![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বিশ্বাস করি এই দুনিয়াতে সবকিছুই আপেক্ষিক। শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া, তিনি এক, অদ্বিতীয় । সকল প্রশংসাই মহান আল্লাহর ।
''সুনা হ্যাঁ আপকা বেটা মুক্তি ও কে সাত মিলতা হ্যাঁ ? ''
প্রশ্নটা শুনে রশিদ সাহেবের মেরুদণ্ড দিয়ে একটা ঠাণ্ডা শিহরণ বয়ে গেল...
ভয়ের .......................
সময়টা ১৯৭১ সালের জুন মাস ।
সারাদেশে মুক্তিকামি বাঙ্গালিদের উপর পাকসেনাদের হত্যা - ধর্ষণ - লুটপাট এর বিরুদ্ধে এদেসের সোনার সন্তানেরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। তারা মুক্তি বাহিনি ।
রশিদ সাহেব ঢাকার নবাবপুর ''বাটা '' শো রুমের ম্যানেজার । ছোট ছোট ছেলে মেয়ে , স্ত্রী এদের নিয়ে তিনি থাকেন ঢাকার গোরানে । ২৬ সে মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার পরে অনেকেই তাকে বলেছিল ঘর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গিয়ে আশ্রয় নিতে নয়ত পাকি সৈন্যরা তাকে বা তার পরিবার কে হত্যা করতে পারে। কিন্তু রশিদ সাহেব কোন কথা না শুনে চাকরি চালিয়ে যেতে লাগলেন । তার কিছু ' পাকিস্তান পন্থী ' বন্ধুরা তাকে অভয় দিতো যে তার কিচ্ছু হবেনা । অবশ্য এদের সাথে মেশার জন্য অনেকেই আরালে আবডালে রশিদ সাহেব কে '' পাকিস্তানের দালাল '' বলে ডাকতো ।
রশিদ সাহেবের ঘরে ছিল এক টগবগে কিশোর , ক্লাস টেন এর ছাত্র তার বড় ছেলে সারোআর । ৭ই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনার পর থেকেই সারোআর কেমন জানি একটু বদলে গেছে ।
আগের সেই দুরন্তপনা টা আর নেই ।
হটাত হটাত কোথায় যেন চলে যায় ।
এক মনে জয় বাংলা জয় বাংলা বলতে থাকে ।
সারোআর এর এই অস্বাভাবিক আচরনের কারন টা যে কি সেটা রশিদ সাহেব খুব ভালই বুঝতে পারেন ।
আর এর ফলাফলের কথাটা ভেবেই তার খুব ভয় লাগে । ছেলেকে বুকে আগলে রাখতে চান তিনি । হারাতে চান না ।
সেদিন প্রতিদিনের মতই তিনি গিয়েছিলেন যোহরের নামাজ আদায় করতে , কাছের মসজিদে। সেখানেই বিহারী প্রতিবেশী মির্জা সাহেব এর প্রশ্নটা শুনেই অজানা আশংকায় তার বুক কেঁপে উঠল ।
-'' ইয়ে কেয়া কেহ রাহে হ্যাঁয় আপ , হামারা বেটা তো স্কুল মে পারতা হ্যাঁয় । ভো এসাব মুক্তি কি ভারে মায় কেসে জানেগা ?? ছোটা হ্যাঁয় । হাম তো পাকিস্তান চাহতে হ্যাঁয় , বাংলা নেহি , আপ কো পাতা হ্যাঁয় না ।''
-''ঠিক কাহা , লেকিন আপ কা বেটা জাওয়ান হ্যাঁয় , উসকো সাম্ভাল কে রাখিয়ে ।''
মির্জা সাহেবের চোখের শাসানি টা রশিদ সাহেব খুব ভালই বুঝতে পারল ।বাসায় গিয়ে তিনি সারোআর এর ঘরে গিয়ে দেখলেন ছেলে টা একমনে পতাকা বানাচ্ছে কাগজ কেটে ।
কি সর্বনাশ !!!!!!!!!!!!!!
স্বাধীন বাংলার পতাকা !!!!!
আজকে এর একটা বিহিত করতেই হবে ...
- ''সারু এ দিকে আয় , '' তিনি ডাকলেন ছেলেকে ।
- '' আব্বা আমার জন্য কি আনসো ? '' বাবাকে দেখে সরল কিশোর জিজ্ঞেস করল ।
- '' সারু আব্বাজান সত্যি করে বলত তুমি মুক্তিদের সাথে কি দেখা কর ? ওদের কাসে যাও তুমি ? ''
সারোআর মুখ নিচু করে দাড়ায় থাকল ।
রশিদ সাহেব আর কয়েকবার প্রশ্ন করলেন , কোন উত্তর নাই ।রাগে দুঃখে রশিদ সাহেব সারোআর কে থাপ্পর মারতে লাগলেন ।
আশ্চর্য !!!
তার ছেলে আজকে একটু ও প্রতিবাদ করছেনা , চুপচাপ মার খাচ্ছে আর কাঁদছে ।
সারোআর এর কান্না শুনে তার অসুস্থ মা পাশের ঘরে বসে কাদছে আর বলছে ,'' আমার সারুরে আর মাইরনা আর মাইরনা ''
এক সময় সারোআর মুখ খুলল ,-
'' আব্বা আমি যাই ওদের কাসে ।'' তারপর সে আরও বলল , কিভাবে সে তার স্কুল ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে যায় , কিভাবে সে পাক সেনাদের গতিবিধি সম্পর্কে মুক্তি বাহিনীকে খবর দেয় , কিভাবে সে রাইফেল চালানো শিখতেসে ............!!!!!!!!!!!
রশিদ সাহেব চোখে ভয় , বিস্ময় আর গর্ব নিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
- '' আব্বা আমি গ্রেনেড মারা শিখসি । ভাইয়া আমারে বলসে যে নেক্সট অপারেসন এ ......''ছেলের মুখ চেপে ধরেন রশিদ সাহেব আর বলতে দেন না।
- '' চুপ । একদম মুখ বন্ধ। ঘরে যা । কাল্ কেই তোরে আমি দেশে পাঠায় দিমু ''
-'' আমি যামু না ।"' দৃঢ় ভাবে বলল সারু
........................................................................
দুই দিন পর বেতন পেল রশিদ সাহেব ।
এরপর খুব সাবধানে একটা কাজ করলেন ।
বেতনের অর্ধেক টাঁকা দিয়ে কিছু শার্ট প্যান্ট আর লুঙ্গি কিনলেন । এরপর কিনলেন দুই বস্তা চাল , ডাল ও কয়েক কেজি গোস্ত । তারপর সারোআর কে ডেকে বললেন সে আর ওর সহযোগী বন্ধুরা যেন খুব সাবধানে এগুলা মুক্তি বাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে দিইয়ে আসে ।
যতদিন রশিদ সাহেব ঢাকায় ছিলেন এভাবেই তিনি গোপনে মুক্তি বাহিনিদের সাহায্য করে আসছিলেন । তবে কিছুদিন পরে বাসার কাছে পাক সেনারা ক্যাম্প করলে তিনি তার পুরো পরিবার ও সারোআর কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া তার দেশে পাঠিয়ে দেন আর তিনি ঢাকায় থেকে গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য চালিয়ে যেতে থাকেন ।
দু মাস পর অবশ্য তাকে তার ''পাকিস্তান পন্থি '' বন্ধু রা পাকি সৈন্যদের হাতে তুলে দিয়েছিল , এরপর থেকে আর তিনি সাহায্য করতে পারেন নি ।। ........................................................................................
...(সিফাত সারা )
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪
সিফাত সারা বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১৬
বেঈমান আমি. বলেছেন: ওয়াও বেবি।নাইস কিপ ইট আপ
২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪২
সিফাত সারা বলেছেন: অখে আই উইল কিপ ইট আপ
থেঙ্কু বেবি ভাইয়া :#> :#>
৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৫
শায়মা বলেছেন:
শ্রদ্ধা রশিদ সাহেবের জন্য।
২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৭
সিফাত সারা বলেছেন: রশিদ সাহেব আমার দাদু ছিলেন ।
আমি আসলেই গর্বিত যে আমি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে থাকা পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছি ।
ধন্যবাদ আপু গল্পটা পরার জন্য
৪| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫২
এম মশিউর বলেছেন: রশিদ সাহেবের মত লোকেরা ছিল বলেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করতে পারছি।
শ্রদ্ধা রশিদ সাহেবের জন্য।
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৩
সিফাত সারা বলেছেন: ধন্যবাদ ।
আসলে আমাদের উচিত এসব নাম না জানা অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা
ও তাদের সহযোগীদের কথা ও ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা ।
তাহলেই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি এই মাটিতে আর শিকড় গাঁড়তে পারবেনা
৫| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯
ইখতামিন বলেছেন:
গল্প সন্দর হয়েছে +
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫৩
সিফাত সারা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া
৬| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮
মশিকুর বলেছেন:
খুব সুন্দর লিখেছেন। রশিদ সাহেবের জন্য শ্রদ্ধা রইলো। +++
শুভকামনা।
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০০
সিফাত সারা বলেছেন: ধন্যবাদ । আসলে এটা কোন গল্প না ।
আমার পূর্ব পুরুষের ইতিহাস ।,
যা আমার জন্য অনেক গর্বের বিষয় ।
তাই লিখলাম । ধন্যবাদ ভাইয়া, সাথে থাকবেন
৭| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২৮
জনৈক রুয়েটিয়ানের ব্লগ বলেছেন: শ্রদ্ধা।
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০২
সিফাত সারা বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯
আছিফুর রহমান বলেছেন: চালিয়ে যান