নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। পরে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ২৮ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেক্টর (সচিব) এর একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপিতে লিয়েনে চাকরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্প সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷বর্তমানে সরকারের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যেকোনো প্রয়োজনে ইমেইল করতে পারেন। [email protected]
অনেকেই আমার কাছে জমিজমার সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জানতে চান৷ আমি সাধ্যমতো তাদের সমাধান দেই৷ এতে তারা উপকৃত হন৷ এখানে আমার কাছে করা ভূমি ও উত্তরাধিকার বিষয়ক ৭টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। প্রশ্নগুলো হুবহু রেখেছি। জমিজমা অনেক জটিল বিষয়। অনেক সময় সৎ পরামর্শও পাওয়া যায়না। এই উত্তরগুলো থেকে প্রশ্নকারী ছাড়াও অন্যরা উপকৃত হতে পারেন৷
প্রশ্ন-১
সালাম নিবেন।
আমার দাদার দুই ছেলে আমার বাবা ও জেঠা। আমার দাদার সম্পত্তির সব দাগে উভয়ের নাম সমান ভাবেই রয়েছে কিন্তু গত রেকর্ডে একটি দাগে আমার বাবার নাম আসেনি শুধু জেঠার নাম এসেছে। উল্লেখ্য আমার বাবা ও জেঠা কেউই জীবিত নেই। এখন করণীয় কি?
উত্তর:
ভূমি জরিপে মোট ১১ টা ধাপ রয়েছে৷ এ ধাপগুলো দ্রুত শেষ করার কথা৷ আইনে প্রতি দশ বছর পরপর জরিপের কথা বলা হয়েছে৷ তবে একটা জরিপ করতেই ত্রিশ বছর পার হয়ে যায়৷ জরিপের ধাপগুলো উল্লেখ করছি৷ কেননা এসব ধাপে যখন কাজগুলো হয় তখন নিজেদের সম্পত্তিতে ঠিকমতো জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হলো কী না তা খেয়াল রাখতে হয়৷ ধাপগুলো নিম্নরূপ: ট্রাভারস, কিস্তোয়ার, খানাপুরী, বুঝারত, খানাপুরি কাম বুঝারত, তসদিক, তসদিক যাচ, খসড়া প্রকাশনা, আপত্তি, আপিল ও চূড়ান্ত প্রকাশনা৷
বুঝারত স্তরে খসড়া খতিয়ান জমির মালিককে দেয়া হয়৷ তখন ভুল থাকলে তা জানানো যায়৷ এরপর তসদিক খতিয়ান দেয়া হয়৷ সেখানে ভুল হলে আপত্তি দেয়া যায়৷ আপত্তির পর আপিল করা যায়৷ এতগুলো স্তর পার হওয়ার পর কেউ যদি বলেন দাগ ঠিকমতো প্রকাশিত হয়নি৷ তা গ্রহণযোগ্য নয়৷ তবে বুঝারতের পর আপত্তি ও আপীল না হলে খতিয়ানে ভুল আসতে পারে৷ সেক্ষেত্রে তিন ধরণের ভুল হতে পারে৷
এক. করণিক ভুল
দুই. প্রতারণামূলক লিখন
তিন. বোনাফাইড মিসটেক বা যথার্থ ভুল৷
এই তিনটি ভুলের কোনো একটি হয়েছে কী না তা দেখা যেতে পারে৷ এসব ভুলের মধ্যে রয়েছে- নামের বানান ভুল৷ দাগ নম্বর ভুল৷ কেউ জরিপ চলাকালে জমি কিনেছেন অথচ জরিপে নাম এসেছে আগের জমির মালিকের; যিনি জমি বিক্রি করেছেন৷ এসব ক্ষেত্রে এসি ল্যান্ড খতিয়ান সংশোধন করার বিষয়ে ক্ষমতাবান৷ এ বিষয়ে ২৯ জুলাই ২০২১ তারিখে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্র রয়েছে৷ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটেই পাওয়া যায়৷ এই পরিপত্রটি ভালো করে পড়ে আপনার কী ধরণের ভুল হয়েছে তা নির্ধারণ করতে হবে৷ এই পরিপত্রে যেসব ভুলের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে পড়লে এসি ল্যান্ড সংশোধন করতে পারবেন৷
এছাড়া অন্যান্য ভুল সংশোধনের জন্য সার্ভে ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে৷
তবে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন স্পষ্ট নয়৷ আলাদা খতিয়ানে একজনের নামে একটি দাগে রেকর্ড হলে তা ভুল হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ নেই৷ সেক্ষেত্রে সার্ভে ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে৷
------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন-২
করিম ১৯৪৬ সালে আর,এস মূলে অংশীদারের কাছ থেকে ৪ শতক ভূমি কবলা নেন কিন্তু এখনো দখল নেই এবং বি এস জরিপ নেই৷ রহিম বা তার বংশধর সে কাল থেকে এখন পর্যন্ত বসতবাড়ি ভোগ দখলে আছেন এবং বিএস জরিপ রহিমের নামে আছে। এখন করিমের বংশধর জায়গা দাবি করলে, পরামর্শ কি?
উত্তর:
ভূমির একটা বেসিক বিষয় রয়েছে৷ ভূমির মালিকানা বুঝতে হলে তিনটি ''দ'' বুঝতে হবে৷ এগুলো হলো- দলীল, দখল ও দাখিলা৷
কারো কাছে দলীল ও দখল থাকলে তিনি ভূমি অফিস থেকে নামজারিপূর্বক দাখিলা পাবেন৷ তার মালিকানা নিষ্কণ্টক৷
কারো কাছে দখল রয়েছে, দলীল বা দাখিলা নেই তাকে দখল প্রমাণ করার জন্য উপযুক্ত আদালতে যেতে হবে৷ তবে এ বিষয়ে কথা রয়েছে৷
দখলটি অ্যাডভার্স পজেশন বা বিরুদ্ধ দখল হতে হবে৷
তামাদি আইন অনুযায়ী কোন সম্পত্তিতে মালিক ছাড়া অন্যকোনো ব্যক্তি অপ্রতিরোধ্য ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে ১২ (বারো) বছরের বেশি সময় ধরে ভোগ দখলে থাকলে ঐ সম্পত্তিতে বিরুদ্ধ দখলজনিত স্বত্ত্ব তৈরি হয়৷ এটাকে অ্যাডভার্স পজেশন বলে৷ ডালিমন নেছা বেওয়া বনাম মো: হাসমত আলী (৬১ ডিএলআর, এডি ৮) মামলায় বিরুদ্ধ দখল দ্বারা স্বত্ত্ব বা মালিকানা অর্জিত হয়েছে।
অথবা ব্যবহারস্বত্বে দখল থাকতে হবে৷ এটাকে রাইট অব ইজমেন্ট বলে৷ তামাদি আইনে ২৬ ও ২৭ ধারায় ব্যবহারস্বত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। কোন স্থলপথ, জলপথ, আলো, বাতাসের দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট অধিকারকে ব্যবহারস্বস্ত বলে। অনাবশ্যক ছাড়া কোন জমির ক্ষেত্রে ব্যবহারস্বত্ব সৃষ্টি হয়না।
ব্যবহারস্বত্ব সৃষ্টির জন্য ব্যবহার বা ভোগদখল প্রকাশ্য ও শান্তিপূর্ণ হতে হবে।ব্যবহারস্বত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে সাধারণ সম্পত্তিতে একটানা ২০ (বিশ) বছর দখল করতে হবে এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষেত্রে একটানা ৬০ (ষাট) বছর দখলে থাকতে হবে।
তবে দখলে থাকা কোন সম্পত্তি কেউ জোর করে দখলে নিতে চাইলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আর্জি করতে পারবেন৷ ওই নির্বাহী আদালত হতে জমিতে প্রবেশে বাঁধার আদেশ আনতে পারেন।
এখানে একটি কথা বলে নেয়া ভালো৷ আরেকটি দখল হচ্ছে- ফোর্সফুল পজেশন বা জোরপূর্বক দখল৷ জোরপূর্বক দখলের ক্ষেত্রে কোন অধিকার তৈরি হয়না৷ তা যতদিনই দখলে থাকেন না কেন৷
এবার কারো কাছে দলীল আছে দখল নেই; দাখিলা নেই৷ যে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে; সে অবস্থায় কী করবেন৷
তামাদি আইনের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, সম্পত্তি দখলের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা করতে হবে৷ নয়তো অধিকার হারাবেন৷ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারায় সম্পত্তি পুরুদ্ধারের মামলা করতে পারেন৷ যদি তামাদি আইনের ১৪২ ধারা অনুযায়ী দখল ১২ বছরের বেশি না হয়৷
তামাদি আইনের ২৮ ধারা পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, কোনো ব্যক্তি কোনো জমি থেকে বেদখল হলে বেদখলের বারো বছরের মধ্যে সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের মামলা না করলে সম্পত্তি থেকে অধিকার হারাতে হবে। এটা অ্যাডভার্স পজেশনের ক্ষেত্রে৷ কাগজপত্র ছাড়া জোর করে কেউ একশ বছর দখলে রাখলেও তাতে দখল স্বত্ত্ব হয়না৷
উপরোক্ত অবস্থায় করিম উপযুক্ত দেওয়ানি আদালতে রেকর্ড বাতিল ও স্বত্ত্ব ঘোষণার মোকদ্দমা করতে পারেন৷ তবে রহিম যে জোর করে জমি দখলে রেখেছিল সেটা আর্জিতে লিখতে হবে৷ আদালতে প্রমাণ করতে হবে৷
একজন নারী বিবাহ পর্যন্ত পৈতৃক ভিটার সহ-অংশীদার হিসেবে বিবেচ্য হবেন। কিন্তু বিবাহের স্বামীর বাড়িতে বসবাসকালে তিনি আগন্তক হিসেবে বিবেচিত হবেন। এ কারণে তিনি ওই পৈতৃক ভিটায় অবস্থিত বসতগৃহ বা কুটিরের কোনো একচ্ছত্র অংশ দাবি করতে পারেন না। এ কারণে বাটোয়ারা মামলায় স্বামী গৃহে বসবাসরত বিবাহিত কন্যা পিতৃগৃহ বা কুটিরের অংশ বিশেষ প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচিত হয় না। কারণ ওই সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী (পুত্র সন্তান) গণের মধ্যে বিবাদ বা বিরোধ বৃদ্ধি পাবে বলে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। (১৩ ডি.এল.আর, ২৩০ পৃষ্ঠা)।
-------------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন-৩
আমার নানার মোট জমি ১০৬ শতাংশ৷ এর মধ্যে তার বাড়ি ভিটা ৩৬ শতাংশ জমির মধ্যে ২৫ শতাংশ জমি আমার মা আর তিন খালার নামে রেজিস্ট্রারড অসিয়ত করে দিয়েছেন। আমার নানার ছেলে মেয়ে ১১ জন। আমার নানা ২০১১ সালে মারা গেছেন। আমার ৪ মামা অসিয়তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কেস করেছেন। আমার নানার আর জমি ভাগ বাটোয়া করা হয়েছে। তাহলে কি অসিয়ত বাতিল হবে।
উত্তর:
কেউ নিজের সম্পত্তি মৃত্যুর আগে অসিয়ত করে যেতে পারেন৷ তবে যার নামে অসিয়ত করা হয়েছে তার নামে নামজারী করতে হলে উক্ত অসিয়ত বা উইল আদালত থেকে প্রবেট করতে হয়৷ প্রবেট মোকদ্দমায় ওয়ারিশদের কোন দাবী দাওয়া রয়েছে কী না তা জানতে আদালত থেকে সকল ওয়ারিশদের নোটিশ দেয়া হয়৷
এখন কথা হলো অসিয়তকারী মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা অসিয়ত না মানলে কী হবে?
যার নামে অসিয়ত প্রদান করা হয়েছে তিনি উক্ত মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ না হলে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের একভাগ সম্পত্তি প্রবেট হবে৷ মানে মোট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করলেও তিন ভাগের এক ভাগ সম্পত্তি বা এক তৃতীয়াংশের কম যতটুকু করেছে তা কার্যকর হবে৷ এক্ষেত্রে ওয়ারিশদের অসম্মতি আমলে নেয়ার সুযোগ নেই৷
অন্যদিকে যার নামে অসিয়ত করা হয়েছে তিনি ওয়ারিশ হলে বাকী ওয়ারিশদের মধ্যে সবাই অসিয়ত কার্যকরে অসম্মতি জানিয়ে আদালতে গেলে অসিয়ত কার্যকর হবেনা৷ ওয়ারিশদের ক্ষেত্রে যিনি অসিয়ত কার্যকরে সম্মতি দেবেন তার অংশে অসিয়ত কার্যকর হবে৷ এখানে ওয়ারিশদের সম্মতিই আসল কথা৷
ইসলাম কী বলে:
ইসলামে কোন ব্যক্তির মোট সম্পদের এক তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত বা উইল করা যায়না৷ অনেক ওয়ারিশ থাকতে তাদের বঞ্চিত করে কোন এক ওয়ারিশের নামে অসিয়ত করা নিষিদ্ধ৷ তিরমিজি শরীফের হাদীস নম্বর ২২৬৩ ও আবু দাউদ শরীফের ২৮৬৯ নম্বর হাদীসে এসেছে, কোন ব্যক্তি পুরুষ বা নারী ৬০ বছর আল্লাহর ইবাদত করলো৷ পরে তার কাছে মৃত্যু উপস্থিত হলো৷ এসময় অন্যায় অসিয়তের মাধ্যমে ওয়ারিশদের ক্ষতি করলে তার জন্য জাহান্নামের আগুন আবশ্যক হয়ে যায়৷ তবে ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ দিনদার বা আলেম হলে তার জন্য কিছু অংশ বেশি অসিয়ত করা যায়৷ পারসোনাল আইনগুলো ধর্মীয় ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত৷ ইসলামে যেহেতু কিছু ওয়ারিশ বঞ্চিত করে কিছু ওয়ারিশের নামে অসিয়ত করা বৈধ নয় সেহেতু আদালতেও এ ধরণের অসিয়ত প্রবেট করা হয়না৷ কোন ওয়ারিশ চ্যালেঞ্জ করলে তার অংশে অসিয়ত কার্যকর হয়না৷
বর্ণিত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কী হতে পারে!
বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন বলে এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই৷ তবে উচ্চ আদালতের নজীর পর্যালোচনা করে যেটা বলা যায়, তা নিম্নরূপ:
অসিয়তকারী তার চার মেয়ের নামে বাড়ির ভিটি জমি অসিয়ত করেছেন৷ এক্ষেত্রে চার পুত্র অসম্মতি জানিয়েছেন৷ চার পুত্রের অংশে অসিয়ত কার্যকর হওয়ার কথা নয়৷ কারণ চার মেয়ে অসিয়তকারীর উত্তরাধিকার৷ ধরে নিলাম ১১ সন্তানের মধ্যে বাকী আরো তিনজন ওয়ারিশ অসিয়তের প্রতি সম্মতি জানিয়েছেন৷ তাহলে কী হবে? তাদের অংশে অসিয়ত কার্যকর হওয়ার কথা৷ তবে এর পরেও কথা থাকে৷ ১৩ ডি.এল.আর অনুযায়ী কন্যারা পিতার ভিটিতে অংশ দাবি করতে পারেনা৷ বিষয়টি খুবই জটিল৷ আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷
-------------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন-৪
আমরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। আমার নানার নয়জন মেয়ে৷ কোনো ছেলে নাই৷আমার নানীর পৈত্রিক সম্পত্তি আছে তা নানীর নামেই দলিল করা আছে। এখন আমার খালাদের মধ্যে অনেকের ছেলে সন্তান নেই৷আমার যে খালাদের ছেলে সন্তান আছে তারা বলেন যাদের ছেলে সন্তান (দৌহিত্র) আছে তারাই নানীর সম্পত্তির ভাগ পাবে।
এখন আমার জানতে চাওয়া যে নানীর যে মেয়েদের ছেলে সন্তান নেই তারা সম্পত্তির কোনরকম অংশীদার হবে কি না৷
আমার এক খালাতো ভাই একটু ক্ষমতা দেখিয়ে বলে যে যাদের ছেলে নাই তারা পাবে না৷ ওনি আমার বড় খালার ছেলে৷ নানা মারা যাওয়ার পর থেকে ঐ বড় খালা তার পরিবারসহ নানীর বাড়িতে সব সময় থাকেন এবং সকল সম্পত্তির আয়-ব্যয় ওনিই গ্রহণ করে থাকেন। আমার নানীর দেখাশোনা ওই বড় খালাই করেন৷ ওই খালাতো ভাই একটু রাজনীতিও করেন।
উত্তর:
উত্তরটা হিন্দু নারীদের সম্পদ অর্জনের বিষয়ে একটু ধারণা দিয়ে বলে দিতে চাই৷ বাংলাভাষায় হিন্দু আইন বিষয়ে বাংলা ভাষায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ বই লিখেছেন শ্রী বিভূতিভূষণ মিত্র, বি,এল। বইটির নাম হিন্দু আইন দায়ভাগ ও মিতক্ষরা। কলকাতা থেকে বইটির প্রথম প্রকাশ বাংলা ১৩৩২ সনে। দ্বিতীয় সংস্করণ করা হয় বাংলা ১৯৩৫ সনে। আমি হিন্দু উত্তারাধিকার আইন নিয়ে যতগুলো বই পড়েছি তারমধ্যে এই বইটিকে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। এ কারণে কোন প্রশিক্ষণে এই বই থেকেই তথ্য শেয়ার করেছি। সেই বইয়ের আলোকেই এটির সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
হিন্দু নারীদের সম্পদের স্বত্বের স্বীকৃতি রয়েছে। তবে সম্পদ কীভাবে পেয়েছেন তার ওপর স্বত্বের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। একটা সাধারণ বিষয় জানা দরকার-কোনো নারী কোনও পুরুষের বা অন্য কোন নারীর উত্তরাধিকারসূত্রে স্থাবর বা অস্থাবর অথবা এজমালী সম্পত্তির বিভাগে কোনো অংশ পেলে তিনি নির্ব্যূঢ় স্বত্বে স্বত্ববান হবেন না। নির্ব্যূঢ় স্বত্ব হলো নিশ্চিত অধিকার। মানে হলো-জীবিতকাল পর্য্যন্ত তিনি তা ভোগ করবেন এবং তার মৃত্যুর পর শেষ পুরুষ মালিকের যিনি ওয়ারিস থাকবেন তিনি সম্পত্তি পাবেন। হিন্দু নারী এই সম্পদ আবশ্যকতা ও সম্ভাব্য উত্তারাধিকারের সম্মতি ছাড়া হস্তান্তর করতে পারবেন না।
দ্বিতীয় প্রকারের স্বত্বের নাম স্ত্রীধন। নারী যে সম্পত্তি নির্ব্যূঢ় স্বত্বে পান তা স্ত্রীধন। এই সম্পত্তি তিনি যে কোনো ভাবে ভোগ করতে পারেন। ইচ্ছামত হস্তান্তর করতে পারেন এবং তার মৃত্যুর পর নিজের উত্তরাধিকারীরা (কন্যারা) পান। তাঁর স্বামীর পরবর্তী উত্তরাধিকারীরা (পুত্ররা) পাননা।
বিভূতিভূষণ মিত্র ১১ প্রকারের স্ত্রীধনের কথা বলা হয়েছে।
(১) যৌতুক, অর্থাৎ বিয়ের সময়ে নারী যে সম্পত্তি পান; দ্বিরাগমনের সময় যা পান তাও যৌতুক;
(২) অন্বধেয়ক, অর্থাৎ বিয়ের পর তিনি পিতা বা স্বামীর কাছ থেকে যা পান;
(৩) সৌদায়িক অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজন যে সম্পত্তি (বিয়েতে বা অন্য সময়ে) নারীকে স্নেহ করে যা দান করেন;
(৪) স্বামীর দেয়া স্থাবর সম্পত্তি;
(৫) স্বামীর দেয়া অস্থাবর সম্পত্তি;
(৬) নারীর নিজ পরিশ্রমে উপার্জিত সম্পত্তি;
(৭) বাবার দেয়া সম্পত্তি;
(৮) বাবা স্বামী বা আত্মীয়স্বজন বাইরে অন্য ব্যক্তির দেয়া সম্পত্তি;
(৯) বৃত্তি বা ভরণপোষণের মাসহারা;
(১০) অধিবেদনিক, অর্থাৎ প্রথম স্ত্রী থাকতে স্বামী দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে প্রথম স্ত্রীকে সান্ত্বনা স্বরূপ যে সম্পত্তি দান করেন;
(১১) শুল্ক, অর্থাৎ আসুর মতে বিয়ে হলে বর কলেকে যে সম্পত্তি দান করেন। আসুর বিয়ে হলো-টাকা পয়সা বা সম্পদ দিয়ে কণে পক্ষকে হাত করে মেয়েকে বিয়েতে রাজি করানো।
তবে মোটা দাগে ১১ প্রকারের এই সম্পত্তিকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে । (১) যৌতুক (২) অযৌতুক।
এবার স্ত্রীধন রেখে কোন সনাতন নারী মারা গেলে কে কে সম্পদ পারে তা জেনে নেয়া যাক।
যৌতুক স্ত্রীধনের উত্তরাধিকারের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ২৮ জন। এখানে ১২ জনকে উল্লেখ করা হলো।
(১) অবিবাহিত কন্যা; (২) যে কন্যার বিয়ে ঠিক হয়েছে; (৩) পুত্রবতী কন্যা; (৪) বন্ধ্যা কন্যা (৫) পুত্র; (৬) দৌহিত্র; (৭) পৌত্র; (৮) প্রপৌত্র; (৯) স্বামী, (১০ভাই; (১১) মা; (১২) বাবা।
অযৌতুক স্ত্রীধন দুই প্রকারের—(ক) বাবার দেয়া; (খ) অন্য ব্যক্তির দেয়া।
(ক) বাবার দেয়া অযৌতুক স্ত্রীধনের পর্যায়ক্রমে উত্তারাধিকার ২৭ জন। এখানে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হলো।
(১) অবিবাহিত কন্যা; (২) পুত্র; (৩) বিবাহিতা পুত্রবর্তী এবং পুত্রসম্ভাবিত কন্যা; (৪) বন্ধ্যা সধবা কন্যা, এবং বিধবা কন্যা; (৫) মেয়ের ঘরের নাতি; (৬) পুত্রের পুত্র; (৭) প্রপৌত্র; (৮) সপত্নীর পুত্ৰ; (৯) সপত্নীর কন্যা; (১০) সপত্নীর পৌত্র; (১১) ভাই; (১২) মাতা; (১৩) পিতা; (১৪) স্বামী; (১৫) দেবর;
(খ) অন্যদের দেয়া অযৌতুক স্ত্রীধনের পর্যায়ক্রমে উত্তারাধিকার ২৭ জন। এখানে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হলো।
(১-২) পুত্র এবং অবিবাহিত কন্যা একত্রে; পুত্র না থাকলে অবিবাহিত কন্যা সব সম্পত্তি পাবে এবং অবিবাহিতা কন্যা না থাকলে পুত্রই সমস্ত সম্পত্তি পাবে; উভয়েই থাকলে তুল্যাংশে পায়; (৩) বিবাহিতা (পুত্রবর্তী বা পুত্রসম্ভাবিত) কন্যা; (৪) পৌত্র বা পুত্রের পুত্র; (৫) দৌহিত্র বা মেয়ের ঘরের নাতি; (৬) বন্ধ্যা সধবা কন্যা ও বিধবা কন্যা; (৭) প্রপৌত্ৰ; (৮) ভাই; (৯) মাতা; (১০) পিতা; (১১) স্বামী; (১২) সপত্নীর পুত্র; (১৩) সপত্নীর কন্যা; (১৪) সপত্নীর পৌত্র; (১৫) দেবর;
এখানে একটি বিষয় হলো- কোন নারী উত্তারাধিকার সূত্রে স্ত্রীধন পেলে তা জীবনস্বত্বে পাবেন। তিনি মারা গেলে যিনি স্ত্রীধনের মালিক ছিলেন তার পরবর্তী উত্তরাধিকারের কাছে চলে যাবে।
যাই হোক এবার প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে আসি। আপনার নানি বাবার দেয়া অযৌতুক স্ত্রী ধনের মালিক হয়েছেন। তিনি তার ১১ জন মেয়ের নামে সম্পত্তি হস্তান্তর বা দান করে যেতে পারেন। উইল করে যেতে পারেন। তবে আপনি বলেছেন আপনার এক খালা যিনি আপনার নানির পুত্রবতী কন্যা নানীর দেখাশুনা করেন। তাছাড়া খালাতো ভাই রাজনীতির সাথে যুক্ত। তারা চাননা যে সবাই সম্পদের হিস্যা পান। আপনার নানী বেঁচে আছেন। সেকারণে তার মৃত্যূ নিয়ে কথা বলা ঠিক হবেনা। তারপরেও ধরে নিচ্ছি তিনি মারা গেলে বাবার দেয়া অযৌতুক স্ত্রীধনের উত্তারাধিকাররা সম্পদের মালিক হবেন। প্রথমে আপনার কোন অবিবাহিত খালা থাকলে তিনি সম্পূর্ণ সম্পত্তির মালিক হতেন। প্রশ্নে স্পষ্ট যে আপনার অবিবাহিত খালা নেই। ২য় পর্যায়ের উত্তরাধিকার যিনি হতেন আপনার মামা। আপনার মামাও নেই। এ কারণে তৃতীয় পর্যায়ের আপনার যে খালাদের পুত্র রয়েছে তারা দায়ভাগমতে সম্পদের মালিক হবেন। আপনাদের যেসব খালারা পুত্র সন্তানের মা হননি তারা বঞ্চিত হবেন। তবে আপনার নানী যেহেতু চান তার সব মেয়ে সম্পদ পাক সেজন্য তার ইচ্ছাপূরণে সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
-------------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন-৫
আমি বিগত ২২ সালের মার্চ মাসে ১০৭.৫ (একশত সাড়ে সাত) শতক জমি ক্রয় করি। বিক্রেতা বিগত ২০১৮ সালে এই জমিটি ক্রয় করেন। তিনি যার থেকে জমি ক্রয় করেছেন, তিনি ১৫ শতক জমি পূর্বে এক ব্যক্তিকে দলিল করে দেন। ১৫ শতক ক্রয়কারী রাস্তার পাশ উল্লেখ করে বিগত ২০১৩ সালে জমি রেজিস্ট্রি করেন। উল্লেখ্য, জমির উত্তরে রাস্তা। তিনি ক্রয়কৃত ১৫ শতক জমি উত্তর দক্ষিণ বরাবর ভোগ দখলরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এখন তার ওয়ারিশগণ জমিটি পূর্ব-পশ্চিম ভোগ দখলে যেতে চায়। ফলে আমার বের হওয়ার কোন রাস্তা থাকে না। এই ব্যাপারে আমি কী করা উচিত? আমি কি কোন আইনী সুবিধা পাব?
উত্তর:
এ বিষয়ে আপনি তিন ধরণের ব্যবস্থা নিতে পারেন৷
এক. শালিসের ব্যবস্থা করতে পারেন৷ স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তা বা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দ্বিতীয় পক্ষের সাথে বসে সমস্যার সমাধান করতে পারেন৷ শালিসের রায় আপনার পক্ষে আসলে আপনি এটি দিয়ে যেকোন আদালতে সুবিধা পাবেন৷
দুই. ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ও ১৪৫ ধারায় দ্বিতীয় পক্ষকে আপনার দখলকৃত জমিতে প্রবেশ বারিত করে দখল ঘোষণার আদেশ পেতে পারেন৷ এজন্য আপনাকে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যেতে হবে৷ আপনি অথবা আপনার পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবীর মাধ্যমে উক্ত আদালতে আদালতে আর্জি দাখিল করতে হবে৷ সেখান থেকে ১৪৪ ধারায় ৬০ দিনের জন্য প্রিভেনটিভ রিলিফ বা নিরোধক প্রতিকার পেতে পারেন৷ অথবা ১৪৫ ধারায় দখল স্বত্ত্ব ঘোষণার আদেশ পেতে পারেন৷ এই মোকদ্দমা চলাবস্থায় দ্বিতীয় পক্ষ আপনার ভোগদখলীয় জমি দখলের সুযোগ পাবেনা৷ দখল করতে এলেও আদালতের মাধ্যমে পুলিশী সহায়তা পাবেন৷ আদালতের আদেশ অমান্য করে আপনার দখলীয় জমিতে দ্বিতীয় পক্ষে প্রবেশ করলে দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে৷
এছাড়া ইতোমধ্যে বেদখল হয়ে গেলে আর তা ৬০ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই আপনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে যেতে পারেন৷
তিন. সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান পেতে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৮ ও ৯ ধারায় বিজ্ঞ দেওয়ানি আদালতে মোকাদ্দমা দায়ের করতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে এই আদালতে যেতে হবে৷ অন্যথায় প্রতিকার পাবেন না৷
যেহেতু আপনার জমি দখল হয়নি; তবে দখলের পায়তারা করছে; সেহেতু বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ও ১৪৫ ধারায় মোকদ্দমা করাটাই সুবিবেচ্য হবে৷
-------------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন-৬
আপনার কাছে জমিজমার বিষয় দুইটা পরামর্শ চাচ্ছি-
১. আমার মৃত বাবার নামে তার পৈতৃক জমির BS রেকর্ড হয়েছে। আমার জানা মতে ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দিয়ে আমরা তার ছেলে মেয়েরা অন্যকে দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারব।
কিন্তু এখন বিক্রি করতে গেলে নাকি আমাদের ভাই বোনদের নামে মিউটেশন করতে হবে অন্যথায় বিক্রি করা বা দলিল দেওয়া যাবে না। এমন কোন আইন/গেজেট হয়েছে কিনা? একজন দলিল লেখককে সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে এমনটাই জানিয়েছেন। বিষয়টি সঠিক কিনা?
২. আমার এক নারী আত্মীয় নি:সন্তান। তার husband যদি আগে মারা যায়, তাহলে ঐ নারী তার husband এর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের কত অংশ পারে। উল্লেখ যে, ঐ নারীর husband এর ভাই বোন এবং তাদের ছেলে মেয়ে ও আছে৷ ছয় বোন আর এক মাত্র ভাই। এক্ষেত্রে ঐ ভাই বোন বা তাদের ছেলে মেয়েরা কত অংশ পাবেন?
বিষয় দুইটি উত্তর জানানোর জন্য অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ
উত্তর:
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরটা প্রথমে দিচ্ছি৷ কোন দম্পত্তির পুত্র কন্যা না থাকলে স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবেন৷ উপরোক্ত পরিস্থিতিতে বাকী তিনভাগ সম্পত্তি চারভাগ হবে৷ ছয় বোন মিলে তিন ভাগ অার একভাগ ভাই পাবে৷ ভাই বোন বেঁচে থাকলে তাদের সন্তানেরা সম্পত্তি পাবেনা৷
প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, আমি যখন এসি ল্যান্ড হিসেবে কাজ করেছি, তখন উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি ওয়ারিশনামা দিয়েই হস্তান্তর করা হতো৷ ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এর ৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির নামে ভূমির State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act No. XXVIII of 1951) এর section 143 বা 144 এর অধীন প্রণীত বা হালনাগাদকৃত বলবৎ সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে এবং অনুরূপ খতিয়ান ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণক প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে, তিনি উক্ত ভূমি বিক্রয়, দান, হেবা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন বা দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না। এ কারণে এখন উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করতে গেলে নামজারি করতে হবে।
------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন-৭
স্যার, আমার জন্মের পর আমার মা মারা যান৷ এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন কিছুই ছিলোনা মায়ের (১৯৯৪) সাল৷ পরে আমার দ্বিতীয় মা বর্তমানে যিনি আমার মা তিনি আমাকে শিশুকাল থেকে মানুষ করেছেন৷ কিন্তু আমার জন্ম নিবন্ধন করার সময় আমার মৃত মায়ের নাম লিখে দিয়েছেন৷ এই মায়ের নাম লেখেনি। বাবার নাম একই আছে। এই মায়ের একটি মেয়ে আছে, আমার ছোট বোন৷ তার জন্মনিবন্ধন এনআইডি সার্টিফিকেট সব কিছুতে এই মায়ের নাম লেখা, আর আমার স্কুল জীবন থেকে সবখানেই মৃত মায়ের নাম লেখা৷
বাবা মারা গেছেন ২০২০ সালে৷ এখন আমি কিভাবে মায়ের জমি পেতে পারি? মা তো আমাকে বলেন আমি মরে গেলে তোর ছোট বোন তোকে ফেলে দেবেনা৷ কিন্তু সার্থের এই দুনিয়ায় কে কখন বদলে যাবে এটারও নিশ্চয়তা পাচ্ছিনা৷
অলরেডি বাবার পেনশনের একটি কানাকড়ি আমাকে না দিয়ে মা মেয়ে ফিক্সড ডিপোজিট করে রেখেছে৷ অথচ সংসারের ঘানি টানছি আমি। এই মুহূর্তে আমার করণীয় কি স্যার?
আমার চাকরির জন্য (উপ সহকারী প্রকৌশলি পদে) একবার একটা সুযোগ এসেছিলো। তখন মা কে জানানোর পর তিনি বলেছিলেন টাকা নেই৷ এদিকে আমার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সও শেষ হতে যাচ্ছে৷ আর বছর খানেক আছে৷ ।
আমি কি করবো স্যার, প্লিজ একটা সমাধান দেন৷ আমিতো দেখতে পাচ্ছি এই মা মারা গেলে বোন আমাকে পথে ভাসিয়ে দিবে৷
আমাদের মোট জমি আঠারো কাঠা তার মধ্যে বারো কাঠা মায়ের নামে। আর ছয় কাঠা আব্বুর নামে৷
একটা সমাধান দেন স্যার।
উত্তর:
আপনার মা- বাবা নেই এজন্য প্রথমেই সমানুভূতি জানাচ্ছি৷ তবে আপনার সৎ মা ও বোন রয়েছে৷ আপনার সৎ মা আপনাকে ছোট থেকে লালন পালন করে বড় করেছেন৷ এজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থাকা দরকার৷ আপনার সার্টিফিকেটসহ এনআইডিতে আপনার মৃত মায়ের নাম লিখেছেন৷ এটাই সঠিক হয়েছে৷ আর সরকারি চাকরির জন্য টাকা দেয়া কোন মতেই ঠিক নয়৷ এ টাকা মার যাওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা থাকে৷ এদিক থেকেও আপনার মা টাকা না দিয়ে সঠিক কাজটিই করেছেন৷
যাই হোক আপনার সৎ মা মারা গেলে তার অংশে আপনি সম্পদ পাবেননা৷ আপনার সৎ মা মারা গেলে আপনার সৎ বোন অর্ধেক সম্পত্তি পাবে৷ বাকী অর্ধেক আপনার সৎ মায়ের বাবা মা অংশ অনুযায়ী পাবেন৷ এক্ষেত্রে বাকী সম্পত্তির তিন ভাগের একভাগ তার মা ও দুই ভাগ তার বাবা পাবেন৷ আর আপনার সৎ মায়ের বাবা মা না থাকলে তার ভাই বোনেরা পাবেন৷ এক্ষেত্রে বাবা মায়ের মতো ভাই বোনের মধ্যে ভাগ হবে৷
যাই হোক আপনার বাবার নামে ছয় কাঠা জমির মধ্যে আপনার সৎ মাকে আট ভাগের এক ভাগ দিতে হবে৷ বাকী অংশ তিন ভাগ করে এক ভাগ আপনার সৎ বোন ও দুই ভাগ আপনি পাবেন৷ আপনি ছয় কাঠার মধ্যে সাড়ে তিন কাঠা পাবেন৷
এ তো গেলো আপনাদের জমি জমার হিসাব৷ আপনি লেখাপড়া করেছেন৷ সরকারি চাকরির জন্য হাতে আর এক বছর বয়স আছে৷ আপনার উচিত হবে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়া৷ আপনার সৎ মা হয়ত কিছু বলেন না৷ তবে আয় করতে না পারলে আপন মাও নিজ পুত্রকে ঘরছাড়া করেন৷ এই সময়ে বসে থাকার কোন উপায় নেই৷ পথে নেমে যান৷ পথই আপনাকে পথ দেখাবে৷ ঢাকায় কোন বন্ধু বান্ধব থাকলে ঢাকায় তাদের কাছে চলে আসেন৷ সংগ্রাম শুরু করে দেন৷ প্রথমে ছোটখাটো কিছু দিয়ে শুরু করেন৷ টিকে থাকেন৷ একসময় বড় হতে পারবেন৷ আপনার মায়ের নামে যে ১২ কাঠা জমি আছে তা নিয়ে আক্ষেপ করে লাভ নেই৷ একটু প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে ওরকম দুই চারটা বারো কাঠা জমির মালিক হওয়া কোন ব্যাপার না৷ আমি নিজে টিকে থাকার জন্য যত সংগ্রাম করেছি শুনলে অবাক হবেন৷ আপনার কাছে অসম্ভব মনে হবে৷ তবে মানুষ চাইলেই পারে৷ এই বিশ্বাস নিয়ে নিজে কিছু শুরু করে দিন৷ সরকারি চাকরিতে আজকাল টাকা পয়সা লাগেনা৷ একটা বছর কাজে লাগান৷ নিজের ওপরে ফোকাস করুন৷ আপনার সৎ মা ও সৎ বোন হলেও মনে রাখবেন তারাই আপনার নিকটজন৷ তাদেরকে দেবেন৷ তাদের কাছ থেকে প্রাপ্তির আশা ত্যাগ করাটাই আপনার জন্য সমীচীন হবে৷ নিজের কাছেও ভালো লাগবে৷
ভালো থাকবেন৷
২| ০৬ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯
নয়ন বিন বাহার বলেছেন: পেয়েছি, ধন্যবাদ!
৩| ০৭ ই জুন, ২০২৪ রাত ৮:০২
ঢাকার লোক বলেছেন: আমার একটা প্রশ্ন, ২ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে আপনি ১৩ ডি এল আর এর রেফারেন্স দিয়ে পৈতৃক ভিটাতে বিয়ে হয়ে স্বামীর বাড়িতে বাস করা মেয়েদের অংশ নেই বলেছেন। কিন্তু ইসলাম মৃতের রেখে যাওয়া সমস্ত সম্পত্তিতেই, সে ভিটাবাড়ি হোক বা চাষের জমি হোক, ওয়ারিশদের, সে ছেলেই হোক বা মেয়েই হোক, যেখানেই থাকুক না কেন, অধিকার দিয়েছে (সূরা নিসা ১১ নম্বর আয়াত) । উক্ত আয়াতে মেয়ে কোথায় বাস করছে সে প্রশ্ন তুলছে না। এটি কি বাংলাদেশের বিশেষ আইন ? যদি তাই হয় তো এটি কি কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক নয় ?
২১ শে জুন, ২০২৪ সকাল ৯:৫১
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: যেহেতু বাংলাদেশের বাস্তবতায় মেয়েদের ঠিকানা হয় শশুর বাড়ি; সে কারণে বাপের বাড়ির গৃহের অংশ তাদের ব্যবহার করার দরকার পড়েনা। এছাড়াও একটা পর্যায় বোনেরা বাপের বাড়ির জমি পেলেই জমি অন্যের কাছে বিক্রি করে চলে যায়। অন্যদিকে ছেলেদের বাপের গৃহই সম্বল। সামাজিক আর পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় পিতৃগৃহের ভিটে বাড়ির জমি ব্যতীত সমপরিমান জমি অন্য জায়গা থেকে দিতে হবে। অর্থাৎ বোনের হক যাতে কোনো ভাবেই বিনষ্ট না হয় এমন জমি থেকে তার অংশ বুঝিয়ে দিতে হবে। ভাইয়েরা বা ভাইপো’রা বুঝিয়ে দিতে অস্বীকার করলে বাটোয়ারা মামলা করে অংশ বুঝিয়ে নেয়া সম্ভব। তবে পিতার ভিটে বাড়ির জমি অংশ অন্তর্ভুক্ত করে বাটোয়ারা মামলা করা যায়না।
এটা বাংলাদেশের বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে করা উচ্চ আদালতের রায়। আর আপনি জানেন, উচ্চ আদালতের রায়ের মর্যাদা কী! তবে এটা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তাকে ভিটে বাড়ির সমমূল্যের সমপরিমাণ জমি অন্য জায়গা থেকে দেয়া হবে। তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন না। কারণ সংস্থান করার সুযোগ থাকলে বণ্টনের সময় বেশিরভাগ সময় পুত্র কন্যাদের সুবিধা অসুবিধা দেখেই তো জমিজমা বণ্টন করা হয়। প্রতিটি দাগে সবাইকে জমি দিলে দেশের প্রতিটি দাগের জমা আরো ছোট হয়ে যেতো। চাষাবাদ করার জন্য কষ্টকর হতো। এ
টা এদেশের সামাজিক রীতি। পিতার মৃত্যুর পর সংস্থান করা গেলে প্রত্যেক পুত্র কন্যাকে আলাদা দাগে জমি দেয়া হয়। আর সংস্থান করা না গেলে সবাইকে দাগে দাগেই জমি দেয়া হয়।
৪| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০০
আলামিন১০৪ বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম, জমাজমি নিয়ে আমিও কাজ করি তবে কারিগরি বিষয়ে..এক রেকর্ড থেকে অন্য রেকর্ডে জমির পরিমাণ কম-বেশি নিয়ে বিস্তর জিআইএস বিশ্লেষণ করেছি- এ নিয়ে এক সময় লিখার ইচ্ছা আছে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:৫৮
নয়ন বিন বাহার বলেছেন: ২৯ জুলাই ২০২১ সালের পরিপত্রটি ওয়েবসাইটে পাইনি, ভাই। ডেইট দিয়ে সার্চ দিলে আসে না।