নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শেকড়ের সন্ধ্যানে অভিযাত্রা এবং প্রাসঙ্গিক কথা-৩
--------------------------------------------------------------------------------
সৈয়দ মবনু
----------------------------
নাগরি সাহিত্যের জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘হালাতুননবী’র রচয়িতা মুন্সি সাদেক আলীর কবর
----------------------------
আমরা মাওলানা আব্দুর রহমান সিংকাপনীর কবর জিয়ারত শেষে লঙ্গুয়া নদীর তীরের তাহারলামু গ্রামের দিকে যাত্রা শুরু করতে হয়। রাস্তা না জানার কারনে আমাদের আবার ঘুরে সিলেটের পথে কদমহাটা হয়ে তাহারলামুতে যেতে হয়। তাহারলামুর পথে কিছুটা রাস্তা যাওয়ার সামনে আসে নাগরী সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি ‘হালাতুননবী’ রচয়িতা মুন্সি সাদেক আলীর কবর।
সৃষ্টিতত্ত্ব আর হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জীবনাচরণের মহাত্ম বর্ণনার এক অপূর্ব গ্রন্থ ‘হালাতুননবী’। বলা হয়ে থাকে-তা নাগরী লিপিতে মুদ্রিত সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ। পবিত্র কোরআনের পরে বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমীর ‘মসনভী’ যেমন সত্য, তেমনি সত্য আমাদের অঞ্চলের জন্য মুন্সি সাদেক আলীর ‘হালাতুননবী’। মুন্সি সাদেক আলীর জন্ম সিলেটের কুলাউড়া উপজেলার দৌলতপুরে। তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে- সৈয়দ মুর্তাজা আলীর মতে মুন্সি সাদেক আলীর জন্ম ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে। (সিলেটের নগরী লিপি ও বাংলা সাহিত্য)। দেওয়ান নুরুল আনোয়ার চৌধুরীর মতে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে এবং চৌধুরী গোলাম আকবর ও ড. গোলাম কাদিরের মতে ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে। মুন্সি সাদেক আলীর মুসলিমপূর্ব নাম ছিলো গৌর কিশোর সেন। তাঁর পিতার নাম গোবিন্দ সেন। তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত আইনজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। মৌলভীবাজারে সবডিভিশন হওয়ার পূর্বে হিঙ্গাজিয়াতে মুন্সেফের কাছারি ছিলো। মুন্সি সাদেক আলী সেখানে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আট বছর মুন্সিফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অতঃপর ‘মানুষ মরলে কোথায় যায়?’ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তিনি বিভিন্ন ধর্মের গবেষণা শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি ঢাকায় এসে দায়রা শরিফের পীর শাহ নকি উল্লার কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিজ পীরের নির্দেশে ইসলামের প্রচারে মনোযোগী হন। তিনি মৌলভিবাজারের ইটা পরগণার লামু গ্রামের হাজির ঠাকুর নামক ব্যক্তির মেয়েকে বিয়ে করে ঐগ্রামে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। তিনি ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। তাঁর কবর রয়েছে মৌলভীবাজারের লঙ্গুন নদীর তীরে তাহারলামু গ্রামে। মুন্সি সাদিকের লেখা পুঁথি ‘হালতুননবী’ প্রথম প্রকাশ ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ। গবেষকেরা স্বীকার করেছেন তা মুদ্রিত আকারে প্রকাশের আগেও হাতে লিখে বিভিন্নজন সংগ্রহ করতো। এছাড়াও রয়েছে তাঁর রদ্দে কুফুর, মহব্বত নামা ও হাশর মিছিল নামে আরো তিনটা নাগরি পুঁথি। উৎস প্রকাশন কর্তৃক ২০০৯ এ প্রকাশিত মহব্বত নামা, হাশর মিছিল ও হালাতুননবী পুঁথিগুলো আমার পাঠের সুযোগ হয়েছে। হালাতুননবী গ্রন্থের শুরু এভাবে
‘গফুর রহিম আল্লা কাদির ছুবহান।।
ছিতারায় খুবি দিলা শাত আশমান*
জমিনে খুবি দিলা কত চিজে আর।।
শকল মহতাজ খালি গনি পরওয়ার*
জমিনে আশমানে জেছা গুনা কেও করে।।
আল্লা জদি চাহে তারে খেমা দিতে পারে*
আল্লা বিনে ছাদেকের লক্ক ভিক নাই।।
আমারে শুপিছি আমি মাবুদে ঠাই*
ইজ্জতে হুরমতে নবী মুহাম্মদ রছুল।।
জে করে মাবুদ আল্লা আমারে কবুল*’
শেষ করেছেন এই বলে-
‘শবাকার জুনাবেতে আমার সালাম।।
হালাতুননবি কেতাব হইল তামাম*
বার শও বাশইট শন আজি বাংগেলার।।
বার শও পনচাশ শালে জনম আমার*
এশব আরজ করি দুআর খাতির।।
গুনা খাতা মাফ কর উম্মত নবির*’
এরপরও অবশ্য ‘বিনা ইমামের দরগার বএআন’ শীর্ষক একটি পুঁথি রয়েছে। এতে তিনি মূল শিয়া সমপ্রদায়ের কিছু ভ্রান্ত চিন্তার সমালোচনা করেছেন। তাঁর ভাষায়-
‘শিআ জাতেতে খালি মানএ কুরান
মুখে মানে কামে নাই বিগারে মছলমান’
‘মহব্বত নামা’ গ্রন্থে মুন্সি সাদেক আলী কোরআন ও বাইবেলের সমন্বয়ে হযরত ইউসুফ (আ.) এর জীবনের বিভিন্ন দিক বর্ণনা করেছেন। আর ‘হাশর মিছিল’ হলো কিয়ামতের সুখ আর শাস্তি সম্পর্কিত বিষয়াদির আলোচনা।
অভিযাত্রী দল গাড়ি থেকে নেমে মুন্সি সাদেক আলীর কবরের সামনে সমবেত হলে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক মুন্সি সাদেক আলীর জীবনবৃত্তান্ত বর্ণনা করেন। অতঃপর আমরা যাত্রা শুরু করি পাকিস্তানামলের মন্ত্রী দেওয়ান আব্দুল বাসিতের বাড়ির দিকে।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৪
এস আলম সুমন বলেছেন: সৈয়দ মবনু সাহেবের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে চাই। উনার মোবাইল নাম্বার কি পাওয়া যাবে ?