নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিপদের ওপর বিপদ!

১২ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:৪০



১.
গলির মোড়ের ছোট্ট একটা চায়ের দোকান হতে যে টাকা আয় হয় সেটা দিয়ে চলে আয়নালের সংসার। স্ত্রী জোবেদা একটা অফিসের আয়া। জোবেদার আয় দিয়ে ঘর ভাড়া বিদ্যুৎ গ্যাস ও পানি বিল পরিশোধ করে। লকডাউনে আয়নালের চায়ের দোকান বন্ধ। অফিস বন্ধ বলে কাজ নেই জোবেদারও। আয়নাল জোবেদা দু'জনই ঘরবন্দি। কি করবে! কেমনে সংসার চলবে! এসব ভেবে কোন কূল কিনারা পায় না। এদিকে মাসও শেষ হয়ে আসছে। ঘর ভাড়াসহ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল দিতে হবে। ঈদের আর বেশিদিন বাকি নাই। ঈদ এলে বাড়তি খরচ হয়। ছেলে ও মেয়ের আবদার সাধ্য মত মেটায়।
চলমান লকডাউনের প্রথম সাতদিন ঘরে বসে অলস সময় অতিবাহিত করেছে আয়নাল। সরকারের পক্ষ হতে সাহায্য দেওয়া হবে বলে কয়েক দফা নাম লিস্ট করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। প্রতিবারই লিস্টে আয়নালের নাম নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত আশ্বাস ছাড়া আর কিছু পায়নি। সাতদিন জমানো টাকা খরচ করে সংসার চালিয়েছে। জমানো টাকাও প্রায় শেষ। ঘরে বসে থেকে আর চলছে না।
সন্ধ্যার পরে দোকানে যায় আয়নাল। সাটার নামিয়ে চা বানায়। দোকানের বাহিরে ছেলেকে বসিয়ে রাখে। চা বা সিগারেটের সন্ধ্যান করছে এমন কাউকে দেখলে সাটার উচু করে ভেতরে পাঠিয়ে দেয় আয়নালের কিশোর ছেলে।
ভয়ে ভয়ে দু ঘন্টা চা পান সিগারেট বিস্কুট কেক রুটি কলা বিক্রি করে আয়নাল। দু ঘন্টায় বেশ ভালোই বেচা হয়। সন্ধ্যার পর পাশের গার্মেন্টস ছুটি হয়। আয়নালের বন্ধ দোকানে ভির জমে। দ্রুত হাত চালায় আয়নাল। কখন যেন পুলিশ চলে আসে এই ভয়ে পেরেশান। অস্থিরতা কাজে ও কথায়। চায়ের কাপ কাস্টমারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, দ্রুত খেয়ে চাইলা যান। এখন দোকানে দেড়ি করনের দরকার নাই। বুঝেনই তো দেশের অবস্থা!
আয়নালের কথায় কেউ কেউ বলে, কি অইবো মামা! কিছুই অবই না। তুমি হুদাই টেনশন লও। গার্মেন্টসে আমরা একলগে কত মানুষ কাম করি। একলগে আসি যাই। কিছু অয়?
- তুমরাই তো আছো শান্তিতে। যত করোনা দোকানপাট আর হাট বাজারে। মিল-কারখানায় তো করোনা নাই। এজন্যি তোমাদের খোলা আর আমাদের বন্ধ।
বলে আয়নাল।
মনে অস্থিরতা থাকলেও আয় হয় ভালো। স্বাভাবিক দিনের খোলা দোকানের চেয়ে লকডাউনের দিনে বন্ধ দোকানে আয় হয় বেশি। প্রথম দুদিন বেশ ভালো চলে। তৃতীয় ঘটে ঘটনা। লকডাউনে দোকান চালু করে চা বিক্রির অপরাধে হয় জরিমানা। অনাদায়ে জেল। গত দুদিনে যা আয় করেছিল তার সাথে আরো দুগুণ যোগ করে জরিমানা পরিশোধ করে।
ছেলেকে সাথে করে শূন্য হাতে বাসার দিকে পা বাড়ায়। পাশের ফ্যাক্টারিতে কাজ করা অবস্থায় জানালা দিয়ে কেউ একজন জিজ্ঞেস করে, ও আয়নাল মামা, শুনলাম তোমার দোকান নাকি রেড দিয়েছে?
কথার জবাব না দিয়ে চলতে থাকে আয়নাল। ভাবে এদেশে শুধু ধনীরা ব্যবসা করবে। মিল কারখানায় করোনা নাই। যত করোনা আমার চায়ের দোকানে। করোনা এক বিপদ তার ওপর লকডাউনে আয় ইনকাম বন্ধ থাকায় আরেক বিপদ। এ যেন বিপদের ওপর বিপদ!


২.
কথায় আছে, বিপদ যখন আসে চারিদিক হতেই আসে।
গত কয়েক দিনে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে মনে হয়েছে, আমাদের দেশ চারিদিক হতে এক ধরণের বিপদের মধ্যে আছে। মানুষ খুবই ক্রান্তিকালের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে।
করোনা মহামারির অবস্থা অবনতির দিকে। মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগ জনক। এদিকে করোনা ভাইরাস যেমন শঙ্কিত করছে অপর দিকে চলমান লকডাউনে খেয়ে খাওয়া মানুষের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। এর-ই মাঝে তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিছু কিছু অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত। ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছে করোনার চেয়ে বন্যা বেশি বিপদের কারণ।
করোনা এক আপদ তার ওপর বন্যা আরেক বিপদ! এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অর্ধ শতাধিক তাজা প্রাণ পুড়ে ছাই হয়ে গেল!
বিপদের ওপর বিপদ তার ওপর আরো বিপদ!



-সোহাগ তানভীর

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৮:৫২

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: হ্যাঁ, বিপদ একবার এসে পড়লে একে একে আসতেই থাকে। তবে অভিজ্ঞতার কারনে অনেক বিপদ থেকে দূরে থাকা যায়!

১০ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:০০

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: ঠিকই বলেছেন।
লেখাটি পড়ে মতামত প্রদানের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.