নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তক বাংলাদেশ চাই

সাব্বির জুবাইর

সাব্বির জুবাইর › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিমালয়কন্যার কোলে - ২

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৮

প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

নেপালের রাস্তাঘাটে তেমন জ্যাম নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মত লোকাল বাস ঠিকই আছে। বেশির ভাগই মিনি বাস। ট্যুুরিস্ট বাস চোখে পড়ে খুব ঘন ঘন। লোকাল বাসগুলোতে হেল্পাররা বাংলাদেশের মত ডাকাডাকি করে যাত্রী উঠায়। জায়গার নাম শুনলে মনে হয় বুঝি বাংলাদেশের কোন বাস এটা- কালিবাড়ি, ভক্তপুর, ইত্যাদি পরিচিত সব নাম। রাস্তাগুলোতে দিনের বেলাতেই যত ব্যস্ততা! সন্ধ্যা হতেই রাস্তাগুলো একদম গাড়িশুন্য হয়ে পড়ে। রাস্তাগুলো লোকালয় থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন। বাংলাদেশে যেমন প্রধান সড়কের উপরেই দোকান-পাট, বিল্ডিং তৈরি হয়। কিন্তু নেপালে মেইন সড়ক থেকে ঘরবাড়ি দোকানপাট বেশ দূরে। ফলে রাস্তাগুলোতে বাংলাদেশের মত ধুলো যেমন হয়না, রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে অনাকাঙ্খিত জ্যামও তৈরি হয়না।


....................................................... লোকাল বাসে

নেপালের রাস্তায় মোটর সাইকেল আর স্কুটারের চলাচল খুব বেশি। শাড়ী পরিহিত অবস্থায় নারীরা স্কুটার চালাচ্ছেন, এটা খুব পরিচিত দৃশ্য সেখানে। নেপালের রাস্তায় যে জিনিষটাকে খুব মিস করছিলাম, সেটা হচ্ছে তিনচাকার রিকশা। আমি তাহারে খুজিয়া বেড়াই, কিন্তু তাহার সাক্ষাত তো মেলেনা! অবশেষে থামেলে গিয়ে ওনার সন্ধান পাই। যদিও বাংলাদেশের রিক্সা থেকে ওটার চেহারা একটু ভিন্ন তারপরও আমাদের আনন্দ দেখে কে! ঝটপট ফটো তুলে ফেললাম।



পরিসংখ্যান বলে নেপালের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ। ওদের মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে কম। কিন্তু চেহারা-সুরতে সেটা মনে হলোনা। সেখানকার রাস্তায় সহসা ভিক্ষুক চোখে পড়েনা। পুরো সাতদিনে মাত্র একজন ভিক্ষুক চোখে পড়েছিল থামেলে। সাধারন মানুষ অনেক বেশি সুশৃঙ্খল। একবার পশুপাতিনাথে কি একটা উৎসব হবে যেখানে কেবল নারীরা যেতে পারবে। দেখলাম, প্রবেশমুখে শাড়ী পরিহিতা নারীদের লম্বা সিরিয়াল! সুশৃঙ্খল সেই সিরিয়ালটার শেষ মাথায় অনেক্ষণ হেটেও শেষ মাথায় পৌঁছাতে পারিনাই। কিন্তু এতবড় সারি হওয়া সত্ত্বেও কাউকে দেখলামনা গেইটের কাছে হুড়োহুড়ি করতে।


নেপালের খাবার আমার অতটা ভাল লাগেনাই। কি একটা ভর্তা খেয়ে তো একবার বমি বমি অবস্থা হয়েছিল। নেপালিদের দেখলাম ‍খুব আয়েশ করে সেটা খাচ্ছে। হোটেলে ডিমভূনা কিংবা অমলেট পাওয়া যায়না। এক্কেবারে খোসা সহ আস্ত সেদ্ধ ডিম সাজানো থাকবে আপনার জন্য। আপনি নিজেই খোসা আলাদা করে তবেই উদরস্থ করতে পারবেন। হোটেলগুলোতে খাওয়াদাওয়া বাফেটে হয়। কিন্তু নেপালিদেরকে সেটার সুযোগ নিতে দেখা যায়না। বেশ পরিমিত খেতে দেখা যায় ওদের। নুডলসকে নেপালিরা বলে চৌ-চৌ। হোটেলগুলোতে মদ-ভদকা হাতের মুঠোয়। এমনকি রাস্তের পাশের মুদি দোকানগুলোতেও Tuborg এর বোতলের ছড়াছড়ি। তবে নেপালে গেলে যে জিনিষটি চেখে দেখতে ভুলবেননা, সেটির নাম হচ্ছে মো-মো। লাঞ্চের সময় এক প্লেট মো-মো থাকলে আর কিছু চাইনা সে দেশের মানুষের। বিভিন্ন রঙ আর স্বাদের সস্ মাখিয়ে মাখিয়ে কয়েক টুকরো খেতে আপনার মন্দ লাগবেনা।


.................................. নেপালের খুবই জনপ্রিয় খাবার মো-মো


নেপালের ভাষা বাংলা ভাষার খালাতো বোন। কিছুদিন আগে শ্রীমঙ্গলে প্রত্যন্ত একটা এলাকায় গিয়েছিলাম কাজে। সেখানকার মানুষের ভাষা শুনে মনে হলো অন্য কোন দেশে চলে এসেছি কিনা। ভাগ্যিস! শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র পাশে ছিল বলে তাদের কথা বলতে পেরেছিলাম। কিন্তু নেপালি ভাষা একটু মনোযোগ দিয়ে শুনলে ভালো আন্দায করা যায়। অনেক শব্দ তো পুরোপুরি বাংলার মতো। মরিচকে বলে মিরচি, পেয়াজকে পিয়াজ আর তেলাপিয়া মাছকে তিলপিয়া। বাক্যের গঠনগত মিলও কাছাকাছি। অবশ্য নেপালিরা হিন্দিতেও সমান দক্ষ। আর প্রচুর বিদেশির আনাগোনা থাকায় ইংরেজিতেও বেশ পোক্ত। নেপালে তিন ধরনের মুদ্রা চলে। নেপালি রুপি, ভারতীয় রুপি আর মার্কিন ডলার। পর্যটন শহর পোখারায় ডলারই প্রধান বিনিময় মাধ্যম। একবার ট্যাক্সিতে করে থামেল থেকে হোটেলে ফিরি। ৩০০ রুপি ভাড়া। ট্যাক্সিওয়ালাকে নেপালি রুপি পরিশোধ করতে গেলে উনি ভারতীয় রুপি দাবি করে বসলেন। বুঝতে পারলামনা উনি আমাদের বিদেশি দেখে সুযোগ নিতে চাইলেন কিনা! উল্লেখ্য, নেপালি রুপির মূল্যমান বাংলাদেশের টাকার চেয়েও কম।

নেপাল গেলে ওখানকার নামকরা শাল আনতে ভুল করবেননা যেন। কাশ্মিরি, পাশমিনা ইত্যাদি সব রকমের শাল রয়েছে। শালের দোকানে ঢুকে হা-হুতাশ করতে বাধ্য হবেন। ক্যান যে সাথে করে আরো কিছু পয়সা বেশি আনলামনা! চাইলে নেপালি টুপিও কিনতে পারেন। উল্টো করলে নৌকার মত দেখতে হয় বিচিত্র এ টুপি নেপালের ঐতিহ্যের অংশ। মজার বিষয় হচ্ছে, এ টুপিকে ওরা বলে, “ঢাকা টুপি!”। ঢাকা নামক কাপড় দিয়ে এ টুপি প্রস্তুত করা হয় কিনা। নেপালের ৮০% দোকানদার নারী। অনেক মেয়ে সকালে স্কুলে যায় আর বিকেলে ব্যবসায় চলে আসে। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ নেপালের দোকাগুলোতে শপিং করে বিধায় ওরা টুকটাক বাংলাও বলতে পারে। আপনি বাঙালি বুঝতে পারলে হঠাৎ করে বাংলা বলে আপনাকে ভড়কে দিতে বিন্দুমাত্র কসুর করবেনা।


................................. সাইকেলের পেছনে আপেলের দোকান

কিছুদিন আগের ভূমিকম্প নেপালকে একটা বড় ধাক্কা দিয়ে গেছে। যদিও টানা কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় এবং বিদেশি সাহায্যে নেপাল এর অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু ভাল করে পর্যবেক্ষণ করলে এখনো সেটার আচঁ পাওয়া যায়। বিশেষ করে অতি প্রাচীন মন্দির, রাজবাড়ি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পশুপতিনাথ মন্দির এবং ভক্তপুর দরবার স্কয়ারে ভূমিকম্পের তাণ্ডব পুরোপুরি স্পষ্ট। ভক্তপুরের প্রধান মন্দিরের ছাদ ধ্বংস হয়ে গেছে। আরো কিছু মন্দির পুরোপুরি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।



................................................... ভক্তপুর দরবার স্কয়ার

ভক্তপুর কাঠমান্ডু থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এক রাতে নেপালের বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির ‘হেড অব চ্যান্সেরির গাড়িতে করে চলে যাই সেখানে। ১৫ শতক পর্যন্ত এটা প্রাচীন মাল্লা রাজ্যের রাজধানী ছিল। এখন এটার ট্যুরিস্ট স্পট ছাড়া আর কোন গুরুত্ব নাই। এ স্হাপনাটা একদম উন্মুক্ত। একটা শহরের মত। যেকেউ যখন তখন এখানে আসতে পারে। সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা চোখে পড়লোনা। ভাবলাম বাংলাদেশে হলে কি অবস্থাই না হতো!


...................... নেপালের বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির ‘হেড অব চ্যান্সেরির সাথে ভক্তপুরে এক রাত

একসময় সপ্তাহ ফুরিয়ে এল। বিদেয় নেওয়ার সময় হলো হিমালয়কন্যার কাছ থেকে। ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের ভেতরে ঢুকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম নেপালের বন্ধুরা বাইরে থেকে বিষন্ন বদনে হাত নাড়ছে। একটু পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যখন রানওয়ে থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে সটান উড়াল দিল, হিমালয়কন্যাকে শেষ বিদায় জানাতে হাত উঠাতে গিয়েও নামিয়ে ফেললাম। আরে! কিসের বিদায়! আবার যেহেতু ফিরে আসব তখন বিদায় কিসের!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.