নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রাণিতত্ত্বের বর্ণনানুসারে কোন প্রাণি অন্যপ্রণিকে আঘাত করে না প্রধানত দুটি কারণ ছাড়া। প্রথম কারণ-যদি আঘাতকারি প্রাণি ক্ষুধার্থ হয় তবে সে খাদ্রের জন্য শিকার হিসেবে অন্য প্রাণিকে আঘাত করে। দ্বিতীয় কারণ-যদি আঘাতকারি প্রাণি মনে করে অন্যপ্রাণি তার জন্য হুমকি। এই বিধান হিংস্র প্রাণির ক্ষেত্রে যেমন মানুষের ক্ষেত্রেও তেমন। সাপ দর্ষণ করে আতংকিত হলে। বাঘ খায় ক্ষুধার্থ হলে। স্বৈরাচার হিংস্র হয়ে উঠে ক্ষমতা হারানোর ভয় পেলে। পৃথিবির প্রাণী জগতের ইতিহাস আমাদেরকে তাই বলে। আওয়ামীলীগের তো ভয় পাওয়ার কথা নয়, সেতো বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিত্বশীল একটি দল। সে তো সামরিক শাসনের ভেতর কিংবা রাজা-মহারাজাদের বগলের নীচে জন্ম নেওয়া কোন দল নয়। মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির হাতে জন্ম নেওয়া এই দলটি শূন্য থেকে উঠে এসে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে আমাদের স্বাধিনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপরিবারে ইন্তেকালের পরও দলটি আজও বেঁচে আছে অত্যন্ত প্রতাপের সাথে। নানাজনের নানা কুকথার পরও আমি মনে করি বিগত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামীলীগ স্বাভাবিক নিয়মে-ই নির্বাচিত হয়েছে। তবে বেতিক্রম হলে হতেও পারে। যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের কথা আওয়ামীলীগের নির্বাচনিয় ইশতেহারেও আছে। যুদ্ধাপরাধিদের প্রসঙ্গ এলেই ধর্ম প্রসঙ্গও এসে যায়। আর তা নিয়ে আসেন বামপন্থী অতি উৎসাহি আওয়ামী নেতারা। তারা মনে করেন এই যায় ইসলাম ধ্বংস করে নাস্তিকতা এবং ধর্মহীনতা প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ সুযোগ। এখানেই মাঠে মারা যায় যুদ্ধাপরাধ প্রসঙ্গ। এখানেই ধ্বংস হয় আওয়ামীলীগের বাকি সকল সুনাম। বঙ্গবন্ধুর সময় যেমন, আজকেও তাই। তবে বঙ্গবন্ধুর সময় বর্তমানদের থেকে কিছুটা ভালো ছিলো। তাজ উদ্দিন-সিরাজুল আলম খান প্রমূখদের কথায় বঙ্গবন্ধু এন্ডিয়ানবামের খপ্পরে আটকে গেলেও তারা তাঁকে অন্ধ করতে পারেনি। স্বাধিনতার পরও তিনি গর্জে গর্জে বলেছেন-‘কেউ আমাকে চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখাতে চেষ্টা করো না, তোমরা ভুলে যেও না আমরা পৃথিবীর দ্বিতীয় মুসলিম বৃহত্তম দেশ।’ ‘মুসলমান আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না।’ বঙ্গবন্ধু যেখনে ভারতের ইন্দিরা গান্ধির সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গর্বের সাথে নিজকে মুসলমান বলে দাবি করতেন সেখানে আজকের আওয়ামীলীগাররা যেনো নিজ দেশেও নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করতেও ভয় করেন!
না, আমি হিন্দু-মুসলিম সংঘাতকে পছন্দ করি না। আমি চাই না কোন ধর্মীয় গোষ্ঠি অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠিকে আঘাত করুক মুখ কিংবা হাত দিয়ে। শাহবাগে যারা রাজাকারদের বিচারের দাবীতে সমবেত হয়েছিলেন তারা যদি এই দাবীতে সীমাবদ্ধ থাকতেন তবে ব্লগার হিসেবে আমরাও এসে তাদের সাথে যোগ দিতাম। কিন্তু এই ব্লগাররা রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে মাঠে এসে যখন ইসলামের ফাঁসীর দাবী শুরু করেন, আল্লাহ-নবী-নবীর পরিবার নিয়ে নানা কুমন্তব্য শুরু করেন তখন কি কোন মুসলমান ঘরে বসে থাকতে পারে। আরে এখানে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু থাকলেও গর্জে উঠে বলতেনÑকেউ আমাকে চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখাতে চেষ্টা করো না, তোমরা ভুলে যেও না আমরা পৃথিবীর দ্বিতীয় মুসলিম বৃহত্তম দেশ। মুসলমান আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না।’
আমার ধারণা ছিলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে কিছুটা শেখ মুজিবের চেতনা কাজ করবে। কিন্তু আমরা দেখছি তার উল্টো। আমার আত্মীয়-পরিচিত এবং বন্ধুদের মধ্যে যারা শেখ হাসিনার কাছাকাছি যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে তারা বলেন-‘নেত্রতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, কোরআন তেলাওয়াত করেন, মাথায় সবসময় কাপড় রাখেন, হজ্ব করেন, তাসবিহ-তালিল করেন ইত্যাদি।’ আমি বিশ্বাস করি তাদের কথা। আমি বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়া গ্রামে গিয়ে খবর নিয়েছি-তাঁর পরিবার কোন ধর্মহীন পরিবার নয়। তাদের পূর্বপুরুষ শায়েখ আব্দুল আউয়াল বোগদাদী (র.) বোগদাদ থেকে এই অঞ্চলে এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের জন্য। এমন একটি পরিবারে ঐতিহ্যগতভাবেও কিছু না কিছু ইসলামের প্রতি দরদ থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। এই পরিবারের মেয়ে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালিন সময়ে যদি কেউ আল্লাহ-রাসুল-রাসুলের পরিবারকে গালিগালাজ করে তবে সত্যি কষ্ট পেতে হয়। আমি মনে করেছিলাম নাস্তিক-মুরতাদ এই ব্লগারদের সাথে সরকারের কোন সম্পর্ক নেই। মনে করেছিলাম-সরকার হয়তো ব্লগারদের হটকারিতায় বিপদে আছে। কিন্তু আশ্চর্য হই গত ২২ ফেব্র“য়ারী ০১৩ শুক্রবার ও তৎপরবর্তী সময়ে নবীপ্রেমিকদের মিছিলে পুলিশের আক্রমন এবং গুলি করে পাখির মতো সাধারণ মুসল্লিদেরকে হত্যা করতে দেখে। আমার হিসাবে মিলে না সরকার কেনো এতো মরিয়া হয়ে এই আক্রমনের পথ খুঁজে নিলো? সরকার কি ভয় পেয়েছে এদেশের জনগণকে? সরকার ও সরকার সমর্থিত মিডিয়াগুলো নির্লজ্জের মতো দিনকে রাত বানিয়ে দিতে চেষ্টা করলো শুক্রবারের নবী প্রেমিকদের মিছিলগুলোকে জামায়াত-শিবির বলে চিহ্নিত করে। প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশে কি এত জামায়াতÑশিবিরের জনশক্তি। দেশের অর্ধ্বেকের উপর মানুষ যদি স্বাধীনতা বিরোধীশক্তির সাথে থাকে তবে আর এই স্বাধিনতা কার জন্য? সরকার এবং মিডিয়া কি ভুলটা করছে তা কি একবার হিসাব করে দেখছে?
স্বাধিনতার পর জামায়াতে ইসলামী সংগঠন এদেশে থাকার কথা ছিলো না। ঘোষনা দিয়ে বাতিল নয়, মানুষ-ই তা বাতিল করে দিতো যদি আওয়ামীলীগ বামদের খপ্পরে পা দিয়ে ইসলামী চেতনার বিরুদ্ধে না দাঁড়াতো। আজও যে জামায়াতে ইসলামী এতই শক্তিশালি একটি সংগঠন তা একমাত্র আওয়ামী-বাম আর জাহানারা ইমামদের লম্প-জম্পের কারণে। বাংলাদেশের স্বাধিনতা তো আমার বয়স্য। আমি দেখেছি এদেশে জাসদ সহ বামদের উত্তান-পতন। সাথে দেখেছি বামদের লম্প-জম্পের কারণে জামায়াতের শক্তিবৃদ্ধির বিভিন্ন চিত্র। জামায়াতে ইসলামীর ছেলেরা পড়ে তা জামায়াতের শত্র“রাও স্বীকার করেন। যদিও তাদের বেশিরভাগের পড়াটাও দলীয় সিলেবাস কেন্দ্রিক। তবু অন্যদের থেকে ভালো। যারা পড়ালেখা করে তাদের চিন্তা সর্বদাই অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে। বাংলাদেশের বামরা কিছুটা পড়েন, তবে তারাও সিলেবাসের বাইরে আসতে পারেন না। আর নিচক সিলেবাস পাঠে যে চিন্তা গড়ে উঠে তা মানুষকে বন্ধা করে দেয়। বন্ধাদের কর্মে ত্র“টি থাকে। আর ত্র“টিযুক্ত কর্ম দিয়ে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয় না। আওয়ামীলীগ-বিএনপির ছেলেরা তো পড়েই না। ওদের রাজনৈতিক যোগ্যতা অর্জিত হয় টাকা আর পেশিশক্তির উপর ভিত্তি করে। ফলে তারা রাজনীতির মোকাবেলা রাজনীতি দিয়ে না করে সর্বদা চেষ্টা করে পেশিশক্তি দিয়ে করতে। মুর্খ এবং আর্দশহীনরাই চেষ্টা করে নিচক পেশিশক্তি আর মিথ্যাচার দিয়ে যুদ্ধে বিজয়ী হতে। শাহবাগ আন্দোলন মূলত জাহানারা ইমামের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের মতো-ই কিছু আবেগ। অপরিকল্পিত আবেগ সাময়িক হৈ চৈ ব্যাপকভাবে তৈরি করতে পারলেও আর খুব দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আমরা অতীতেও দেখেছি, আজও দেখছি এবং আগামীতেও দেখবো আবেগগুলো কেমনে অগ্নিশিখার মতো আকাশ স্পর্শ করে আবার নিভে যায়।
২২ ফেব্র“য়ারী ০১৩ শুক্রবার বাদ জুম্মা বাংলাদেশের মসজিদে মসজিদে যে আবেগ তৈরি হয়েছিলো এর সাথে জামায়াত-বিএনপির সমর্থন থাকলেও তা খুবই গৌণ। সিলেট শহরের মিছিলগুলোর স্বাক্ষী আমি নিজে। আমি বা আমার পরিবারের কেউ জামায়াতে ইসলামী করেন না। আমাদের পরিবার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। আমাদের পরিবারে ইসলামের যে প্রভাব তা দেওবন্দী ধারার। দেওবন্দীরা জামায়াতকে পছন্দ করেন না। শুক্রবারে আমি কোন গ্র“পের সাথে, কোন মসজিদের সাথে মিছিলে যাইনি। আমি জুম্মার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে হঠাৎ আবেগপ্রবণ হয়ে যাই হযরত নবী করিম (স.)-এর স্মরণে। আরে, আল্লাহর প্রিয় হাবিবকে যারা গালি দিয়েছে তাদের বিচারের দাবিতে মিছিল হবে আর আমি নবীর উম্মত হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি! তা হয় না। যদি কিয়ামতের দিন রাসুল রাগ করে আমাকে ফিরিয়ে দেন তবে কি উপায় হবে? আমাদের শাহী ঈদাহ মহল্লার মসজিদ থেকে যে মিছিল বেরিয়েছে আমি তাদের পিছু হাটতে শুরু করি। একটি এগিয়ে আমি তাদের কাছ থেকে সরে গিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে সিলেটের কেন্দ্রস্থল বন্দর পয়েন্টে চলে যাই। আমি একা একা ঘুরে দেখি বিশাল জনসমুদ্র। সমুদ্রে যেমন নদীগুলো থেকে পানির স্রোত গিয়ে মিশতে থাকে তেমনি বন্দর পয়েন্টে, সিটি পয়েন্টে, মধুবন পয়েন্টে মানুষের ঢল আসতে থাকে। আমি দেখতে থাকি। না আশ-পাশে কোন পুলিশ নেই। কারো হাতে কোন অস্ত্র নেই। শুধু রাসুল প্রেমের শ্লোগন চলছে। এরই মধ্যে আওয়াজ উঠলো চৌহাট্টায় পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে মারামারি শুরু হয়। অতঃপর খবর আসে চৌহাট্টায় পুলিশ গুলি করেছে। মিছিলকারীরা শহীদ মিনারে ডুকে ব্লগারদের সমর্থিত মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে। পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সবাই যার যার পথে যেতে থাকে। আমিও আমার পথে চলি।
পরে টেলিভিশন এবং আরও পরে পত্রিকায় দেখতে পাই জামায়াতিরা নাকি এই তাণ্ডব ঘটিয়েছে। সরকার এবং প্রচার মাধ্যমগুলো নির্লজ্জের মতো সাধারণ মুসল্লিদের এই ঈমানী আন্দোলনকে জামায়াতি আন্দোলনে চিহ্নিত করে দিতে চেষ্টা করে। অথচ এখানে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ছিলো খুবই গৌণ। সিলেট এমসি কলেজের তাহমিদ নামের যে ছেলেটি পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় সে মোটেও জামায়াতে ইসলামী কিংবা ছাত্র শিবিরের কর্মী বা সমর্থক নয়। তাহমিদ সিলেট ব্লুবার্ড স্কুল থেকে এই মাত্র গোল্ডেন জিপি-৫ পেয়ে সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হয়েছে। সে কিছুদিন আগেও রাজাকারদের বিচারের দাবীতে শহীদ মিনারে মিছিল-মিটিং করেছে। (উপরের ছবিতে চিহ্নত করা আছে তাহমিদের লাশ এবং রাজাকারেদর ফাঁসির দাবীতে মিছিলের ছবি)। তার বাবা সিলেটের সাবেক কৃতি ক্রিকেটার নুরুল মস্তফা (মিঠু)। তাঁর বাবার ভাষ্যানুসারে-‘তাহমিদ কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী বা সদস্য ছিলো না। সে ঘটনারদিন সবাইকে বলে পাড়ার অন্যান্য ছেলেদের সাথে মিছিলে যোগ দিয়েছিলো।’ তার বন্ধু-বান্ধবদেরও বক্তব্য তাই। অথচ কিছু মিডিয়া মিথ্যাচার করে প্রচার করলো-‘সিলেটে শিবির-পুলিশের গোলাগুলি। বিক্ষুব্ধ জনতার গণপিটুনিতে এক শিবির ক্যাডার নিহত।’
তাহমিদ যে শিবির কর্মী নয়। সেও যে চাইতো রাজাকারদের বিচার হোক কিংবা ফাঁসী হোক তার অসংখ্যা প্রমাণ আছে। সাংবাদিকরা এমনটি করতে গেলেন কেনো? মিডিয়া ক্যু করে কি কোন সত্যকে লুকিয়ে রাখা যায়। এই মিডিয়া ক্যু কি একাত্তরে পেরেছে পাকিস্তানী বাহিনীকে বিজয়ী করতে? পেরেছে কি সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নকে রক্ষা করতে? সত্য প্রকাশে এতো ভয় কেনো? সত্যকে গোপন করার মধ্যে তো দেশের মঙ্গল নেই। আপনারা সত্য-ই কি এই বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, এদেশের স্বাধিনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চান? তা হলে সত্য গোপন কেনো, সত্যকে প্রকাশ করুন। সত্য যদি আমার নিজের বিরুদ্ধেও যায়, তবুও।
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৫
সৈয়দ মবনু বলেছেন: Donnobad
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২৩
রামিল মাসুদ বলেছেন: Agree with you vhaiya...