নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাস্ক ও লেবু মিয়া

০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৯:০৩

শাহবাগ মোড়ে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লেবু মিয়া। কাজের খুব তাড়া। আজ একটু বেশি ইনকাম করতে হবে তাকে। এমন সময় শওকত সাহেব গিয়ে বলেন, মেডিকেল যাবে?
- হ যামু। আমাগরে কামই তো যাওয়া আর আসা।
- কত?
- বেশিও কইবো না আবার কমও কইবো না। একদাম পঞ্চাশ ট্যাকা। যাইবেন?
- একটু বেশি হয়ে যায় না?
- কইলাম তো স্যার, একদাম। এর কম অইলে সম্ভব না।

শওকত সাহেব আরো কয়েকটি রিকশাওয়ালার সাথে কথা বলে। পঞ্চাশ টাকার কমে কেউ মেডিকেল কলেজ যেতে রাজি হয় না। বিমান ও ট্রেনে টিকেট সিস্টেম। সেখানে ভাড়া নিয়ে কোন দরকাষি চলে না। দূরপাল্লার বাসে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির কোন সুযোগ নাই। পাবলিক বাসেও সেই সিস্টেম চালু হয়েছে। ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির সুযোগ ছিল রিকশায় সেটাও এখন বাদ হয়ে যাচ্ছে। জোট বেঁধে রিকশা চালায়। কেউ কম রেটে যায় না।

শওকত সাহেব এসে লেবু মিয়ার রিকশা-ই ওঠে। লেবু মিয়া প্যাডেলে পা চালায়। দ্রুত যেতে হবে। বেশি খ্যাপ দিতে হবে আজ। টিএসসি মোড়ে গিয়ে জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকে রিকশা। লেবু মিয়া কৌতুহলী ভাবে বলে,
-স্যার, শুনলাম দ্যাশে নাকি ভিনদ্যাশের কি রোগ যেন কয়, সেইডা আয়ছে?
- হুম। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত তিন জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
- চীনে নাকি অনেক মানুষ এই রোগে মইরা গেছে? আরো কোন কোন দ্যাশে নাকি গাড়ি ঘোড়া ইশকুল কলেজ সব বন্ধ।
- হুম। চীন, ইতালি, ইরানসহ বেশ কয়েকটি দেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। এয়ারপোর্টে সর্তকতা জারি করা হয়েছে। যাত্রীদের চেকাপ করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাস ধরা পরলে যেতে বা আসতে দেওয়া হচ্ছে না।
- তাহলে যেডা শুনেছি সেডা তো সত্য। এখন উপায়!
- উপায় আর কি, সাবধান থাকতে হবে। মাস্ক পরে বাহিরে চলাচল করতে হবে।
- কি পইড়া চলতে অইবে?
- মাস্ক। এই যে দেখ, আমি পড়েছি।
- ও, মুখে পড়ার ওইডা। এই জন্যি সকাল থেইথা দেখতাছি সবাই শুধু মুখে দেওনের ওইডা কিনতাছে। এক সাহেব দেহি বাজার করণের এক ব্যাগ কিনাছে।আমার রিকশায়-ই বাসায় গেল।
- আমিও কিনেছি। তবে এক ব্যাগ পাই নাই। খবর শুনে দোকানে যেতে যেতেই শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

লেবু মিয়া রিকশা চালক হলেও দেশের খবরাখবর রাখে। রিকশা চালানোর ফাঁকে মাস্ক কেনার জন্য দোকানে গিয়ে দামও জেনে এসেছে। পঞ্চাশ টাকা পিচ। স্ত্রী আর মেয়ে দুজনের জন্য দুইটা আর তার নিজের জন্য একটা। মোট তিনটা মাস্ক কিনতে দেড় শ টাকার প্রয়োজন। ভাবে, দিন শেষে বাসায় ফেরার সময় তিন জনের জন্য তিনটা মাস্ক কিনবে।

দিন শেষে লেবু মিয়ার ইনকাম হয় সাড়ে পাঁচ শ টাকা। গ্যারেজে রিকশা জমা দেওয়ার সময় দেড় শ টাকা দিতে হয় মহাজনকে। বাকী থাকে চার শ। এই চার শ টাকা দিয়ে তিন জনের তিনটা মাস্ক ও বাজার সদায় করতে হবে। দেড় শ টাকা দিয়ে তিনটা মাস্ক কেনার পরেও আড়াই শ টাকা অবশিষ্ট থাকবে। যা দিয়ে অনায়াসে একদিনের বাজার সদায় হবে যাবে।

লেবু মিয়া শাহবাগের ফুটপাতে যায় মাস্ক কিনতে। এদোকান ওদোকান ঘোরে। মাস্ক পায় না। ডিসপেনসারিগুলো খোঁজে। সেখানেও নাই। শাহবাগের আশেপাশে যতগুলো হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে সবগুলো খোঁজ করে। কোথাও মাস্ক পায় না। মাস্কের খোঁজে দিশেহারা।

শাহবাগ, নিউমার্কেট এলাকায় কোথাও পাওয়া যায় না। খোঁজ করতে করতে চলে যায় ধানমন্ডি। দেখানে এক দোকানে পাওয়া যায়। তবে দাম অনেক বেশি। দুই শ টাকা পিস। লেবু মিয়া দুইটা মাস্ক কিনে রাত সাড়ে ১১ টায় তেঁজগাও রেলস্টেশন সংলগ্ন বস্তিতে তার বাসায় ফেরে।

বাজার সদায় আসবে তারপর রান্না করবে বলে অপেক্ষায় ছিল লেবু মিয়ার স্ত্রী গোলাপি বেগম। মেয়েটা ক্ষুধার জ্বালায় কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছে। লেবু মিয়া কখনও এতো রাত করে বাসায় ফেরে নি। আজ দেড়ি দেখে গোলাপি বেগম চিন্তিত। লেবু মিয়া ছাপড়া ঘরে দরজায় এসে নক করতেই দরজা খুলে দেয় গোলাপি বেগম। স্বামীর হাতের দিকে তাকায়। জিজ্ঞাসা করে,আইজ এত দেড়ি করলা যে? বাজারও তো আনো নাই দেখতাছি।

লেবু মিয়া শার্টের পকেট থেকে দুইটা মাস্ক বের করে স্ত্রী গোলাপি বেগমের হাতে দেয়। অবাক হয়ে যায় গোলাপি বেগম। কারণ, গোলাপি বেগম কয়েক দিন ধরে সহিতন বানুর চায়ের দোকানের টিভিতে দেখেছে। সেও জানে এখবর। তাইতো পেটের ক্ষুধা ভুলে মুখে অনাবিল হাসি ফোটে তার। বিস্ময়ে বলে, কি সর্বনাশ!! তুমি এইগুলান পাইলে কই!!
লেবু মিয়া মিটিমিটি হাসে আর বলে, হুম পাইছি বউ, পাইছি।

লেবু মিয়ার মাস্ক কেনার খবর সমস্ত বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। দেখতে আসে সবাই। লেবু মিয়া মাস্ক দেখতে আসা ব্যক্তিদের একটু করে মুখে পড়ার সুযোগ দেয়। খুশি হয় সবাই। সবার খুশিতে লেবু মিয়া সাড়া দিনের কষ্ট ভুলে পায় স্বর্গসুখ।




বিশেষ দ্রষ্টব্য: রম্য গল্প। এই গল্প ও চরিত্রের সাথে বর্তমান বাস্তবতা কাকতালীয়।

-সোহাগ তানভীর সাকিব
গল্পকার

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৯:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


গল্পের প্লট শক্ত হয়নি, বস্তির লোকজন নিশ্চয় মাস্ক সম্পর্কে জানে, তারা উহা পরে দেখার মতো বিষয় নয়। লেবুকে মোটমুটি সচেতন বলেই মনে হলো, সে খাবার না কিনে মাস্ক কিনাটা বেমানান। সে পরিস্কার কাপড় থেকে মাস্ক হাতে সেলাইর কথা ভাবলে, স্ভাবাবিল মনে হতো।

০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৯:১৬

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: গল্পের নিচে বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়েছি, এটা একটি রম্য গল্প। এর সাথে বর্তমান বাস্তবতা কাকতালীয়। অর্থাৎ বাস্তবতার সাথে কোন মিল নাই।

২| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৯:১৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আসুন করোনা ভাইরাসের ছোবল থেকে রক্ষা পেতে আমরা নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করি ও যত পারি শেয়ার করি।

০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:০২

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: জ্বী হ্যাঁ।

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৪৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনাকে আগে লেখক হতে হবে; রম্য, সম্য এগুলো পরের কথা; গল্পের প্লটে বাস্তবতা থাকতে হবে।

০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:০১

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: আপনার এই কথাটি কেমন যেন লাগলো। আমাকে লেখক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ভালো। আচ্ছা ভাই, বিখ্যাত লেখকেরা কি রম্য রচনা করেন নি? রম্য লেখে বিখ্যাত লেখক হয়েছেন এমন কেউ কি নাই?

কিছু মনে করবেন না ভাই।

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: রম্য গল্প ভালো লাগে।

২৯ শে জুন, ২০২১ সকাল ১১:০৬

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.