নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন একটা অদৃশ্য শিরোনাম । যার বিস্তারিতই দেখে শুধু মানুষ, মূল শিরোনাম দেখেনা কেউ । কেউ কেউ আবার বিস্তারিত সংবাদের মাঝেই হার মেনে যায়...

নির্বাক কাকতাড়ুয়া

নদীতে ভেসে চলা ভাসমান কচুরিপানাগুলোর মতই আমার জীবন...

নির্বাক কাকতাড়ুয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

শূন্যতা এবং অস্পষ্টতা

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৪৪

কয়েকদিন ধরে বিয়ের জন্য খুব উঠে পড়ে লেগেছে মিথিলার পরিবার । মিথিলার মনটা ভীষন খারাপ,নিঃশব্দে চোখের জলগুলো ঝরে পড়ছে । আপন করে কাউকে পায়নি কখনো । সেইছোটবেলায় যখন তার মা মারা গিয়েছিল ঠিক তখন থেকেই তার কস্টের পর্যায়টা শুরু । অনেক মেধাবী এবং সুদর্শন । মা মারা যাওয়ার পরপরই তার বাবা নতুন একটা বিয়ে করে । আর বিয়ে করাটাও স্বাভাবিক,পরিবারের এত কাজকর্ম করবে কে? যদিও মিথিলা বাবাকে অনেক অনুরোধ করেছিল বিয়ে না করতে,সে সব কাজ করতে রাজি তবুও নতুন কাউকে আনতে চায়না মিথিলা । মিথিলার বারণ উপেক্ষা করেই চলে এলো নতুন একজন মানুষ । সৎ মায়ের অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে প্রতিদিন । তবুও লেখাপড়ার হালটা ছাড়েনি কখনো, অনেক টানাপোড়নের মাঝেও এগিয়ে চলেছে । চোখে বড় বড় সব স্বপ্ন ।সে নিজেও জানেনা তার স্বপ্নগগুলো আদৌ পূরন হবে কি না? তবুও অনেক অনেক স্বপ্ন বোনে । হাইস্কুল লাইফটা যেখানে মানুষ প্রেম, যেটানে আধুনিকভাবে রিলেশন করা বলা সেসবের বাহিরে মিথিলা । স্কুলে যেতে কতইনা বখাটে ছেলেদের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে । একদিকে সৎ মা অন্যদিকে বখাটেদের অশ্লীল কথাবার্তা । মাঝে মাঝে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে তার, কিন্তু পারেনা । উঠোনের পাশে বড় একটা জামগাছ, মিথিলার উওরের জানালাটা দিয়ে জামগাছটা দেখা যায় । তার ভালো বন্ধু বলতে ঐ জামগাছটা । মন খারাপ হলে জামগাছটার সাথে গল্প করে,যতসব নালিশ জামগাছটা কাছে প্রদান করে । জামগাছটাও যেন তার কথার প্রতিউওর দিয়ে স্বপ্ন জাগায় নতুন উদ্দ্যেমের । হাইস্কুল থেকে ভালো রেজাল্ট করল । এবার ভালো একটা কলেজে ভর্তি হওয়ার পালা, কিন্তু পরিবার তার বিয়ে দেয়ার জন্য খুব জোর দিচ্ছে । অনেক বোঝানোর পর তার বাবা রাজি হলো ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়াতে,তারপর তার কোনো কথা শুনবেনা সোজাসুজি বিয়ে । নতুন কলেজে ভর্তি হলো অসংখ্য ছেলের প্রেমের প্রস্তাব পেতে শুরু করলো । কিন্তু তার মাথাতে এসব নিয়ে বিন্দুমাএ চিন্তা করার মত কোনো সময় নেই । দিনগুলো ভালোভাবেই চলছিল । ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষার সময়ও আসতে আসতে ঘনিয়ে আসতে লাগলো । রেজাল্টের চেয়েও তার মাথায় বড় চিন্তা বিয়ে নিয়ে । পরিক্ষা শেষ হলো। কিছুদিনপর পরিক্ষার রেজাল্টও দিলো বরাবরের মত এবারও ভালো রেজাল্ট করেছে সে । কিন্তু তার পরিবার আর কোনো কথা শুনছেনা এবার । কোচিং এ ভর্তি হতে চেয়েছিল কিন্তু হতে পারেনি, ভেবেছিল বাড়িতে পড়েই মেডিকেলে পরিক্ষা দিবে । নাহ্! তা আর হয়ে উঠলোনা । তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটা আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে লাগলো । কিছুদিন পর তার বিয়ে ঠিক হল । সম্ভ্রান্ত এক গ্রাম্য মোড়লের ছেলের সাথে । অনেক ধন সম্পদ আর টাকা পয়সা । কিন্তু ছেলেটা অশিক্ষিত । পরিবারে মিথিলার কোনো মত না জেনেই বিয়ের সম্বন্ধটা পাকা হলো । ২ দিন পর তার বিয়ে, সারা বাড়িতে ছোট বাচ্চাদের হৈ চৈ তে মুখরিত পুরো বাড়ি । অনেক স্বজনরা এসেছে , একে অন্যের সাথে রাতজেগে গল্পে মেতে উঠেছে । অন্যদিকে দরজাটা বন্ধ করে জানালার ফাঁক দিয়ে জামগাছটা দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে । কি চেয়েছিল আর কি হচ্ছে! দুচোখের অশ্রুগুলো গাল বেয়ে বেয়ে মাটিতে পড়ছে সেদিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই শুধু কাঁদেই চলেছে । দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো । অনেক ধুমধাম করেই বিয়েটা হলো । বরযাএী সন্ধ্যেবেলায় রওনা দিলো । বিয়ের দিন সকালবেলাতে জামগাছটা ধরে খুব জোরে জোরে কেঁদেছিল যেন ধর্ষিতা কিশোরীর আর্তনাদের মত আকাশ-বাতাস একাকার হয়ে গিয়েছিল । সারা ঘর ফুল দিয়ে সাজানো; বাসর ঘর বলে কথা । বিছানার উপর বসে আছে মিথিলা, কান্নাটা ততক্ষনে থেমে গিয়েছিল । কারন সে জানে "কান্নারও একটা সীমা আছে সেই সীমা পার হয়ে গেলে মানুষ আর কাঁদতে পারেনা-হুমায়ন আহমেদ "। তার সীমাটাও অতিক্রম করেছে হয়তোবা। বসে বসে শুধু ভাবছে যেমনটা বর চেয়েছিল ঠিক যেন তেমনটাই হয় । হাস্যকর ব্যাপারটা হলো বরকে সে কখনো দেখেনি আর আধুনিক যুগ হওয়া সত্ত্বেও তার কাছে কোনো মোবাইল ছিলোনা । ভেবেছিল যাকে বিয়ে করবে তার সাথেই প্রেম করবে । কিছুক্ষন পর পাজ্ঞাবি পড়া একজন আসলো রুমের মধ্য বয়সটা তেত্রিশের কাছাকাছি মুখো খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি । রুমে প্রবেশের সাথে সাথে আৎকে উঠেছিল মিথিলা ।পৃথিবীতে ভালো মানুষগুলোর সাথে এমন সব ঘটনা ঘটে যা কল্পনাতীত । মিথিলার সাথেও তেমনটাই হলো । সহজ,সরল,বোকা মেয়েটার কপালে হয়তোবা এটাই লেখা ছিলো। দুঃস্বপ্নের মত রাতটা পার হলো তার । নতুন বাড়ি,নতুন সংসার । সবকিছুই অপরিচিত । ব্যাপারগুলোর সাথে খাপ খাওয়াতে পারছেনা কিছুতেই ।তার স্বামী একজন নেশাখোর । জুয়া,ফেনসিডিল,ইয়াবা সেবন করে । প্রায়শই মিথিলার গায়ে হাত তোলে, তবুও সবকিছুই মেনে নেয় সে । জীবন অতিবাহিত হতে লাগলো বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মা হয়ে গেলো মিথিলা । যদিও সে চায়নি যে এত শিঘ্রই বাচ্চার আম্মা হবে সে । ভেবেছিল তার স্বামীকে বলে লেখাপড়াটা যদি চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্হা টা করা যেত । যদিও কোনো লাভ হতোনা তাতে । কারন শিক্ষিতের কদরটা শিক্ষিতরাই বুঝতে পারে । মেয়ে সন্তানের মা হলো । এতে করে কারো সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেনি সে । জীবনের সব জায়গাতে তার যেন হার স্বীকার করতে হচ্ছে আর কস্টগুলোও যেন ছায়ার মত লেগে আছে তার, কিছুতেই পিছু ছাড়ছেনা । পরিবারের কাজকর্ম, সন্তানের লালন পালন সবকিছু নিয়ে এখন সে ব্যস্ত । এখন আর সে বেশী কিছু ভাবেনা, সবকিছু এখন মেনে নিতে শিখেছে । অবিরাম ছুটে চলেছে সে । স্বপ্ন এখন শুধু তার মেয়েকে নিয়ে । কিভাবে বড় করে তুলবে,লেখাপড়া শেখাবে,আর না হওয়া স্বপ্নটার বাস্তবিক একটা রূপ দিবে ।এভাবেই চলে যাচ্ছে দিন,মাস,বছর ।নতুন স্বপ্নগুলোকে সঙ্গী করে চলেছে দূর,বহুদূর......

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.