নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছেটাই প্রবল; লেখালেখি দুর্বল

চারপাশে আত্মমুগ্ধ আদিমতাবোধ, আর গ্রন্থিবদ্ধ চিন্তা; সেখান থেকে মুক্তির পথ খুঁজি...

সেতু আশরাফুল হক

All time young and well ইমেইল করুন: [email protected] @লেখক কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

সেতু আশরাফুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপন ভুবন

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫১

শিশু ওয়ার্ডে আসতে না আসতেই দিনা শুনতে পেল তাকে খোঁজা হচ্ছে। আজ বাসা থেকে বেড়িয়ে রিক্সা পেতে বেশ সময় লাগলো। তার উপর মহল্লার সরু গলিতে সকাল বেলায় ঢুকে পড়েছে একটা ট্রাক। পাশ দিয়ে একটা রিক্সা যাবারও জায়গা নেই। গলির শেষ দিকের বাড়িটায় ইট নিয়ে এসেছে। ট্রাকের সামনে পিছনে ছোট-ছোট যানবাহনের লম্বা লাইন জমে গেছে। এমন অবস্থায় রিক্সা ছেড়ে দিয়ে হেঁটে বড় রাস্তায় আসতে হলো। সেখান থেকে মেডিকেল কলেজে।



কিন্তু তবুও এই সকালে তার খোঁজ করবে কে? ডা. মজুমদার তো এতো তাড়াতাড়ি আসার কথা নয়। তিনি রাউন্ড দেবেন দশটায়, অর্থাৎ এখনও দু’ঘন্টা বাকী। তার মানে দিনার সিনিয়র কোন ইন্টার্ন ডাক্তার। কিন্তু কে? ডা. তানভীর নয় তো? নামটা মনে হতেই খানিক বিরক্তি বোধ করলো দিনা।



লোকটা ইদানিং বাড়াবাড়ি করছে। সিনিয়ররা একটু খবরদারি করেই থাকে সেটা তাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু দিনার উপর তানভীরের খবরদারি একদম অতিরিক্ত।

নিজের অনুমান যে সত্য ওয়ার্ডে ঢুকে দিনা বুঝতে পারলো। ডক্টরস রুমে এক চেয়ারে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে আধশোয়া হয়ে রয়েছে তানভীর। দিনাকে দেখে চোখে একটু কৌতুক খেলা করে গেল। কিন্তু সে পা সরিয়ে দিনাকে ভেতরে যাবার জায়গা দিলো না। শেষে দিনাকে মুখফুটে বলতে হলো, ‘পা দুটো একটু সরান, ভেতরে যাবো’

‘হ্যাঁ, নিশ্চই।’ বলে পা সরালো তানভীর। চোখে-মুখে নির্লজ্জ হাসি।

দিনা ঘরের কোনে একটি কেবিনেটের উপর ব্যাগ রেখে স্টেথো গলায় ঝুলিয়ে নিলো। সে বুঝতে পারলো তানভীর তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেখানে একটুও মার্জিত ভাব নেই।



হঠাৎ করেই তানভীর জিজ্ঞাসা করলো, ‘খালাম্মা কেমন আছেন দিনা?’

‘খালাম্মা মানে?’ বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো দিনা।

‘মানে তোমার মা।’ জানায় তানভীর।

‘ভাল’ দিনার ছোট জবাব।

‘খালাম্মাকে আমার কিন্তু খুব ভাল লেগেছে।’ তানভীর কথা এগোনোর চেষ্টা করে।

‘ও, আচ্ছা।’ বলে দিনা বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।



মা আর বড় বোনকে নিয়ে আজ দুদিন হলো বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে এসেছে তানভীর। বিয়ের প্রস্তাবটা দিনার বাবা-মায়ের কাছেও পছন্দনীয় হয়েছে। মা বলেছেন, ‘বেশ তো তোরা দুজনেই ডাক্তার, সুন্দর মানিয়ে যাবে।’

‘মা, আমি এখন বিয়ে করবো না।’ দিনা মাকে বলে।

‘সে কি কথা! বিয়ে করবি না মানে?’ দিনার মা যেন আঁতকে উঠেছিলেন।

‘হ্যাঁ, এখন আমি বিয়ে করবো না, আমি আরও পড়ালেখা করবো।’

মা একথা শুনে বললেন, ‘পড়ালেখা তো বিয়ের পরও করা যায়।’

‘তা যায়, কিন্তু তুমি নিজে কি করতে পেরেছ?’ দিনা মাকে প্রশ্ন করে।

এ কথায় মা কিছুটা থমকে গেলেন। তারপর কিছুটা নিজের মনেই বললেন, ‘পড়ালেখা না করলেও তোদের মতো তিনটি সন্তানকে তো বড় করে তুলেছি।’

দিনা এবার বললো, ‘আর তাই আমাকেও এখন শ্বশুড় বাড়ি গিয়ে সন্তান লালন-পালনে মন দিতে হবে।’



মা একটু বিরক্ত হলেন। তিনি বললেন, ‘ভেবে দেখ, ছেলেটা ডাক্তার, সম্পন্ন ঘরের সন্তান। আর তোদের বিয়ে হলে আমরাও খুশী হবো।’



মা আর কোন কথা শুনলেন না। ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবার আগে তাদের সিদ্ধান্ত যেন গ্রহণ করা হয়, সেটা জানিয়ে দিলেন কণ্ঠস্বর জোড়ালো করে।



আর এ ঘটনার পর থেকেই তানভীরের খবরদারিটা বেড়ে গেছে। বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে যেন সে ধরেই নিয়েছে দিনার উপর তার একটা অধিকার জন্মে গেছে। আর যখন তখন সে অধিকার ফলাতে চাচ্ছে সে। অন্যদিকে দিনা যাতে ইচ্ছা করেও তা এড়াতে না পারে তার জন্য অন্যদেরও বিষয়টা জানিয়ে দিয়েছে তানভীর। আর তাতেই সকলে ধরে নিয়েছে যে দিনার সাথেই তানভীরের বিয়ে হবে। সুতরাং তানভীরের বাড়াবাড়িটা তাদের চোখে লাগছে না।

সেদিন রুনা বললো, ‘কি রে দুলাভাইয়ের খবর কি?’

‘দুলাভাই মনে?’

‘মানে তানভীর ভাই আর কি!’ রুনা হাসতে হাসতে বলে।

‘সে আবার দুলাভাই হলো কবে?’

‘হয় নি, তবে হবে তো।’

‘কে বলেছে হবে? বিয়ের প্রস্তাব দিলেই বিয়ে হয়?’ দিনা রুনাকে প্রশ্ন করে।

‘সে কিরে! তোর সাথে তানভীর ভাইয়ের কোন কথা হয় নি?’

‘সেটা তোর তানভীর ভাইকে জিজ্ঞেস করতে পারিস।’ একটু ঝাঁজের সাথে জবাব দিয়েছিল দিনা।



রাতে রোগী এসেছে বেশ কয়েকজন। শিশু ওয়ার্ডের চিরাচরিত নিয়মে ত্বার স্বরে চেচিয়ে যাচ্ছে কয়েকটি শিশু। একজনের কানের ভেতর মুশুরের ডাল ঢুকে গেছে। মা শিশুটিকে নিয়ে নার্সের পিছন পিছন ছুটছে আর বলছে, ‘সিসটার, আমার বাবুকে একটু দেখেন না।’

নার্স দিনাকে দেখিয়ে বললো, ‘আপনি বেডে যান, ঐ তো ডাক্তার এসে গেছেন।’

এবার মা দিনার দিকে ছুটে এলেন, ‘ডাক্তার, এই যে ডাক্তার আমার বাবুকে একটু দেখে যান।’

‘চলুন দেখি’ দিনা বলল।



বাবুটার কানের ভেতরে আলো ফেলে দেখা গেল বেশ কয়েকটি মশুরের ডাল। সেগুলো বেড় করার জন্য ফরসেপ নিয়ে আসা হলো, কিন্তু সেটা কানের ভেতর কোন ক্রমেই ঢুকাতে দিচ্ছে না সে। এ অবস্থায় সিসটার এগিয়ে এলেন, নিজের বুকে সাথে বাচ্চার মাথাটা শক্ত করে এঁটে ধরলেন। এবার দিনা কানের ভেতর থেকে মশুর ডাল বেড় করার চেষ্টা করলো।



দেখা গেল তানভীর এসে দাড়িয়েছে। দিনা শুনেছে শিশুটির মা তানভীরের কাছে কয়েক বার গিয়েছিল কিন্তু সে একবারও এসে শিশুটিকে দেখে যায় নি।



ফরসেপ দেখে বাচ্চাটি প্রথমে ভয় পেয়ে কান্না জুড়ে দিল, শেষে তাতে কাজ না হওয়ায় চিৎকার করে অশ্রাব্য গালাগাল দিতে লাগলো।

বিষয়টা নতুন নয়, শিশুদের এরকম আচরণ বরং স্বাভাবিক। কিন্তু দিনা ঘামতে থাকলো, লজ্জ্বায় রক্তিম হয়ে উঠলো তার মুখমন্ডল। তানভীর পেছন থেকে এই অবস্থাকে উপভোগ করছে। ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি। দিনা এক মুহুর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো এমন পুরুষকে সে কখনোই বিয়ে করবে না; কখনো না।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আপন ভুবন আপনার মতো হলেই শান্তি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.