নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অধিকার বঞ্চিত পৃথিবীর উত্তরাধীকারি

প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন

অপরিপক্ক কৃষক

প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমস্যা কোথায়, পেশায় নাকি মানুষের মধ্যে!

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৭

ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সানাফি নাকি বাংলাদেশ হতে তাদের ব্যাবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশে ডাক্তারদের ঘুষ দিয়ে ঔষুধ বিক্রির সিস্টেম নাকি তাদের বিপনন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এজন্য তারা বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছে। এমনই একটা নিউজ কয়েকদিন যাবৎ ফেসবুকে ঘোরাফেরা করছে। যদিও নিউজটা কেবল ফেসবুকের কয়েকটা পেইজ, গ্রুপ এবং ব্যাক্তিগত প্রফাইল ব্যাতিত কোন বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ মাধ্যম হতে পাইনি।
যাইহোক এর সত্যতা সম্পর্কে আমি কথা বলতে চাচ্ছিনা। তবে অনেককেই দেখছি এই নিউজের উপর ভিত্তি করে ডাক্তারদের সমালোচনায় পঞ্চমুখ। আমাদের দেশে অবস্য এটা নতুন কিছু নয়। যখনই কারো বিরুদ্ধে কোন নিউজ আসে তখনই সেটাকে বেইজ করে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের নিয়ে এ্যাভারেজে সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। অথচ আমাদের এ দেশে দু-একজন ব্যাতিত সকল পেশায়ই কমবেশি মানুষ তাদের সামর্থ অনুযাই দূর্নীতি করে কিংবা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে।
স্কুল শিক্ষক ক্লাসের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে কোচিংএর প্রতি শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চলে যাচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে। ডাক্তার কমিশন খেয়ে ঔষধ লেখে, নিদ্রিষ্ট ল্যাবে টেষ্ট করানোর জন্য প্রেসার দেয়, অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান কিংবা আইসিইউ রাখা অথবা যেকোন উপায়ে রোগিদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করছে। পুলিশ তথা আইন সৃঙ্খলা বাহিনী ঘুষ খেয়ে অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করে আছে, অনেক কিছু জেনেও না জানার ভান করে আছে। অনেক ক্ষেত্রে পাবলিককে ভয়ভীতি দেখিয়ে কিংবা হয়রানি করে অর্থ আদায় করছে। রাজনীতিবিদ/ জনপ্রতিনিধি পাবলিকের টাকা মেরে দিচ্ছে। প্রকৌশলী ঘুষ নিয়ে রডের পরিবর্তে বাঁশ দিচ্ছে, ঠিকাদার নিন্মমানের কাজ করলেও তার বিল দিয়ে দিচ্ছে। ঠিকাদার অতিরিক্ত লাভের জন্য ঘুষ দিয়ে নিন্মমানের কাজ করছে। আইনজীবী তার মক্কেলকে ঘুরায় প্যাচায় টাকা গচ্ছা দেওয়াচ্ছে। সাংবাদিক টাকার বিনিময়ে সত্য গোপন করছে, ঘুরায় প্যাচায় সংবাদ পরিবেশন করছে। ব্যাংকার ঘুষ খেয়ে লোন পাশ করছে। ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃতিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য পণ্যে ভেজাল দিচ্ছে। বিএসটিআই সব জেনেও ঘুষ খেয়ে চুপ মেরে আছে। কৃষক জেনেশুনে ফসলে ক্ষতিকর ক্যামিকেল দিচ্ছে।
একবার স্টেডিয়াম থেকে খেলা দেখে বেড়িয়েছি, প্রচুর মানুষ, খুলনাতে তখন বেবিট্যাক্সি চলত। খেয়াল করলাম, মানুষের চাপ দেখে বেবিট্যাক্সি ড্রাইভাররা ভাড়া কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। দোকানদার সুযোগ পেলেই পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য রাখছে আবার ঈদের সময় তো কোন কথাই নেই পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবেই। রিক্সা চালক রিক্সা সংকট হলেই কিংবা একটু বৃষ্টি হলেই তার ভাড়া কয়েকগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে। কুলি, সেও সুযোগ বুঝে জিম্মি করে টাকা আদায় করতে ছাড়ছে না। উদাহরন চান? সদরঘাটে একটু খোজ নিয়েন, পেয়ে যাবেন। এভাবে যে যেই কাজেই আছে সেখান থেকেই যতটুকু সুযোগ পাচ্ছে ততটুকু দূর্নীতি করছে। যে যতটুকু সুযোগ পাচ্ছে সে ততটুকু অনিয়ম করছে। সেবা দেওয়ার মানসিকতা কারো মধ্যেই নাই। সবাই আছে অর্থের ধান্দায়।
জাতিগত ভাবেই আমরা দূর্নীতিবাজ, অসৎ, সুবিধাবাদী, লোভী । সামাজিক এবং পারিবারিক ভাবে ছোট থেকেই আমরা এমনটা হচ্ছি। যতদিন না মানুষ পরিবর্তন হচ্ছে ততদিন এদেশে একজন মাহাতির মোহাম্মদ কে বাইশ বছর নয় দুইশত বাইশ বছরও যদি ক্ষমতায় রাখা হয় তবুও এদেশ মালেশিয়া হবেনা। অবস্য এদেশে মাহাথির মোহাম্মদেরা টিকে থাকতে পারেনা, কারন তাদের আশে পাশে থাকে মীর্জাফর মোস্তাকেরা। লোভ দেখিয়ে এদেশের মানুষকে খুব সহজেই মীর্জাফর কিংবা মোস্তাক বানিয়ে দেয়া যায়। কারন হাতে গোনা কিছু মানুষ ব্যাতিত সমগ্র জাতীই লোভী, দূর্নীতিবাজ, অসৎ, সুবিধাবাদী। আমাদের কোন নৈতিক অবস্থান নেই। প্রবাসী ভাইদের জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন, বিশ্বের অনেক দেশেই বাঙ্গালীদের নেতিবাচক ভাবে দেখে।
যেখানে মানুষই খারাপ সেখানে নিদ্রিষ্ট পেশার সমালোচনা করে কি লাভ? তারচেয়ে আসেন "আমার" সমালোচনা করি। নিজেকে পরিবর্তন করি। নিজের সমালোচনা নিজেকে পরিবর্তন করতে সবচেয়ে বেশী কার্যকর। নিজে যদি নিজের নেতিবাচক দিকগুলো খুজে বের করতে পারি, তবে সেগুলো শোধরানো কোন ব্যাপার না। এইযে আমাকে দেখছেন, আমিও নিজেকে সাধু বলতে পারছি না। কি জানি হয়তো আমি সুযোগ পাইনি বলেই বড় ধরনের কোন দূর্নীতির দায়ে আজও নিউজের শিরোনাম হইনি। যেদিন সুযোগ পাওয়ার পরও আমি আমার সততার জায়গায় অটল থাকতে পারব সেদিন নিজেকে একটু একটু সাধু ভাবতে পারব, এর আগে নয়। তবে বর্তমানে আমিও প্রায় যায়গায় সুযোগ পেলেই অনিয়ম করি। যেমন ধরেন রাস্তা পারাপারে খুব বেশী চিপায় না পরলে আমি নিজেও ফুটওভার ব্রিজ ব্যাবহার করিনা। এমন আরো কত অনিয়ম আমি নিজেও প্রতিনিয়ত করছি। কিন্তু আমার মনে হয়না বাঙ্গালী নিজের সমালোচনা করতে পারবে, যেটা জাপানিরা করে। জানি আমার এই লেখায় কিছুই হবে না। দু-একজন হয়তো বলবে, সুন্দর লেখা কিংবা সত্যি বলেছেন। কিন্তু সেটা যাস্ট ওখানেই শেষ।
বঙ্গবন্ধু একটা কথা বলেছিলেন, চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনী। কথাটা আসলেই বাস্তব। তিনি আরো বলেছিলেন,
"এ সমাজ ঘুনে ধরে গেছে
এ সমাজে আমি চরম আঘাত হানবো
যেমনটা হেনেছিলাম পাকিস্তানিদের উপর"
সত্যিই বাঙ্গালীকে লাইনে আনতে হলে ঘাড় ধরে জোর পূর্বক লাইনে আনতে হবে। যারা কচুক্ষেত দিয়ে ক্যান্টনমেন্টে ঢুকে জাহাঙ্গীর গেট অথবা বনানী রুটে চলাচল করেন তারা নিশ্চই লক্ষ করেন সেখানে পাবলিক বাস গুলো কতটা ভদ্র হয়ে যায়। কখনো যদি সময় পান আপনিও কচুক্ষেত দিয়ে ক্যান্টনমেন্টে ঢুকে জাহাঙ্গীর গেট অথবা বননী পর্যন্ত একটা চক্কর দিয়েন। ঢাকার রাস্তায় উল্টা পাল্টা গাড়ি চালানো পাবলিক বাসের ড্রাইভাররা কতটা ভদ্র হয়ে যায় তা দেখতে পাবেন। সেখানে রাস্তার মোড় গুলোতে ট্রাফিক কন্ট্রোলের জন্য কাউকে হাত দেখিয়ে সিগনাল দিতে হয় না। ইনফ্যাক্ট সেখানে কেউ হাত দিয়ে সিগনাল দেয়ও না। ট্রাফিকের লাল হলুদ সবুজ বাতি দেখেই সবাই গাড়ি চালায়। নিদ্রিষ্ট বাস টপিজ ব্যাতিত কেউ গাড়ি দাড় করায় না। কারন তারা জানে এটা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, এখানে একটু উল্টা পাল্টা বা অনিয়ম করলেই কঠোর শাস্তি। এজন্য সেখানে গেলে সবাই সোজা হয়ে যায়। সেখানে গেলে ক্ষনিকের আপনি হয়তো ভুলেই যাবেন যে আপনি বাংলাদেশে এবং ঢাকা শহরের মধ্যেই আছেন!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশের মানুষ আর মানুষ নেই। প্রত্যেকে বদমাশ যার যার অবস্থা থেকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.