নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লন্ডনে দ্বিতীয় পর্ব
১৬ মে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় লন্ডনের হ্যানবারী স্ট্রিটের মন্টিপুরী সেন্টাওে ছিলো বাংলাদেশের প্রচীনতম সাহিত্য পত্রিকা আল-ইসলাহ’র ‘অন্তরঙ্গ পাঠে’র অনুষ্ঠান। সিলেট আলিয়া মাদরাসার ছাত্র থাকতে মৌলভী মুহাম্মদ নূরুল হক অভিযান নামে যে পত্রিকাটি প্রকাশ করে যাত্রা শুরু করেছিলেন তা কালক্রমে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে আল-ইসলাহ নামে প্রকাশ পায়। আল ইসলাহর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন নূরুল হক আর আমি সর্বশেষ ও সর্বকণিষ্ঠ সম্পাদক। যে সংখ্যা নিয়ে অন্তরঙ্গ পাঠ হচ্ছে তা আমার সম্পাদিত প্রথম সংখ্যা। আল-ইসলাহ তার নিজস্ব ধারায় ৮১ বছর পার করেছে। আল-ইসলার ভূমিকা ভাষা আন্দোলন থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিস্তৃত। যে জীর্ণ কূটির থেকে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল আজ সেই প্রতিষ্ঠানের অফিস ঘর ৫তম তালায় পূর্ণ হয়েছে। কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ’র অধীনে শহীদ সোলেমান হল হয়েছে দ্বিতীয় তলায় বিশাল। কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে সকল মতের ও পথের মানুষের সমন্বয় ঘটেছে। গত নির্বাচনে আমি সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছি। এই দায়িত্বে আমি দু বছর থাকবো যদি আল্লাহ হায়াত এবং সুযোগ দেন। মৌলভী মুহাম্মদ নূরুল হক এই প্রতিষ্ঠান ও আল-ইসলাহকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি তার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এখন আমাদের দায়িত্ব এটিকে টিকিয়ে রাখা এবং এর প্রকাশনাকে আরো সমৃদ্ধ করা।
১৬ মে লন্ডনে যে অন্তরঙ্গ পাঠ অনুষ্ঠিত হয় তাতে আল-ইসলাহর সুহৃদ ও শুভাকাক্সক্ষীদের মধ্যে মুক্তালোচনায় অংশ নেন কবি হামিদ মুহাম্মদ, সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ বেলাল আহমদ, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরী, কবি ও কলামিস্ট ফরীদ আহমদ রেজা, সাজেদা খাতুন শুভি, বাংলা পোস্টের একেএম আবু তাহের চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল কাদের সালেহ, সাপ্তাহিক নতুন দিনের নির্বাহী সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, কবি মতিউর রহমান সাগর, সাপ্তাহিক পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক কবি শাহ শামীম আহমদ, নারী ম্যাগাজিনের সম্পাদক কবি শাহনাজ সুলতানা, কবি শাহিনা পারভীন, পত্রিকার বার্তা সম্পাদক কবি ফায়সাল আইয়ূব, বার্মিংহাম থেকে প্রকাশিত বাংলাভয়েসের সম্পাদক মুহাম্মদ মারুফ, সাপ্তাহিক সুরমার নিয়মিত কলামলেখক মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন কালারুকী, সৈয়দ আফজাল জামি, কবি শামীম শাহান, মাওলানা আব্দুল আউয়াল হেলাল, অনলাইন সানরাইজ পত্রিকার সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, কবি মুহাম্মদ শরীফুজ্জামান, কবি শাহ সোহেল আহমদ, কবি শিহাবুজ্জামান কামাল, আলিফ উদ্দিন প্রমুখ।
মুক্তালোচনার পূর্বে আল-ইসলাহ : সাহিত্য সাধনার ঐতিহ্য উত্তরাধিকার নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন কবি ও সাংবাদিক কাইয়ূম আবদুল্লাহ। তিনি তার সারগর্ভ আলোচনায় উল্লেখ করেন, ‘আল ইসলাহ এখন আর কোনো লিটল ম্যাগ বা সাহিত্য কাগজের পরিসীমায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি এখন একটি অনিবার্য ইতিহাসের অংশও বটে। সাধারণত কোনো ধারাবাহিক সাময়িকীর প্রকাশনা কোনো একটি সংগঠন বা সংস্থাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। কিন্তু এক্ষেত্রে আল ইসলাহ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কারণ দেখা যাচ্ছে আল ইসলাহকে কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠাতা লাভ করেছে ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ Ñ যা আমাদের কাছে কেমুসাস নামে পরিচিত। তাই স্বভাবতই যখন আল ইসলাহ’র আলোচনা আসে সেখানে কেমুসাস তথা সিলেটের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ চলে আসে। বিশেষ করে কেমুসাস-এর প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট এবং এর প্রতিষ্ঠাতাদের কথাও স্মরণ রাখতে হবে আমাদের। আল-ইসলাহ যেমন প্রাচীনতম সাহিত্য পত্রিকা তেমনি কেমুসাসও দেশের প্রাচীনতম গ্রন্থাগার। এর প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মৌলভী মুহম্মদ নুরুল হক দশঘরীকে তাই বাংলাদেশের গ্রন্থাগার আন্দোলনের পথিকৃত বলা হয়ে থাকে। তখনকার পাকিস্তান সরকার তার এই গ্রন্থপ্রেমের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘তবকায়ে খেদমত’ উপাধীতে ভূষিত করেছিলো। বিভিন্ন গুণী লেখকের লেখা পড়ে এবং দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহিত্য আসরে যাতায়াতের সুবাদে আল-ইসলাহ’র জনক, নিবেদিতপ্রাণ সাহিত্যসাধক মরহুম মুহম্মদ নুরুল হকের নিরলস সাহিত্য সাধনার বহু ইতোবৃত্ত জানার সৌভাগ্য হয়েছে আমার মতো অনেকের। সম্পাদনার ক্ষেত্রে তার নিষ্ঠা, সততা ছিলো বলেই আজ আল-ইসলাহ এতোদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছে, পদার্পন করতে পেরেছে প্রকাশনার ৮১ বছরে।’
শৈশব থেকে সংসদের সঙ্গে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে কবি ফরীদ আহমদ রেজা বলেন, মুহাম্মদ নূরুল হক যখন আল ইসলাহর দায়িত্বে ছিলেন আমরা অনেক উষ্ণতা অনুভব করতাম। দেশের খ্যাতমান লেখকদের পদচারণায় সংসদ মুখর থাকতো। তার পাশে আমরা দেখেছি শওকত ওসমান, আলাউদ্দিন আল আজাদের মতো খ্যাতম লেখদের। সারা বাংলাদেশের লেখকরা লিখতেন এমনকি কোলকাতা থেকেও তৎকালীন সময়ে অনেকে লিখেছেন। এখন সেই প্রাণের সঞ্চার করা দরকার। তাঁর মৃত্যুর পর সংসদের হাল ধরেছিলেন সিলেট সমাচারের সম্পাদক ওয়াহিদ খান, রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ, সা’দত খান প্রমুখরা। তাদের অবদানও অপরিসীম। এখন নতুন প্রজন্ম নতুন দোয়ার খোলে দেবে আমার বিশ্বাস।
কবি হামিদ মুহাম্মদ বলেন, আমরা একটা সময় কাটিয়েছি মুসলিম সাহিত্য সংসদে। অবশ্যই এ আড্ডা ছিল আল-ইসলাহকে ঘিরে এবং তার প্রাণ পুরুষ ছিলেন মরহুম মুহাম্মদ নূরুল হক। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, রমজান মাসে সারা শহর ঘুরে, মধ্যরাত পার করে কোনো পূর্বাপর খবরাখবর ছাড়াই তার বাসায় সেহরির সময় ঢুকলাম। আমরা বন্ধুদের তার স্বল্প আয়ের সংসারে সেই অসময়েও আপ্যায়িত করতে কোনো ত্রুটি হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাভাষার আন্দোলন সিলেট থেকে শুরু হয়েছিল। সেই সময় আন্দোলনমুখী বক্তব্য পাঠ করেছিলেন মুসলিম চৌধুরী। একই ক্ষেত্র থেকে অবদান রেখেছেন খ্যাতিমান লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। সেই সময় তাকে নিগৃহীত করা হয়।
পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মুহাম্মদ বেলাল আহমদ বলেন, আল ইসলাহর নতুন সম্পাদকের কাজের প্রতি আমার আস্তা রয়েছে। এতো বছর পর কাগজটিকে বানিজ্যমুখী করা উচিতৎ। এতে এর স্থায়ীত্ব শঙ্কামুক্ত হবে। এ সংখ্যা আল-ইসলাহ নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা হিসেবে গণ্য হবে।
পত্রিকার সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, আমারা ছোটবেলা থেকেই এই কাগজটির নাম শুনে আসছি। বাবার চাকরি জীবনের সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিতে হয়েছে। যখন সিলেট শহরে আসি তখন এই ঐতিহ্যশালী লাইব্রেরির সঙ্গে পরিচয় ঘটে যা মুসলিম সাহিত্য সংসদ হিসেবে পরিচিত। প্রবাস থেকে এই সংসদ বা আল-ইসলাহকে কতটুকু সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে এশবার বিলেতে একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল। ৯০ দশকের শেষের দিকের কথা। তখন কবি রাগিব হোসেন চৌধুরীর আগ্রহেই একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষে তা আর এগুয়নি। আমাদের উৎসাহর কমতি নেই, আমরা এক কাগজ নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে পারি।
অধ্যাপক আবদুল কাদের সালেহ তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সাহিত্য সংস্কৃতির জগতে আল-ইসলাহ তথা মুসরিম সাহিত্য সংসদের ভূমিকা স্মরণযোগ্য হয়ে থাকবে। মরহুম মুহাম্মদ নূরুল হকের পর এ কাগজটিকে কেন্দ্র করে যতটুকু অগ্রসর হবার কথা ছিল আমরা সেভাবে তা পাইনি। তবে বর্তমান সংখ্যা আমাদেরকে আশা জাগিয়েছে।
কেএম আবু তাহের চৌধুরী বলেন, আল-ইসলাহর সাথে আমাদের আত্মীক সম্পর্ক। আমার বাবা-চাচারা ছিলেন এটির নিয়মিত পাঠক। পরমপরা হিসেবে আল-ইসলাহর একটি পাঠক সার্কেল ছিল। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা খুবই প্রয়োজন।
মরহুম মুহাম্মদ নূরুল হকের মেয়ে সাজেদা খাতুন শুভি বলেন, আমার বাবা আমাদের ভাই-বোনদের চেয়ে তার সকল ধ্যান-জ্ঞান ছিল সাহিত্য সংসদ ও আল-ইসলাহর প্রতি। শুধু তিনিই নন, আমার মাও তার সাথে সহযোগিতা করতেন এবং এই নিয়েই তারা ব্যস্ত থাকতেন। বর্তমান সময়ে এসে আমার খানিকটা দুঃখ রয়ে গেলো যে, আজ পর্যন্ত তার কোনো রচনাবলী প্রকাশ হয়নি।
কবি ফায়সাল আইয়ূব অন্তরঙ্গ পাঠের পূর্বে অন্তত সবার কাছে আল-ইসলাহর নতুন সংখ্যাটি পৌছে দেয়া উচিত ছিল। ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে আল-ইসলাহর আকার পরিবর্তন নিয়ে অনেকের দ্বিমত ও সহমত রয়েছে। আমি সহ সম্পাদক হিসেবে কিছুদন এই কাগজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। অনেক বড় বা ডাউস সংখ্যাও হয়েছে। কাগজটি মাঝখানে তার সোনালী পথ থেকে ছিটকে পড়েছিল। কোলকাতার পাঠকরাও আল-ইসলাহর প্রতি উৎসুক্য হয়ে উঠেছিলেন। কাগজটি আবার নতুন মাত্রা পেতে যাচ্ছে দেখে আমি আনন্দিত। স্থানীক থেকে গ্লোবাল জায়গায় পৌঁছার তাগিদ অনুভব করছে। আল-ইলসাহ নতুনভাবে উন্মোচিত হবে বলে আমরা মনে করি।
সৈয়দ আফজাল জামি বলেন, নূরুল হক সাহেবকে আমরা দাদা বলে ডাকতাম। পুরনো আল-ইসলাহ বা মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাথে এভাবেই আমার বাবার মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে উঠে। আমাদের প্রবীনদের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল আবেগের। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের সাথে সেই আবেগের জায়গায় প্রচুর শূন্যতা বিরাজ করছে। সেটিকে কাটিয়ে উঠতে প্রবীনদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। সঞ্চালনে ছিলেন আহমদ ময়েজ।
আমি, বাংলাভয়েসের সম্পাদক কবি মোহাম্মদ মারুফ এবং আমার অনুজ সৈয়দ নাসির বার্মিংহাম থেকে যাই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। কবি আবু মকসুদ, কবি আতাউর রহমান মিলাদ, রেনু লুৎফা আসার কথা ছিলো। তারা আমার সাথে সরাসরি আসার ব্যাপারে কথা বলেছেন। কিন্তু তারা আসতে পারেন নি। আবু মকসুদ ভাই বারবার টেলিফোন করে ক্ষমা চেয়েছেন তার ব্যবসায় একজন কর্মচারী না আসার কারণে তিনি আসতে পারছেন না বলে। আর তিনি না আসলে আতাউর রহমান মিলাদ ভাইও আসতে পারছেন না। রেনু লুৎফা অসুস্থ্য ছিলেন।
মন্টিপুরী সেন্টারের যে হল রোমে আমাদের অন্তরঙ্গ পাঠ চলছিলে তার পাশের হলেই তখন চলছিলো লন্ডন আওয়ামীলীগের সম্মেলন এবং হৈ চৈ। অনেকে ভুল বশত আমাদের অনুষ্ঠানে ডুকে আটকে যাচ্ছেন আমার চোখাচোখি হয়ে। লন্ডন আওয়ামীলীগের বেশির ভাগ নেতাই আমার খুব ঘণিষ্টজন। শাহ শামীম এক সাথে আমাদের এবং লন্ডন আওয়ামীলীগের অনুষ্ঠানের সদস্য। তিনি দুটাকে এক সাথেই চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক আমার চাচাতো বোন রেখার স্বামী। তিনি ভুল বশত আমাদের হলে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চা পান করলেন। ছোট মামা আহমেদ ময়েজ ফারুক ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেনÑমামা আজকে আপনাদের দলের সবার জন্য এখানে চা ফ্রি। কারণ, এখানের দু টা অনুষ্ঠান একই পরিবারের। ফারুক ভাই সহ সবাই হাসলেন ছোট মামার কথায়। আমাদের অনুষ্ঠান শুরুর সাথে সাথে আওয়ামীলীগের সবাই চলে গেলেন। আমরা সিলেটের সাহিত্য-সংস্কৃতির পাশাপাশি আল-ইসলাহ এবং মুসলিম সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করলাম। পাশের হল থেকে বারবার চিৎকারেরআওয়াজ আসছিলো। এক সময় আওয়ামীলীগের কর্মীরা এতই উত্তেজিত হয়ে উঠলেন যে আমাদের অনেকে হল ছেড়ে বাইরে গিয়ে দেখতে লাগলেন তাদের অবস্থা। আলোচনা শেষ হলো আমাদের ও তাদের প্রায় এক সাথেই।
অনুষ্ঠান শেষে হলের বারান্দায় দেখা হয় মাহবুবের সাথে। মাহবুব আমার বাল্যবন্ধু। আমরা শাহী ঈদগাহে পাশাপাশি থাকি। ছোটবেলা আমরা দুজন শাহী ঈদাগাহের হাজী গাজী শাহমীর সরকারি প্রাইমারী স্কুলে এক সাথে পড়তাম। আমি তো মা-বাপের সাথে ইংল্যান্ড চলে আসি এবং সে পরে বিয়ে করে লন্ডনে আসে। বর্তমানে লন্ডন শহরে থাকে। লন্ডন আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছে। মাহবুব আমাকে পেয়েই জড়িয়ে ধরে। দেখা হয় সৈয়দ আরিফের সাথে। আরিফ আমার ভাগিনা। অর্থাৎ সৈয়দ ফারুকের আপন ভাগিনা। আরিফ যুক্তরাজ্য যুবলীগের সেক্রেটারি ছিলো। তবে এখনও আছে কি না জানি না। দেখা হয় কাওসারের সাথে। কাওসারের সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছে আমার নেই। এটা রাগ না অভিমান আমি জানি না। কাওসারের বাড়ি জকিগঞ্জের শাহবাগে। সে যখন মেট্রিক দিয়ে প্রথম সিলেট আসে, তখনও কলেজে ভর্তি হয় নি, তখন আমার সাথে তার পরিচয়। অতঃপর তার সাথে আমার খুব ঘণিষ্ট সম্পর্ক হয়ে উঠে। সে কলেজে ভর্তি হয়। কলেজ শেষে আসে আমার কাছে হয়তো বাসায়, নয়তো বন্দরের আলবেলা রেস্টুরেন্টে। সিলেট শহরে তখন আমাদের বয়স্য একটা গ্রুপ ছিলো। সেই গ্রুপের অনেকের সাথেই কাউসারের সম্পর্ক হয়ে যায়। আমাদের গ্রুপেও ঝগড়া-মতানৈক্য হতো। কাউসার সর্বদাই আমার পক্ষে থাকতো। আমি যখন লন্ডন চলে আসি তখন কাউসার সিলেটের এমসি কলেজে পড়ে। ইতোমধ্যে সে এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সাথে ঘণিষ্টভাবে জড়িয়ে গেছে। জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের এমপি হাফিজ মজুমদারের এক ভাই কাউসারের বোনকে বিয়ে করেছেন। সেই হিসেবে সে আওয়ামীলীগের অনেকের কাছেই খুব দ্রুত পরিচিত হয়ে যায়। আমি তাকে সর্বদাই নিষেধ করতাম মিছিলে-মারামারিতে জড়িত না হ্ওয়ার জন্য। কিন্তু সে সর্বদাই মিছিলে-ঝগড়াতে জড়িয়ে যেতো। আমি লন্ডন আসার পর ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সংঘাতে কাউসার মারাত্মক আহত হয়। দেশের চিকিৎসায় সে পূর্ণাঙ্গ সুস্থ্য হচ্ছিলো না। আমি যখন দেশে যাই তখন সে অসুস্থ্য অবস্থায় একদিন এসেছিলো। কথা হয়েছে লন্ডর আসার ব্যাপারে তার আত্মীয়রা চেষ্টা করছেন। কাউসার এরপর লন্ডন চলে আসে। অতঃপর তার সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। প্রায় বিশ বছর পর এই দিন মোন্টিপুরী সেন্টারে তার আমার দেখা। সে আমায় বুকে জড়িয়ে বললো-দেখ বন্ধু চিনতে পারছ কি না। আমি সত্য প্রথমে চিনতে পারছিলাম না। পরে তার হাসিটা স্মরণ হলো। সে আমায় জড়িয়ে নিয়ে গেলো ফারুক ভাইয়ের সামনে এবং আমার তার বন্ধুত্বের কথা ফারুক ভাইকে জানালো। আরো অনেকের সাথে দেখা হলো। আমরা সেন্টার থেকে বিদায় নিলাম। অতঃপর ছোটমামার ঘরে আসি। এখানে বড় মামা ফরীদ আহমদ রেজা, শাহ সোহেল, শাহ শামীম, শামীম শাহান, আব্দুল কাইয়ূম, মোহাম্মদ মারুফ, আব্দুল আউয়াল হেলাল, এনাম চৌধুরী, আহমদ ময়েজ সবাই মিলে দীর্ঘ আড্ডা এবং খাওয়া দাওয়া হয়। রাত ১২ টার দিকে আমরা বিদায় নিয়ে বার্মিংহামের দিকে যাত্রা শুরু করি।
©somewhere in net ltd.