নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Oh Allah Plz Save Bangladesh

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু, থাকি ছিলট

সৈয়দ মবনু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের মৌলিক সমস্যা

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯

বাংলাদেশের মৌলিক সমস্যা-১



জ্ঞানী আর মূর্খের সংজ্ঞা নির্ধারণের আগে খুঁজে দেখতে হবে-জ্ঞান কি? কিছু কিংবা অসংখ্য বই পড়ার নাম কি জ্ঞান? প্রাতিষ্ঠানিক সনদ অর্জিত হলে কি কাউকে জ্ঞানী বলা যায়? সমাজের বর্তমান শিক্ষিতদেরকে কি জ্ঞানী বলা যাবে? ‘পিএইচডি’ ধারী কি সর্বোচ্চ জ্ঞানী ব্যক্তি? তা হলে মূর্খ কারা? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমরা যদি বিচার করি তবে কি স্বীকার করতে বাধ্য হবো না, এদেশে যে হারে সনদদারী শিক্ষিতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই হারে-ই মূর্খের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে? নতুবা শিক্ষিতের সংখ্যাবৃদ্ধির সাথে কেনো এদেশে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়? কারণ, এই শিক্ষার সাথে জ্ঞানের সমন্বয় ঘটেনি। প্রকৃত জ্ঞানীরা কখনও বেকার থাকে না। যে লিখেছিলেন ‘লেখা-পড়া করে যারা গাড়ি-ঘোড়া ছড়ে তারা’, তাঁর হিসাব ছিলো লেখা-পড়া করে মানুষ জ্ঞানী হবে, আর অভাব থাকবে না। কিন্তু হিসাবে কিছু ভুল হয়েগেছে। বর্তমান লেখা-পড়া মেধা বৃদ্ধি করছে না বলে আর শিক্ষিতরা জ্ঞানী হয়ে উঠছেন না। এমন হচ্ছে কেনো? উত্তর সহজ-আমাদের শিক্ষা পদ্ধতিতে ত্র“টি আছে। ইংরেজরা আমলা-কামলা-চামচা তৈরীর জন্য যে শিক্ষা চালু করেছিলো স্বাধীনতার পর সেই শিক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে না পারায় আজও তা নেতৃত্ব তৈরীতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আজও শুধু আমলা-কামলা-চামচাই বের হয়ে আসছেন। এই শ্রেণীর শিক্ষিতরা যখন সমাজ বা রাষ্ট্রের নেতৃত্বে যাচ্ছেন তারা স্বাধীন নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তারা সেই বৃটিশদের তৈরী করা ফর্মা বা নক্সা ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। দু একজন বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেও বুদ্ধির অভাবে অসংখ্যের স্রোতে দাঁড়িয়ে থাকতে প্রায় ব্যর্থ হয়ে পরাজয়ের সাথে আপোষ করে সরে যাচ্ছেন।



বাংলাদেশের মৌলিক সমস্যা-২



জ্ঞানের অভাবে আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারিনি এদেশের সাধারণ মানুষের মন, চিন্তা-চেতনা। বিপ্লবী, অবিপ্লবী, ধর্মীয় কিংবা সেকুল্যার নেতারা যেমন পৃথক করে দেশের শহর-গ্রাম, কৃষক-শ্রমিকের সমস্যা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন তেমনি চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন সুশীলেরাও। যেমন অবস্থা ছিলো স্বাধীনতার আগে, তেমনি পরও। সময়ের প্রেক্ষাপটে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেলেও সার্বিক বিবেচনায় পরিবর্তনটা খুবই গৌণ। আমরা যদি সময়ের হিসাবটা বাদ দেই তবে পরিবর্তনটা শূন্য বলতে হবে। বরং অপরিকল্পিত এই পরিবর্তনকে সাদা চোখে কিছুটা উন্নয়ন মনে হলেও সার্বিক অবস্থার দিকে ক্ষতির পরিমাণটা বেশি। বিশেষ করে আমাদের গোটা জাতিকে এই উন্নয়ন অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুদযুক্ত ঋণে আটক করে দিয়েছে। সুদের কারণে এই ঋণের পরিমাণ দিনে দিনে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। একাত্তরের স্বাধীনতার পর যদি আমরা পরিকল্পিতভাবে শুধু আমাদের জনশক্তিকে উন্নয়নের পথে কাজে লাগাতে পারতাম তবে এই ঋণের পরিমাণ আজ জাতীয় মরণ ফাঁদে পরিণত হতো না। ঋণের একটা মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো সে কাউকে একবার আটকাতে পারলে আর সহজে ছাড়তে চায় না। কেউ কেউ বলতে পারেন, সদ্য স্বাধীন দেশটি ঋণ আর সাহায্য ছাড়া কেমনে দাঁড়াবে? অবশ্যই তাদের কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু সুদযুক্ত ঋণ ছাড়া যে একেবারে দাঁড়ানো যাবে না তা কিন্তু নয়। স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়, কিংবা স্বাধীনতার পর প্রথম দিকে সাধারণ মানুষের মনে দেশ নিয়ে যে আবেগ ছিলো তা ইচ্ছে করলে নেতারা কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারতেন। একাত্তরে যারা যুদ্ধে ছিলেন তারা তো ইচ্ছে করলে অস্ত্র জমা দিয়ে কর্মের মাঠে ঝাপিয়ে পড়তে পারতেন। যার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তারা যদি বিলাসী সরকারদের মতো বিলাসিতায় না গিয়ে বিপ্লবী সরকারদের মতো জনগণকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠনে মাঠে চলে আসতেন তা হলে এদেশের অনেক উন্নয়ন অল্প অর্থে করা সম্ভব হতো। তা ছাড়া যে ঋণ বা সাহায্য বিদেশ থেকে আনা হয়েছে তা যদি সঠিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা হতো তবে এতো দীর্ঘ ঋণে থাকতে হতো না। আর এই ঋণের কারণে দেশ দিন দিনে পিছনের দিকে যাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশের মৌলিক সমস্যার মধ্যে প্রধান একটি হলো-বিদেশি ঋণ। এই ঋণ থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে প্রয়োজ জ্ঞানসম্পন্ন এমন নেতৃত্বের, যারা গোটা জাতিকে সুশিক্ষিত এবং সচেতন করে এক প্লাটফরমে দাঁড় করিয়ে রাষ্ট্র গঠনের মাঠে নিয়ে যাবেন।



বাংলাদেশের মৌলিক সমস্যা-৩

বৃটিশ অর্থনীতিবীদ টমাস ম্যালথাস (Thomas Malthus) এর চিন্তা থেকে সামাজিক ডারউনবাদ হয়ে সমাজতান্ত্রিক মার্কসবাদ এবং পশ্চিমা পূঁজিবাদ খাদ্যের ঘাটতি হ্রাসে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের যে পরিকল্পনা বিশ্বকে দিয়েছে তা থেকে আমাদেরও কেউ কেউ দেশে মৌলিক সমস্যা হিসাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করে তা হ্রাসের বিভিন্ন পরিকল্পনা দিয়েছেন। ‘টমাস ম্যালথাস’ তাঁর An Essay on the Principle of population’ বইতে জনসংখ্যা হ্রাসের পদ্ধতিতে বলেছেন-জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক উপাদান হলো-যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারি। তিনি স্পষ্টই বলে দিয়েছেন-‘কিছু লোককে বাঁচাতে হলে কিছু লোককে মারতে হবে।’ এই কিছু লোককে মারতে হলে প্রয়োজন যুদ্ধ, সংঘাত, মহামারি, দুর্ভিক্ষ তৈরি করা। (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে ‘দয়াদর্শন’ গ্রন্থে)। আমাদের দেশে যারা জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে অন্যতম মৌলিক সমস্যা মনে করছেন আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই-জনসংখ্যাকে সমস্যা না ভেবে যদি জনশক্তি বিবেচনা করে পরিকল্পিতভাবে প্রশিক্ষন দিয়ে কাজে লাগানো যেতো তবে এতেই ছিলো আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা। আমরা আমাদের জ্ঞান-বুদ্ধির অভাবে জনশক্তির উচ্চ, উচ্চ-মধ্য, মধ্য, নিম্ন-মধ্য, নিম্ন শ্রেণীগুলোকে পৃথক তালিকাবদ্ধ করে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে ব্যবহার করতে পারিনি বলে আজ মনে হচ্ছে জনসংখ্যা একটি বিরাট সমস্যা। একাত্তরের স্বাধীনতার পর পরই যদি আমরা জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তিত করার উদ্যোগ নিতে পারতাম তবে আজ বেকারত্বের সংখ্যা অনেক হ্রাস পেতো এবং দেশ এতো ঋণগ্রস্থ হতো না। আমাদের পূর্ব প্রজন্ম যে চেতনা নিয়ে এদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছেন নেতারা যদি সেই চেতনায় গোটা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে স্বাধীনতার পর পরই রাষ্ট্র গঠনে নিয়ে যেতে পারতেন তবে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ বিদেশী ঋণ ছাড়াই হয়ে যেতো। কিন্তু নেতা যদি এসি’র ভেতর বসে জনগণ দিয়ে কাজ করাতে চেষ্টা করেন তবে তা কখনও সম্ভব না। নেতাকে প্রথমে কোদাল-কোড়াল হাতে নিয়ে মাঠে আসতে হবে। জনগণ বুঝতে হবে আমাদের নেতা একজন কর্মট মানুষ, তবেই জনগণ কর্মট হয়ে উঠবে। আমাদের দেশের মৌলিক সমস্যা যতটুকু জনসংখ্যার বৃদ্ধি তা থেকে শতভাগ বেশি নেতাদের বিলাসী জীবন। এদেশের জনগণ যখন দেখে নেতারা নিজেদের বিলাসী জীবন পরিচালনার জন্য অবৈধ টাকা অর্জনে ব্যস্ত তখন সাধারণ মানুষ প্রথমে হতাশ হয়ে যায়, অতপর আস্তে আস্তে সেও চেষ্টা করে অবৈধ অর্থ উপার্জনের। অনেক আছেন যারা প্রথম জীবনে খুব আদর্শবাদী থাকেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশের ঘাটে ঘাটে অনিয়ম থাকায় তিনি আর আদর্শে থাকতে পারেন না।

জনসংখ্যাকে সমস্যা না ভেবে সরকার যদি সম্ভবনা ভেবে দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে আজও চিন্তা করে তবে দেশকে আরো সমৃদ্ধের পথে নিয়ে যাওয়া যাবে। সরকার যদি জনশক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য একটি গবেষণা সেন্টার গঠন করে এখানে কিছু জ্ঞানী-বুদ্ধিজীবি এমন দক্ষ মানুষকে গবেষণার জন্য নিয়োগ দিতো যারা আমাদের সমাজের সর্বশ্রেণীর চিন্তা-চেতনা এবং অবস্থানের খবর রাখেন, পাশাপাশি বিশ্ব সমাজেরও খবর তাদের কাছে থাকবে। এই গবেষকেরা মাঠে-ঘাটে কাজ করে পরিকল্পনা নিবেন কিভাবে কোন শ্রেণীকে কোথায় কাজে লাগানো যায়। সরকার তাদের পরামর্শকে মন্ত্রী পরিষদে এবং জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করে অতপর সিদ্ধান্ত নিয়ে তা জনগণের সামনে উপস্থাপন করে ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। এই এক্ষেত্রে সরকারকে নিরেপেক্ষ হতে হবে। জনশক্তিকে সঠিক পথে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের একা উদ্যোগই যথেষ্ট না। এখানে দল-মত নির্বিশেষে সকল দেশ প্রেমিক জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। স্ব স্ব উদ্যোগে সবাই নিজ সাধ্যানুসারে দেশের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। সবাই নিজকে এই রাষ্ট্রের নাগরিক এবং সেবক মনে করতে হবে। আমাদের মৌলিক সমস্যা আমরা বক্তব্যে-মিছিলে নিজকে দেশ প্রেমিক বলে প্রচার করলেও কর্মে তা বাস্তবায়ন করি না। আমরা নেতা হই, কর্মি হই, ছাত্র হই, শিক্ষক হই সবই ব্যক্তিগত বস্তুবাদি স্বার্থে, রাষ্ট্র প্রেম, সমাজ প্রেম, মানবপ্রেম এখানে মুখে থাকলেও কর্মে থাকে গৌণ।











মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.