নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছেটাই প্রবল; লেখালেখি দুর্বল

চারপাশে আত্মমুগ্ধ আদিমতাবোধ, আর গ্রন্থিবদ্ধ চিন্তা; সেখান থেকে মুক্তির পথ খুঁজি...

সেতু আশরাফুল হক

All time young and well ইমেইল করুন: [email protected] @লেখক কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

সেতু আশরাফুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাগ্যরেখা

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:০১

রাসেল নিজের হাতের রেখাগুলোকে তাকিয়ে দেখে। এই রেখা গুলোতেই নাকি তার ভাগ্য লেখা আছে। মনজ সেদিন কোথায় যেন এক হস্তরেখাবিদকে দেখিয়ে এনেছে। তিনি নাকি মনজের হাত দেখে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বলে দিয়েছেন। ‘ভবিষ্যৎ বলে দিয়েছেন?’ কথাটি রাসেল মনজকে জিজ্ঞাসা করেছিল। ও হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছে। কিভাবে?

যে মনের কথা বলে দিতে পারে, সে নিশ্চই ভবিষ্যৎও বলতে পারে। মনজ তাই বিশ্বাস করেছে।

ওদের নিজের এলাকাতেই একজন পামিষ্ট আছেন। মোমিন ভাই। রাসেল ভাবছে তাকেই একবার নিজের হাতটা দেখাবে।



আজ সকাল থেকেই মনটা অস্থির রাসেলের। চায়ের দোকানে বাবলু বললো, ‘জানস, স্বপ্নার না বিয়া ঠিক হইছে।’

‘কোন স্বপ্না?’ রাসেল জিজ্ঞাসা করে।

‘আরে, সুলতান গো বাড়ির দোতলায় থাহে।’ বাবলু জানায়।

‘কস কি?’

‘হ, বেটা। মোড়ের বড় কম্যুনিটি সেন্টারটা সাজাইতাছে।’ তারপর রাসেলের মুখের দিকে চেয়ে বলে, ‘দাওয়াতে যাইবি না?’

‘হু’

‘হু কি রে? ক-যে যামু।’ বাবলু বলে।



রাসেল কিছুটা উদাস হয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। তারপর বাবলুকে বলে, ‘মহল্লার সব সুন্দরীগুলার বিয়া হইয়া যাইতাছে রে, ঠিক না?’

বাবলু এবার রাসেলের মুখমন্ডলের দিকে তাকায়। বন্ধুর চিন্তার ধরনটা ষ্পষ্ট হয় তার কাছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে, তারপর বলে, ‘ঠিকই কইছস। স্বপ্নার বিয়া হইতাছে, একদিন দেখবি চৈতীরও বিয়া হইয়া যাইবো।’

রাসেল এ কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর ওরা দুজন বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে। বাবলু বলে, ‘দোস্ত। তুই এখনও চৈতীরে কিছু কইলি না। সে কি আর তোর লাইগা বইয়া থাকবো?’

‘যদি আমারে না কয়, ফিরায়া দেয়?’ রাসেল তার আশঙ্কার কথা বাবলুকে বলে।

‘আরে তাইলেও তো একটা রাস্তা বাইর হয়, না কি?’ বাবলু বলে। কিন্তু কথাটা রাসেলে মনপুত হয় না। সে নিশ্চিত হতে চায় যে চৈতী তার ভালবাসা ফিরিয়ে দেবে না।

এক সময় সে বাবলুকে বলে, ‘চল্ । মোমিন ভাইয়ের কাছে যাই।’

‘চল, লগে রিঙকুরে নিয়া যামু।’ বাবলু বলে।



মোমিন ভাইকে তার বাসায় পাওয়া গেল না। শোনা গেল মোমিন ভাইয়ের স্ত্রী চলে গেছেন। ভাবীকে খুঁজতেই তিনি বেড়িয়েছেন। বাসার মানুষ জানালো, ‘তিনি কখন ফিরবেন কিছু বলা যায় না।’ কিন্তু গলির মাথায় উস্কোখুস্কো মোমিন ভাইকে পাওয়া গেল। তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ্য। কিন্তু রাসেলের হাত দেখাবার বায়নায় তিনি বেশ আগ্রহী হয়ে উঠলেন। তিনি এমন ভাবে ওর হাতটা ধরলেন যেন খুব লোভনীয় কোন জিনিস।



মোমিন ভাই, দ্য গ্রেট পামিস্ট। তিনি ম্যাগনেফাইঙ গ্লাস বের করলেন তাঁর কাঁধে ঝোলানো চটের ব্যাগ থেকে। রাসেলের হাতটি আরও শক্ত করে ধরলেন যাতে হঠাৎ ছুটে যেতে না পারে। একবার ডানহাত আর একবার বাঁহাত তাঁর ম্যাগনেফাইঙ গ্লাসের নিচে নিয়ে দেখতে লাগলেন। অন্যরা সবাই গ্লাসের ভেতর দিয়ে রাসেলের হাতের রেখা গুলি দেখতে লাগলো। মোমিন ভাই ডান হাতের কব্জি থেকে আঙুলের মধ্যমা বরাবর রেখাটি খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন; তারপর সমঝদারের মতো মাথা ঝাঁকালেন। বাবলু আগ্রহী দৃষ্টি নিয়ে অপেক্ষায় ছিলো হয়তো তিনি কোন সৌভাগ্যের ইঙ্গিত দেবেন, কিন্তু তিনি কিছু বললেন না।



এবার ম্যাগনেফাইঙ গ্লাসটি কনিষ্ঠা আঙুলের নিচে নিয়ে এলেন সেখানে একটি রেখাকে দেখা গেল কিছুদূর এগিয়েই তেমাথা রাস্তার মতো তিনদিকে বাঁক নিয়েছে। মোমিন ভাই হাতের রেখা বিশ্লেষণ করতে করতে ভ্রু কোঁচকালেন।

‘কিছু পাইলেন?’ রাসেল প্রশ্ন করলো।

মোমিন ভাই ভ্রু সেভাবেই রেখে দিলেন কিন্তু কোন উত্তর দিলেন না।

টেবিলের দক্ষিণপাশের চেয়ারে রিঙকু বসে দেখছিল। সে এবার বলল, ‘মোমিন ভাই, হুনছিলাম পোলাগো ডাইন হাত আর মাইয়াগো বাম হাত দেখাইতে হয়, এহন আপনেরে দেকতাছি দুই হাত-ই দেখেন। কাহিনী তো বুঝার পারলাম না।’

‘হ। দুই হাতই দেখন লাগে, তাইলে ভবিষ্যত কইতে সুবিধা হয়।’ তিনি জবাব দিলেন।

‘কি দেখলেন বস?’ রাসেল আবারও জিজ্ঞাসা করে।

‘এই দেখো, তুমার হার্টলাইন মাইনে হৃদয়রেখার মাথা ফাইটা গেছে, অর্থাৎ কপালে দুঃখ আছে।’

‘ব্যপারটা কিলিয়ার করেন না বড় ভাই।’

‘ব্যাপার হইলো, পুরুষ মানুষের জীবনে দুই একটা ছ্যাকা না খাইলে লাইফে সাইন করণ যায় না। কিন্তু প্রেমের ছ্যাকা আলাদা জিনিস কিন্তু তুমার আবার বিবাহ রেখা হইল একাধিক...।’

‘তাইলে কি হইবো? গিট্টুডা খুইলা কন না রে বাই।’

‘তুমি বিবাহের ছ্যাকা খাইবা; তুমার পত্থম বিবাহ টিকবো না।’

‘এইডা কি শুনাইলেন?’ রাসেল আঁতকে উঠে।

‘হ। এইডাই তুমার ভবিষ্যত।’ মমিন ভাই সিদ্ধান্ত দিলেন।

কথাটা শোনার সাথে সাথে রাসেল চোখের সামনে চৈতীর মুখটা ভাসতে দেখলো।



‘চৈতী কি সত্যই আমারে ছাইড়া চইলা যাইবো?’ রাসেলের বুকের ভেতর থেকে হাহাকারের মতো দীর্ঘ স্বরে প্রশ্নটি বেড়িয়ে আসে। সবাই শুনতে পায়, কিন্তু কেউ কোন উত্তর দেয় না। রিঙকু একবার মুখ খোলে কিছু বলার জন্য, পরক্ষনে আবার ঠোট চেপে যায়। রাসেলকে সান্তনা দেয়ার মতো কোন ভাষা তাদের জানা নেই।



বিকেলে পুকুরঘাঁটে বসে আছে ওরা। চুপচাপ; চিন্তিত মুখমন্ডল। পুকুরে ঢিল ছুঁড়ছিল বাবলু। সে হঠাৎ বলে ওঠে, ‘আচ্ছা, মোমিন ভাইয়ের নিজের বিয়া টিকে নাই কেন?’

রিঙকুর চোখ দুটো বিষ্ফোরিত হয়ে ওঠে। সে বলে, ‘ঠিকই ধরছোস, মোমিন ভাইয়ের বউ তো চইলা গেছে।’

রাসেল উপলব্ধি করে ‘যে নিজের ভবিষ্যৎ জানে না, সে কিভাবে আমার ভবিষ্যৎ বলবে?’

ওর মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৩৮

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: মোটামুটি

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:২৯

আরিফ রুবেল বলেছেন: সেতু ভাই, কেন যেন ঠিক যুতমত হল না :(

০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৩৩

সেতু আশরাফুল হক বলেছেন: আই নো............মাথায় প্যাচ লাইগা আছে। চেষ্টা করিতেছি...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.