নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছেটাই প্রবল; লেখালেখি দুর্বল

চারপাশে আত্মমুগ্ধ আদিমতাবোধ, আর গ্রন্থিবদ্ধ চিন্তা; সেখান থেকে মুক্তির পথ খুঁজি...

সেতু আশরাফুল হক

All time young and well ইমেইল করুন: [email protected] @লেখক কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

সেতু আশরাফুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতা গণতন্ত্র বনাম ধর্মরাষ্ট্রের দাবী

২১ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮





হঠাৎই বাংলাদেশের মানুষ দেখলো, ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর তান্ডব দাহন। তারা দেশের নির্বাচিত সরকারকে ১৩ দফা দাবী বেঁধে দিয়ে তা পুরণের জন্য সময়সীমা স্থির করে দিলো। সেই দাবীর প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে তারা ঢাকা সহ সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে দিলো। তারা আগুন ধরিয়ে দিলো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, দেশের বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, ফুটপাথের দোকানগুলোতে, এমন কি যে ধর্মরাষ্ট্রের দাবী তারা করছে সেই ইসলামের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরান শরীফেও। এসব ছাড়াও তারা প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে বেড়াতে লাগলো মিথ্যার বেসাতি ও দেশ জুড়ে তথ্য বিভ্রান্তি। তাদের বিশ্বাসের সত্যকে তারা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলো মিথ্যা দিয়ে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় যে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই দেশে তারা ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবী তোলে।



দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠিত হবার পরে বাংলার মানুষের মোহভঙ্গ হয়। তারা বুঝতে পারে যে দ্বি-জাতি তত্ত্ব কতটা ভুল ছিল। জাতিসত্ত্বা যে ধর্মীয় মানদন্ডে তৈরী হয় না তা এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ সহজেই উপলব্ধি করে ফেলে ধর্মের নামে পশ্চিম পাকিস্তানীদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির যাঁতাকলে। এদেশের মানুষ সুপ্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন সময়ে তাদের ধর্ম পরিবর্তন করে এসেছে। এক সময় বুদ্ধধর্ম প্রধান অঞ্চল ছিল এদেশ, সনাতন ধর্মের প্রভাব এখনও প্রবল; ইসলাম ধর্ম এসেছে এগারো’শ খ্রীস্টাব্দে। এছাড়াও বৃটিশ আমল থেকে কিছু মানুষ খৃস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে। এ দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ধর্মের ব্যপারেও এ কথা সমান প্রযোজ্য। কিন্তু বাঙালিত্ব বির্জন দিয়ে কেউ আরব হতে পেরেছে, অথবা ইউরোপীয় কোন জাতিসত্ত্বা অর্জন পেরেছে এমন নজির অসম্ভব। জাতিসত্ত্বা হলো তাই যা কখনো পরিবর্তন সম্ভব নয়; যেমন পরিবর্তন সম্ভব নয় পিতৃপরিচয়। এদেশের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন যেমন উদার তেমনি উদার ধর্মীয় সহিষ্ণুতাও; ধর্মীয় সংকীর্ণতা এ সংস্কৃতিতে থাকলে বিভিন্ন স¤প্রদায়ের মানুষ এতোকাল ধরে এখানে ভাতৃপ্রতিম অবস্থায় থাকতে পারতো না। তবে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর উপস্থিতি থাকলেও চিরদিন এরা পরাস্ত হয়েছে শান্তিকামী মানুষের কাছে।



দেশভাগ ও পাকিস্তান গঠিত হবার পূর্বে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মরাষ্ট্র গঠনের জিগির ওঠে। যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার কারণে পরাজিত হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে সেই পরাজিত শক্তি তাদের চিরাচরিত পদ্ধতিতে ধর্মীয় ছদ্বাবরণে তাদের শক্তিবৃদ্ধি করতে থাকে। এদেশের স্বাধীনতা তারা চায়নি, গণতন্ত্রকে তারা হারাম ঘোষণা করেছে; এমন কি এদেশের সংবিধানকে তারা বারবার অবমাননা ও অমান্য করে চলেছে।



আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র হলো সামাজিক মানুষের সবচেয়ে আরাধ্য বস্তু। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে। তাই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পরষ্পর ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত। স্বাধীনতা অর্থ স্ব-অধীনতা বা নিজের অধীন থাকা। কিন্তু তা যা খুশি তাই নয়। স্বাধীনতার সাথে অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য জড়িত। আইনজ্ঞরা এটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, ‘পথে অন্যের গায়ে ধাক্কা না খেয়ে চলাটা যেমন তোমার অধিকার, তেমনি অন্যকে ধাক্কা না দেয়াটা তোমার কর্তব্য’। অর্থাৎ স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার, কিন্তু সেটা ততোটুকু যা অন্যের অধিকারকে সুরক্ষা করে। স্বাধীনতা মানুষকে নিশ্চিত জীবন ও সামাজিক নিরাপত্তা দেয়। অন্যদিকে গণতন্ত্র সকলের অধিকারকে নিশ্চিত করার ব্যবস্থা।



কিন্তু ধর্মরাষ্ট্রের জিগির তোলা উগ্রপন্থীরা কখনো গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না। তারা চাপিয়ে দেয়া বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেই সব শর্তাবলী এবারও রয়েছে তাদের তথাকথিত ১৩ দফা দাবীতে। এ দাবী গুলো এমন এক সময়ে তোলা যখন আমরা মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় তুলেছি চিহ্নিত ব্যক্তিদের। যারা ধর্মের নামে জঘন্য মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড চালিয়েছে।



‘হেফাজতে ইসলামে’র দাবীগুলোর প্রথমেই রয়েছে দেশের সংবিধানে বিধিবদ্ধ সাধারণ জনগনের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে। তারা ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে সংখ্যালঘিষ্টের অধিকারকে দলন করার দাবী তুলেছে। এমন কি তারা ধর্মে বা সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসী ব্যক্তির ফাঁসির দাবী তুলেছে। এ এমন দাবী যে যদি অবিশ্বাসের কারণে ফাঁসি হয়, তবে বিশ্বাসের জন্যও ফাঁসি হওয়াটাও ন্যায়সঙ্গত।



এ দেশে অধিকাংশ ব্যক্তি ধারণা করেন যে, সংখ্যা গরিষ্ঠের মতামতই হলো গণতন্ত্র। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরতন্ত্রই গণতন্ত্র নামে উদ্ভট আকার ধারণ করেছে। আর এ কারণে সামাজিক বৈষম্য ও বিশৃংখলাও যেন ন্যায্যতা পেয়ে গেছে। কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠতার মাপকাঠি ন্যায় ও গণতান্ত্রিক হতে পারে না। গণতন্ত্র হলো তাই যা সংখ্যালঘু, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি ও সুবিধা বঞ্চিতদের অধিকারকে সমান ধারায় তুলে আনে।



বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য কুখ্যাত অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় স্বাধীনতার দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর পর। আর ঠিক সেই সময় এদের রক্ষার জন্য এবং দেশকে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী-সা¤প্রদায়িক শক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। আর তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো ধর্ম। যা তারা বিয়াল্লিশ বছর পূর্বে ব্যবহার করেছিল স্বাধীনতা বিরোধীতার জন্য। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকে জায়েজ করেছিল ধর্মের নামে।



আধুনিক সমাজে ধর্ম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এক অন্যায় দাবী। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সকলের। কিন্তু ধর্ম দিয়ে যখন রাষ্ট্র শাসন করা হয় তা হয়ে ওঠে নিপীড়ন যন্ত্র। কেননা ধর্মের ন্যায় এবং রাষ্ট্রের ন্যায় ধারণা এক নয়, একটা বিশ্বাস নির্ভর সত্য আর একটি বাস্তব নির্ভর সত্য। যেহেতু প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব ধর্মীয় সত্য রয়েছে যা তার স্ব-স্ব স¤প্রদায়ের কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু অন্য আর একটি ধর্মীয় স¤প্রদায়ের কাছে গুরুত্বহীন। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে কোন বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠী অথবা স¤প্রদায়ের জন্য ধর্ম রাষ্ট্র এক অন্যায় ও গর্হিত ব্যবস্থা।

একজন মুসলিমের যেমন অধিকার আছে নিরাপদে ধর্ম পালনের, তেমনি একজন হিন্দু, বৌদ্ধ এমন অন্যান্য ধর্মাম্বলম্বির অধিকার রয়েছে নিরাপদে তার নিজ নিজ ধর্ম পালন করার। একজন ঈশ্বর বিশ্বাসী যেমনি নিজের বিশ্বাসকে ধারণ করে চলার অধিকার রাখেন, তেমনি একজন নাস্তিকের জন্যও সমান অধিকার সুরক্ষিত থাকতে হবে নিজের বিশ্বাস ধারণ করার। এটাই হয় স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, হতে হ্েব।



ধর্ম প্রসঙ্গে রাষ্ট্র হবে নিরপেক্ষ ও অসা¤প্রদায়িক। কিন্তু ধর্ম বিরোধী নয়। অর্থাৎ রাষ্ট্র কোন ধর্মকে নিরুৎসাহিত করবে না, এমন কি উৎসাহিতও করবে না। কোন ধর্ম বা স¤প্রদায়ের পক্ষেও যাবে না বিপক্ষেও অবস্থান নেবে না। নাস্তিকদের পক্ষেও থাকবে না, আস্তিকদের পক্ষও নেবে না। রাষ্ট্রের ন্যয়দণ্ড হবে বিজ্ঞানসম্মত ও স্যেকুলার। ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তিতে নয়। আর এই হচ্ছে গণতন্ত্র যেখানে সকলের অধিকার সমান।





মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৫

মোহাম্মদ হারুন বলেছেন: এই সব হেফাজতি মোল্লার আচারণ দেখেই সত্তি অবাক হয়েছিলাম,
তারা দাবী করে তারা নাকি (হেফাজতে ইসলাম)
সমজিদে, মাজারে, কোরআন শরীফে আগুন দিয়ে ইসলামের হেফাজত করতে নেমেছে এই সব উগ্র মোল্লা,

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৪

সেতু আশরাফুল হক বলেছেন: ইসলাম মানে শান্তি। এরা শান্তির হেফাজত করছে অশান্তি ডেকে।

২| ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:১৪

ই এইচ মানিক বলেছেন: আজ যাকে মোল্লা বলে উপহাস করছ কালকেই সেই মোল্লাকে প্রয়োজন হবে।
অবশ্য পিগু হইলে মোল্লা দরকার নাই।

আরেকটি কথা হেফাজতের উগ্রতা তোমার চোখে ধরা পরে ছাত্রলীগের উগ্রতা তোমার কাছে মধুর মনেহয় তাইনা???

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৮

সেতু আশরাফুল হক বলেছেন: এই তো খাঁটি হেফাজতীর মতো কথা। মনে হৈতেছে তলোয়ারে শান দিতাছ? ভাল ভাল, কি যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবা তোমরা; সেইডা টের পাওয়া যায় কথার ধরনে।

৩| ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৫০

মোহাম্মদ হারুন বলেছেন: @ ই এইচ মাণিক
ছাত্রলীগ, ছাত্র দল, শিবির, সবাই একই মুদ্রার এপিট ওপিট,

এদের সাথে আপনি হেফাজতকে কেন ঢুকিয়ে দিলেন?

৪| ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৫০

মোহাম্মদ হারুন বলেছেন: @ ই এইচ মাণিক
ছাত্রলীগ, ছাত্র দল, শিবির, সবাই একই মুদ্রার এপিট ওপিট,

এদের সাথে আপনি হেফাজতকে কেন ঢুকিয়ে দিলেন?

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৯

সেতু আশরাফুল হক বলেছেন: কমেন্টের জিকির শুরু হৈল নাকি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.