নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী দিবস ও কিছু কথা

০৮ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:১৩


১.
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৮৫৭ সালের আজকের এই দিনে মজুরী বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা সহ বিভিন্ন প্রকার অমানবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নিউয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকারি পুলিশ বাহিনীর দমনপীড়ন। নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য জার্মান রাজনীতিবিদ ক্লারা জেটকান-এর নেতৃত্বে ১৯০৮ সালে প্রথম নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এ সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চ-কে ঘোষণা দেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে।

২.
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করে নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য। প্রায় প্রতিটা ধর্মে-ই নারীকে মর্যাদাদানের কথা বলা হয়েছে। ইসলাম ধর্ম আর্বিভাব পূর্বসময়ে নারীরা ছিল অবহেলিত, নির্যাতিত আর নিপীড়িত। জাহেলী যুগে কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দেওয়া হত। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলাম ধর্মের আলোর মশাল প্রজ্বলন করে এ অন্ধকার দূর করে নারীদের সমাধিকারের কথা বলেন। রাসূল (সাঃ) এর এক হাদিসে আছে, "নারী পুরুষের জননী, ভগিনী ও অর্ধাঙ্গিনী। সে বিপদে বন্ধু, সম্পদে সুখ, গৃহে শান্তিরক্ষাকর্ত্রী।"
"মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত" এ কথাও তিনি-ই বলেছেন। রাসুল (সাঃ) নারীদের সম্মান করতেন আর স্ত্রীদের সাথে করতেন মধুর ব্যবহার। একাধিক স্ত্রী থাকার পরও কোনো স্ত্রী রাসুল (সাঃ) এর ওপর কোনোদিন কোনো অভিযোগ করেন নি।
নারীদের শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তিনি বলেছেন, "প্রত্যেক নর-নারীর ওপর বিদ্যা শিক্ষা ফরয।"
বিবাহের ক্ষেত্রে দেনমোহর ব্যবস্থা ইসলাম নারীকে করেছে পুরুষের চেয়ে মর্যাদাবান।
সনাতন ধর্মালম্বীরা নারী দেবীর পূজা করলেও নারীদের অলক্ষ্মী ভেবে সতীদাহ প্রথা প্রণয়ন করে। এতে নারীরা চরম জুলুমের শিকার হন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সতীদাহ প্রথা বিলুপ্তির পাশাপাশি তিনি নিজ ছেলের সাথে এক বিধবা নারীর বিয়ে দিয়ে নারীদের ওপর অমানবিক জুলুম ও নির্যাতন প্রতিরোধ করেন।
আমাদের দেশ থেকে সতীদাহ প্রথা অনেক আগে বিলুপ্ত হলেও স্বামী কর্তৃক স্ত্রীদাহর খবর মাঝে মাঝে দেখি। গতকালও খবরের কাগজে দেখলাম, স্বামী কর্তৃক অগ্নিদগ্ধ স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত হয়েছে। বর্বরতা বা অন্ধকার যুগ অতিক্রম করেও যখন এমন সংবাদ দেখি যখন খুব-ই খারাপ লাগে। একজন স্ত্রী শুধু মাত্র বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে বাপের বাড়ি ছেড়ে জীবনের মত চলে আসে স্বামীর ঘরে, সুখে-দুঃখে পাশে থাকার পাশাপাশি স্বামী চাইলে তার হাত ধরে পারি দেয় দেশ-দেশান্তর। তারপরও যদি সেই বিশ্বাসটুকুর ওপর আঘাত আসে, দগ্ধ হয় শরীর তবে আর কি থাকে!! বনের হিংস্র জন্তু জানোয়ারও নিজ সঙ্গীনীর ওপর ভালোবাসা পরায়ণ তবে মানুষ নয় কেন? যারা স্ত্রী নির্যাতন করে তাহলে কি তারা বনের জন্তু জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট?
নারীর প্রতি সম্মান জনক আচরণ যেমন আমরা কামনা করি ঠিক তেমনি ভাবে নারীকে সর্বক্ষেত্রে শ্লানীলতা বজায়ে রেখে বিচরণ দেখতে চাই। ভ্রষ্ট নারী যেমন সমাজের অভিসাপ তেমনি আর্দশবান নারী সমাজের আশীর্বাদ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরর ভাষায়, "নারী যখন আপন প্রতিষ্ঠা থেকে ভ্রষ্ট হয়, তখন সংসারে সে ভয়ংকর বিপদ হয়ে দেখা দেয়।"
আমরা কখনও দেখতে চাই না, স্ত্রীর পরক্রিয়ার বলি স্বামী; এমন সংবাদ।

৩.
নারী পুরুষ মিলেই আমাদের পরিবার, সমাজ, দেশ। কোনো নারী যেমন বলতে পারবে না তার জীবনে কোনো পুরুষের অবদান নেই আবার কোনো পুরুষও অস্বীকার করতে পারবে না তার জীবনে নারীর অবদানের কথা। উভয়ের জীবনে-ই উভয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কেউ কারো ছাড়া নয়। এজন্য উভয়কেই নিজ নিজ অাত্মমর্যাদা বজায়ে রেখে চলতে হবে। একে আপরের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। শেষ করছি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই অমিয় বাণী দিয়ে,
"কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী
পুরুষের তরবারি
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে,
বিজয়লক্ষ্মী নারী।"



- সোহাগ তানভীর সাকিব
গল্পলেখক
[email protected]

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:১১

ওমেরা বলেছেন: কথা তো ভাল বলেছেন, কিন্তু নারী দিবস আছে পুরুষ দিবস নেই কেন ?এটা করে কি নারীকে হেয় করা হয়নি ?

তবে আপনার লিখা আমার পছন্দ হয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ ।

০৯ ই মার্চ, ২০১৮ ভোর ৬:৫৮

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: আপনি হয়তো এই লেখার শুরুতে পড়েছেন, ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন নামের এক রাজনীতিবিদ নারী ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
আপনি প্রশ্ন করেছে পুরুষ দিবস নেই কিন্তু নারী দিবস আছে এতে নারীদের হেয় করা হয়েছে কিনা। নারী দিবস তো পুরুষ কর্তৃক প্রবর্তিত নয়, যদি নারীকে হেয় করা হয়েই থাকে তাহলে নারী-ই নারীকে হেয় করেছে।

আমার এই সামান্য লেখা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হয়েছি। লেখাটি পড়ে অনুধাবন করে মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ।

২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:২৯

শায়মা বলেছেন: নারী ও পুরুষ সকলের জন্য শুভকামনা! :)

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪৭

প্রামানিক বলেছেন: নারী পুরুষ পরস্পর মিলে মিশে থাকার মধ্যেই সুখ।

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৪৮

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: হুম, একদম ঠিক কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা অনেকেই এই ব্যাপারটি বুঝতে চাই না। আর বুঝতে চাই না একে অপরকে। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.