হিসেবে পেল জনপ্রিয়তা। টেস্ট ক্রিকেটের শ্লথতা গেলো আড়ালে।
আরও পরে এল ২০ওভারের খেলা। এখন এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। ৫০ওভারের খেলা গিয়েছে আড়ালে। আর টেস্ট এখন স্মৃতিময়। হায়!

কেন এমন হয়?

মানুষকে উত্তেজনায় রাখতে হবে; শিক্ষা দিলো ফুটবল। উত্তেজনাময় খেলা। জনপ্রিয় ছিল তৃতীয়বিশ্বে। তাই ক্রিকেটকেও তেমন মোড়কে উত্‍সাহীত করা হলো। রকমারি প্রতিযোগিতার তকমায় বিপণন চলছে। কত লুঠপাট ঘুষ কেলেঙ্কারি হলো। অধিকাংশ খেলাই ফিক্সিং-এ হয়। খেলোয়াড় কেনাবেচা চলে; যেমন ঘোড়দৌড়। তেমনই পশু নিয়ে খেলার মতন এসব খেলা চলছে। মানুষ বুঝেও যেন অবুঝ! দেখেও যেন দেখে না! কারণ, খেলাও একটি বিনোদন। সেটাকে কলুষিত করা হলেও, কীবা করবে সাধারণ! সত্যিই তো! আহা রে... চুক চুক চুক...

আসলে মানুষকে উত্তেজনাময় করে রাখতে হবে। দৃষ্টি ঘোরাতে হবে ভিন্ন দিকে; যাতে সমাজবদলের চিন্তাটাই না করতে পারে। তাই খেলা থেকে লেখা, বিনোদন থেকে রোদন সবেতেই উত্তেজনা বজায় রাখা চাই। মদ খাওয়াতে দাও অবাধ লাইসেন্স। রকমারি ছাড় দাও। মদে মাতাল বানাও তারুণ্যকে। হোক ধর্ষণ। তবু মেয়েদেরই দোষ খোঁজো বিব্রত করো। ভোগবাদের প্রচার করতে মিডিয়াকে কাজে লাগাও। সুন্দরী প্রতিযোগিতা করো। তৃতীয়বিশ্বের মেয়েদের পুরস্কৃত করো। একটু প্রতিবাদীকে দুটো পুরস্কৃত করে দাও। সে তার সম্মানটা ছাড়তে পারবে না। জানো না নেপোলিয়ান বলেছিলেন, সম্মান পদ এক একটা খেলনা? মানুষ সেটা চায়। হুম...

নাস্তিক ধরো। তাকে নাস্তিক সমাজের মাথা বানাও। কায়দা করো রকমারি। ঠিকই মাথা হবে। ক্যাবলাকে ট্রেনিং দিয়ে চালাক বুদ্ধিধর বানানো যায়, জানো না? এবার তাকে সমর্থনের অছিলায় ভোগবাদের পক্ষে কাজে লাগাও। বেশ্যাবৃত্তিকে উত্‍সাহ দাও প্রগতিশীলতার ছাপ মেরে। তাদের অধিকারের আন্দোলনকে মানবাধিকার ছাপ দাও। একদম ঝক্কাস ব্যাপার! সমকামিতার প্রচার করো আধুনিকতা ব'লে। এসবের আইনি স্বীকৃতি দিতে ওই নাস্তিক মুক্তমনারাই উঠেপড়ে আন্দোলন করবে। ফাণ্ড জুগিয়ে দাও তাদের। তরতর করে ফাটল ধরবে নাস্তিক যুক্তিবাদী আন্দোলনে। ওদের মধ্য থেকেই তনা মনা অভি কবি ইমরান সিমরান ইত্যাদি ধরো। তাদেরকে ২-৪টে পুরস্কার দাও। সামনে এগিয়ে দাও নতুন চিন্তার মোড়কে ভোগবাদ-ভাববাদের প্রচারে। দরকারে খুন করিয়ে দাও ওদেরই দু-একটাকে। অপরগুলোকে খুনের প্রতিবাদে লেলিয়ে দাও। ব্যাস, শহিদের সম্মান পাবে হতটি। শহিদটি বিরোধীদের উত্তর দেওয়ার সুযোগই পাবে না; প্রতিবাদও করতে পারবে না। বরঞ্চ শহিদের প্রতি আবেগময় সমর্থন থাকবে শহিদের অনুগামীগণের। এভাবেই ছোট ছোট গোষ্ঠী বানিয়ে দিতে হবে। টুকরো টুকরো। কারও সঙ্গে কারও মিল থাকবে না। নিজেরাই দলবাজি করে মরুক। ধুসস...যাক...যাক...

অপর দিকে ধর্ম, ধার্মিকদের ধরো। ধর্মস্থান গড়ো। পুরোনো মত নতুন মত মিশিয়ে বিভ্রান্ত করো। কিছু মতকে বিজ্ঞান তকমা দাও। এভাবে অজস্র খোপ হবে। পায়রার মতন ধ'রে ধ'রে ওইসব খোপে মানুষ ঢোকাও। তারা নিজের মতের স্বীকৃতি পাবে। আনন্দে থাকবে। তুমিও নিশ্চিন্ত। হরেএ কৃষ্ণ...আহা...

নারীকে দাও পুরুষ, পুরুষকে দাও নারী ভোগের জন্য। উত্তেজনাময়। একেই বলো প্রেম। আধুনিক প্রেম দেহবাদী, বোঝাও মুক্তচিন্তক নামধারীদের। তারাই অন্যকে বোঝাবে। স্বাধীনতা বাকস্বাধীনতা মুক্তচিন্তার মোড়কে আদিম প্রবৃত্তির প্রচার করো। নতুন বোতলে পুরোনো মদের মতন কুসংস্কারগুলো আনো বৈজ্ঞানিক তকমায়। এসবের প্রচার ওই তনা মনা অভি কবিরাই করবে। যথেচ্ছাচার এরাই চালাবে। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করবে। নাস্তিকতা তো দর্শন নয়, জীবনদর্শনও নয়। দিশাহীনরা কীবা গড়বে! এরা সবাই আসলে ভোগবাদী। জানো না, সেই "যাবত্‍ জীবেত্‍ সুখং জীবেত্‍, ঋণংকৃত্ত্বা ঘৃতং পিবেত্‍" মন্ত্রটি? ভোগে ভাগে এরা নিজেদের শ্রেণির মধ্যেই খেয়োখেয়ি করবে; মারবে; মরব। মর!
বিপ্লব জিন্দাবাদ...আহা...

আরে মহাভারত থেকে শেখোনি কি? মুষলপর্ব মনে নেই? মুষলপর্বে বাঁধাই কর সমাজ। মুষলধারে বৃষ্টিতে উফফ রে...

তবুও মানুষ জাগতে চাইলে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলো। বোঝাও দেশ মানে মানুষ নয়, বরং মাটি। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসবাদী, দেশদ্রোহী, মাওবাদী ইত্যদি ছাপ মেরে বন্দি করো। ভয়ে বাকি সাধারণ থাকবে চুপ।
মধ্যবিত্তশ্রেণি বানাও। তারা সবসময়ে স্থিতিশীলতার পক্ষে থাকে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী করো তরুণদের। তারা প্রথমে সমাজবিচ্ছিন্ন হবে, তারপরে ধীরে ধীরে "আমি-তুমি-এক সন্তান" মার্কা হয়ে যাবে। কী হবে প্রতিবাদে! বাঁচবে তো দুদিন! কাজ কর; কামা; খা' দা'; ভোগ কর; ঘোরফের; নিজের মধ্যে থাক।
বাঁ-চা গে-লো...

ধসিয়ে দাও সাংস্কৃতিক আন্দোলন। প্রচার করো সংস্কৃতি মানেই নাচ গান চিত্রকলা ইত্যদি কারুশিল্প। তাই এইসব অনুষ্ঠানে চালাও লারেলাপ্পা। বানাও ভোগের আবেগময় চলচ্চিত্র। বন্ধ ঘরে ফ্যাঁচফেচিয়ে কাঁদুক, হি হি হাসুক, প্রেম করুক ২/৩ঘন্টা। মগজধোলাই হয়ে যাবে বিনোদন রসে ভিজে। আহা...

ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো গাধারা এই সমস্তটার বিরোধিতা করতে নামবেই। বাঁধবে বিরোধ। ধরবে ফাটল। মানুষ হবে বিভ্রান্ত। ঠিক বেঠিক যাবে গুলিয়ে। ফলে, চুপ থাকবে কিছু সাধারণ। বাকিটা থাকবে অজস্র দলে বিভক্ত হয়ে। একজোট হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। নাহলে শোষণ হবে না মসৃন!
ইক্...

শোষণ এভাবেই চালাতে হয়। পুতুল নাচ দেখেছ? কিভাবে আড়াল থেকে সুতো নেড়ে নেড়ে পুতুল নাচায়, হাঁটায়! বিকৃত কণ্ঠে কথা বলায়, কাঁদায়। তেমনই সমাজ-রাষ্ট্রমঞ্চে জ্যান্ত মানুষকে পুতুলসম নাচাতে হবে নিজের ইচ্ছে মতো। বিকৃত কণ্ঠে কথা বলাতে হবে। এজন্য সুচারু ভাবে করা চাই মগজধোলাই। কারণ ব্যক্তিকে চালায় তার মগজ বা মন। এটাকেই বিভিন্ন কায়দায় বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে চালাতে হবে ভয়ে ভক্তিতে উত্তেজনায় নেশেয় পেশায়। চলবেও। চলছেও। বিখ্যাতকে অনুসরণ করবে কেউবা। এভাবে মানুষ সমাজকে ও সমাজ মানুষকে প্রভাবিত করবে। সংশ্লেষ হবে। শোষণের চাকাটা বিবর্তিত পথে মসৃন হয়ে হয়ে চলবে। তরতর করে চলবে। ঝিকঝিক-ঝিকঝিক-কু-ঝিকঝিক...

অধুনা বাঙালিরা এমনই ভোগবাদ আর ভাববাদের নেশায় মশগুল। আড়ালে রয়েছে শোষকের তান্ত্রিক গণতন্ত্রের মোড়কে। দেখছ কি বা-ঙা-লিই?
#শমীন্দ্রঘোষ
২০/০৩/১৬

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:১১

ইক্বরা বলেছেন: শোষণের চাকাটা বিবর্তিত পথে মসৃন হয়ে হয়ে চলবে। তরতর করে চলবে। ঝিকঝিক-ঝিকঝিক-ঝিকঝিক-ঝিকঝিক.. :( :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.