নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনায় মুক্তিযোদ্ধা

সায়েমুজজ্জামান

কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। পরে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ২৮ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেক্টর (সচিব) এর একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপিতে লিয়েনে চাকরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্প সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷বর্তমানে সরকারের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

সায়েমুজজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। সরকার প্রতিটি মরা গোখরা সাপের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। বলা হয়, মরা সাপ জমা দিতে হবে। বিনিময়ে টাকা দেয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণার পর সরকারি দপ্তরে প্রচুর মরা গোখরা সাপ জমা হতে থাকে। 

তবে যত দিন যায়, সরকারি দপ্তরে মরা গোখরা সাপ জমা বাড়তে থাকে। বৃটিশ রাজের কর্মকর্তাদের কপালে চিন্তার ভাজ। এত সাপ মারা যাওয়ার পর তো সাপ নির্বংশ হওয়ার কথা। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত হয়। আসল ঘটনা কী? সরেজমিনে দেখা গেল-দিল্লীর ঘরে ঘরে সাপের খামার। পুরস্কারের আশায় রীতিমত ঘরে ঘরে গোখরা সাপের উৎপাদন ও পালন করা শুরু হয়েছে। ফলে বৃটিশ সরকার মরা গোখরা সাপের জন্য পুরস্কার দেয়া বন্ধ করে দেয়। এতে সমস্যা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে। মানুষ পালিত সেই সাপ আশেপাশের জঙ্গলে ছেড়ে দেয়। ফলে গোখরা সাপের উৎপাত তো কমেইনি। উল্টা বেড়ে যায়। সাপের ছোবলের ভয়ে দিল্লী ছেড়ে পালাতে থাকে মানুষ। 

এই ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে পরবর্তীতে অর্থনীতিতে কোবরা ইফেক্ট নামে একটি টার্ম চালু হয়। জার্মান অর্থনীতিবিদ হর্স্ট সিবের্ট তার লেখা দি কোবরা ইফেক্ট বইয়ের মাধ্যমে এটি জনপ্রিয় করে তোলেন। আমি দক্ষিণ কোরিয়ায় ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি নিয়ে পড়ছি। একদিন ক্লাসে প্রফেসর পারভারস ইনসেন্টিভ বা ন্যায়ভ্রষ্ট প্রণোদনার বিষয়ে পড়াচ্ছিলেন। তখনি উদাহরণ হিসেবে বৃটিশ ইন্ডিয়ার এই কোবরা ইফেক্টের কথা উল্লেখ করেন। আমার সহপাঠিরা তখন আমার দিকে তাকিয়ে মজা নিচ্ছিল। প্রফেসর সেটা লক্ষ্য করে বললেন, এটা শুধু বৃটিশ ইন্ডিয়ায় নয়। অন্যদেশেও ঘটেছে। যেখানেই সরকারি প্রণোদনা রয়েছে, সেখানেই কোবরা ইফেক্টের শতশত উদাহরণ রয়েছে। এবার তিনি র‍্যাট ম্যাসাকারের উদাহরণ দিলেন।

এবারের ঘটনা ভিয়েতনামে। ১৯০২ সালে। ভিয়েতনামে তখন ফ্রান্সের উপনিবেশ চলছে। তারা ফ্রান্সের আদলে ভিয়েতনামে প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করে। পানি প্রবাহের জন্য মাটির নিচে তৈরি করে বড় সুয়ারেজ লাইন। এসব সুয়ারেজ লাইন ইদুরের বংশ বিস্তারের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ইদুরে ছেয়ে যায় রাজধানী হ্যানয়। অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে নাগরিকরা। একসময় সরকার ঘোষণা দেয়, ইদুর মারতে হবে। প্রতিটি ইদুরের লেজ সরকারের দপ্তরে জমা দিলে পুরস্কার মিলবে। সরকারের প্রণোদনার ঘোষণায় ইদুরের লেজ জমা হতে থাকে। একসময় ইদুরের লেজ জমার পরিমাণ বেড়ে যায়। তদন্ত হয়। দেখা যায়, লোকজন ওই সুয়ারেজ লাইনেই নেট লাগিয়ে ইদুর পালছে। তাদের খাবার দিচ্ছে। ইদুর না মেরে শুধু লেজ কেটে সরকারের দপ্তরে জমা নিয়ে টাকা নিচ্ছে। সরকার যথারীতি প্রণোদনা বন্ধ ঘোষণা করে। আর লোকজন সুয়ারেজের নেট খুলে দেয়। খাবার বন্ধ করে দেয়। ফলে পুরা শহরে ইদুরের মহামারি শুরু হয়। এটাই ইতিহাসের দি গ্রেট হ্যানয় র‍্যাট ম্যাসাকার নামে পরিচিত।

এ বিষয়টি আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগে। আমি আরো পড়াশুনা করতে থাকি। দেখি আমাদের দেশেই ইদুর ইফেক্টের উদাহরণ রয়েছে। সেটেও বৃটিশ আমলে। একবার ইদুরের প্রকোপ বেড়ে যায়। শষ্য উৎপাদন ব্যহত হয়। বৃটিশরা ইদুর মারার জন্য একই ধরণের প্রণোদনা ঘোষণা করে। লোকজন প্রতি ইদুরের লেজের বিনিময়ে টাকা পেতে শুরু করে। একসময় লেজ জমার সংখ্যা বেড়ে গেলে তদন্ত হয়। দেখা যায় মানুষ ঘরে ঘরে ইদুরের খামার গড়ে তুলেছে। সরকার প্রণোদনা বন্ধ করে দেয়। আর লোকজন টাকা না পেয়ে সব ইদুর ছেড়ে দেয়। এতে ইদুরের পাল ওই বছর সব ফসল সাবাড় করে দেয়। দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।

বৃটিশ আমলে কেন, বাংলাদেশ আমলেও এ ধরণের ঘটনার প্রমাণ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার একবার ঘোষণা দিয়েছিল, যে কৃষক ইদুরের লেজ বেশি জমা দিতে পারবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। জাতীয় পর্যায়ে এক ব্যক্তি প্রতিবছর পুরস্কার বাগিয়ে নিচ্ছিলো। পরে কৃষি বিভাগের লোকজন তার বাড়িতে গিয়ে দেখেন পুরস্কারের আশায় তিনি একটি ইদুরের ফার্ম গড়ে তুলেছেন। ইদুরের ফার্মে ভালো ব্যবসা। কারণ উপযুক্ত এবং অনুকুল পরিবেশে একজোড়া প্রপ্তবয়স্ক ইদুর বছরে প্রায় ৩০০০ টি ইদুর জন্ম দিতে পারে! লেজ কাটলে ইদুর মরেনা। লেজকাটা ইদুরও বংশ বিস্তার করতে পারে! সরকারের সেই ইদুর মারা প্রকল্প মাঠে মারা গেছে। যদিও এখনো ইদুরের লেজ জমা দিয়ে পুরস্কার পাওয়ার ব্যবস্থা এখনো চালু রয়েছে।

যাই হোক অর্থিক প্রণোদনার ক্ষেত্রেই এই কোবরা ইফেক্ট হতে পারে তা নয়। যে কোন কর্মসূচিরই এই দশা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। হাজার হাজার তরুণ মার্কিন কারাগারে বন্দী হয়। তারা দাগি আসামিদের সংস্পর্শে এসে সত্যিকারের অপরাধী হওয়ার কায়দাকানুন জেনে ফেলে। এই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ একটি ন্যায়ভ্রষ্ট অর্থনৈতিক প্রণোদনার পরিবেশও সৃষ্টি করে। এটি মাদক উৎপাদনকারী ও বিপণনকারীদের দমন করতে পারেনি, বরং তারা আরও ধূর্ত ও জটিল হয়ে উঠে। মাদকের বিস্তৃতি হয়। এটার পরিণতি হয়- জাহান্নামের রাস্তা প্রশস্ত করার মতো কর্মসূচিতে।


দুই
আমি গত বছরের মে মাসের ০৮-০৯ তারিখে ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে কাউন্টারিং ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং মাস্টারক্লাস প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলাম। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল। সেখানে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কীভাবে মানিলন্ডারিং বা অর্থপাচার করা হয় তা জানতে পেরেছি। প্রশিক্ষণ শেষে বলেছিলাম, দেশ থেকে কীভাবে কোন কৌশলে টাকা ব্যবসার নামে পাচার হয় সে বিষয়ে লিখবো। চলুন আজকে শুনে আসি এই প্রণোদনায় কীভাবে কোবরা ইফেক্ট শুরু হয়েছে।

সরকার গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে ৪৩ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বা প্রণোদনা দিয়েছে। এসব পণ্য রপ্তানিতে ১ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।বিভিন্ন কারণে রপ্তানিতে প্রণোদনা দেয়া হয়। এর একটি কারণ রপ্তানি উৎসাহিত করা। পৃথিবীর সব দেশ আমদানীর চেয়ে রপ্তানি যাতে বেশি হয় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি এর আগে একটি লেখায় জানিয়েছিলাম, দক্ষিণ কোরিয়া একসময় নারীদের লম্বা চুল রাখতে উৎসাহিত করেছিলো। যাতে তা কেটে বিদেশে রপ্তানি করতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে।

আমাদের দেশে রপ্তানিতে প্রণোদনার আরেকটি কারণ হলো- রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হয়। এ কারণে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে ডলারের দাম বেড়ে যাবে। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। ফলে জিনিসপত্রের দামও বেড়ে যাবে। একারণে যারা রপ্তানি করেন তারা ডলারের কম দাম পান। এই ক্ষতি কাটাতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেয়া হয়। কোন জিনিস বিদেশে পাঠিয়ে একশ টাকা আয় করলে সরকার তাকে আরো ২০ টাকা দেন।

এর মধ্যে চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানি করলে শতকরা ১৫ টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়। এই প্রণোদনার টাকা পেতে একটি কোম্পানীর অপকৌশলের কথা জানাচ্ছি। কোম্পানীটার নাম গোপন থাক। ঘটনাটি একটি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা উদঘাটন করেছে। তাদের নামও বলছিনা। ওই কোম্পানী নিজেরাই বিদেশে আরেকটি কোম্পানী তৈরি করেছে। তারপর সেই কোম্পানীর নামে এলসি খুলেছে। এরপর বাংলাদেশ থেকে বিদেশে নিজেদের বেনামি প্রতিষ্ঠানে মালামাল রপ্তানি করেছে। মালামাল পাঠিয়েছে কীনা অাল্লাহই জানেন। এরপর রপ্তানির টাকা পরিশোধ দেখিয়েছে। কীভাবে দেখিয়েছে- সেটা বললে পাচারকারীরা এই পন্থা অবলম্বন করতে পারে। সেজন্য এটাও গোপন থাক। তবে দেশেও যে পক্ষ। বিদেশেও একই পক্ষ। ফলে দেশে বিদেশের পক্ষ টাকা/পণ্য বুঝে পেলে কেউ এনিয়ে মাথা ঘামায়না। আর এর মাধ্যমে ওই কোম্পানী রপ্তানির আর্থিক প্রণোদানার কত টাকা বাগিয়ে নিয়েছে জানেন! মাত্র এগারো’শ ৭৫ কোটি টাকা। ভাগ্যিস ধরা পড়েছে।

প্রণোদনায় এই অপকৌশল কোবরা ইফেক্টের শুরু বলা যায়৷ তবে এই প্রণোদনা বন্ধের কোন সুযোগ নেই৷

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:০৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: চমৎকার একটা আর্টিকেল পড়লাম। সাপের কিসসা জানা ছিল, বাকিগুলো এ লেখা থেকে জানলাম। ধূর্তরা যে-কোনো জায়গাতেই ফাঁক-ফোকড় ঠিকই খুঁজে বের করে নেবে।

০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:১৬

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: প্রণোদনা যেখানে সেখানেই কোবরা ইফেক্ট শুরু হয়। প্রণোদনার অর্থ পেতে কৌশল অবলম্বন করে। এ কটা না একটা উপায় বের করে ফেলে। যে উদ্দেশ্য প্রণোদনা দেয়া হচ্ছিল তা ব্যহত হয়। মানুষ যে কত ধূর্ত তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

ধন্যবাদ সুন্দর কমেন্টের জন্য।

২| ০৯ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৭

নাহল তরকারি বলেছেন: প্রথম সাপ ইদুরের কথা বুঝলেও দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ বুঝি নাই।

০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৭

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে যা বলেছি তা হলো সরকার বিদেশে পণ্য রপ্তানির জন্য প্রণোদনা দেয়। কেউ পণ্য রপ্তানি করে একশ টাকা বিদেশ থেকে আনতে পারলে সরকার তাকে আরো বিশ টাকা প্রদান করে। এই বিশ টাকা নেয়ার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা বহু কৌশল বের করে ফেলেছে।

একটা কৌশল বলে দিচ্ছি। ধরুন কারো কালো টাকা অবৈধ উপায়ে বিদেশে প্রেরণ করা হয়েছে। সেটা হুন্ডি হতে পারে। ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং হতে পারে। ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং হতে পারে ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে। এখন সেই টাকাটা বিদেশ থেকে দেশে আনতে হবে। এজন্য বিদেশে একটা কোম্পনী খোলা হলো। সেই কোম্পানিতে পণ্য রপ্তানির জন্য এলসি খোলা হলো। নাম কা ওয়াস্তে কিছু মাল পাঠালো। হুন্ডির টাকা সেই বাবদ দেশে চলে আসলো। ওই টাকা দেশে আসলেই সে একশ টাকায় বিশ টাকা পাবে। ধরুন পণ্যের দাম একশ টাকা। তার মূল্য এক হাজার টাকা দেখালো। তাহলে বেশি টাকা দেশে আসবে। এভাবে অবৈধ টাকা দেশে এনে বৈধ করে ফেললো। সাথে বিশ পার্সেন্ট প্রণোদনার টাকাও পেলো। এটাই বলতে চেয়েছি।

৩| ০৯ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৫

ধুলো মেঘ বলেছেন: রপ্তানির নগদ প্রণোদনা এমনি এমনি দেয়া হয়না। রপ্তানির সমর্থনে সমস্ত ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হয় - যেগুলোর একটা দুইটা জাল করা যায় সাময়িকভাবে, কিন্তু সবগুলো নয়। তারপরে রপ্তানি হয়ে যাবার পর যে ডলার আসে, তার রিয়েলাইজেশন ব্যাংক থেকে সার্টিফাই করতে হয়। নিজের কোম্পানি হোক, আর বাবার কোম্পানি হোক, কোন মধ্যমে দেশের ব্যাংকে ডলার ঢুকাতে পারলেই তাকে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ করা খুবই যৌক্তিক। এখানে আমি কোন প্রতারণা দেখিনা।

রপ্তানি না করেই রপ্তানির ডকুমেন্ট সাবমিট করলে সেটা ধরার জন্য বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এক্সটারনার অডিট - এই তিন স্তরের নিরাপত্তা কর্মী আছে। এদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই ধরণের চুরি চামারি লিটারেলি অসম্ভব।

০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন:
একটা কৌশল বলে দিচ্ছি। ধরুন কারো কালো টাকা অবৈধ উপায়ে বিদেশে প্রেরণ করা হয়েছে। সেটা হুন্ডি হতে পারে। ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং হতে পারে। ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং হতে পারে ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে। এখন সেই টাকাটা বিদেশ থেকে দেশে আনতে হবে। এজন্য বিদেশে একটা কোম্পনী খোলা হলো। সেই কোম্পানিতে পণ্য রপ্তানির জন্য এলসি খোলা হলো। নাম কা ওয়াস্তে কিছু মাল পাঠালো। হুন্ডির টাকা সেই বাবদ দেশে চলে আসলো। ওই টাকা দেশে আসলেই সে একশ টাকায় বিশ টাকা পাবে। ধরুন পণ্যের দাম একশ টাকা। তার মূল্য এক হাজার টাকা দেখালো। তাহলে বেশি টাকা দেশে আসবে। এভাবে অবৈধ টাকা দেশে এনে বৈধ করে ফেললো। সাথে বিশ পার্সেন্ট প্রণোদনার টাকাও পেলো। এটাই বলতে চেয়েছি।

আপনার মন্তব্যে বুঝা যায় আপনার এ লাইনে জানাশোনা রয়েছে। আপনি ঠিকই বলেছেন। তিন স্তরের নিরপত্তা চেক রয়েছে। সহজে সম্ভব না। আর যে কৌশলে তারা এই প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলো তা সাধারণ মানুষকে জানাতে চাইনা।

আমার পুরো নাম ব্লগে দেয়া আছে। গুগল সার্চ করলেই আমার পরিচয় পেযে যাবেন। দেখবেন দুর্নীতি প্রতারণা ধরাই আমার কাজ। যা লিখেছি তা অনেক কিছু। এর বেশি খোলাখুলি সব বলতে পারছিনা। অবসরের পরে হয়ত লিখবো।

ধন্যবাদ সুন্দর তথ্যভিত্তিক মন্তব্যের জন্য।

৪| ০৯ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৩

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: মানুষকে অপকর্ম থেকে দূরে রাখার কোনো যন্ত্র বা পদ্ধতিই সার্বজনীন নয়।

০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৭

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: মানুষ আইন সিস্টেম ফাঁকি দিতে কৌশল বের করে ফেলে। এদিক থেকে বাঙালিরা খুব পাকা খোলোয়ার।

৫| ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:১৬

কামাল১৮ বলেছেন: অনেক অজানা তথ্য জানা হলো।

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সুন্দর মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা।

৬| ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৪

শ্রাবণধারা বলেছেন: এই কোবরা ইফেক্টের কথা জানা ছিলো না। ঘরে ঘরে গোখরা সাপের খামার - এযে ভয়ঙ্কর অবস্থা!

তবে যতদুর মনে পড়ে ইদুরের লেজ জমা দিয়ে প্রণোদনা পাবার ঘটনাটি সম্ভবত আশির দশকের মাঝামাঝিও ঘটেছিলো। ছোটবেলায় অস্পষ্ট ভাবে মনে পড়ে গ্রামে গেলে কিছু ইদুরের লেজ দেখেছিলাম । গ্রামের লোকেরা কেন এই কাজ করে তখন সেটা বুঝতে পারিনি।

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১০

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: খবর নিয়েছি। ইদুরের লেজ বেশি জমাদানকারি এখনো পুস্কার পায়। এজন্য জেলায় জেলায় এক্সপার্ট ইদুর মারার লোকজন তৈরি হয়েছে। বিবিসির এক খবরে দেখলাম এক ব্যক্তির পেশাটাই ইদুর ধরা। সে জমির মালিকের কাছ থকে মজুরি নেয়। লেজ জমা দিয়ে পুরস্কার নেয়।

পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। সুন্দর মন্তব্য করার জন্য কৃতজ্ঞতা।

৭| ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৯

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আপনি খুব সুন্দর আর সময় উপযোগী একটা লিখা লিখেছেন, সে জন্য ধন্যবাদ জানবেন। দেশে দুষ্ট শ্রেনীর কূট বুদ্ধির লোকের অভাব নেই। সবাই নিত্য-নতুন ফন্দি বের করে ধান্দা করে যাচ্ছে।

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: এদেশে সরকারি টাকা আত্মসাত করতে কত রকম যে কৌশল করা হয় চিন্তাও করা যায়না। একবার একটা তদন্ত করেছিলাম কাবিখার আওতায় একচা রাস্ত সংস্কার নিয়ে। প্রকল্পের নাম দুই ভাইয়ের নামে রাখা হয়েছিল। যেমন আবদুল করিমের বাড়ি থেকে বট গাছ তলা। আবার আবদুর রহিমের বাড়ি থেকে বট তলার মোড়। একই রাস্তা। অথচ দুই প্রকল্প করে চাকা আত্মসাত করা হয়েছিল।

৮| ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১০

করুণাধারা বলেছেন: আপনার লেখা পোস্ট এই প্রথম পড়লাম, আর মুগ্ধ হলাম কঠিন বিষয়কে আপনি কত সহজ করে লিখতে পারেন সেটা দেখে।
পোস্টে লাইক।

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৬

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: আমার লেখা পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

৯| ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৮

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আমি আগে ভাবতাম শুধু আমরাই আইনের চিপাচাপা খুঁজি পাতলা গলি দিয়ে বেড়িয়ে যাই। এখন তো দেখছি জগতে এই নিয়ম ভালোই চালু।
চমৎকার লেখা।

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০১

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: মানুষ সরকারি প্রণোদনা চুরি করার জন্য পন্থা খুঁজত থাকে। এজন্য সাহায্য করা ঠিক না। সিডরের পর বাগের হাটের কয়েকটি উপজেলায় কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। মানুষ এত পরিমাণ সাহায্য পেয়েছিল যে কৃষি কাজের জন্য মজুর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

লেখা পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

১০| ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮

শেরজা তপন বলেছেন: চামড়া ও চামড়াশিল্পে কেন আজ এই ভয়াবহ পরিস্থিতি? - শিরোনামে আমি একটা ধারাবাহিক লিখেছিলাম, যেখানে প্রনোদনা নিয়ে সেই দুর্নীতির মোটামুটি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ আছে। ' ক্রিসেন্টের' মত দুর্নীতিবাজদের নাম গোপন করার কিছু নেই মনে হয়- তবে তখন আমিও গোপন করেছিলাম। এরা চামড়া রপ্তানীকারকদের ব্যাবসা হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে গেছে!
'কোবরা ইফেক্ট'টা প্রথম শুনলাম- ভাল লাগল আপনার নিবন্ধ।

১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: সঠিক ধরেছেন। আপনার প্রণোদনার টাকা মেরে দেয়া ব্যক্তি চামড়া ব্যবসায়ী। চামড়া শিল্পটা এদের জন্য শেষ হয়ে গেছে। সরকারি চাকরি করি বলে অনেক কিছুই কলা যায়না।

আপনার গবেষণাকে স্যালুট জানাই।
আপনার মতো বিদগ্ধজন আমার লেখা পড়ছেন এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.