নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছেটাই প্রবল; লেখালেখি দুর্বল

চারপাশে আত্মমুগ্ধ আদিমতাবোধ, আর গ্রন্থিবদ্ধ চিন্তা; সেখান থেকে মুক্তির পথ খুঁজি...

সেতু আশরাফুল হক

All time young and well ইমেইল করুন: [email protected] @লেখক কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

সেতু আশরাফুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অধরা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২৩



শিখার বাসা থেকে বেড়িয়ে মনসুর যেন এক নতুন পৃথিবীকে দেখে। এটা যেন এক ধুসর পৃথিবী, এক ঘিনঘিনে বিমবিষা তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে।

শিখার দেয়া চিঠিটি মনসুরের পকেটে। ঠিকানাটিও শিখা লিখে দিয়েছে সুন্দর গোটা গোটা অক্ষরে। বলেছে মনসুরের চাকরিটা নিশ্চিত হবে। মনসুর জানে শিখার নিশ্চয়তার মূল্য কত, তাই মনসুরও নিশ্চিত এই চাকরির ব্যাপারে।

পকেট থেকে চিঠিটি বেড় করে গন্ধ নিলো ও। একবার ভাবলো, খুলে দেখবে নাকি? মন সায় দিলো না। অন্যের চিঠি পড়া ঠিক হবে না।



মনসুর এমনিতে দুর্বল চিত্তের মানুষ। কখনো কোন কাজ ঠিক সপ্রতিভ যোগ্যতায় করতে পেরেছে কিনা তার মনে পরে না। শিখার প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণও তাকে দৃঢ়তা দেয়নি। সে সব সময় ভেবেছে একদিন তার কাছে সব এসে ধরা দেবে। এই ভাবনাও তাকে উদ্বুদ্ধ করেনি লড়ে যাবার।

একটা কাজ যোগাড় করতে সে কি পারতো না? একটু চেষ্টা করলে ঠিক ঠিক যোগাড় করে ফেলতো, কিন্তু সে আশা করেছে একটা আহামরি কাজের। এমন একটা কাজ যাতে শিখা চমকে যাবে। কিন্তু সে কি পেরেছে? না পারে নি। শেষ পর্যন্ত শিখা নিজেই একটা কাজ খুঁজে দিচ্ছে তাকে।

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে শিখাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল মনসুরের। আর তাই বিপুল উৎসাহ নিয়ে শিখাদের বাসায় এসেছিল সে। আর এখন! চরম হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। অনেক্ষণ তাকিয়ে ছিল শিখা তার দিকে। কি ছিল সেই দৃষ্টিতে? কি জানতে চাইছিল সে নিরবে! মনসুর এসব একেবারেই বোঝে না।



এমনিতে শিখার পরিবারে মনসুর একটা উটকো ঝামেলার মতো। শিখার সাথে ওর মাখামাখিটা কেউ ঠিক ভাল নজরে দেখে না। আজও তেমনি নিস্পৃহ ছিল ওর মা। বড় বোন মিলি নিজের অপছন্দটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে কুন্ঠিত হয় না কখনো। আজকের সংবাদটা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিখার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

শিখাকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলেছে, ‘সুখবরটা শুনেছ তা হলে?’

‘তুমি রাজি?’ পাল্টা প্রশ্ন করেছে মনসুর।

‘হ্যাঁ।’ মৃদু হেসে জানালো শিখা। তারপর জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকলো উদাস হয়ে।

এদিকে মনসুরের মাথায় ঝন্ঝন্ শব্দে একটা এলার্ম বেজে চলছে। তাহলে কি শিখাকে সে চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছে? বুকের ভেতর বাস্প জমে উঠছে, বেরিয়ে আসতে চাইছিল মনসুরের বুক চিরে। শিখাকে তো মনের কথাটি কখনোই বলেনি মনসুর। তাহলে কি শিখা কখনো তার ছিল না?



শিখার সাথে প্রথম দেখার মুহুর্তটি মনে পড়ে মনসুরের। সে এক অভিনব আলোকরশ্মি তার চোখে পড়েছিল। রাতের আঁধারে ঝিক করে উঠেছিল সেটা। আর দূরন্ত হরিণীর মতো দুখানি কাজল কালো চোখে যে মায়াবী আকর্ষণ ছিল, তাকে ভুলতে পারেনি মনসুর। সেটা এক পলকের ব্যাপার হলেও না, কখনো ভুলতে পারবে বলেও মনে হয় না।



কিন্তু শিখার ব্যাপার আলাদা, সে হয়তো মনেই রাখেনি। মনসুরের মতো কত ছেলেই তো প্রতিদিন তার পথ আগলে দাঁড়ায়, প্রণয়প্রার্থী হয়, কত জনকেই বা মনে রাখা সম্ভব হয় তার।

তবু বিয়েবাড়ির আলোকসজ্জ্বার আড়ালে বাড়ির পেছনদিকের শিউলীগাছের নিচে শিখাকে পেয়েছিল মনসুর। শিখার পিছু নিয়ে শিউলী তলায় যখন পৌছুল তারপরই যেন ঘোর কেটেছিল তার। সে যেন সচেতন ছিল না, হঠাৎ অচেনা এক নারীর দুর্নিবার আকর্ষণ যে তাকে এভাবে টেনে আনবে কখনো কল্পনাও করেনি সে।

গাছের ছায়ায় আলোআধারিতে শিখা ঘুরে দাড়িয়েছিল, ফোঁস করে ফণা তুলেছিল মনসুরের মুখোমুখি হয়ে। না, তার চোখে কোন ভয়ডর ছিল না, যেন নিশ্চিত জানা ছিল মনসুরের সম্মহিত অবস্থা। বরং ভয় মনসুরই পেয়েছিল। নিজেকে এভাবে আবিস্কার করে সে জমে গিয়েছিল পাথরের মতো। শিখা ওর ওই অবস্থা দেখে সে কি হাসি। সে হাসি যেন আর থামে না। শেষে মনসুরের হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিল বান্ধবীদের মাঝে। পরিচয় দিয়েছিল বন্ধু বলে। কিন্তু শিখা মনসুরের কাছে অধরা থেকে গেছে আজও।



মনসুরের চিন্তার জাল ছিঁড়ে গিয়েছিল শিখার কন্ঠস্বরে। শিখা ডেকেছিল, ‘মনসুর’।

সেই ডাকে মনসুর ঘোর কেটে বেড়িয়ে এসেছিল। শিখার ডাকে কি বিশেষ কিছু ছিল? মনসুর জানে না। কিন্তু সে সব সময় এমনই আশা করে। সে এই আশা বহুদিন থেকে করে আসছে, সেটা কতদিন! তার হিসেব সে দিতে পারবে না।

শিখা মনসুরের হাতে ঐ চিঠিটি দিয়ে বলেছে, ‘এই ঠিকানায়

গেলে, তোমার একটা চাকরি হবে। আমি চাই তুমি চাকরিটা নাও।’

মনসুর ঠিকানাটা দেখেছিলো। প্রাপকের নামটি বেশ যতেœ লেখা। চিঠিটি পকেটে রাখতে রাখতে জিজ্ঞাসা করেছে, ‘কে লোকটা?’

শিখা মৃদু স্বরে জবাব দেয়, ‘আমার হবু স্বামী।’





সমাপ্ত

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৫

আরুশা বলেছেন: মন ছুয়ে যাওয়া গল্প ++++

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৪৬

সেতু আশরাফুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.