নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার যত কথা

আমি যে আমার মতো থাকতে পারি না ।

সাবিউল হক

আমি আমার কথাগুলো মনের মাধুরী মিশিয়ে বলতে ঢাই ।

সাবিউল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি কবিতা

০৮ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:২৭

প্রেম

সাবিউল হক



আমি যখন বুয়েটের সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র তখন প্রথম প্রেমে পড়ি।

নীরা আমার প্রথম প্রেম।

সে ঢাকা ইউনিভার্সিটির থার্ড ইয়ার অনার্সের ছাত্রী।

এতকাল পড়ার পেছনে ছিলাম, কোনো মেয়ে আমার চোখে পড়ে নি।

নীরা ছিমছাম, ফর্সা, ঝকমকে।

পানপাতার মতো এ্যাট্রাকটিভ মুখ। সিনেমার নায়িকাদের মতো ফিগার। ঝলমলে।

আমি তাকে প্রপোজ করলাম।

নীরা একগুচ্ছ গোলাপ হাতে নিয়ে মিষ্টি করে হাসলো।

আমি পড়াশুনা পাটে তুলে উচ্ছল হয়ে নীরার পিছে পিছে ছুটলাম।

তার সঙ্গে পার্কে আড্ডা। নামিÑদামি হোটেলে ডিনার, লাঞ্চ।

আমার এস.এস.সিতে প্লেস ছিল, এইচ. এস. সিতেও।

ক্লাসেও ছিলাম ফার্ষ্ট।

থার্ড সেমিষ্টারে অধঃপতন হল। হয়ে গেলাম সেকেন্ড।

তবুও গ্রাহ্য করলাম না।

নীরাই তখন আমার সবকিছু।

ও একদিন বলল, ‘ইঞ্জিনিয়ারদের প্রেম মানায় না। ওরা কাটখোট্টা।’

সরস হবার জন্য লাজুক আমি বন্ধুদের হাজারো তীর্যক মন্তব্য উপেক্ষা করে এই বয়সে

নাচ শিখলাম। গান, আবৃতি।

বন্ধুদের বললাম, ‘শেখার কোনো বয়স নেই।’

আর এক সেমিষ্টার পার হল। এবার থার্ড।

হুঁশ ফিরল না। হুঁশ ফিরল কিছুদিন পর।

ও যখন বলল, ‘শাহেদ! তুমি আসলে আমার প্রেমে পড় নি। পড়েছ আমার শরীরের প্রেমে।

সৌন্দর্যের টানে তুমি ছুটে এসেছ। আমি অসুস্থ হলে বা বয়স হলে তখন আমাকে ছেড়ে তুমি চলে যাবে। তোমাকে আমার চাই না। মাষ্টার্সের নিহাল আমাকে প্রপোজ করেছে। ও ফার্ষ্ট ক্লাস পাবে। ভার্সিটির টিচার হবে। আমি ওকেই বিয়ে করব। আপাতত প্রেম।’

নীরা আমার সব আবেদন উপেক্ষা করে চলে গেল।

নিহাল ওকে গ্রহণ করে নি।

ও আমার মতো লাজুক না। আর ও প্রেমেও পড়ে নি। করেছে প্রেমের অভিনয়। আর যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। কিছুদিন ভোগ করে ছেড়ে দিয়েছে।

নীরা প্রত্যাক্ষাত হয়ে পরে বিয়ে করেছে অন্য এক ছেলেকে।

আমি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছি।

ওর নাম আমার বুকের ভেতরে স্মৃতির ফুল হয়ে ফুটে আছে।

তারপর প্রেমে পড়লাম রুবিনার। আমি ছোট্ট করে ‘রুবি’ বলে ডাকতাম।

ও বাংলায় অনার্সের ছাত্রী।

শ্যামলা হাসিখুশি মিষ্টিমুখ।

হবু ইঞ্জিনিয়ারের মুখে গান শুনে, নাচ দেখে মুগ্ধ।

প্রায়ই ওকে আবৃতি করে শোনাতে হত জীবনানন্দ।

‘তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও , রয়ে যাব আমি এই বাংলার পারে

দেখিব কাঠাল পাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে।’

দুই বছর পর কী হল!

ও একদিন বলল, ‘শাহেদ! তুমি আমার শ্যামলা মুখ দেখেও প্রেমে পড়ার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছি। প্রেম-ট্রেম কিছু না। আসল টার্গেট আমার বাবার টাকা। আমি যে কোটিপতি ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র কন্যা এটা জেনেই তুমি প্রেমে এগিয়েছ। আমি ধরে ফেলেছি তোমার প্রেমের আসল রহস্য। গতকাল সাব্বির আমার বোধদয় ঘটিয়েছে। আমারও আগে থেকেই সন্দেহ হত, দেশে কি সুন্দরী মেয়ের আকাল পড়ল! ইঞ্জিনিয়াররা বাংলা সাহিত্যে অনার্সের শ্যামলা মেয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে? ’

আমি শপথ করলাম।

বললাম, ‘বিশ্বাস কর রুবি। তুমি যে কোটিপতি বাবার কন্যা এটা আমি জানতামই না। আজই প্রথম জানলাম , তাও তোমার মুখে।’

ও শুনল না। চলে গেল সাব্বিরের সঙ্গে। আমাকে শূন্য করে দিয়ে।

কিছুদিন খুব মন খারাপ গেল। ভাবলাম আর প্রেম করব না।

তারপর আবার প্রেমে পড়লাম ‘হাসনা’র।

ওর ভালো নাম ‘হাসনা হেনা’।

বুয়েটে পড়ে। সেকেন্ড ইয়ার। কৃষকের কন্যা।

হাসনা বলল, ‘আমি চাই আমার স্বামী হবে শুধু ইঞ্জিনিয়ারই না, ডক্টরেট ডিগ্রীপ্রাপ্ত একজন সমুজ্জ্বল মানুষ।’

আমি বললাম, ‘তাই হবে হাসনা। আমি ডক্টরেট করব।’

পড়াশুনায় আবার মনোযোগ দিলাম। এবার আবার সেমিষ্টার ফার্ষ্ট।

স্যাররা খুব খুশি।

প্রেম আর পড়াশুনা একসঙ্গে এগিয়ে চলছে পাশাপাশি।

বলদা গার্ডেনে ছুটির দিন দুপুরে ওর কোলে মাথা রেখে গান গাই, ‘আমারো পরাণো যাহা চাই, তুমি তাই । তুমি তাই গো।’

লাষ্ট ইয়ারে এসে এই প্রেমও ফেঁসে গেল।

হাসনা এক ডাক্তারের প্রেমে পড়ে গেল।

আমার প্রেমকে জলাঞ্জলী দিয়ে, ‘আমি বারবার প্রেমিকা বদল করি’ বলে গালাগাল দিয়ে ও সাধারণ একজন এম.বি.বি.এস ডাক্তারের ঘরণী হয়ে চলে গেল।

আমি ওকে হারিয়ে বাচ্চা ছেলের মতো কাঁদলাম।

চোখ মুছে প্রতিজ্ঞা করলাম, ‘আর প্রেম নয়, এবার পড়াশুনা। ক্যারিয়ার তৈরী।’

জীবন থেকে ঝরে গেল আরও কয়েকটি বছর।

জার্মানী থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী করে এলাম।

মাল্টিন্যাশনাল কোস্পানীতে অনেক টাকা বেতনে চাকুরীও পেয়ে গেলাম।

সিদ্ধান্ত নিলাম ,‘এবার বিয়ের আগে প্রেম নয়। প্রেম করব, তবে বিয়ের পরে।’

বিয়ে করলাম মা-বাবার পছন্দে।

‘অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়।’

বাসররাতে কন্যা দেখে আমি মুগ্ধ।

মুখের নেকাব সরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,‘কি? পাত্র পছন্দ হয়েছে?’

ও বলল, ‘বাবা-মা পছন্দ করে দিয়েছেন। পছন্দ করতেই হবে।’

‘কেন তোমার পছন্দ নয়?’

‘ফ্রি কথা বলছি,প্লিজ মাইন্ড করো না। আমি আসলে পছন্দ করতাম সংস্কৃতিমনা লোকজন। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার এসব কাঠখোট্টা লোক না।’

‘কীরকম?’

‘এই গান জানে।’

‘আমি গান গাইতে জানি তো।’

‘বেসুরো গলায় গান গাইতে পারার কথা বলছি না। গাইতে জানার কথা বলছি।’

‘আমি গান গাইতে শিখেছি। গাইতেও পারি। বন্ধুরা শুনে মুগ্ধও হয়। ফাংশানে আমাকে কোনোদিনও বাদ দেয় না।’

নাচতে পারো? আবৃতি?’

‘পারি।’

‘লিখতে পারো? ছড়া-কবিতা-গান?’

এবার আমি কুপোকাত।

লেখালেখি? ইটস্ টোটালি গ্রিক টু মি।

এবার ও আসল বোমাটা ফাটালো। বলল, ‘জানো আমার ক্লাসমেট কবির খুব সুন্দর কবিতা লিখতে পারতো। আমাকে নিয়ে ও লিখেছে অনেক প্রেমের কবিতা। সেগুলো কত সুন্দর! যেন‘দিঘীর শান্তজলে স্থির পদ্মপাতা।’

‘তাহলে কবিরকে বিয়ে করলে না কেন?’

‘কী করব বলো? বাবা-মা ইঞ্জিনিয়ার পাত্র দেখে বেহুঁশ। আমার মতামতের কোনো মূল্যই দিল না।’

মন খারাপ হয়ে গেল। বাসররাত হয়ে গেল কালরাত্রি।

কতসব প্ল্যান ছিল। বাইরে যাব মধুচন্দ্রিমা করতে। সাগরের নিচের হোটেলে খাব ডিনার। নির্জন দ্বীপে পূর্ণিমার রাত কাটাব মুগ্ধ দু’জন।

সব মুগ্ধতা চলে গেল।

অভিমানে কাল্ত আমি লাইট নিভিয়ে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লাম।

হায়রে জীবন!

প্রেম আমার জীবনে আগেও আসে নি। জানি পরেও আর আসবে না। কোনোদিন না।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:১২

আইন যতো আইন বলেছেন: তোমার হৃদয়ে আমি গরু হয়ে ঘাস খাই
ল্যাম্পোস্টকে জড়িয়ে বলি-ডারলিং !!!!

০৯ ই মে, ২০১৪ ভোর ৫:৩২

সাবিউল হক বলেছেন: আপনার লাইনদুটো কিন্তু উচ্চাংগের আধুনিক কবিতা তবে আমি অত ট্যালেন্ট নই । মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । বুঝতে পারছি আপনি খুব প্রাণখোলা মানুষ । সেই সংগে সাহসীও। তিতাকে তিতা বলতে ভয় পান না । স্বাগতম ।

২| ০৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:১৫

আইন যতো আইন বলেছেন: কবি কবি ভাব কিন্তু ছন্দের অভাব?? কিছুই হয়নি---ছন্দ পড়তে হবে আগে ভাই---

০৯ ই মে, ২০১৪ ভোর ৫:২৪

সাবিউল হক বলেছেন: কিছু না হোক --আপনি পড়ে মন্তব্য জানিয়েছেন এর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । হয়তো কারো কারো ভালো লাগতেও পারে । তবে ভাইয়া আমি কিন্তু ছন্দ পুরোপুরি জানি। এটি মুক্ত ছন্দের কবিতা । আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।

৩| ০৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৯

আরজু পনি বলেছেন:
এটা আত্ন কাহিনী হলো তো 8-|

এই বেলা লেখকও হয়ে যাবেন :D

০৯ ই মে, ২০১৪ ভোর ৫:৩৯

সাবিউল হক বলেছেন: আরজু নাসরিন পনি আপনার সহৃদয় মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । ভুলত্রুটিগুলো নিয়ে মন্তব্য করলে আরো খুশি হব । আপু আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।স্বাগতম ।

৪| ০৯ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫০

আইন যতো আইন বলেছেন: আমরা যখন কবিতা লিখতাম সেই ৭০ এর দশকে-আমার প্রথম কবিতা ইত্তেফাকসহ জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হতো--দাদাভাই আমার ছড়া প্রথম ছাপেন--তখন অক্ষর বৃত্ত, মাত্রা বৃত্ত, স্বর বৃত্ত ইত্যাদি ছন্দই ছিল প্রতিষ্ঠিত এবং প্রচলিত। কিন্তু মুক্ত ছন্দের নামে পরে আস্তে আস্তে যা এসেছে---তাতেও কিন্তু ছন্দ থাকবেই।

ছন্দ মানে হলো-- উচ্চারণ ও কবিতা পাঠের সময় একটা রিদম ও দ্যোতনা, যা মনকে উদ্বেলিত করে। তাই যারা ভাবে--পত্রিকার কলামের মত কিছু লাইন সাজিয়ে মনে করে এটা মুক্ত ছন্দ তারা কোনোদিনই ভাল কবি হবে।

আবার যারা শুধু অন্তমিলকেই ছন্দ মনে করে--আর মধুসুদনের ভাষায় ''শব্দে শব্দে বিয়ে দিলেই কবিতা'' হয়না- তারা বোকামী করে।

তোমার শিক্ষার জন্য সারমর্ম বললাম।

০৯ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:৩৫

সাবিউল হক বলেছেন: আপনার আন্তরিক সমালোচনার জন্য ধন্যবাদ । আমি আরো সমলোচনা চাই । তবে এই বোকার কবিতা প্রথম শ্রেণির অধূনালুপ্ত মাসিক -নতুন ঢাকা ডাইজেস্ট - সহ বিভিন্ন প্রথম শ্রেণির পত্রিকাতে একসময় প্রকাশিত হয়েছে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে - আমি যে পাঁচটি মাধ্যমে লিখি -ছড়া, কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ ও উপন্যাস-কোনোটিতে সম্পাদকেরা কোনোদন হাত দেন নি। তবুও আপনার মত সিনিয়র পারসনের সমালোচনা ওয়েলকাম। আপনি আমার মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো পজিটিভ ইমেজ দেখেই এত কষ্ট করেছেন। তাই আবারো আন্তরিক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.