নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। পরে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ২৮ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেক্টর (সচিব) এর একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপিতে লিয়েনে চাকরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্প সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷বর্তমানে সরকারের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যেকোনো প্রয়োজনে ইমেইল করতে পারেন। [email protected]
বহুদিন আগে রেলওয়ের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিলো। রেলওয়েতে কর্মরত পিতা ও পূত্রের ছবি। দুজন দুটো ট্রেনে উল্টাদিকে যাচ্ছিলেন। পিতা ও পূত্রের ছবিটা মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছিলো। একই পোষাকে দুজন। প্রশংসায় ভেসেছিলেন তারা। তবে এ ছবিটার পেছনে একটা গল্প আছে। সেটা জানতে পারলে মানুষের কাছে ছবিটা কর্মস্থলে পিতা পূত্রের মিলন নয় একটা প্রতিষ্ঠানে বংশ পরম্পরায় কীভাবে চাকরি করছে তার একটা দলীল হিসেবে সাব্যস্থ হতো। সেটা কীভাবে!
রেলওয়েতে ১৪ গ্রেড থেকে ২০ গ্রেড পর্যন্ত একটা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখেছিলাম। সেখানে প্রথমেই এতিম বা প্রতিবন্ধীদের ১০ ভাগ কোটা দিতে হয়। বাকী ৯০ ভাগের ৪০ ভাগ পোষ্য কোটা। তারপর ছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা ৩০ ভাগ। আনসার ভিডিপি সদস্যদের জন্য কোটা ১০ ভাগ, মহিলাদের জন্য কোটা ১৫ ভাগ, উপজাতি ৫ ভাগ।
নিয়োগটা ছিল ৩য় বুকিং সহকারীর। পদসংখ্যা ছিল ১১৭ টি। চলুন জেনে আসি তারা কীভাবে এই ১১৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। প্রথমে এতিম/ প্রতিবন্ধী কোটায় ১১.৭০ জন। পোষ্য কোটায় ৪২.১৫ জন। মুক্তিযোদ্ধা/ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ১৮.৯৮ জন। আনসার ভিডিপির সদস্য ৬.৩১ জন। মহিলা ৯.৩৭ জন। উপজাতি ৩.১৩ জন। জেলা ভিত্তিক সাধারণ কোটায় ৪০ জন। এই সাধারণ কোটাটাও জেলার জনসংখ্যা অনুযায়ী বিভক্ত। বরিশাল জেলায় প্রাপ্য হয়েছিল পয়েন্ট ৪৮ জন। অর্ধেক জনেরও কম। বরিশালের দশজন পরীক্ষায় ১০০ নম্বর পেলেও নিয়োগ পেয়েছে আধা জন। অন্য জেলায় পঞ্চাশ পেলেও নিয়োগ পাবে। এজন্য এই জেলার সাধারণ কোটাটাকেও মেধার কোটা বলা যায়না।
এই তালিকায় সবার শীর্ষে পোষ্য কোটায় নিয়োগ পেয়েছে ৪২ জনেরও বেশি। মাথা নষ্ট। এখন এই রেলওয়েতে বাপ চাকরি করছে। সন্তান চাকরি করছে। নাতি চাকরি করছে। লে হালুয়া।
স্বাধীনতার পর থেকে এই রকম নিয়োগে রেলওয়েতে একটা গোষ্ঠি তৈরি হয়েছে। এরা খুব শক্তিশালি। মেধার জোর নেই। সেবার মান নেই। তবে গোষ্ঠিগত ঐক্য রয়েছে। তারা রেলওয়ে অচল করে দিতে পারে। সেটাই তারা করেছে। ২০ কোটি মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছে। কত বড় সাহস হলে একটা রাষ্ট্রীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে তারা শাটডাউন করে দিতে পারে। কারণ একটাই। এটাকে তারা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান মনে করছেনা। নিজেদের পৈত্রিক সম্পদ মনে করছে। কারণ চাকরিটা তারা পৈত্রিকভাবেই পেয়েছে।
যতদূর জানি, বাংলাদেশ রেলওয়েতে ক্যাডার বহির্ভূত ৬৪৮টি পদ রয়েছে। ৮ম থেকে ২০ তম গ্রেড পর্যন্ত। এতে বংশানুক্রমিকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই পোষ্য কোটা বণ্টনের ফলে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শ্রেণির তথা দিনমজুর, শ্রমিক, রিকশাচালক, কৃষকের সরকারি চাকরিপ্রত্যাশী সন্তানরা রেলওয়েতে চাকরি পায়নি। তাদের প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
রেলওয়ের এখন যারা আন্দোলন করছে তারা ম্যনেজমেন্টের কেউ নন। ম্যানেজমেন্ট কাজ বন্ধ করলে কিছুই আসতো যেতোনা। আন্দোলনকারীদের বাদ দিয়ে অন্য ডিপার্টমেন্ট থেকেও লোক নিয়েও চালানো সম্ভব। তবে চালক ছাড়া ট্রেন চলবেনা। এই সুযোগটাই তারা গ্রহণ করেছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন চলাচল।
সরকারি কর্মচারিদের কাগজের দাবি ছাড়া কর্মবিরতিকে ফৌজদারি শাস্তির আওতায় আনা যেতে পারে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হওয়া উচিত। যাদের টাকায় রক্ত মাংস তাদেরকে যারা ভোগান্তিতে ফেলে এরা কী সেবা দেয় তা সহজেই বুঝা যায়।
©somewhere in net ltd.