নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু কিছু কথা আছে যার মানে, বুঝি নি এখনো তবু সন্ধানে...........

পাশেই কারোর একখানা হাত ধরো, কাছেই কাউকে তোমার বন্ধু করো… দূরেও রয়েছে বন্ধু মিষ্টি হেসে, হয়তো কোথাও হয়তো অন্য দেশে।

সুমন কর

আমাকে পড়লে মনে খুঁজো এইখানে,এখানে খুঁজছি আমি জীবনের মানে।

সুমন কর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: দুর্বিষহ একদিন।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৩



বিঃদ্রঃ সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত।

সময় থাকলে পড়তে পারেন।


*

২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০০৭। আমার মাস্টার্স পর্বের Dynamical Systems বিষয়ের ইনকোর্স পরীক্ষা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্ভবত দুপুর ১২টায়, কাজী মোতাহের হোসেন ভবনে। শহীদ মিনারের পাশে অবস্থিত এই ভবনটি পূর্বে এন-এক্স ভবন নামে পরিচিত ছিল। আমি যথারীতি সকালে উঠে পড়া রিভিশন দিয়ে একটু সময় হাতে নিয়ে, সকাল ১০টার দিকে বের হয়ে গেলাম। আমি হলে থাকতাম না। বাসা থেকেই পড়াশুনা করতাম। তাই রাস্তায় জ্যাম হতে পারে, এই ভয়ে আগেই বের হতাম। অভ্যাস হয়ে গেছে। কারণ আমি যেখান থেকে বাসে উঠতাম সেখানে লোকাল বাস-ই পাওয়া যায়।



আমি বাসে চুপ করে বসে ছিলাম। হয়ত একটু-আকটু পড়া চিন্তা করছিলাম। পরীক্ষার সময় যা হয়! মনে হয়, কলেজ গেট পযর্ন্ত হালকা হালকা জ্যাম ছিল। টের পাইনি। কারণ এটা আমার ক্ষেত্রে প্রতিদিন হয় এবং আমি অভ্যস্ত। আর বাস তো আস্তে করে চলছিল-ই। তাই চিন্তার কোন কারণ ছিল না। হাতে যথেষ্ট সময আছে!



কিন্তু আসাদ গেটের সামনে আসতে অনেক সময় নিল। ঐ জ্যামের কারণে। এবার আমার দুঃচিন্তা শুরু হল! ভাবছিলাম জ্যাম কমে যাবে, সমস্যা হবে না। জানলা দিয়ে বাহির আর হাতের ঘড়ি দেখছিলাম। বাস থেকে নামি নামি করেও নামছিলাম না। দোটানায় ছিলাম, ছটপট করছিলাম। কি করব ভাবছিলাম? অপেক্ষা করব? এক্ষণই বাস ছাড়বে? নেমে যাব? রাস্তা তো অনেক বাকি! কেউ কিছু বলতে পারছিল না। সবাই আমার মত দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দোদুল্যমান ছিল।



অনেকক্ষণ হয়ে গেল। না, বাস আর নড়ছে না! বাস থেকে নেমে গেলাম। কিন্তু এটা কি! সামনে-পিছনে শুধু জ্যাম আর জ্যাম! আমি জোরে জোরে হেঁটে গেলাম। জ্যামের শেষ নেই। আড়ং-এর সামনে আসাদ গেটের মোড়ে এসে, আমার অবস্থা শেষ। চোখ চড়াকগাছ! এক চুল জায়গা নেই। বাস, পাইভেট কার, সিএনজি, রিকশা, মাইক্রো সব; সব স্থির পোষ্টারের মতো! আমার হাত-পা-শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল। ছোট বেলা থেকেই আমি একটু ভীতু প্রকৃতির। তাড়াতাড়ি নার্ভাস হয়ে পড়ি। তারপর আজকে পরীক্ষা। যদি সময়মত পৌঁছাতে না পারি? পরীক্ষা যদি শেষ হয়ে যায়? কারণ পরীক্ষাটি ছিল এক ঘণ্টার!





**

আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে কাওরান বাজারে অবস্থিত ১১তলা বিশিষ্ট বাংলাদেশ ইস্পাত প্রকৌশল কর্পোরেশন (বিএসইসি) ভবনের দ্বিতীয় তলায় আগুনের সুত্রপাত হয় এবং দুপুর ১২টার দিকে সে আগুন নয়-দশ তলায় পৌঁছে যায়। এই ভবনে ২টি টিভি চ্যানেল (NTV এবং RTV), ১টি পত্রিকা অফিস (আমার দেশ), ড্যান্ডি ডাইং, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্যাংক এবং অনেক বাণিজ্যিক অফিসের র্কাযালয় ছিল। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় পৌঁছাতে খুব বেশি সময় নেয়নি। ব্লগগুলোতেও আলোচনার বিষয় ছিল বিএসইসি ভবনের আগুন। এমন একটি বহুতল ভরনে আগুন লাগলে সেখানে কয়েক শ' মানুষ আটকে পড়ে।



আগুনে অফিস বন্দী অনেকেই অচেতন হয়ে যায়। অনেকেই ওড়না ও টাওয়েল ভিজিয়ে নাক মুখ চেপে ধরে শ্বাস-প্রশ্বাস সচল রাখেন। অভ্যন্তরীণ ভাবে আগুন নেভানো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তখনকার প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, এই অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৫০জন আহত এবং ৩জন নিহত হয়। বেলা ১১.৩০টার দিকে একজন মহিলা হেলিকপ্টারে সাথে সংযুক্ত চিকন রশিতে ধরে ঝুলতে থাকে। অন্য একজন মহিলা টেলিফোনের ক্যাবল ধরে বাহিরে আসতে চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়। মাটিতে পড়ে এবং মারা যায়। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার, সেনাবাহিনী, পুলিশ, রেড ক্রিসেন্ট এবং দমকল কর্মীদের তৎপরতায় আগুনে আটক পড়াদের উদ্ধার করা হয়।







***

আমি ঐ সব চিন্তা করছি আর দৌড়াচ্ছি। দৌড়াতে দৌড়াতে খামার বাড়ির পর্যন্ত আসলাম। ভাবলাম এইদিকের রাস্তাটা ফাঁকা হবে। কিন্তু কোন লাভ হলো না। ওখানকার ট্রাফিক বলল, সামনের রাস্তা বন্ধ। আমার শরীর আরো ঠাণ্ডা হতে লাগল। আমি উল্টো পথ ধরে আবার দৌড়াতে লাগলাম। আসাদ গেটের দিকে, নীলক্ষেত দিয়ে যাবার জন্য। মাথা যেহেতু কাজ করছিল না তাই বোকার মত খালি সিএনজি পেলে যাবে কিনা জিজ্ঞেস করছিলাম! তারা আমাকে রাগান্বিত হয়ে বলছিল, ‘দেখেন না, সামনে সব রাস্তা বন্ধ।’ তাই দৌড়ানোই ছিল আমার একমাত্র কাজ। এদিকে পরীক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে। কি করব বুঝতে পারছিলাম না? আমি থেমে থেমে দৌড়াচ্ছিলাম। মনে হয়, ধানমন্ডির ২৭-এর একটু পরে, আমি একজন আর্মি অফিসারকে মটোর সাইকেল করে আসতে দেখেছিলাম। বাধ্য হয়ে, হাত বাড়িয়ে উনাকে থামিয়ে, হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, ‘আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একটি পরীক্ষা আছে। আপনি যদি আমাকে...?’ আমার করুন অবস্থা দেখে উনি সব বুঝতে পারল। উনি বললেন, ‘সময় নেই, বসে পড়।’ লোকটি ভাল ছিল। মোটর সাইকেলের পিছনে বসে উনাকে জিজ্ঞাস করলাম, ‘ব্যাপারটা কি?’ তখন উনিই বললেন, ‘বিএসইসি ভবনের অগ্নিকাণ্ডের কথা।’



কিন্তু ঐসব নিয়ে চিন্তা করার কথা তখন আমার মাথায় আসে নি। আমি কিভাবে যাব সেটা নিয়ে আমি ছিলাম উদ্বিগ্ন, শংঙ্কিত আর ভীত। উনি আমাকে সিটি কলেজের পূর্ব পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারলেন। কারণ এর আগে ছিল বিশাল জ্যাম। তাই আমি নেমে আবার দৌড়াতে দৌড়াতে ঢাকা কলেজের সামনে পৌঁছে একটি খালি সিএনজি পাই। ঘড়িতে তখন অলরেডি ১২টা বেজে গেছে। আমি শুধু যাবে কিনা, বলেই উঠে পড়ি। আমি প্রায় ২০/২৫ মিনিট পরে পরীক্ষা হলে পৌঁছি।



শহীদুল স্যারের পরীক্ষা ছিল। খুব ভাল স্যার। হাঁপাতে হাঁপাতে উনাকে একটু বলতেই বললেন, ‘এখন যাও, পরীক্ষা দাও। পরে দেখা কর।’



যাই হোক পরীক্ষা তেমন খারাপ হয়নি। মানে, পাস করে যাব। যথারীতি পরীক্ষা শেষ করে স্যারের রুমে গিয়ে দেখা করি। পরে বাসায় এসে, টিভি খুলে সব জানতে পারি।



তাই ২০০৭ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি ছিল আমার জীবনের একটি কঠিন, প্রতিকূল আর দুর্বিষহ দিন।

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪২

আমিনুর রহমান বলেছেন:




পড়ে গেলাম। মন্তব্য পরে করব এসে এখন ব্যস্ত অনেক :)

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:২৫

সুমন কর বলেছেন: অপেক্ষায় রইলাম.....

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৮

আহলান বলেছেন: হাপাইতে হাপাইতে পড়লাম ...

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:২৭

সুমন কর বলেছেন: হাঁপানোর জন্য দুঃখিত। কিন্তু পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহলান বলেছেন: হাপাইতে হাপাইতে পড়লাম . =p~ =p~ =p~


আসলেই আমাদের ছোট্ট শহরটা একটা সামান্য ঘটনা দূর্ঘটনায় কেমন অচল হয়ৈ যায়!!

কিন্তু যারা ভাবার তারা কি এ নিয়ে ভাবেন????

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:২৯

সুমন কর বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আসলে কেউ ভাবে না। তাই গল্প দিয়ে সবার সাথে শেয়ার করলাম।

৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৩

খাটাস বলেছেন: আপনার স্রিতি রোমন্থন এ শরীক হলাম। গুছিয়ে লিখছেন। সুন্দর।
শুভ কামনা।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৩৪

সুমন কর বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনারা আমার ব্লগ এসেছেন, খুশি হলাম।

৫| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৯

এম মশিউর বলেছেন: স্মৃতি রোমন্থন টা একটানে পড়ে গেলাম। বেশ ভালো লেগেছে।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৩৬

সুমন কর বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের মন্তব্য উৎসাহ দেয়।

৬| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:০৯

কলাবাগান১ বলেছেন: এন-এক্স বিল্ডিং না এটা কে বলা হত এনেক্স (Annex) বিল্ডিং। কবে এটার নাম পরিবর্তন হল????

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪১

সুমন কর বলেছেন: ভুল ধরে দেবার জন্য এবং পড়ার ধন্যবাদ।

অফ টপিক: এখন এডিট করলে কি রি-পোস্ট হবে? নতুন তো যদি একটু হেল্প করতেন !!

৭| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:২২

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
অনেক কিছুই মনে করিয়ে দিলেন .....

ভাল লাগলো।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৩০

সুমন কর বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৮| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:০৭

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ভালো লাগলো স্মৃতিচারন!!!!

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:১৫

সুমন কর বলেছেন: গল্পের মাধ্যমে স্মৃতি রোমন্থন করলাম। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৯| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১২

ইষ্টিকুটুম বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো। যদিও ভালোলাগার কথা নয়। ভালো করে বর্ণনা দিয়েছেন। গল্পের নায়কের দুর্বিষহ অবস্থাটা বাস্তব চোখে উপলব্ধি করে গেলাম সিনেমার মতন।

এমনি

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

সুমন কর বলেছেন: আসলে বাস্তব জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট দেশের একটি ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আর গল্পের নায়ক এই অভাগা আমি, তাই বর্ণনাটা হয়তো ভাল হয়ে গেছে? ঐ অবস্থায় আমি আসলে অন্য কিছু আর চিন্তা করতে পারিনি।
ভালো থাকবেন।

১০| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১২

ইষ্টিকুটুম বলেছেন: এমনি করে লেখা চলতে থাকুক।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০

সুমন কর বলেছেন: আপনাদের উৎসাহ + পাঠক পেলে লিখে যাওয়ার চেষ্টা করব।

১১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার সুলিখিত এ গল্পটা পড়তে পরতে নিজের বুকের মধ্যেই ধুকপুকানির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।
মনে মনে ভয় হচ্ছিলো, যদি ঐ সেনা অফিসার লিফট দিতে না চায়, যদিও এরকমটা কদাচিৎ হয়ে থাকে।
যাক, সব ভালো যার শেষ ভালো। সেরকমই ঘটেছে জেনে স্বস্তি পেলাম।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৪৬

সুমন কর বলেছেন: এটা আমার জীবনের সত্য ঘটনা। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

১২| ০৮ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৬:৪৯

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: যাক পরীক্ষা দিতে পারলেন। আমি মনে করেছিলাম গল্প, পড়ে বুঝলাম একরকম স্মৃতি, এরকম বহু ঘটনা আমাদের সবারই আছে। আমার ইন্টার পরীক্ষার সময় একবার বহু পথ হেটে যেতে হয়েছিল।

০৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩

সুমন কর বলেছেন: সময় করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.