![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চালকবিহীন ও নিঃশব্দে চলা উড়োজাহাজের (ড্রোন) মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বোমা হামলার কথা শোনা যায়। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন খান ওই ড্রোনের আদলে তৈরি করেছেন চালকবিহীন উড়ন্ত যান 'কোয়াডকপ্টার'।
ছেলেবেলা থেকেই ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি তৈরির নেশা মামুনের। কুয়েটের তড়িৎকৌশল বিভাগে ভর্তির পর এ নেশা যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল। শুরু হলো আরেকটু উন্নতমানের ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি তৈরির চেষ্টা। কখনো সফল হয়েছেন, কখনো ব্যর্থ। এভাবেই একবার তৈরি করলেন রোবট। রোবটটি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে 'আন্তর্জাতিক অটোনোমাস রোবটিক কম্পিটিশন'-এ পেল দ্বিতীয় পুরস্কার। এতে উৎসাহ আরো বেড়ে গেল। চতুর্থ বর্ষে এসে গবেষণার বিষয় হিসেবে মামুন বেছে নিলেন 'কোয়াডকপ্টার' তৈরির কাজ। দীর্ঘ এক বছর চেষ্টার পর অবশেষে সফল হয়েছেন মামুন। আকাশে উড়েছে তাঁর কোয়াডকপ্টার। এটি তৈরিতে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন বন্ধু রিজভী আহমেদ। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সহপাঠী গোলাম সুলতান মাহমুদ। আর গবেষণাকর্ম হিসেবে কাজটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তাঁর বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান।
কোয়াডকপ্টার আসলে কী
কোয়াডকপ্টার মূলত একটি উড়ন্ত যান। মামুনের তৈরি কোয়াডকপ্টারটি চারটি ব্রাশলেস ডিসি মোটর ও প্রপেলার দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি সাধারণ উড়োজাহাজের মতো 'রোল', 'পিচ' ও 'ইও' অক্ষ বরাবর চলতে পারে। চারটি মোটরের গতি পরিবর্তন করে এটি তিন অক্ষ বরাবর ঘোরানো যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় এটি যেকোনো একটি জায়গায় ভেসে থাকতে পারে। এ অবস্থাকে বলা হয় 'হোভারিং'। চারটি মোটরের গতি পুরোপুরি সমান থাকলে পুরো ক্রাফটটি ভূমির সঙ্গে সমান্তরাল অবস্থায় থাকে।
এয়ারক্রাফটটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রয়েছে একটি আইএমইউ বোর্ড। এতে আছে থ্রি-এক্সিস জাইরো, এক্সেলরোমিটার ও ম্যাগনেটোমিটার। এক্সেলরোমিটারটি তিন অক্ষ বরাবর এয়ারক্রাফটটির এক্সিলারেশন সম্পর্কিত তথ্য মেইন প্রসেসরে পাঠায়। জাইরোস্কোপ সেন্সরটি তিন অক্ষ বরাবর কপ্টারটির হেলানো অবস্থা সম্পর্কে প্রসেসরে তথ্য পাঠায়। এ কারণেই কোয়াডকপ্টার একটি নিদিষ্ট অক্ষ বরাবর নিজের ভারসাম্য বজায় রেখে স্থির থাকতে পারে।
রিয়েল টাইম ডাটা রিডিং এবং তা ব্যাখ্যা করার জন্য মামুন এতে 'পিআইডি কন্ট্রোলার' ব্যবহার করেছেন। সফটওয়্যারটি তথ্য পর্যালোচনা করে কপ্টারটির অবস্থান বুঝতে পারে। সফটওয়্যার থেকেই প্রসেসরের মাধ্যমে মোটরগুলোকে সিগন্যাল পাঠানো হয়। মোটরগুলো প্রসেসরের পাঠানো নির্দেশানুযায়ী গতি পরিবর্তন করে। পুরো বিষয়টি রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
যা দিয়ে তৈরি
কোয়াডকপ্টারটি তৈরিতে ০.৫ অ্যালুমিনিয়াম স্কয়ার বার ব্যবহার করা হয়েছে। দুটো দুই ফুট বার একটি আরেকটির সঙ্গে ৯০ ডিগ্রি কোণ করে বসানো হয়েছে। এ দুটি বারের মধ্যবিন্দুতেই কোয়াডকপ্টারটির ভারকেন্দ্র। এ ভারকেন্দ্র থেকে মোটর চারটি সমান দূরত্বে লম্বালম্বিভাবে বসানো হয়েছে। এই অ্যালুমিনিয়াম শিট, ব্যাটারি ও ল্যান্ডিং গিয়ার দেশে পাওয়া গেলেও স্পিড কন্ট্রোলার, জিপিএস, থ্রি-এক্সিস এক্সেলরোমিটার, জাইরো প্রভৃতি বিদেশ থেকে আনতে হয়েছে। উন্নতমানের ব্যাটারি সংগ্রহ করতেই খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। একেকটি মোটরের দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা করে। থ্রি-এক্সিস এক্সেলরোমিটার ও জাইরো সংগ্রহ করতে খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ তো আছেই। সব মিলে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকার কিছু বেশি।
ব্যবহার
কোয়াডকপ্টারটি অনেক কাজে লাগানো সম্ভব। এটি সোজা উঠতে ও নামতে পারে। তাই এটির ওড়ার জন্য সাধারণ উড়োজাহাজের মতো খুব বেশি জায়গা দরকার হয় না, এমনকি একটি কক্ষের মধ্যেও এটি চালানো সম্ভব। কোনো জায়গায় কোনো বিষাক্ত গ্যাসের অস্তিত্ব আছে কি না, এটি দিয়ে তা চিহ্নিত করা সম্ভব। কোনো নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর দুর্ঘটনায় পড়লে সেখানে তেজস্ক্রিতার মাত্রা নির্ণয়ের জন্যও কপ্টারটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
কোয়াডকপ্টারটি কোনো জায়গায় তাৎক্ষণিক ভিডিও ও ছবি পাঠাতে সক্ষম। এটিকে এক থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পাঠিয়ে দূর-নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিতে সেখানকার বাস্তব অবস্থা জানা সম্ভব। কোনো অনুসন্ধানী কাজে যেমন_আগুন লাগা কোনো ভবনের কক্ষে কে, কী অবস্থায় আছে তা এ কোয়াডকপ্টারের সাহায্যে জানা যেতে পারে। পাশাপাশি ছবিও সংগ্রহ করা যেতে পারে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, 'উন্নত বিশ্বে এ ধরনের যান আছে। আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে দেশের শিক্ষার্থীরাই এখন আগ্রহী হচ্ছে এ ধরনের উড়ুক্কুযান তৈরি করতে। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলও হচ্ছে। দুর্যোগপ্রবণ আমাদের দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অনেক ক্ষেত্রে এ যানটি ব্যবহার করা যেতে পারে।'
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মামুন এ কোয়াডকপ্টারটি আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছেন। তিনি এখন এ কোয়াডকপ্টার পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালানোর জন্য কাজ করছেন। এরই মধ্যে জিপিএসের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণ করে পরিচালনা করার কাজ শেষ করেছেন। মামুন বলেন, দেশের বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আনিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের কাজে অনেক অর্থের প্রয়োজন।
কুয়েটের শিক্ষার্থীরা এর আগে লাইন ফলয়ার, মেজ সলভার, অবস্টকাল এভয়ডার, গার্বেজ ক্লিনার, ভয়েস কন্ট্রোল রোবট তৈরি করেছে। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হলো কোয়াডকপ্টার।
©somewhere in net ltd.