নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ব জোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র, নানা ভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবা রাত্র

সাদাত তানজির

Legal Practitioner

সাদাত তানজির › বিস্তারিত পোস্টঃ

কি পাওয়ার কথা ছিল, আর কি পেলাম!

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:২০

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে, ৩০ লক্ষ শহিদের আত্মত্যাগ ও প্রায় ৪ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই দেশ স্বাধীন বাংলাদেশ। কি পাওয়ার কথা ছিল, আর কি পেলাম! কি ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা!

বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ সংবিধানে কি কি মৌলিক অধিকার দিয়েছে? আর আমরা কি পাচ্ছি। কোন অধিকারটি নিশ্চিত করতে পারল রাষ্ট্র!

মৌলিক অধিকার হচ্ছে রাষ্ট্র প্রদত্ত সেসব সুযোগ-সুবিধা যা নাগরিক জীবনের ও ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের অপরিহার্য্য শর্তাবলী, যা সার্বভৌম সংবিধানে সন্নিবেশিত।

বাংলাদেশ সংবিধানে প্রদত্ত কতিপয় মৌলিক অধিকার সমুহঃ


দেশের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার সমূহ বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৬নং অনুচ্ছেদ থেকে ৪৭নং অনুচ্ছেদ পর্যন্ত লিপিবদ্ধ আছে। সেগুলো হল-

১.আইনের দৃষ্টিতে সমতা:
সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।

২.ধর্ম প্রভৃতি কারনে বৈষম্য:
সংবিধানের ২৮(১)নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেবলমাত্র ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী,নারী পুরুষ বা জন্মস্থানের কারনে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।

৩.নারী পুরুষের সমঅধিকার:
সংবিধানের ২৮(২)নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বসত্মরে নারী পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে।

৪.সরকারী নিয়োগ লাভে সমতা:
২৯(১)নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রে কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে।

২৯(২)নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠি, নারী পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারনে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হবে না, কিংবা সেক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না।

৫.আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার:
৩১নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার। বিশেষত: আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে কোন ব্যাক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে

৬.জীবন ও ব্যাক্তি স্বাধীনতা লাভের অধিকার:
৩২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যাক্তি স্বাধীনতা হতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না

৭.গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ:
৩৩(১)নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তিকে গ্রেফতারের কারন জ্ঞাপন না করে প্রহরায় আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যাক্তিকে তার মনোনিত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না।
গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে এবং আদালতের আদেশ ব্যতীত তাকে উক্ত সময়ের অধিককাল আটক রাখা যাবে না।

৮.বিচার ও দন্ড সম্পর্কে :
সংবিধানের ৩৫নং অনুচ্ছেদে-
ক)ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যাক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্যে বিচার লাভের অধিকারী।

খ) কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না।

গ) কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দে’য়া, নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্চনাকর দন্ড দেওয়া যাবে না।

৯.চলাফেরার স্বাধীনতা:
৩৬নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সবত্র অবাধ চলাফেরা, দেশের যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতি স্থাপন এবং বাংলাদেশে ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।

১০.সমাবেশের অধিকার:
৩৭নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।

১১.সংগঠনের স্বাধীনতা:
৩৮নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। তবে শর্ত থকে যে নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে এবং দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে কোন সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার থাকবে না।

১২.চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা: ৩৯নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী --
ক) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়।
খ) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্র সমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে এবং আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তি সঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে
(১) প্রত্যেক নাগরিকের বাকস্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে।
(২) সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে।

১৩.ধর্মীয় স্বাধীনতা:
৪১নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার সাপেক্ষে
ক)প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার থাকবে।
খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ব্যবস্থাপনার অধিকার থাকবে।

উপোরিউক্ত অধিকারগুলির মধ্যে কোন অধিকারটি রাষ্ট্র আমাদের দিতে পারল?
উল্টো একের পর এক ন্যক্যারজনক রেকর্ড তৈরি করে চলেছে।

সাম্প্রতিককালে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরের শিরনাম ছিল "শান্তিপূর্ণ’ রাষ্ট্রে ৩ বছরে ১২ হাজার ২৭০ হত্যাকাণ্ড"

যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি নাগরিকের জানমাল, অধিকারসহ সব কিছুর নিরাপত্তা দেয়াই সরকারের কাজ, আর প্রত্যেক নাগরিক রাষ্ট্রের কাছে তাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বলয়কে ভেদ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগে, দায়িত্বশীল লোকদের দায়িত্বহীন কথাবার্তা ও কাজকর্মকে পুঁঁজি করে একশ্রেণীর সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকাল থেকে শুরু করে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্য হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশে গত তিন বছরে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ হাজার ২৭৭টিতে। এ সময়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নিজেদের কর্মী,বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, এমনকি বিদেশী নাগরিক পর্যন্ত এ থেকে রেহাই পায়নি।

বলতে গেলে কোন হত্যাকাণ্ডের; এমনকি অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়নি।
পুলিশ সদর দফতর থেকে পাওয়া সূত্র অনুযায়ী দেখা যায়, গত তিন বছরে মামলা রেকর্ড হয়েছে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫টি, নারী নির্যাতন হয়েছে ৬১ হাজার ২১৬টি, ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৮৮টি, অপহরণ মামলা ২৪ হাজার আটটি। দৈনিক গড়ে মামলা হয়েছে প্রায় ৫০০টি করে। মোট মামলাগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২২৭টি। ২০১৫ সালে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮০টি এবং ২০১৪ সালে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯২৯টি। গত তিন বছরে দায়ের হওয়া ১২ হাজার ২৫৭টি হত্যা মামলার মধ্যে ২০১৬ সালে ৩৭২৮টি, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ৩৫টি ও ২০১৪ সালে ৪৫১৪টি মামলা রেকর্ড করা হয়। ৩ বছরে সারা দেশে ২৪ হাজার আটটি অপহরণ মামলার মধ্যে ২০১৬ সালে ৬৮২টি, ২০১৫ সালে ৯২০টি ও ২০১৪ সালে ৮০৬টি রেকর্ড হয়।


দেশের সুশীলসমাজের অনেকের মতে, গত তিন বছরে ১২ হাজার ২৭৭টি হত্যাকাণ্ড অতীতের সর্ব রেকর্ডকে ছাড়িয়েছে বলে মতামত ব্যক্ত করেন। এরপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা ও মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসবকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং আইনশৃঙ্খলা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো আছে বলে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যান।

এইভাবে দায় এড়ানোর বক্তব্যে এদেশের আপামর জনসাধারণ প্রতিবাদ করতে না পারলেও সন্তুষ্ট হতে পারেনাই একথা নির্দিধায় বলা যায়। ইতিহাস যদি সত্য হয় তবে নিশ্চিত করে বলা যে, কর্তা ব্যক্তিদের একদিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৩০

সুমন কর বলেছেন: শুভ ব্লগিং..... !:#P

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৪:৪৬

সাদাত তানজির বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.