![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী
#নেতাজি_সুভাষচন্দ্র_বোসের_মৃত্যুদিন, আঠারো আগস্ট, ঊনিশশো পঁয়েতাল্লিশ।
#নেতাজি: জন্ম: ২৩ জানুয়ারি, ১৮৯৭, মৃত্যু: ১৮ আগস্ট, ১৯৪৫(৪৮ বছর)
১৮ আগস্ট নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের মৃত্যুদিন। আমি নিশ্চিত যে, তিনি মৃত। এর পিছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।
উইকিপিডিয়া বলছে--- নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের মৃত্যু হয়েছে ১৮ আগস্ট, ১৯৪৫-এ। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল পলায়নরত অবস্থায় তাইওয়ানে বিমান দুর্ঘনায়। তথ্যসূত্র দেওয়া আছে সেখানে।
নেতাজির তামাম ভক্তকুল এই তথ্যটি কেন জানেন না? আশ্চর্য! যদি তথ্যটি ভুল হয়, তাহলে উইকিপিডিয়া কর্তৃপক্ষের নিকট কেন অভিযোগ করেন না? কেন সংশোধন করান না? অবাক কাণ্ড! জাপান সরকার কি উইকিপিডিয়া নামক বিশ্বের বৃহত্তম তথ্যকোষটি সম্বন্ধে জানেন না? এটা ভাবাও মূর্খামী নয় কি? ভারত সরকারও কি জানেন না সেটি? সেকি!? কেবল ফাইল চালাচালি, ফাইল প্রকাশের নাটক করে কেন? ভারতের এত্তোগুলো রাজ্য সরকার, প্রায় দশলক্ষ জনপ্রতিনিধি উইকিপিডিয়া বিষয়ে জানেন না কেন? হেঃ হেঃ...! কেন এমন করে? তারা উইকিপিডিয়াকে জানায় না কেন? আজব দেশ! তাহলে কি ধরে নেব যে, আমজনতার আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখতে, শোষণ মসৃন রাখতে #নেতাজি নিয়ে নাটক করে ভারত সরকার সহ ভারতের সমস্ত ভোট লুঠের রাজনৈতিক দল এবং স্থানীয় শাসকগণ?
সাধারণ আবেগমথিত হুজুকে বাঙালি ও ভারতীয়রা সেসব নাও জানতে পারেন। নেতাজির অন্ধভক্তদেরও সেসব হয়ত জানতে হয় না। তাঁরা নেতাজিকে নিয়ে মনে মনে অযৌক্তিক অমরত্ব পোষণ করেন, নিজের দুর্বলচিত্তকে স্বান্ত্বনা দেন, প্রবোধ দেন। যেন নেতাজির মৃত্যুসংবাদ তাঁদের ভিটেমাটি কেড়ে নেবে; অস্তিত্বটাই যেন চলে যাব! আজব দেশ মাইরি! আজব মানুষ! আত্মবিশ্বাস আত্মসম্মানবোধ নিজের মগজের ওপর নিয়ন্ত্রণ নাই। হুজুক পেলেই হলো। ভিড়ে ভাসলেই, নিরাপদ মনে করেন এনারা। এজন্য যাচাই করার নাই, জানারও নাই। বাবু বলিসেন, তাহাই উপেন সত্য ধরিলেন। কারণ, তাঁহাদের কিছুই জানতে, বুঝতে, শিখতে হয় না। এক এক জন যেন অভিমন্যু হয়ে গেছেন!
অধুনা ফেসবুকে কিছু পণ্ডিতের উদয় হয়েছে। তাঁরা যা পান তাতেই ঝাপান। তাঁরা নিজের মনের রং চড়িয়ে হাবিজাবি লেখেন, প্রতিবাদ করেন। অসত্য অর্ধসত্য কথা বলেন। কেউবা এর থেকে এক খাবলা, তার থেকে একচিমটে, ওর থেকে একচামচ নিয়ে মিলিয়ে মিশিয়ে, তাইতে নিজের মনগড়া রং চড়িয়ে কিছু একটা বলেন। কী যে বলতে চান এবং কী যে বললেন, সেটা হয়ত নিজেরাও জানেন না। শুধুই আত্মঅহং দম্ভ কাজ করে। একটা সবজান্তা ভাণ কাজ করে, দেখছি। যেন "কী একটা করলাম, দেখেছ? দেখছ কেমন দিলাম!" ইত্যাদি মার্কা ভাবনার ঢক্কানিনাদ। এসবই ভাণ্ডখালির আত্মপ্রচার।
উইকিপেডিয়ার সব তথ্য সঠিক নয়। উইকিপিডিয়ায় তথ্য সংযোগ, সংশোধন করতে পারে যে কেউই। তবে, সেক্ষেত্রে তথ্যসূত্র দিতে হয়। সেই মোতাবেক উইকিপিডিয়া কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট স্থানে চিহ্ন দিয়ে রাখে। আমরা বুঝেনিই যে, কোন তথ্যটা কতটা সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য।
নেতাজির মৃত্যুদিন নিয়ে উইকিপিডিয়ার নেতাজি পাতায় কোনও সংশোধনেচ্ছা বা প্রতিবাদ ইত্যাদি চোখে পড়েনি। বরং তথ্যসূত্রটা জ্বলজ্বল করছে।
আমি নিশ্চিত্ যে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস মৃত। এমন ধরনের মানুষ গোপনে ১১৯বছর বয়স অবধি বাঁচতে পারেন না; বা ঐদিন থেকে এ'পর্যন্ত ৭১বছর আত্মগোপন ক'রে বেঁচে আছেন, এটা কল্পনা করা ঈশ্বর কল্পনার মতনই আজগুবি আবেগ ছাড়া কিছু না। সৃজনশীল, নেতৃত্বকারী, আবেগপ্রবণ, আত্মপ্রচারকারী, যোদ্ধা, প্রতিবাদী, সামাজিক, প্রাণোচ্ছ্বল ইত্যাদি মানসিকতার মানুষ কখনই ৭১ বছর আত্মগোপন ক'রে বাঁচতে পারে না। নেতাজির মতন এত উচ্চস্তরের যোগাযোগযকারীও বেঁচে নেই। আত্মগোপন করলেও অচিরেই মরবে বা আত্মহত্যা করবেই। তবে, দিনটি এখন পর্যন্ত ১৮ আগস্ট, ১৯৪৫ হিসেবে নির্দিষ্ট হয়েছে। পরে কখনো সংশোধন করা হলে তখন সংশোধিতটা গ্রহণ করব।
তবে, নেতাজির কিছু শিক্ষা যে কেউই গ্রহণ করতে পারে। নেতাজি শিখিয়েছিলেন যে, কিভাবে দ্বন্দ্ব এড়াতে পালিয়ে যেতে হয়। কিভাবে "শত্রুর শত্রু আমার মিত্র" করতে হয়। কিভাবে নির্বাচনে জিততে এবং জিতে গিয়ে মুসলমান পেটাতে হয়। মেয়র হতে হয়। কিভাবে ভারত স্বাধীন করতে গিয়ে নিজেকেই হাওয়া করে দিতে হয়। কিভাবে, সাম্রাজ্যবাদীদের থেকে সেনাবাহিনীর শিরোপা নিতে হয় যুদ্ধে সহযোগিতা ক'রে। কিভাবে আবেগতাড়িত হয়ে হেরে যেতে হয়। কিভাবে রণকৌশল না জেনে এবং প্রতিপক্ষের ওজন না বুঝে যুদ্ধে ঝাপাতে হয়। তিনি না ছিলেন অহিংস পথে; না ছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবী পথে; না ছিলেন ব্রিটিশদের পক্ষে; না ছিলেন রবিঠাকুরের পক্ষে; না ছিলেন লেনিন, মাও, হো চি মিঙ-দের পথে। তিনি না ঠিকঠাক গড়তে পারলেন ফরোয়ার্ডব্লক দলটিকে; না রক্ষা করতে পারলেন মোহন সিং ও রাসবিহারি বসুর গড়া দলটিকে। ফাঁসিতে চড়লেও না হয় বুঝতাম, বীর। নাহ, তাও হলো না; সব গেল। নিজেও গেলেন। ব্যাস। বরং প্রকারান্তরে তিনি ব্রিটিশদের সুবিধা ক'রে গেছেন। এমন তালিকা বহু। তাই তিনি এমন কেউ নন যে, তাঁকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি এমন কোনও মহত্ কাজও করেননি যে, তাঁকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করতে হবে। এমনি রবিঠাকুরের ডাকেও সাড়া দেননি। হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত, আত্মগরিমায় মোহিত, বিভ্রান্তির পথে ভেসে যাওয়া একটি জীবনের নাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস। দুঃখ হয়। তাঁর কর্মজীবন নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়ে গেছে, (সেটি এখানে পুনঃপ্রকাশ করব ১৯/০৮-এ)। সেটি নিয়ে যুক্তি দিয়ে কেউই প্রতিবাদ করতে পারেননি। শুধু গালমন্দ করে বুঝিয়েছেন যে, তাঁরা হুজুকে ও নেতাজির অন্ধভক্ত এবং খিস্তি দিতে পটু।
শুভেচ্ছা।
#শমীন্দ্রঘোষ
১৮/০৮/১৬
©somewhere in net ltd.