নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

জনৈক বদ+রুল

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৯

কামরুল নার্গিসকে দীর্ঘদিন ধরে পছন্দ করে। নার্গিসের ভালোবাসার জন্য কামরুল দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বাঁধতে পারে লাল কাপড়, বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে খুঁজে আনতে পারে একশ আটটি নীল পদ্ম, সাঁতার দিয়ে পারি দিতে পারে সিলেটের সুরমা নদী। তবুও নার্গিসের মন পায় না।
নার্গিসের প্রতি কামরুলের ভালোবাসার সূত্রপাত হয়, যখন কামরুল নার্গিসদের বাড়িতে লজিং মাস্টার থাকে তখন থেকে। মাস্টার হলেও কামরুলের মন মানসিকতা মাস্টারের মত নয়। সে সব সময় নার্গিসকে লোভনীয় নোংড়া নজরে দেখে। কারণ, কামরুল নোংড়া মনের মানুষ আর নোংড়া মনের মানুষেরাই অপরকে নোংড়া নজরে দেখে। কামরুল যে নার্গিসকে নোংড়া নজরে দেখে সেটা নার্গিস বুঝে নেয় খুব সহজেই। তাই যতই সে গৃহশিক্ষক হোক না কেন, মনে মনে তাকে খুবই ঘৃণা করে । এছাড়াও কামরুলকে নার্গিসের ঘৃণা করার কারণ হলো, সে সারাদিন শুধু বদ ছেলেদের সাথে বদমায়েশি করে। মাথায় যাবতী বদ চিন্তা চেতনায় ভরা। প্রচন্ড বদমেজাজি। বদ নেশা করার অভ্যাসও আছে। ভার্সিটির স্যার বা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সাথে মাঝে মাঝে বদ আচরণ করে। তাই কামরুল ক্যাম্পাসে বদরুল নামে বেশি পরিচিত। আড়ালে সবাই বদরুল বলেই ডাকে। কামরুলের এসব বদ কাজকাম নার্গিস একটুও পছন্দ করে না বলেই তার মনের মধ্যে গৃহশিক্ষক কামরুলের প্রতি ঘৃণা জন্মিয়ে যায়। অনেক বার বিভিন্ন ভাবে কামরুল নার্গিসের মন পাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু সব চেষ্টাই বৃথা যায়। কারণ, যার স্বভাব গুলো অপছন্দের তাকে তো পছন্দ করে মন দেওয়া যায় না। মন তো আর হাতফোনের ডাটা কানেকশন নয় যে, যখন খুশি তখন কানেকশন দিলাম আবার কাজ সেরে কানেকশন বন্ধ রাখলাম। কামরুল সম্পর্কে নার্গিস যতটা জানে, নার্গিসদের বাড়িতে এখনও ততটা জানে না। শুধু জানে, সে ক্ষমতাশীন দলের ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত। মাঝে মাঝে মিছিল-মিটিংয়ে যায়, এই এতটুকু। নার্গিসদের বাড়ির লোকজন মনে করে ভার্সিটিতে পড়তে গেলে এতটুকু রাজনীতির দরকার আছে।
এদিকে যতই দিন যেতে থাকে নার্গিসের প্রতি কামরুলের বদ-লালসা ততই বেড়ে যায়। সেই বদ-লালসার প্রভাবে একদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় রাস্তায় কামরুল নার্গিসের পথ আটকায়। এসময় কামরুল নার্গিসকে মুখে ভালোবাসার কথা বললেও নার্গিস কামরুলের চোখে মুখে দেখতে পায় বদ-লালসায় আসক্ত একটা খারাপ মানুষেরর প্রতিবিম্ব। তাই নার্গিস কামরুলের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় এবং বলে................
: "ছিঃ কামরুল ভাইয়া, ছিঃ। আমি না আপনাকে বড় ভাইয়ের মত দেখি। আর আপনে........"
: "দ্যাখো; আজ থেকে দেখবা না। আজ থেকে........"
: "কামরুল ভাইয়া, আমার দ্বারা কোনোদিনও সম্ভব নয়।"
: "কেন সম্ভব নয় নার্গিস? তুমি জানো না আমার ক্ষমতা সম্পর্কে? আর ভার্সিটির কত মেয়ে আমাকে ভালোবাসে, আমার সাথে সম্পর্ক করতে চায়। আর তুমি..........."
: "করতে চায়, তাদের সাথে করতে পারেন না? আমার কাছে কেন?"
: "আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই, নার্গিস।"
: "সবে মাত্র ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে উঠলাম, আর এখনি বিয়ে? আমি লেখাপড়া করতে চাই। বিয়েটিয়ে নিয়ে এখন আমি ভাবতে চাই না। তাছাড়া আপনি তো জানেন, ভাইয়া ডাক্তরি পড়ার জন্য চীন যাবে। তার কাগজপত্র সব ঠিক। এখন আমার পরিবারকে অন্য কোনো ঝামেলাও জড়াতে চাই না।"
: "আমি এত কিছু বুঝি না। তুমি আমাকে ভালোবাসবে কিনা সেটা বলো?"
: "বললাম তো কামরুল ভাইয়া সম্ভব না। একটা কথা কয়বার বলবো?"
: "আমাকে ভালো না বাসলে তোমাকে আর তোমার ছোট ভাইকে আমি আর পড়াবো না। আমি তোমাকে প্রাইভেট পড়াই শুধু তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। তোমাদের বাড়িতে থাকি শুধু তোমাকে একটু দেখার জন্য। তাছাড়া মাসে মাসে এমনিতেই আমার হাজার হাজার টাকা ইনকাম। এখন আর আমার লজিং মাস্টার থাকার প্রয়োজন নেই।"
: "আমাকে আর পড়াতে হবে না। আমি এখনি বাড়িতে গিয়ে সব বলে দেব।"
: "এখন তো তুমি বাড়িতে যেতে পারবে না, জান। তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে সোনাপাখি। তারপর তোমাকে সোনার খাঁচায় বন্দি রেখে শুধু আদর আর আদর করবো। তোমাদের বাড়িতে তোমাকে আদর করার জন্য কতই না সুযোগ খুঁজেছি, পায় নি। গোসল করে ছাদে যখন তুমি তোমার ভেজা জামা-কাপড় রোদে দাও, তারপর আমি সেখানে গিয়ে সেই জামা-কাপড় থেকে তোমার শরীরের ঘ্রাণ নেই। ভারী মিষ্টি ঘ্রাণ। আমার খুব ভালো লাগে,জান"
এই বলে কামরুল নার্গিসের চিবুক বরাবর নাক এনে জোড়ে নিশ্বাস নেয় এবং বুকের ওখানে ফু দিয়ে বুকের ওপর থেকে উড়না সরিয়ে দেয়। আর বলে.....
: "সাইজ কত?"
কামরুলের হঠাৎ এমন চূড়ান্ত বদ আচরণ দেখে নার্গিস ভয়ে কাঁপতে থাকে। কারণ, তখন নার্গিসের সাথে তার বান্ধবীদের কেউ নেই। কামরুল সবাইকে বিদায় করে দিয়েছে। রাস্তায়ও তেমন মানুষ-জন চলাচল করছে না। এভাবে চলতে চলতে এক সময় কামরুল নার্গিসের কোমর বরাবর হাত দেয়। ভয়ে নার্গিসের কথা বন্ধ হয়ে যায়। পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। জানুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ের শীতের দিনেও গা ঘেমে জামা ভিজে যায়। মানুষ যে বদ হয় সেটা নার্গিসের জানা ছিল কিন্তু এতটা যে বদ হয় সেটা এখনই প্রথম জানে। বিশ্বস্ত বা কাছের মানুষ যদি বদ হয়ে দেখা দেয় তবে তাকে বনের জন্তু-জানোয়ারের চেয়েও হিংস্র মনে হয়, আর তার দিকে তাকালে দেখা যায় সবচেয়ে নিকৃষ্ট পশুর প্রতিচ্ছবি। এ মুহূর্তে কামরুলকে নার্গিসের ঠিক সে রকমই মনে হয়। অবসম্ভবী বিপদের আঁচ পেয়ে নার্গিস দ্রুত পাঁয়ে হাঁটে। কামরুলও না হটে। যখন উপ-শহরের জাঙ্গাইল এলাকায় শফিরউদ্দিন হাইস্কুলের সামনে আসে তখন কামরুল নার্গিসকে বলে........
: "স্কুলের ভিতরে চলো, তোমার সাথে কথা আছে।"
কামরুলের কথায় নার্গিস বিরক্তিতে রাগের সুরে বলে
: "রাস্তায় কি কথা বলছেন না? আর আমি এখন স্কুলের ভিতর যেতে পারবো না। স্কুল ছুটি হয়ে গেছে, কেউ নাই।"
নার্গিসের কথা শোনার সাথে সাথে রাস্তার ওপর কামরুল নার্গিসের হাত ধরে টানাটানি করে। ভয় পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে নার্গিস স্বজোড়ে চিৎকার দেয়। নারী কণ্ঠের এমন চিৎকার শুনে আশপাশ থেকে মুহূর্তের মধ্যে প্রায় শতাধিক মানুষ সেখানে জমা হয়ে যায়। কামরুল অবসম্ভাবী বিপদ বুঝতে পেরে উপায়ন্তর না দেখে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। উপস্থিত জনগণ নার্গিসকে গাড়িতে করে বাড়িতে আর কামরুলকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
এই ঘটনার পরে কামরুলের ক্ষতির চেয়ে লাভ হয় বেশি। নার্গিসদের বাড়িতে চিরতরে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলেও রাজনৈতিক উপর মহলে যাওয়া-আসা বেড়ে যায়। ক্ষমতাশীন দলের ছাত্র-সংঘটনের ক্ষীণ সমর্থক হওয়ার কারণে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের দায়ী কোরে কিছু কিছু চাটুকার সংবাদ মাধ্যম কামরুলের হাসপাতালের ছবিসহ করুন প্রতিবেদন প্রকাশ এবং প্রচার করে। ভার্সিটি ক্যাম্পাসে কামরুলকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে কামরুলের রাজনৈতিক বড় ভাইয়েরা। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং যথোপযুক্ত বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারক লিপিও দেয় তারা। বসে থাকে না ভার্সিটির সাহিত্যিক শিক্ষকেরা। কামরুলের পক্ষে কলম ধরে নানা আহাজারি করে। অসহায় মেধাবী ছাত্র কামরুলেরর চিকিৎসা হয় সরকারী অনুদানে। কিন্তু নার্গিসদের বাড়ির দরজা চিরতরে কামরুলের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
গেল চার বছর আগের ঘটনা। এই চার বছরে নার্গিস কলেজ ছেড়ে ভার্সিটিতে গেছে। কয়েকবার সেমিস্টার লস দিয়ে কামরুলেরও ভার্সিটিতে পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। চার বছরে রাজনৈতিক ভাবে সে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। এখন ভার্সিটিতে তার অনেক পাওয়ার। ভার্সিটির অতিথি ভবনে বিনা খরচে থাকে। সবাই তাকে আগের চেয়েও আরো ভালো করে চেনে। রাজনৈতিক পাওয়ারের জন্য ভার্সিটির সকল ছাত্র-ছাত্রীসহ ঝাড়ুদার থেকে ভিসি পর্যন্ত সবাই কামরুলকে খুবই ভালোবাসে। কিন্তু বদরুল নামটা ঠিকই থাকে। কামরুলও তার বদরুল নামের বৈশিষ্ট ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বাজায়ে রাখে।
দেশের এমপি, মন্ত্রী, ভার্সিটির ভিসি, প্রক্টর এদের ভালোবাসার জোড়ে আর সবার ঘৃণিত ভালোবাসা পেলেও ভালোবাসা পায় না শুধু নার্গিসের। নার্গিসের চোখে কামরুল বদরুল হিসেবেই দেখা দেয় বার বার।
এদিকে কামরুলের উক্ত্যাক্তার ভয়ে নার্গিসের পরিবার আতঙ্কে থাকে সব সময়। কখনোই নার্গিসকে একাকি ক্লাসে যেতে দেয় না।
একদিন সকালে নার্গিসের মা মনোয়ারা বেগম তাড়াহুড়া করে রান্না শেষ করে। মেয়ের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা হচ্ছে। সকালে যেন খেয়ে যেতে পারে সেজন্যই মনোয়ারা বেগমের ব্যস্ততা সেদিন একটু বেশি। খাওয়ার জন্য যখন মনোয়ারা বেগম সব আয়োজন সম্পন্ন করে, ঠিক তখন নার্গিস পরীক্ষা দিয়ে এসে খাবে, মাকে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। সাথে থাকে নার্গিসের কাইয়ুম চাচ্চু। বদ কামরুলের ভয়েই কাইয়ুম চাচ্চু নার্গিসকে কলেজে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা করে। নার্গিসকে তার চাচা এমসি কলেজে পৌঁছায়ে দিয়ে গেটের বাহির অপেক্ষা করে। এদিকে পার্শ্ববর্তী ভার্সিটির ছাত্র কামরুল এমসি কলেজের ভিতরে পূর্ব থেকেই নার্গিসের অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকে। নার্গিস কাছাকাছি আসলে, চার বছর আগে জঙ্গাইল এলাকায় শফিরউদ্দিন হাই-স্কুলের সামনে যে বদ আচরণ করেছিলো সেই বদ আচরণের কিছুটা প্রতিফলন ঘটায় কামরুল। নার্গিস কোনো কিছুতে পাত্তা না দিয়ে দ্রুত পায়ে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করে।
নার্গিস পরীক্ষার হলে যাওয়ার পর কামরুল একটি কোমল পানীয় ও পানির বোতল কিনে অফিস পিয়নের মাধ্যমে নার্গিসের কাছে পাঠায়। নার্গিস রাগে আর ঘৃণায় কামরুলের পাঠানো সেসব ফিরিয়ে দেয়। এতে কামরুলের মাথায় রক্ত জমে যায়। সামান্য একটা মেয়ে হয়ে কামরুলের মত নেতার গিফট ফিরিয়ে দেয়। যে কামরুলকে ভার্সিটির ভিসিও কোনোদিন কোনো কারণে ফিরিয়ে দেয় নি। নার্গিসের চেয়ে সুন্দরী মেয়েরাও তার সাথে রাত কাটিয়েছে ভার্সিটির অতিথি ভবনে। আর একটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের পড়া মেয়ে হয়ে কামরুলকে অপমান! এই কথা যদি ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছোট ভাইদের কানে যায় তাহলে আর মান থাকবে না। ক্যাম্পাসের কেউ ভয় পাবে না। রাজনৈতিক মাঠে ভয় পাওয়ানোই নেতা হওয়ার মুলমন্ত্র। জনগণ যাকে যত ভয় পায় সে তত বড় নেতা, সে তত পাওয়ারফুল, সে তত বড় সম্মানী। বদ রাজনৈতিক নেতাদের এমন বদ চিন্তা ভাবনার মতো বদ কামরুলের মাথায়ও বদ চিন্তার উদয় হয়। দল পাওয়ারে তাই মটরসাইকেল ডিয়ারে দিয়ে শহরের আম্বরখানা এলাকায় গিয়ে মাংস কাটার একটি চাপাতি কেনে। এরপর এমসি কলেজে ফিরে এসে নার্গিসের জন্য অপেক্ষা করে। নির্দিষ্ট সময়ের দশ মিনিট আগেই নার্গিসের পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। বাহিরে কাইয়ুম চাচ্চু অপেক্ষা করছে বলে নার্গিস কোথাও দেড়ি করে না। পরীক্ষা শেষে নার্গিস হল থেকে বেরিয়ে এলে কামরুল সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছা ও বুদ্ধিতে চাপাতি দিয়ে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে জনসম্মুখে কুপিয়ে নার্গিসের মাথা ও শরীর বিভিন্ন অংশ গুরুতর জখন করে। অল্প কিছু লোক কামরুলের এমন কাণ্ড দেখার পরেও নার্গিসকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে সাহস পায় না। তাদের ভয় একটাই কামরুল ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দলের পদপ্রাপ্ত ছাত্রনেতা। তবে দূরে দেখে মুঠোফোনে সেই দৃশ্য ধারণ করতে ভুল করে না কেউ-ই। পরে নার্গিসের আর্ত চিৎকারে ইমরান নামের একটি ছেলে সাহস করে এগিয়ে যায়। এরপর দাঁড়িয়ে থাকে না এমসি কলেজের ছাত্রজনতা। একত্রিত হয়ে নার্গিসকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আর কামরুলকে থানা-হাজতে পাঠায়।
মনোয়ারা বেগম নার্গিসের খাবার ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলো। নার্গিসের বাড়ি ফেরার সময় প্রায় হয়ে গেছে দেখে ফ্রীজ থেকে সেগুলো বের করে গরম করে। নার্গিস বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পর তার সৌদিপ্রবাসী স্বামী মাশুক মিয়া ফোন করে মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করে মনোয়ারা বেগমের কাছে। নার্গিসের বড় ভাই চীন থেকে মায়ের কাছে ফোন করেও আজ বোনের খোঁজ-খবর নেয়। মনোয়ারা বেগমের দুই ছেলে এক মেয়ে। নার্গিসের অবস্থান দ্বিতীয়। পরিবারে একমাত্র মেয়ে হওয়ার কারণে নার্গিস সবার চোখের মনি। আদর আর ভালোবাসায় নার্গিসকে এখনও মাঝে মাঝে গালে তুলে ভাত খাইয়ে দেয় মনোয়ারা বেগম। নার্গিসের সাথে ওর কাইয়ুম চাচা থাকার কারণে সকালে নার্গিস না খেয়ে বাড়িতে থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরেও মনোয়ারা বেগম নিশ্চিন্ত। হয়তো কোথাও থেকে তারা নাস্তা সেরে নেছে। নিশ্চিন্ত মনেই মনোয়ারা বেগম নার্গিসের খাবার গরম করছে। গরম করতে যাওয়ার দশ মিনিটে সে দুইবার দেয়ালে ঘড়ির দিকে তাকায়। নার্গিসের আসতে বেশি দেড়ি নেই। কখন যেন কলিং বেল বেজে উঠে। ছোট ছেলেটাও বাড়িতে নেই। কলিং বেল বাজলে তাকেই গিয়ে দরজা খুলে দিতে হবে।
কিছু সময় পর ঠিকই বেজে উঠে তবে কলিং বেল নয়, বাড়ির ফোন। আসে ঠিকই তবে নার্গিস নয়, নার্গিসের দুঃসংবাদ। মনোয়ারা বেগম বেহুশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
ইতিমধ্যে নার্গিসকে কোপানোর ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল সৃষ্টি করে। প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রিক সংবাদ মাধ্যমের সংবাদ শিরোনাম হয় নার্গিস। তাকে নিয়ে প্রতিবেদনসহ খবর ছড়িয়ে পরে। উন্নত চিকিৎসার জন্য স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে নার্গিসের মাথা অপারেশন করা হয়। নার্গিসের মাথায় যে অপারেশ করা হয় তাকে "ডিকম্প্রেশন ক্রেনিয়েকটমি" বলে। এই অপারেশনের উদ্দেশ্য মস্তিষ্কের ওপর তরলের চাপ কমানো। চাপাতি দিয়ে আঘাত করায় নার্গিসের মাথায় প্রচুর রক্ত জমে যায়। এই চাপ তার মস্তিষ্ক সহ্য করতে পারেনি। তাই সে অচেতন হয়ে পড়ে।
অপারেশন করে চিকিৎসকেরা প্রথমে ওই রক্ত অপসারণ করে। নিউরোলজি ও নিউরোসার্জারি বিশেষজ্ঞরা জানায়, একজন স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্ক কতটা কাজ করছে, তা নির্ণয়ে গ্লাসগো কোমা স্কেল নামের একটি নির্ণায়ক ব্যবহার করা হয়। একজন রোগী চোখ খুলছে কি না, কারও ডাকে এবং স্পর্শ করলে সাড়া দিচ্ছে কি না, এই তিনটি বিষয় বিবেচনা করে মস্তিষ্কের সুস্থতা বিচার করা হয়। নার্গিসের মস্তিষ্কের স্কোর ৬। কারও স্কোর ৮ হলেই তাকে মারাত্মক অসুস্থ ধরা হয়। ৮ এর নিচে স্কোর হলে ডাক্তারেরা সাধারণত অপারেশনের ঝুঁকি নিতে চান না। কিন্তু নার্গিসকে বাঁচাতে এমন ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ ডাক্তারদের হাতে ছিল না।
অপারেশন শেষে নার্গিসকে আইসিইউতে রাখা হয়। সরকারী দল এবং বিরোধীদলের নেতারা নার্গিসকে দেখতে যাওয়ার প্রতিযোগীতা করে। দেখে ফিরার সময় সেই সব নেতারা উপস্থিত সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে নার্গিসের জন্য চোখের পানিও ফেলায়। লৌকিকতার জন্য একজন মহিলা এমপি অতি উৎসাহে হাসি মুখে আইসিউইতে শয্যায়ী নার্গিসের সাথে সেলফি তুলেও ফেসবুকে পোষ্ট করে। দেশ জুড়ে এমন নিকৃষ্ট ঘটনার দৃষ্টান্ত মুলক বিচারের দাবিতে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সুশীল সমাজ, সাংস্কৃতিককর্মী, সরকারী দল, বিরোধী দল, কবি, সাহিত্যিক, খেলোয়ারসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করে। কামরুল ক্ষমতাশীন দলের যেসব নেতা আর বড় ভাইয়ের ভরসায় এমন নেক্কাড় জনক কাজ করে তারাও কামরুলের বিচার চেয়ে প্রতিবাদ করে। কামরুল বদরুল হয়ে যায় সারাদেশের প্রতিটা মানুষের কাছে।
জেলখানায় সাংবাদিক ছাড়া কেউ কামরুলের খোঁজ-খবর নিতে যায় না। এমন কি কামরুলের কোনো নেতাও না। যাদের ভরসায় কামরুল হাতে চাপাতি তুলে নিয়ে ছিলো তারাও কামরুল অস্বীকার করে। কামরুল চারিদিকে শুধু অন্ধকার দেখে। জেলখানার চারদেয়ালে বন্ধি কামরুল অনুসচোনার সুরে গায়......
"প্রেমের নাম বেদনা
সে কথা বুঝিনি আগে,
যতই থাক ক্ষমতা সময় মত
কাজে নাহি লাগে।"



-সোহাগ তানভীর সাকিব
প্রাবন্ধিক ও গল্প লেখক

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আরেকটু ছোট লিখলে পড়তে সুবিধা হয়।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:০৯

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: পরামর্শেেের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: কামরুল আর নার্গিস ভালো থাকুক।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১০

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: সেই সাথে ভালো থাকেন আপনিও। ধন্যবাদ, ভাই।

৩| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩২

একাল-সেকাল বলেছেন:
সকল কামরুল রা যেন সুবেহসাদেকের সময় গোধূলির বিষণ্ণতা টের পায়, সেই কামনা রইল। প্রেমের রুল (Rule/ নিয়ত) টা যেন
বদ না হয়ে সহিহ হয়।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১২

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: আপনার মত আমিও বলতে চাই, প্রেমের রুল টা বদ না হয়ে যেন সহিহ্ হয়

ধন্যবাদ ও ভালোবাসা নিবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.