নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছেটাই প্রবল; লেখালেখি দুর্বল

চারপাশে আত্মমুগ্ধ আদিমতাবোধ, আর গ্রন্থিবদ্ধ চিন্তা; সেখান থেকে মুক্তির পথ খুঁজি...

সেতু আশরাফুল হক

All time young and well ইমেইল করুন: [email protected] @লেখক কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

সেতু আশরাফুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিরে পাওয়া

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৪

জোসনা রাত। রজব আলী ঘোর লাগা চোখে টিনের থালার মতো চাঁদটিকে দেখে। শূণ্যতার আস্তরন পরে চোখে, তাকে ভেদ করে দৃষ্টি দীর্ঘ হয় না। সে বিড়িতে টান দেয়। হাঁপরের মতো বাতাস ওঠে তার বুক থেকে, কাশির দমক ওঠে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তার, বুকের অন্তরিক্ষে থরথর করে কাঁপে। নিজেকে অভিসম্পাত দেয় সে, গালাগাল করে নিজের অদৃষ্টকে; অতপর পুনরায় নিরব হয় তার শূণ্যদৃষ্টি।



সচকিত হয়ে ওঠে রজব আলী এবং হঠাৎই শ্রবনেন্দ্রিয় উদগ্রীব হয় নির্দিষ্ট কোন শব্দ প্রত্যাশায়। ঘরের ভেতর ডুকরে ওঠা আর্তনাদ-রাতজাগা প্রাণীকুলের আওয়াজ ছাপিয়ে অস্পষ্ট এক শব্দ পায় রজব আলী। শব্দের উৎস থেকে ডাক আসে, ‘চাচা?’।

‘কাঁয়?’ সাড়া দেয় রজব আলী।

‘আমি, রশিদ মাঝি।’

‘ও বাহ্ আসলু?’

‘হ্যা। অনেক কষ্টে, অনেক দূর দিয়া নাও ঘুরিয়া আসনু।’ মাঝি জানায়।

‘পলে থাকা আর ভাল লাগে না বাহে। মনে হয় থানাত যায়া পুলিশের কাছোত সেরেন্ডার কঁরো।’ রজব মন্তব্য করে।

‘কন কি চাচা! তাইলে তো সব শ্যাষ। মাডার কেস নোয়ায়?’ মাঝি চাপা স্বরে বলে।

রজব কোন উত্তর দেয় না।

মাঝি উত্তরের অপেক্ষা না করে আবার বলে, ‘মাডার কেসত তো ফাঁসিই হইবে।’

‘ফাঁসির ভয় মুই কঁরো না, কিন্তুক...’ রজব কথা শেষ করে না।

‘কিন্তুক কি চাচা?’ রশিদ জিজ্ঞাসা করে।

‘তোমার চাচির জন্যে তো বাঁচি থাকার ইচ্ছা করে রে বাজান’ রজব আলী একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। নিজের ভাগ্যকে বারবার গালাগাল করে ও। সে ভাবে যে অপরাধ সে করেনি আজ তার দায় মাথায় চেপে তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সে রশিদকে বলে, ‘নাও কি ঘাটে?’

‘হ্যা, একখান ডিঙি নিয়া আসছি, হবার নয়?’ রশিদ বলে।

‘হৈবে রে বাপ, মোক খালি তিস্তা পাড় করি দিবু। রজব সায় জানায়।

‘চলো তাক্’ তাড়া দেয় রশিদ। মাঝ রাতের মধ্যে তাকে আবার গাঁয়ে ফিরতে হবে।



রজব আলী মাচা থেকে নেমে দাঁড়ায়। পোক্ত বাঁশের মাচা, একদিন রজব আলী দক্ষ হাতে গড়ে তুলেছিল, এখন প্রায় ভঙ্গুর। একদিন রজব আলী অনেক কিছুই গড়ে তুলেছিল-ঘর-সংসার, এই বাড়ি।

নদীর কুলে ঘর ছিল তার। সারাদিন থৈথৈ ঢেউ, ঝিরঝিরে বাতাস আর সেই সাথে আলো বিবির কন্ঠে গানের সুর। নিজের বিয়ের দিনের কথা মনে পড়ে রজব আলীর। বিয়ের রাতেও আজকের মতো ঝলমল করছিল জোসনা, একটা জরি লাগানো লাল শাড়িতে আলো বিবি ঘর আলো করে বসে ছিল। সেই বিয়ের গীত আজো তার কানে লেগে আছে, এখনো চোখ মুদে রজব আলী সেই গীত শোনে, ‘গোলাপীর নাকের সোনা রইদে ঝলমল করে...’



খুব সুখ ছিল সংসারে। চরের ধানে গোলা ভরে ওঠে তার, গাই গরুর বাছুর হয় আর হালের বলদের হাম্বা রব তাকে প্রশান্তি এনে দেয়। পাশে থাকে আলো বিবি। আলো বিবির নাকের সোনা ঝলমল করতে থাকে রোদের আলোয়। কিন্তু সুখ আর দুঃখ যেন নদীর দুই পাড়, এপাড় ভাঙে ওপার গড়ে।



রশিদ মাঝির কথায় টনক নড়ে রজবের। সে জিজ্ঞাসা করে, ‘কি কইস রে মাঝি?’

‘সেই দিনের ঘটনাখান কি হৈ ছিল চাচা?’ রশিদ সুধায়।

‘কোন দিনের?’

‘যেই দিন মুন্সির ব্যাটার লাশ পাওয়া গেল।’

‘মুই কিছু জানো না রে বাহ...’ রজব আলী বলে। তার আগের দিন সে চিলমারী গিয়েছিল আর এসেছিল পরদিন রাতে। গ্রামে এসে সে শুনতে পায় যে তারই বাঁশঝাড়ে কুটু মুন্সির লাশ পাওয়া গেছে।

জমি নিয়ে সামান্য ঝগড়া ছিল তাদের, কিন্তু তাই বলে সেটা খুন পর্যন্ত যাওয়ার কথা নয়। তবু সকলের সন্দেহের আঙুল রজব আলীর দিকেই। থানায় মামলা হলো তার নামেই।



‘সেদিনকা চিলমারী কেন গেছনেন চাচা?’ রশিদ জিজ্ঞাসা করে।

‘মোর লাল ষাঁড় খান বেচপার।’ রজব উত্তর দেয়।

‘মুই কঁও কি তোমরা একনা কোন উকিলের সাথোত কথা কন’ মাঝি পরামর্শ দেয়।

‘কিন্তুক...’ আমতা আমতা করে রজব আলী। নির্বিবাদী মানুষ সে, উকিল-মোক্তার, আইন-আদালতকে বরাবরই ভয় পেয়ে এসেছে।

রজবের মনোভাব বুঝতে পেরে রশিদ বলে, ‘আইন কানুন ভয় করেন না চাচা, আইনের উপর ভরসা রাখেন।’



রজব আলী ভরসা চায়, কোন কিছুর উপর ভরসা রাখার জন্য তার মন আনচান করে। তার চোখের সমুখে আলো বিবির উদ্বিগ্ন মুখমন্ডল ভেসে ওঠে, তাকেও কি রজব আলী কোন ভরসা দিতে পারবে না!? সে সিদ্ধান্ত নেয়, এভাবে আর নয় তাকে মোকাবেলা করতে হবে সব বিরূপতাকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.