নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। পরে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ২৮ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেক্টর (সচিব) এর একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপিতে লিয়েনে চাকরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্প সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷বর্তমানে সরকারের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যেকোনো প্রয়োজনে ইমেইল করতে পারেন। [email protected]
আজ একজন দরবেশের ঘটনা বলবো। ঘটনাটি ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বরানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে উল্লেখ করেছেন। উইকিপিডিয়াতেও ওই দরবেশের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ নেই। ইন্টারনেটে বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় ঘটনার বিস্তারিত নেই৷ ভারতের টেক্সটবুকে এ বিষয়ে প্রশ্ন দেখেছি।
ওই দরবেশের নাম সৈয়দী মওলা। তবে ইংরেজিতে তার নাম লেখা হয় সিদি মাওলা। সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবনের আমলের প্রথম দিকে পারস্য হতে দিল্লী শহরে আসেন। সৌম্য দর্শন৷ তাঁর কাজকর্ম অনেকটা অদ্ভুত ছিল। অনেক দান-খয়রাত করতেন৷ তবে জুমার দিন তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন না। পড়লেও বুজর্গানে দীনের চর্চিত জমাতের প্রতি তাঁর কোন আকর্ষণ ছিল না। এ কারণে শরীয়তি আলেমরা তাকে বাঁকা দৃষ্টিতে দেখতেন৷ তবে তিনি সারাক্ষণ জিকির আজকার করে সময় পার করতেন৷ জামা ও চাদর পরতেন। সাধারণ তরকারী দিয়ে চালের রুটি খেতেন। তাঁর কোন স্ত্রী পুত্র ও দাসদাসী ছিলনা। কোনো ধরণের আমোদ প্রমোদেও যোগ দিতেন না। তিনি কারো কাছে কিছু চাইতেন না। তবে এত বেশি খরচ করতেন যে, লোকজন অবাক হয়ে যেতো। বলতো, সৈয়দী মওলা যাদুবিদ্যা জানেন। তাঁর খানকার সামনের ময়দানে প্রচুর অর্থব্যয় করে একটি আলীশান দালান নির্মাণ করেছিলেন। সেই ভবনে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর মেহমান আসতেন। তাদের জন্য রান্না হতো। অনেক ধরনের খাবার দস্তরখানে পরিবেশন করা হতো। ওই সময় ধনীদের পক্ষেও এমন খাবার জুটানো কঠিন ছিল। এই প্রাসাদোপম খানকায় সৈয়দী মওলা জলসা করতেন। হাজার দুই হাজার মণ ময়দা, পাঁচ ছয় শত গরু, ছাগল, দুই তিন শত মণ চিনি, এক দুই শত মণ তরিতরকারী কিনে খানকাহের সামনে স্তুপ করে রাখা হতো। তাঁর অধীনে কেতা বা জায়গীর হিসাবে কোন গ্রাম ছিল না। কোন উপহার পেতেন না। কোন নজরানাও গ্রহণ করতেন না। মালপত্র সরবরাহকারীদের বলতেন, অমুক স্থানে যাও। সেখানে ইট বা পাথরের নীচে তঙ্কা (তৎকালীন টাকা) আছে। লোকজন তাঁর নির্দেশ মতো ইট বা পাথরের নীচে প্রয়োজনীয় তঙ্কা পেয়ে যেতেন। এসব তঙ্কা টাকশাল হতে মাত্র আনা হয়েছে বলে মনে হতো।
জিয়া উদ্দিন বারানী উল্লেখ করেন, আমি আমার শিক্ষক ও সহপাঠিদের সাথে সৈয়দী মওলাকে দেখতে যেতাম। সেখানে খাওয়া দাওয়া করতাম। সৈয়দী মওলার দরজায় সবসময় মানুষের ভীড় লেগে থাকতো। এসব লোকজনের মধ্যে আমীর উমরাহদেরকেও দেখা যেতো। জিয়া উদ্দিন বারানী লিখেছেন, আমি শুনে ছিলাম যে, সৈয়দী মওলা দিল্লী আসার পর একদিন শেখ ফরিদের কাছে গিয়ে দুই-তিন দিন অবস্থান করেন। শেখ ফরিদ তাকে বলেছিলেন, হে সৈয়দী তুমি দিল্লীতে থাকবে।সেখানে তোমার খানকায় লোকজন ভীড় করবে। চারদিকে তোমার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। এই অবস্থায় তোমার যা ভাল মনে হয়, তা তুমি করতে পারো। তবু আমার একটি উপদেশ স্মরণ রেখো, কখনও হোমড়া চেমড়াদের সঙ্গে মেলামেশা করবা না। তোমার দরজায় তাদের আগমনকে সাক্ষাৎ বিপদ বলে মনে করবা। কারণ যে দরবেশ আমীর মালীকদিগের সঙ্গে মেলামেশা করে, তার পরিণাম অনেক ভয়াবহ হয়ে থাকে।
যাই হোক, সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবনের আমলে সৈয়দী মওলা পক্ষে এ ধরনের ব্যয় সম্ভব হয়নি। তবে তার নাতি সুলতান মুইজ উদ্দিন কায়কোবাদের (১০ মামলুক সুলতান ও বাংলার সুলতান বুগরা খানের পুত্র) সময় তাঁর এলাহি কান্ড শুরু হয়। তাঁর খেদমতে আগত বিশিষ্টজনকে দুই পাঁচ হাজার তঙ্কা উপহারও দিতেন। এসময় মালিক আমীরদের সঙ্গেও তার মেলামেশা শুরু হয়। কায়কোবাদের মৃত্যূর পর বিশিষ্টজনরা তার শিশুপূত্র শামসউদ্দিন কায়ুমারসকে ক্ষমতায় বসান৷অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিক জালাল উদ্দীনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়৷ জালাল উদ্দীন তাদের হত্যা করেন৷ পরে শিশু কায়ুমারসকে সরিয়ে কেউ বলেন হত্যা করে, কেউ বলেন অনাহারে মেরে সুলতান জালাল উদ্দীন খিলজি ক্ষমতা দখল করেন। শুরু হয় খিলজি শাসন। আর খিলজি আমলে সৈয়দী মওলার প্রভাব বেড়ে যায়। সুলতানের বড় পুত্র আরকলি খান তার ভক্ত ও অনুগত হয়ে যান। মওলা তাকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। দিল্লীর কাজী জালাল কাশানীর সঙ্গেও তাঁর হৃদ্যতা জন্মে। কাজী সাহেব বিশিষ্ট প্রভাবশালী লোক হলেও সুলতানের খুব অনুগত ছিলেন না। তিনি দুই তিন রাত সৈয়দী মওলার খানকাতে থাকতেন এবং তাঁদের মধ্যে অনেক বিষয়ে আলোচনা চলতো। এছাড়াও সুলতান বলবনের কর্মচারীদের পুত্ররা সেখানে আসর জমাতেন।এরা একসময়ে আমীরের মতো জীবন যাপন করতেন। তবে জালালুদ্দীনের আমলে নিঃস্ব হয়ে যান। এছাড়াও কতোয়াল বরঞ্জতন ও হাতিয়া পায়েকের মতো পাহলোয়ান শ্রেণির মতো লোকও আসতেন। কিছু সংখ্যক পদচ্যুত আমীরও সৈয়দী মাওলার খানকাহকে আশ্রয়স্থল বানিয়ে ফেলে। তারা অনেকেই রাতে থাকতেন। কে কী তা নিয়ে সৈয়দী মওলার মাথাব্যথা ছিলনা। তিনি সবাইকে সহায়তা করতেন। মানুষ জানত যে, সৈয়দী মওলার খানকায় তাবারুক লাভের জন্যই লোকজনের এই ভীড়। পরে এ নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। লোকজনের কানাঘুষা বেড়ে যায়।
সুলতান খবর পেলেন- কাজী জালান কাশানী, আগের আমীর, কতোয়াল বরঞ্জতন ও হাতিয়া পায়েক রাতের পর রাত সৈয়দী মওলার সঙ্গে বসে বিদ্রোগের ষড়যন্ত্র করে। তারা ঠিক করে যে, জুমার দিনে সুলতান জালাল উদ্দিন মসজিদে যাওয়ার কালে কতোয়াল বরঞ্জতন ও হাতিয়া পায়েক জীবন বিসর্জন দিয়ে সুলতানকে হত্যা করবে। আর এই গোলযোগের মধ্যে সৈয়দী মওলাকে ডেকে এনে বাকীরা খলীফা বলে ঘোষণা করবে। এছাড়াও সুলতান নাসির উদ্দিনের কন্যাকে সৈয়দীর হস্তে ন্যাস্ত করা হবে। কাজী জালাল কাশানী খান পদে নিযুক্ত হয়ে মুলতান রাজ্যটি কেতা হিসাবে লাভ করবেন। বাকীদের অন্যান্য জায়গায় অনুরূপ পদ ও জায়গীর প্রদান করা হবে।
এদের মধ্যে দিল্লীর কোন এক বিশিষ্ট লোকও ছিলেন। তিনি সুলতানের কাছে গিয়ে সব বলে দিলেন। সুলতান জালাল উদ্দিন সাথে সাথেই সৈয়দী মওলাসহ সবাইকে গ্রেফতার করেন। তাদেরকে দরবারে উপস্থিত করা হয়। সুলতান প্রত্যেককে ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। তবে সবাই একবাক্যে বিষয়টি অস্বীকার করে। ওই সময়ে কোন অপরাধ অস্বীকারকারীকে মারপিটের রীতি ছিল না। এরপরেও অপরাধ স্বীকারের জন্য সুলতান তাদেরকে নির্যাতন করার আদেশ দিলেন। বিহারপুরের ময়দানে একটি বড় অগ্নিকুণ্ড তৈরি করা হয়। সুলতান সভাসদদের নিয়ে সেখানে যান। তাঁবু দিয়ে একটি বিশেষ দরবার তৈরি করা হয়। দিল্লীর বিশিষ্ট লোকেরা সকলে সেখানে উপস্থিত হলেন। সাধারণ মানুষও ঘটনা দেখার জন্য ভীড় জমায়।
সুলতান অভিযুক্তদের আগুনে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। বললেন, তারা সৎ হলে আগুন তাদের ক্ষতি করবেনা। উপস্থিত আলেমদের কাছে এই ব্যাপারে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হলো। তাঁরা একবাক্যে বললেন, কোন বস্তুকে জ্বালিয়ে দেয়া আগুনের স্বভাব। সে কারণে এ ধরণের কোন পদার্থ দ্বারা কোন বিষয়ে সত্যমিথ্যা নির্ধারণ করা বৈধ হবে না। এ ছাড়াও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মাত্র একজন ব্যক্তির সাক্ষ্য পাওয়া গেছে। এমন এক মারাত্মক বিষয়ে একমাত্র ব্যক্তির সাক্ষ্য কোন প্রকারেই গ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। শেষ পর্যন্ত সুলতান বাধ্য হয়ে নির্যাতনের ইচ্ছা পরিত্যাগ করলেন।
পরবর্তীতে সুলতান অভিযুক্তদের নেতা কাজী জালাল কাশানীকে কাজীর পদে নিয়োগ দিয়ে বাদাউন পাঠান। অন্যান্য আমীর ওমরাহদের নির্বাসনে পাঠান। তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন। কতোয়াল বরঞ্জতন ও হাতিয়া পায়েককে হত্যা করা হয়। সবশেষে সৈয়দী মওলাকে হাত পা বেঁধে সুলতানের সামনে উপস্থিত করা হয়। সুলতানের সাথে সৈয়দী মওলার তর্ক শুরু হয়। আলেমদের একটি দল সৈয়দী মওলার প্রতি বিরূপ ছিলেন। সুলতান সৈয়দী মওলার বিরোধী শেখ আবু বকর তুসী হায়দরী নামের অন্য একজন দরবেশকে দলবলসহ দরবারে হাজির রাখেন। সুলতান তাদেরকে লক্ষ্য করে সৈয়দীর বিচার করতে বলেন। এতে তাদের একজন ছুরি নিয়ে সৈয়দী মওলার ওপর আক্রমন করে। এতে সৈয়দী মওলা আহত হন। আগে বলেছিলাম, সুলতান জালাল উদ্দীনের বড় পুত্র আরকলি খান সৈয়দী মওলার ভক্ত ছিলেন। সৈয়দী মওলা তাকে পুত্র মনে করতেন। সেই আরকলি খান সৈয়দী মওলার উপর আক্রমনের জন্য হাতীর মাহুতদের ইঙ্গিত দিলেন। রাজকীয় হাতী এগিয়ে এসে সৈয়দী মওলাকে পায়ের নিচে ফেলে হত্যা করে।
ঐতিহাসিকরা বলেছেন, জালালুদ্দীন সুলতান হিসেবে দয়ালু, নম্র ও সদাশয় ছিলেন। কারো প্রতিশোধ নিতেন না। মাফ করে দিতেন। তবে বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র শুনে স্থির থাকতে পারেন নি। দিল্লীর সুলতানি দরবার একজন দরবেশের রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলো। এরপরের ইতিহাস অত্যন্ত করুণ। চলুন শুনে আসি সুলতান জালাল উদ্দীন খিলজির আমলে সৈয়দী মওলাকে শহীদ করার পর কী হয়েছিল।
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দিন বারানী লিখেছেন, ‘আমি নিজ কানে শুনেছি, সৈয়দী মওলার নিহত হওয়ার পর আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। দিল্লী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এর পর থেকে সুলতান জালাল উদ্দিনের বাদশাহী বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। জ্ঞানীরা বলেছেন, দরবেশ হত্যা ভাল কাজ নয়। এটা কোন বাদশাহের পক্ষেই কল্যাণকর হয় না। সৈয়দী মওলার নিহত হওয়ার পর থেকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। দিল্লীতে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে বিভিন্ন রাজ্য হতে হিন্দুরা পরিবার পরিজন নিয়ে দলে দলে দিল্লীতে আসতে থাকে। কোন খাবার না পেয়ে ক্ষুধার তাড়নায় বিশ ত্রিশ জন একত্রিত হয়ে যমুনার গর্ভে আত্মবিসর্জন দিতে আরম্ভ করে। আর অন্যদিকে সুলতান জালাল উদ্দিনের রাজমহল অস্থির হয়ে ওঠে।পরিবারে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।’
চলুন সুলতান জালাল উদ্দীন খিলজির শেষ পরিণতি জেনে আসি।
সুলতান জালাল উদ্দীনের এক ভাইয়ের নাম ছিল আলাউদ্দিন সিহাব। তিনি মারা গেলে চার শিশুপুত্রকে সুলতান জালাল উদ্দীন লালন পালন করেন। এদের মধ্যে আলী গুরশাপ ও আলমাস বেগ বড় হলে তাদের সাথে নিজের দুই কন্যার বিয়ে দেন। দিল্লীর ক্ষমতা পাওয়ার পর আলী গুরশাপকে আমিরই তুজুগ বা অনুষ্ঠান মন্ত্রী এবং আলমাস বেগকে আখোর বেক বা ঘোড়া মন্ত্রী বানানো হয়। পরে আলী গুরশাপকে কোড়া ও অযোধ্যার কেতার দায়িত্ব দেয়া হয়।
সুলতান জালাল উদ্দীনের স্ত্রীর নাম ছিল মালিকা ই জাহান। তার কথায় আশি বছরের বৃদ্ধ সুলতান উঠতেন বসতেন। আলী গুরশাপ তার শাশুড়ি মালিকা জাহান ও স্ত্রীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেলেন। সুলতানের কাছে বলতে পারলেন না। অন্যদিকে সুলতানের কন্যা তার স্বামী আলী গুরশাপের বিষয়ে সতর্ক হতে বললেও সুলতান তাতে কর্ণপাত করলেন না।
আলী গুরশাপ তাদের প্রভাব ছিন্ন করে দূরে কোথাও চলে যেতে মনস্থির করলেন। এর মধ্যে আলী গুরশাপ ভিলসা অভিযান করে প্রচুর ধনরত্ন সুলতানের দরবারে হাজির করেন। তিনি সুলতানকে কোড়া ও অযোধ্যার রাজস্ব প্রেরণ থেকে মুক্তি চাইলেন। এর অর্থ দিয়ে তিনি সৈন্য সংগ্রহ করবেন। এরপর চান্দেরি ও আশপাশের এলাকা দখল করে সুলতানের অধীনে নিয়ে আসবেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত ধনসম্পদ সুলতানের দরবারে এনে হাজির করবেন। সুলতান আরো সম্পদের লোভে তাকে রাজস্ব থেকে অব্যাহতি দিলেন।
আর ওদিকে আলী গুরশাপ কোড়া ফিরে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে চার হাজার অশ্বারোহী ও দুই হাজার পদাতিক সৈন্য সংগ্রহ করেন। সুলতানের অজান্তে ধনসম্পদে পূর্ণ দেবগিরি আক্রমনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সেকালে সকল কেতাদের দিল্লীতে নিয়মিত খবর পাঠাতে হতো। আলী গুরশাপ নিজের বাধ্যগত চাচাকে ভুয়া সংবাদ প্রেরণের দায়িত্ব দিয়ে দেবগিরি আক্রমন করতে গেলেন। খুব সহজেই রাজা রামদেবকে পরাজিত করে দেবগিরি দখল করেন।
ঐতিহাসিকরা বলেন, দেবগিরি থেকে এত সম্পদ লুণ্ঠন করা হয় যে, তা রামদেবের পিলখানার তিনশ হাতি ও কয়েক হাজার ঘোড়াকে সে সব সম্পদ বহন করতে হয়। এর মধ্যে কোহিনুর হিরাও ছিল। একসময় সুলতান দেবগিরি দখল ও সম্পদ লুণ্ঠনের বিষয়ে জানতে পারলেন। তিনি সভাসদদের কাছে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ চাইলেন। তার প্রধান পরামর্শদাতা আহমদ চপ দ্রুত সেনাবাহিনীসহ এগিয়ে গিয়ে আলী গুরশাপকে সম্পদ প্রদানে বাধ্য করার পরামর্শ দিলেন। সুলতানের এ পরামর্শ পছন্দ হলোনা। তিনি অন্য সভাসদদের কাছ থেকে নিজের মন মতো পরামর্শ গ্রহণ করেন। আহমদ চপ তখন একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন, “যখন মানুষের দুর্ভাগ্য উপস্থিত হয়, তখন সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায়।”
এর মধ্যে আলী গুরশাপ প্রতারণাপূর্ণ এক চিঠি সুলতানের কাছে পাঠালেন। তাতে বললেন, আমি বছরের বেশি সময় ধরে বিনা অনুমতিতে যুদ্ধে ছিলাম। খবর দিতে পারিনি৷ আমার অনুপস্থিতিতে অনেকেই সুলতানের কানভারি করেছেন। সুলতানের অভয় বাণি পেলে, সকল সম্পদ সুলতানের পায়ের কাছে এনে হাজির করবো। না হলে বিষপূর্ণ পাত্র নিয়ে বসে রয়েছি।
সুলতানের রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা তখন খারাপ ছিল। তিনি সম্পদের লোভে পড়ে গেলেন। আলী গুরশাপকে সময় দিলেন। আর আলী গুরশাপ ওই সুযোগে নিজ চাচা ও শ্বশুড়কে হত্যার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এর মধ্যে গুরশাপ নিজের ভাই আলমাস বেগকে নিজের কাছে নিয়ে নিলেন। সুলতান জালাল উদ্দীন ষড়যন্ত্রের কিছুই বুঝতে পারলেন না। অন্যদের কথাও কানে নিলেন না। তিনি এক হাজার সৈন্য নিয়ে কোড়ার উদ্দেশ্যে বজরাতে চেপে বসলেন। আর আহমদ চপকে সেনাবাহিনীর প্রধান করে স্খল পথে কোড়ায় যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।
রমজান মাস। বর্ষাকাল। চারদিকে পানি। সুলতানের বজরা তখন গঙ্গা নদীতে। অন্যদিকে আল গুরশাপ হাতি ঘোড়া সহ সব সম্পদ নিয়ে কোড়া ছেড়ে গঙ্গা নদী পার হলেন। তারা কোড়া ও মানিকপুরের মাঝে একটি স্থানে নদীর তীরে অবস্থান গ্রহণ করলেন। আলী গুরশাপ তার ভাই আলমাস বেগকে নৌকায় করে সুলতানের কাছে পাঠালেন। যাতে তার সাথে এক হাজার সৈন্য কোন কাজে না লাগে। আলমাস বেগ সুলতানের কাছে গিয়ে বললেন, আমি ভাইকে সান্ত্বনা দিয়েছি। যাতে সে নিজেকে শেষ না করে। সুলতানের সৈন্য দেখলে তার মনে ভয় ঢুকবে। সে নিজেকে শেষ করে দিতে পারে। তার কথামতো সুলতান সৈন্যদের নদীর এপারে রেখে নিজে একা একটি নৌকায় গঙ্গা নদী পার হলেন। সুলতান দেখলেন, আলী গুরশাপ হাতি ঘোড়ায় সম্পদসহ নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে রয়েছে। সঙ্গীরা বুঝতে পারলো, তাদের জীবন শেষ। সাক্ষাতের এ কোন পন্থা। আলমাস বেগ বললেন, আমার ভাইয়ের ইচ্ছা, তার অধীনস্থ সৈন্যরা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সুলতানকে সালাম জানিয়ে ভূমি চুম্বন করবে। আসন্ন মৃত্যু সুলতানকে তখন অন্ধ করে ফেলেছে। তিনি বললেন, আমি রোজা রেখে এতদূর এসেছি। আর আলী গুরশাপ কী একটু এগিয়েও আসতে পারলোনা। আলমাস বেগ, তাকে বুঝান। ইফতার প্রস্তুত রয়েছে। আপনি সেখানে পৌঁছার পর সালামের পর ইফতারের সময় হলেই সবাই একসাথে ইফতার করবে। সুলতান সামনে রাখা কোরআন পড়ছেন। নৌকা এগিয়ে যায়। অন্যরাও মুত্যু সামনে দেখতে পেয়ে সুরা কালাম যে যা পারেন পড়তে থাকেন। একপর্যায়ে অস্ত্রবিহীন সুলতান নৌকায় করে তীরে গিয়ে পৌঁছান।
জিয়া উদ্দীন বারানী উল্লেখ করেন, সুলতান তীরে গিয়ে পৌঁছালে আলী গুরশাপ এসে সুলতানের পদচুম্বন করেন। সুলতান তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। বললেন, ছোটবেলায় তো এই বুক ছাড়া থাকতে পারতেনা। এখন তাকেই এত ভয় পাচ্ছো। নিজের ছেলেকে কী কেউ হত্যা করে? এসব কথা বলতে বলেত সুলতান আলী গুরশাপসহ নৌকায় উঠতে গেলেন। এসময় পূর্ব পরিকল্পনামতো মাহমুদ সালেম নামের এক ব্যক্তি সুলতানকে তরবারি দিয়ে আঘাত করে। রোজাদার বৃদ্ধ সুলতান একটু আহত হয়ে নদীর দিকে দৌড় দিলেন। চিৎকার দিয়ে বললেন, হায় দুর্ভাগা আলী! তুই এ কী করলি! এখতিয়ার উদ্দীন নামের আরেকজন সুলতানকে আর কথা বলার সুযোগ দিলোনা। ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে তার মাথা আলাদা করে ফেললো। জালাল উদ্দীন সদাশয় হয়েও দরবেশ হত্যার পরিণতি ভোগ করলেন। পরে আলী গুরশাপ জালাল উদ্দীনের পুত্রদের হটিয়ে দিল্লীর ক্ষমতা দখল করেন। ইনিই ইতিহাসের আলাউদ্দীন খিলজি। তার নৃশংশতা, হত্যা ঐতিহাসিকরা যেভাবে বর্ণনা করেছেন, তাতে কান্নার শব্দ শুনা যায়। তার সময়েই দিল্লীতে আত্মার চিকিৎসক, সুলতান উল মাশায়েখ, মেহবুব-এ-এলাহী- খাজা সৈয়দ নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দিল্লীতে আগমন করেন। আলাউদ্দিন খিলজি নৃশংস হলেও আউলিয়ার ভক্ত ছিলেন। কোন দিন সময় পেলে এ বিষয়ে লিখবো।
১৩ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৪৯
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: জিয়া উদ্দীন বারানী যেভাবে লিখে গেছেন তাতে দরবেশ বাইরেও যেতেন না। অথচ মানুষকে অঢেল খাওয়াতেন। টাকা পয়সা দিতেন। তিনি দৃশ্যত কারো কাছ থেকে টাকা পয়সা নিতেন না। তার দরবারে টাকা দেয়ার প্রথাও ছিলনা। যেসব আমীর ওমরাহ তার দরবারে যেতেন তাদেরও এত অর্থ ছিলনা। তিনি এত টাকা কোথায় পেতেন সেটাই রহস্যজনক। ইতিহাসবিদরা এ বিষয়ে আশ্চর্য হয়েছেন।
ধন্যবাদ এতবড় লেখা পড়ার জন্য।
২| ১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:২৩
কামাল১৮ বলেছেন: ইসলামে এমন বহু গল্প আছে যার কোন প্রমান নাই।এখনো প্রতিদিন এমন অনেক গল্প তৈরি হয়।প্রমান করতে গেলে কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না।তেমনি গল্প মেরাজ ও চাঁদ দ্বিখন্ডিত।
এই গল্পটি বলার উদ্দেশ্য বুঝলাম না।
১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:৩১
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: সৈয়দি মাওলার এই গল্প তো ঐতিহাসিক সত্য।
৩| ১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:৩৪
ঢাকার লোক বলেছেন: দরবেশ আউলিয়াদের ব্যাপার স্যাপারই সব রহস্যে ভরপুর ! একটা জিনিস অবাক হই, নবী রাসূল যেমন প্রায় সবাই মধ্যপ্রচ্যে এসেছেন তেমনি যত দরবেশ আউলিয়াদের আবির্ভাব, কর্মকাণ্ডও আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশেই সবচেয়ে বেশি !
ও একটা কথা, আপনার ভূমি বিষয়ক প্রশ্নোত্তর লেখাটিতে ২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর সম্বন্ধে আমি একটা প্রশ্ন করেছিলাম, সুযোগ হলে যদি একটু জানান, খুবই খুশি হবো। ধন্যবাদ !
১৪ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:১৯
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: এদেশে দরবেশ আউলিয়াদের অনেকেই ইরানি ছিলেন। সৈয়দী মাওলাও ইরানি ছিলেন। ইরানে তখন শিয়া তরভারসন চলছিল। ইরান একসময় সুন্নী প্রধান ছিল। শিয়ারা ক্ষমতায় গিয়ে জোর করে সুন্নীদের "ধর্মান্তরিত" করেছে। কেউ শিয়া হতে না চাইলে তাকে মেরে ফেলেছে। নয়তো দেশত্যাগে বাধ্য করেছে। সাফাদী রাজবংশের ক্ষমতাকালে এই কনভারশর সম্পূর্ণ হয়। উইকিপিডিয়াতে বিস্তারিত পাবেন। ওই সময় বাধ্য হয়ে খোদাভীরু সুন্নীরা ইরান ত্যাগ করে এই উপমহাদেশে চলে আসেন। হযরত আবদুল কাদের জিলানী রাঃ এর নাতিও এদেশে এসেছিলেন ওই কারণে।
যাই হোক অনেক মন্তব্যের জবাব দিতে পারিনি। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। সময় পাইনা। আপনার প্রশ্নের জবাবটা দিতে আমাকে অনেক যাচাই বাছাই করতে হবে।
অনেক কৃতজ্ঞতা।
৪| ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১:২৮
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: সৈয়দী মওলা যাদুবিদ্যা জানেন।
........................................................
কোন প্রকৃত মুসলিম যাদুবিদ্যা জানেনা ।
অর্থের উৎস জানা না গেলে ধরে নিতে হবে
তা অবৈধ পথে অর্জন, সুতরাং তিনি সত্যিকারের দরবেশ ছিলেন কিনা সন্দেহ !!!
প্রকৃত দরবেশ ক্ষমতার মসনদে বসবে না ।
১৬ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:১৪
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: সৈয়দী মাওলা একজন আধ্যাত্মিক পুরুষ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ তার বেলায়ত সম্পর্কে শেখ ফরিদ রঃ এর সত্যায়ন রয়েছে।
সৈয়দী মাওলা কারো কাছ থেকে অর্থ চাইতেন না। বরং সবাইকে দিতেন। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখলের অভিযোগ প্রমাণিত নয়। তবে তার প্রতি মানুষের ভক্তি এবং আনুগত্য সুলতানের জন্য থ্রেট ছিল। ঐতিহাসিকরা তাকে রহস্য পুরুষ হিসেবেই দেখেছেন।
৫| ২০ শে জুন, ২০২৪ রাত ১২:১১
মুসাফির নামা বলেছেন: মানুষ খুবই বিছিত্র,সে রহস্য সৃষ্টি করে,প্রতারণা করে কিন্তু প্রকৃত সত্য গোপণ করে।তবে মানুষরে আল্লাহ গোপণ শক্তি দিয়েছেন কদাচিৎ।
২০ শে জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২০
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: যাই বলুন মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক একটি শক্তি রয়েছে। তবে সৈয়দী মাওলার রহস্য কেউ উন্মোচন করতে পারেনি।
৬| ০৮ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ২:০৮
আরাফআহনাফ বলেছেন: সৈয়দী মাওলা রহস্যই রয়ে গেলেন।
কত কিছু ইতিহাসের পাতায় - কতটুকুইবা আমরা জানি?!
১৪ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ১১:২৬
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: আসলেই রহস্য থেকে গেলেন।
৭| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:১২
আলামিন১০৪ বলেছেন: পড়লাম। তথ্যসুত্রসমূহ, মন্তব্যের উত্তরে দেয়ার অনুরোধ রইল
১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:০১
সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: তথ্যসূত্র লেখায় উল্লেখ করেছি। জিয়া উদ্দীন বারারীর তারিখ ই ফিরোজশাহী বইটি পড়লেই এই বিষয়ে বিস্তারিত পাওয়া যাবে। ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৭
আরইউ বলেছেন:
সায়েমুজজ্জামান,
লেখাটা একটু বড় হয়ে গেছে; হয়ত পর্ব আকারে দিলে ভালো হত। অবশ্য আপনি সম্ভবত একই লেখায় ক্রিয়া (দরবেশকে হত্যা) ও তার প্রতিক্রিয়া (সুলতানের হত্যা) দেখাতে চেয়েছেন।
যাহোক, দরবেশের আয়ের উৎস কী ছিল? পৈতৃকসূত্রে পাওয়া সম্পত্তি? উনি যে স্থানে যেতে বলতেন সেখানে টাকা পাওয়া যেত কী করে? যারা যেতেন আর এসে বলতেন আসলেই টাকা পাওয়া গেছে তারা হয়ত দরবেশেরই লোক ছিল। এ বিষয়ে কোন ব্যখ্যা কোথাও পেয়েছেন?
ধন্যবাদ। ভালো থাকুন!