নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

রেসপেক্ট

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৩৭


মফস্বল শহরে খুবই নিরিবিলি এলাকায় আমাদের মহল্লা। শহরে মাদকের আখড়া নামে এক সময় আমাদের মহল্লার বেশ খ্যাতি ছিল। প্রতিটা বাড়িতেই চলতো রমরমা মাদকের ব্যবসা। ফলে নিত্যদিন বহিরাগত ব্যক্তিদের পদচারণায় মুখর থাকতো আমাদের মহল্লার প্রতিটা অলিগলি। ভদ্র পরিবারের শিষ্ট মেয়েরা কখনোই একাকি বাড়ির বাহিরে বের হতে পারতো না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়িতে খোলা জানালা দিয়ে তৈজষপত্র আর পোষাক-পরিচ্ছদসহ নানা জিনিষপত্র চুরি হতো। এতটাই সামাজিক অবক্ষয় হয়েছিল যে, জন্মদাতা বাবা-মায়ের শরীরে হাত তোলা নেশাগ্রস্থ ছেলেমেয়েদের নিত্যনৈমেত্তিক ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যার পরেই বিভিন্ন অলিগলির মোড়ে মোড়ে, রাস্তার ধারেসহ প্রতিটা আনাচে-কানাচে ও চিপায়-চুপায় শুরু হয়ে যেত অবাধে মাদক সেবনের কাজ। তবে যে ভালো মানুষ ছিল না তা নয়। খারাপ মানুষদের প্রভাবে আর দুষ্টু স্বভাবে সেইসব ভালো মানুষেরা সব সময় সংকুচিত ভাবে নিজেদের আড়াল করে রাখতো। ঝগড়া-বিবাদ করে প্রতিবাদ করার মত কেউ ছিল না। পুলিশের কাছে নালিশ করলে ফলাফল হতো নিষ্ফল। কারণ, পুলিশ আসতো ঠিকই, তবে নির্দিষ্ট দিন এসে তাদের পাশে বসে আদিষ্ট টাকাগুলি নিয়ে যেত।
কিন্তু এখন সারাদেশে আমাদের মহল্লা একটি আদর্শ মহল্লা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। আদর্শ মহল্লা হিসেবে গত বছর জাতীয় পুরস্কার অর্জনের পর আমাদের শহরের শিক্ষিত এবং ভদ্র পরিবারদের বসবাসের প্রথম পছন্দ এখন আমাদের মহল্লা। মেয়েরা এখন একাকি বাহিরে যেতে পারে, কেউ তাদের কিছু বলে না। এখন আর কেউ নেশা করে না। বন্ধ হয়ে গেছে চুরি ছিন্তাই। সবাই এখন ময়লা আবর্জনা ডাস্টবিনে ফেলে। নর্দমা কেউ আর নোংড়া করে না। আমাদের মহল্লার আদর্শ, পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা নিয়ে এখন টিভিতে প্রতিবেদন দেখানো হয় সংবাদপত্রে খবর ছাপা হয়।
আমাদের মহল্লার এমন পরিবর্তন কিন্তু রূপকার গল্পের মত এক নিমিষেই হয় নি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মেধা আর শ্রম ব্যয় করে ধৈর্য্য সহকারে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে অন্ধকারের অমানিশা থেকে আলোর ফুলকি মালায় পরিণত হয়েছে। এর পেছনে সব থেকে বেশি অবদান আমাদের মহল্লায় অবস্থিত চেঞ্জ ক্লাবের।
আমাদের মহল্লার মিশু ভাই। আদু ভাই, বাকের ভাই বা আরমান ভাইয়ের মত নয় কিন্তু সে। আমাদের মহল্লায় রানিং স্টুডেন্টদেরকে নিয়ে গঠিত চেঞ্জ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এখন সভাপতি। বর্তমানে আমাদের চেঞ্জ ক্লাবে মিশু ভাই ও বিন্দু আপুই সবচেয়ে সিনিয়র ব্যক্তি। এর আগে সেসব সিনিয়র ভাই ও আপুরা ছিল তারা ছাত্রজীবন সমাপ্ত করে কর্ম জীবনে প্রবেশ করলে বা আমাদের মহল্লা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলে ক্লাবের শর্ত অনুযায়ী তাদের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। তারপরে তারা আমাদের চেঞ্জ ক্লাবের উপদেষ্টামণ্ডলীর দায়িত্ব পালন করে থাকে। বিভিন্ন সামাজিক কাজ, মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনা তৈরি, সাংস্কৃতিক চর্চা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, বৃক্ষরোপণ, কৃতি ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা এবং গরীব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করে যথাযথ ব্যক্তিকে যথাযথ ভাবে প্রদান করা হলো আমাদের চেঞ্জ ক্লাবের মুখ্য লক্ষ্য। আমাদের ক্লাবের যেকোনো কাজে মিশু ভাই এবং বিন্দু আপুই সবচেয়ে বেশি আন্তরিক এবং অগ্রগামি। সাপ্তাহিক মিটিংয়ে তারা দু'জন সর্বশেষ কবে অনুপস্থিত হয়েছে এমন রেকর্ড আমাদের ক্লাব নথিতে নাই। এককথায়, বর্তমানে তাদের দু'জনের কারণেই আমাদের চেঞ্জ ক্লাব সবসময় সরব এবং গতিশীল। তাদের দু'জনের সেচ্ছাশ্রম আর মেধায় আমাদের ক্লাব স্বগৌরবে এগিয়ে চলছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো মিশু ভাই অল্পকিছু দিন পরেই আমাদের ছেড়ে ঢাকায় চলে যাবে। ঢাকায় চলে গেলে নিয়মানুযায়ী সে আর আমাদের ক্লাবের সদস্যপদে থাকতে পারবে না। এ জন্য আমরা খুবই মর্মাহত। কারণ, আমরা সবাই মিশু ভাইকে খুবই রেসপেক্ট করি এবং ভালোবাসি।
মিশু ভাইয়ের মনটাও আজ কয়েকদিন ভালো দেখছি না। সব সময় কি যেন ভাবে। কেমন যেন আনমনা হয়ে থাকে সারাক্ষণ। মনে আগের মত প্রফুল্লতা নেই। মিশু ভাই আবার এমন স্বভাবের মানুষ, নিজের সুখ-দুঃখ কখনো কারো সাথে শেয়ার করে না। নিজের মনের ভিতর চাপা রাখে। তার বন্ধুরাও জানে না মিশু ভাইয়ের জীবনে ঘটে যাওয়া এমন অনেক ঘটনা আছে। এজন্য মিশু ভাইকে নিয়ে সবাই একটু বেশিই কৌতুহলি। মনে মনে মিশু ভাইয়ের মন খারাপের কারণ অনুসন্ধান করতে ছিলাম। এমনাবস্থায় একদিন আমাদের ক্লাবে গিয়ে দেখি, মিশু ভাই নাই কিন্তু ডেস্কটপ অন করা। আমি পেনড্রাইভে ক্লাব থেকে আমাদের পিকনিকে যাওয়ার ছবিগুলি নিতে ডেস্কটপে বসি। এখন দেখি মিশু ভাইয়ের ফেসবুক আইডি লগিং করা। দেখে তো আমি পূর্ণিমার চাঁদ হাতে পাই। প্রায় পাঁচ হাজারের কাছাকাছি তার ফেণ্ড সংখ্যা। পাঁচ শতাধিক ফলোয়ার। বিশটার মত গ্রুফে যুক্ত সে। সেই সব গ্রুফের মধ্যে কোনোটার মেম্বার সংখ্যা আট-নয় হাজারেরও বেশি। এত মানুষের সাথে তার সামাজিক যোগাযোগ!
সকালে যখন ফেসবুক টাইম লাইনে দেখি, মিশু ভাই স্ট্যাটাস দিয়েছে, "এ জগতে এমন "কেউ"ও আছে, যে শুধু রেসপেক্ট করে কিন্তু ভালোবাসে না।" তখন থেকেই আমার মনে এই "কেউ" টা কে, সেটা জানার জন্য মনোবাসনার দানা অঙ্কুরিত হয়। তাই কৌতুহলি হয়ে মেসেঞ্জারে প্রবেশ করে অবাক হয়ে নির্বাক হয়ে যাই। বিন্দু আপুর সাথে মিশু ভাইয়ের দীর্ঘ চ্যাটিং দেখতে পাই। বিন্দু আপুকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে সুদীর্ঘ একখানা চিঠি লিখেছে সে। চিঠি সিন করার পর মিশু ভাই আর বিন্দু আপুর চ্যাটিং......
বিন্দু : মিশু ভাই.....এসব কি বলছেন আপনি?
বিন্দু : আমি আপনাকে ফেণ্ড হিসেবে অনেক রেসপেক্ট করি।
বিন্দু : না, ঠিক আছে, আপনার ভালো লাগাটা আমাকে শেয়ার করেছেন....ভালো লাগতেই পারে It not bad.....but আমি চাই আমাদের বন্ধুত্ব ভালো থাকুক। আপনার কথা আপনি ফিরিয়ে নিন।
মিশু : লিখতে লিখতে আমি তো অনেক কথাই লিখে ফেলেছি। তো কোন কথা ফিরিয়ে নিতে বলছেন?
বিন্দু : আমার মনে হয় আপনার বোঝার কথা।
মিশু : দুঃখিত, আপনাকে জানানোই আমার ভুল হয়েছে। না জানালেই মনে হয় ভালো হতো।
বিন্দু : It's ok....আপনার ভালো লাগাটা শেয়ার করছেন....
বিন্দু : আমরা সবাই ফেণ্ড ছিলাম আছি থাকবো।
মিশু: No comment.
সেই দিনের চ্যাটিং এই পর্যন্ত-ই। তার দু'দিন পরে মিশু ভাই আর বিন্দু আপু পিকনিকে গিয়ে পাশাপাশি বসে যে ছবি ওঠেছিল সেই ছবির ওপর কবিতা লিখে বিন্দু আপুকে পোষ্ট করেছে সে। আমি তো অবাক, মুখে নেই বাক্, আমাদের মিশু ভাই ক্রাশ খেয়ে কবি হয়ে গেছে! পড়ে দেখি......

"এতদিন এতটা পথ এসেছি,
তবুও বুঝিনি তোমাকে ভালোবেসেছি।
ছিলাম একই সাথে একই আঙিনাতে
একই কক্ষে পাশাপাশি বসেছি।
তবুও বুঝিনি তোমাকে ভালোবেসেছি।
গল্প আর গানের আসরে তুমি ছিলে সবার উপরে,
হাসিমুখে বলেছো কথা কাউকে দাও নি ব্যথা
অবাক চোখে আমি দেখেছি।
তবুও বুঝিনি তোমাকে ভালোবেসেছি।
সেদিন দুপুরে হাজার লোকের ভীরে ব্যস্ততম বাজারে
তোমাকে খুঁজে পাই নতুন করে।
তোমার কালো চোখ হাসিমাখা মুখ আর কথার ফুলঝুড়ি
হৃদয় আমার কুচিকুচি করেছে হয়ে তরবারি,
ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যখন প্রাণেতে মরেছি।
তখনই বুঝেছি তোমাকে ভালোবেসেছি।
মনে দ্বিধা ভয় কত সংশয় কি জানি কি হয়,
জয় হবে নাকি পরাজয়। তবুও তোমাকে বলেছি।
তোমাকে ভালোবেসেছি তোমাকে ভালোবেসেছি।"

মিশু ভাই তার ড্যাশ হৃদয়ের জন্য যে ক্রাশ খেয়ে হুশ হারিয়ে বেহুশের উপক্রম হয়েছে সেটা আর আমার বুঝতে বাকি থাকে না। কৌতুহলও কেটে যায়। মেসেঞ্জারের নিচের দিকে দু'জনের আরো চ্যাটিং দেখি.........
মিশু : আপনার অনুমতি ছাড়া আমার কবিতায় আপনার ছবি ব্যবহার করেছি। কোনো প্রতিক্রিয়া করলেন না যে?
বিন্দু : কাজটা ঠিক করেন নাই ভাই?
মিশু : কোন কাজটা? ছবি ব্যবহার না কবিতা লেখা?
বিন্দু : আমি এসব পড়েই দেখি নাই।
বিন্দু : So আপনাকে বলছি এসব বাদ দেন।
মিশু : কি বাদ দিবো সে বিষয়টা স্পষ্ট নয়। অনুগ্রহ করে বাদ দেওয়ার বিষয়টা স্পষ্ট করে বলুন।
বিন্দু : দেখেন মিশু ভাই, আপনি কিন্তু এসব আবোল তাবোল এসএমএস করে আমাকে ডিস্ট্রাব ফিল করছেন। তাই বলছি এসব বাদ দেন।
বিন্দু : এখন থেকে ভাববো মিশু ভাই নামের আমার কোনো ফেণ্ড ছিলো না......আমাকে ক্ষমা করবেন..........
বিন্দু : আর হ্যাঁ.........এর পরে হয়তো আমার সাথে আপনার কোনো কথা থাকতে পারে না। So আর এসএমএস করে আমাকে বিরক্ত করবেন না প্লিজ।
মিশু : আপনার কথায় একটু নয়, ভীষণ কষ্ট পেলাম। আমি আপানাকে বিরক্ত করি কথাটা ভেবে আরো বেশি খারাপ লাগছে। যাই হোক, আপনাকে বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চাই। ক্ষমা করে দিবেন আমাকে। আর হ্যাঁ, আজকের পর থেকে আমার কোনো কথা, মেসেজ, পোষ্ট, লাইক, কমেন্ট ইত্যাদিতে যাতে বিরক্ত না হন তাই আনফেণ্ড করে দিলাম আপনাকে। মিশু ভাই নামের কেউ আপনার কেউ ছিলো না।
মিশু ভাই আর বিন্দু আপুর চ্যাটিং এখানেই খতম। আমি যেটা বুঝার সেটা তো আগেই বুঝে গেছি।



-সোহাগ তানভীর সাকিব
গল্পলেখক
ই-মেইল: [email protected]

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:৪৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আরেকটু সুন্দর হলে গল্পটা দারুণ ভাবে ফুটে উঠতো।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:২২

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: সুন্দরের ব্যাপারটা বোধগম্য হলো না। আরেকটু স্পষ্ট পরামর্শ দিলে খুশি হতাম।

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:২৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
উপস্থাপনা আরেকটু ভাল হলেই গল্পটা জমজমাট হতো।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৩

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: পরবর্তী গল্প লেখার সময় আপনার পরামর্শ মাথায় রেখে ভালো করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো। সুন্দর পরামর্শের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:০৯

ওমেরা বলেছেন: মোটামুটি ভাল লাগল ।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৫২

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: আমার বৃহত প্রচেষ্টা আপনার ক্ষুদ্র ভালো লাগার কারণে সার্থক হয়েছে বলে মনে করি। লেখা পড়ে অনুভূতি জানানোর জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৩৫

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: মন্দ নয়

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:২২

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: অান্তরিক ধন্যবাদ। সব সময় ভালো থাকুন এই প্রত্যাশা।

৫| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩২

মৌরি হক দোলা বলেছেন: সুন্দর গল্প :) :)

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:২৭

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ। সব সময় ভালো থাকুন এটাই প্রত্যাশা।

৬| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:২৬

করুণাধারা বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো। লিখতে থাকুন।

শুভেচ্ছান্তে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.