নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বংশবিস্তার এবং আহারের সংস্থান পৃথিবীর সব প্রাণীই করতে পারে, এবং তা করেও। এটা ঠিক যে অন্য সব প্রাণীর মতো মানুষকেও বংশবিস্তার এবং আহারের সংস্থান করতে হয়। কিন্তু মানুষও যদি কেবল এ দু'টো কাজের পেছেনেই জীবন পার করে দেয় তবে সে অন্যসব প্রাণীর মতো প্রকৃতির স্বাভাবিক গতিপথের একটি উপাদান ব্যতিত আর কিছুই না।
কৃষিকাজে নদীর ভূমিকা অপরিসীম, কিন্তু নদীর শতভাগ জলই কি ফসলের খেতে যেতে পারে? না, পারে না। সিংহভাগ জলই স্রোত হয়ে ভেসে যায়, এর খুব সামান্য জলই ফসলের খেতে ব্যাবহৃত হতে পারে। খেতের নাগাল না পেলেও নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে সিংহভাগ অব্যাবহৃত জলেরও গুরুত্ব রয়েছে।
নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে অব্যাবহৃত জলের যেমন গুরুত্ব, পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় লক্ষ-কোটি প্রজাতির প্রাণীর গুরুত্বটাও তেমন। তাঁরা পৃথিবীতে আসে, এবং মৃত্যুর মাধ্যমে পৃথিবী হতে চিরবিদায় নেয়। কিন্তু মানুষ হচ্ছে ফসলের ক্ষেতে পৌঁছাতে পারা সেই সৌভাগ্যবান জল। তবে সকল মানুষ সেই সৌভাগ্যকে কাজে লাগাতে পারে না। অনেকেই বাষ্প হয়ে উড়ে যাওয়া জলের মতো, যে ফসলের ক্ষেতে গিয়েও ফসল বৃদ্ধির উপাদান হতে পারলো না৷
এর কারণ হচ্ছে অধিকাংশ মানুষই অন্য প্রাণী থেকে মানুষের যে স্বতন্ত্র এবং বিশেষ গুন রয়েছে তার যথাযথ ব্যাবহার করে না। ফলে তার সাথে অন্য প্রাণীর তেমন কোন পার্থক্য থাকে না। মানুষের সেই বিশেষ গুন হচ্ছে সে জ্ঞান অর্জন এবং বিতরণ করতে পারে। যে জ্ঞানের মাধ্যমেই সভ্যতা বিকাশিত হয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে।
যুগে যুগে যারাই মানুষের এই বিশেষ গুণ কাজে লাগিয়েছে, তাঁরাই সভ্যতা বিকাশের কাঠামো তৈরি করে দিয়েছে। তাদের চিস্তা এবং জ্ঞাণের ফসলই আজকের এই সভ্যতা। তাদের জীবন হচ্ছে, জন্ম এবং অমরত্ব লাভ।
এদের মধ্যে একজন অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান। যিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে হবিগঞ্জ মহুকুমার প্রশাসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রতিরক্ষা উপ-সচিব হিসেবে সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সাথে কাজ করেন। সাড়া দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে।
পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে প্রশাসক হিসেবে তিনি হবিগঞ্জ পুলিশের অস্ত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুজিবনগর সরকার তখনো প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় অনেক সরকারি কর্মচারীই লিখিত অনুমতি ছাড়া অস্ত্র যোগান দিতে অস্বীকৃতি জানান। সেসময় আকবর আলী খান নিজ হাতে লিখিত আদেশ তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, খাদ্য ও অর্থ যোগান দেবার আদেশ প্রদান করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল তৈরি করতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌঁছে দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য যোগান দেবার জন্য গুদামঘর খুলে দেন এবং পরবর্তীতে আগরতলায় চলে যান। এ জন্য যুদ্ধ চলাকালীন তার অনুপস্থিতিতে পাকিস্তান সরকার বিচারের মাধ্যমে তাকে ১৪ বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করে সর্বশেষ ২০০১ সালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ কর্মচারী পদে অধিষ্ঠিত হন। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ, পরিকল্পনা, টেলিযোগাযোগ, ও বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসবে শপথ পাঠ করলেও নিরপেক্ষ নির্বাচনে শংকা দেখা দিলে তিনি উক্ত পদ হতে পদত্যাগ করেন।
কিন্তু যে কারণে আজ তাঁর নাম উচ্চারণ করা তা হল তাঁর জ্ঞান সাধনা। এতোসব কর্মকাণ্ডের মাঝেও তিনি সারাটা জীবন নিরলসভাবে জ্ঞানচর্চা করে গেছেন। লিখেছেন অর্থনীতি, সমাজ, এবং ইতিহাস নিয়ে। খুব যে বেশি লিখেছেন তা'ও নয়, তবে যতটুকু লিখেছেন নির্মোহ ভাবে লেখার চেষ্টা করেছেন।
তার সমসাময়িক অনেক আমলা রয়েছেন, কিন্তু তাঁরা পারেনি ড. আকবর আলি খানের মতো অমর হতে। তিনি তাঁর গবেষণা এবং চিন্তার মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকবেন আগামী প্রজন্মের মাঝে।
গতকাল (৮ সেপ্টেম্বর ২০২২) তিনি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরলোক গমন করেছেন। দোয়া করি মহান সৃষ্টিকর্তা ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে তাকে উত্তম প্রতিদান দিক।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:২৩
কামাল৮০ বলেছেন: একজন ভালো মানুষ ছিলেন।তার মৃত্যুতে শোক জানাই।