নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখালিখি, বই পড়া, খেলাধুলা, ঘুম এইসব কিছুই ভালোবাসি ।

সাফাত আহমদ চৌধুরী

স্বপ্নতে বেঁচে থাকার নিশ্বাস খুঁজি

সাফাত আহমদ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন বাবার গল্প

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৫৯

বিরাট একটা ভাগ্যে বলতে পারেন, নাহলে ওনার মত একজন মানুষ আমার বাবা হতে পারে । পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, আমার বাবা অনেক বেশি ভালো। কোন বাবার সাথে আমি তুলনা করবো না । একদিন আমি ছোট ভাইটিকে জিজ্ঞেস করতেছি, উনি যদি আমার বাবা না হয়ে অন্য কেউ হতো, মনে করেন, এলাকার কোন পরিচিত লোক , তবুও উনার দারুণ প্রশংসা করতাম । এইরকম স্বতন্ত্র চরিত্রের অধিকারি কোন মানুষকে আমি আমার জীবনে দেখি নাই । আমি যখন রাস্তা দিয়ে হেটে যেতাম, উনি একবার ও ফিরে তাকাতেন না, উনার ছেলে উনার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে, খেয়ালই করতেন না । পিছনে যদি বাজ ও পরে, তবুও ফিরে তাকাবেন না, আমি নিশ্চিত । একটা মানুষ কেমনে ওইরকম হয়, ক্লাস সেভেনে উঠার পর কোন ধরণের খেলাধুলা করেন নাই । একদম কম কথা বলতেন, শৈশবকাল থেকে। জীবনে কাউকে গালি দেন নাই, গালি তো দূরের কথা তর্ক পর্যন্ত করতেন না আমার বাবা । পড়ালেখা করেছেন করাচিতে, দাদা যখন পেশোয়ারে ছিলেন, তখন শুধু বাংলাদেশে ছিলেন । আবার এসএসসির পর বাংলাদেশে ফিরে আসেন । ইন্টারমিডিয়েটে থাকাকালীন আমার বাবার একটা ফটো দেখছিলাম, সবার মাথা খালি, কিন্তু আমার বাবার মাথায় রাসূলের সুন্নাত । জীবনের বেশিরভাগ সময় অনেক বেশী কষ্ট করেছেন আমার বাবা । এখন সুখে আছেন কিনা, জানা নেই । আমার বাবাকে আমি ছোটবেলা অনেক কম দেখেছি, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার রাত এই সময়টুকু দেখতাম প্রতি সপ্তাহে । বাবার শারিরীক উপস্থিতি আমার জন্য অনেক বেশি আনন্দের ছিলো । আজ ও পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাতটা আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয়, এর একমাত্র কারণ হলো, এইরাতে আমার বাবা ব্যাংক থেকে আসতেন । রবিবার সকালটা এখন বিরক্তিকর লাগে না, তবে আগে লাগতো, কারণ রবিবার সকালে আমার বাবা, আমাকে ঘুমে রেখে ব্যাংকে চলে যেতো । সবচাইতে বেশি অবাক লাগতো, শীতকালে ও সকাল ৭ টায় গোসল ।


আমার কাছে আমার বাবা আমার বন্ধুর মতো । বাবার হাতে একটি এক্সিডেন্টের দাগ আছে, আমি জিজ্ঞেস করতাম, ওইটা কি আব্বা । বাবা বলতেন ওইটা কাকা । আমি একই প্রশ্ন বারবার করতাম । ক্লাস টেন পর্যন্ত, নানান ধরণের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতাম, যেই প্রশ্ন করতাম, সেটারই উত্তর পেতাম । আমার বাবা আমার ডিকশোনারি, যেই শব্দ জিজ্ঞেস করতাম, অর্থ বলে দিতেন । আমার বাবা আমাকে ক্লাস টেনে উঠার পর ও কেমিস্ট্রি পড়িয়েছেন । আর উনার পড়ানোর সুবাধে আমি ক্লাসে হাইয়েস্ট মার্কস পেয়ে ছিলাম । আমার রসায়নের ভিত্তি আমার বাবা গড়ে দিয়েছেন, আমি ইংরেজি সাহিত্যর ছাত্র, সেই ইংরেজির ও ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন আমার বাবা । আমি ইসলাম শিক্ষায় সবসময় এ+ পেতাম, এর কারণ আমার প্রশ্নের বেশিরভাগ প্রশ্ন ছিলো ধর্মভিত্তিক । নানান প্রশ্ন করে বাবাকে ব্যস্ত রাখতাম সবসময় । কত সাহাবীর গল্প শুনেছি বাবার মুখে, আজো সেই সাহাবীর গল্পগুলো কানে ভাসে । আমার ধর্মের প্রতি আজ যেই ভালোবাসা তৈরি হয়েছে, আজ আমি আমার ধর্ম সম্পর্কে এতকিছু জানি, সেটার একমাত্র কারণ হলো আমার বাবা ।


এখন আসি বাবার জীবনের ট্রাজেডিগুলা নিয়ে, বাবার জীবনের সবচাইতে বড় ট্রাজেডি গুলোর একটি হলো, এক মাসের ভিতর তিনবার হার্ট এট্যাক, বিষয়টিকে বাবা তেমন গুরুত্বের চোখে দেখেন নাই, পরে যখন এনজয়গ্রাম টেস্ট হলো, তারপর বাবা বুঝতে পারলেন, উনার হার্ট এট্যাক হয়েছে পর পর তিনবার, এবং হার্ট ব্লক হয়েছে, সুতরাং বাইপাস অপারেশন লাগবে । তখন আমার মায়ের অবস্থা খুবই করুণ ছিলো, আমি তখন পিচ্ছি ছিলাম, খুব একটা বুঝি নাই, কাঁদি ও নাই । আমার মা তখন খুব কষ্ট করেছিলো, যতটুকু মনে পড়ে । যাই হোক আল্লাহর অনুগ্রহে হাজারো মানুষের দোয়ায় আমার বাবা সুস্থ হোন । আমার বাবার অসুস্থতায় যারা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, আমি তাদের ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবো না । বাইপাস অপারেশন এর পর দীর্ঘদিন বাবা অসুস্থ ছিলেন ,তারপর আস্তে আস্তে সুস্থ হোন আমার বাবা । সুস্থ হওয়ার পর দিনগুলো ভালোই যাচ্ছিল আমার বাবার ।

চাকরি শেষে যখন পেনশনে গেলেন, তারপর আমার বাবা নিয়্যাত করলো হজ্বে যেতে, তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে আমার বাবা হজ্বে গেলো, সেখানে গিয়ে আমার বাবা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লো । মদিনায় যতদিন ছিলেন, সুস্থ ছিলেন, মক্কায় যাওয়ার পর তিনি অসুস্থ হোন । বাবা যখন হজ্বে যান, তখন আমি মোটামোটি পরিপক্ক একটি ছেলে, তাই সেই সময়ের কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে । আমার দুলাভাই তখন স্ট্যাটাস দিলো, আমার শশুর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, ডাক্তার ও বলছিলো, বাচার সম্ভাবনা কম । আমি ভাবছিলাম, বাবা যদিও বেঁচে থাকেন, তাহলে আর কোনদিন সুস্থ বাবাকে দেখবো না ।

শুনেন তাহলে, শরীরের রক্তের পরিমাণ একদম সামান্য ছিলো, ব্রেনের সেলগুলো আস্তে আস্তে অকার্যকর হয়ে পড়ছিলো, চোখ খুলে ও আমার বাবা কাউকে চিনতো না, তিনি তখন স্বপ্নের মধ্যে ছিলেন । ভাবলাম, নিয়তিকে মেনে নিতেই হবে, কিছুই করার নেই । বাবার অসুস্থতার জন্য অনেক মসজিদে দোয়া হলো, হাজারো মানুষ আমার বাবার জন্য দোয়া করেছিলো একদম অন্তর থেকে, হাজার বললে ভুল হবে, যারা আমার বাবাকে চিনে সবাই দোয়া করেছিলো, তাইতো সবাই দেখা হলেই বলতো তোমার আব্বু কি সুস্থ হয়েছেন ?

যাই হোক, সব ব্রেন সেলগুলো আবার কার্যকর হতে শুরু করলো, তার শরীরের উন্নতি হতে শুরু করলো ।কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর বেডে করে বাংলাদেশে আসলেন । এইখানে আসার পর দেখলাম, কথা বলতে পারেন, তবে শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অনেক দাগ, চামড়া ঝুলানো । বাবার এই অবস্থা দেখার পর, আমার চোখের জল আর কোন প্রকার বাঁধা মানলো না । এখনো মানতেছে না । বাবাকে দেখে আমি আমার ছাত্রাবাসে চলে গেলাম , সেখান থেকে নিয়মিত খবর নিতাম । আস্তে আস্তে আমার বাবা আরো সুস্থ হলেন, শুয়া থেকে বসা শিখলেন, অনেক স্ট্রাগল করে । তারপর আস্তে আস্তে দাড়ানোর শক্তি পেলেন, আরো কয়েকদিন পর কিছু ধরে হাটার শক্তি পেলেন, তারপর লাটি দিয়ে হাটা শিখলেন বাচ্ছাদের মতো । এরপর আমার বাবা কোন কিছু ছাড়াই, পুরোপুরি হাটা শিখলেন, এইটা শুনে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম । জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে আমার বাবা পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন । হাজারো মানুষের দোয়ায় চোখের সামনে, আল্লাহতায়ালা মিরাক্কেল দেখালেন, যে আমি সুস্থ করে দিয়েছি তুমার বাবাকে । এখনো আমার বাবা পরিবারের সব দায়িত্ব নিতে পারেন, ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়তে পারেন মসজিদে গিয়ে, এখন যেই দেখে ২ বছর পর সেই বলে কেমনে সম্ভব এতটা সুস্থতা । আমার বাবা সুস্থ হয়ে যতটা নিজের উপকার করেছেন, তার চাইতে আমাদের পরিবারের বেশি উপকার হয়েছে । কারণ, আমার পরিবারের কেউই এখনো দায়িত্ব নেয়া শিখেন নাই , তখন যদি আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়তো, তাহলে আমাদের পরিবারের কি অবস্থা হতো, একমাত্র আল্লাহ জানে । আমি যতদিন পূর্ণ ম্যাচুরিটি সম্পন্ন লোক হবো না, ততদিন আল্লাহর কাছে চাইবো, আমার বাবা যেনো পুরোপুরি সুস্থ থাকেন ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:১১

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: অনেক অনেক দোয়া রইলো।
আপনার বাবা র প্রতি।
বাবা বেচে থাক
আমার আপনার সবার।

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:১৪

সাফাত আহমদ চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া ।

২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: পৃথিবীতে ভালো বাবা আছেন, দুষ্ট বাবাও আছেন।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:০৪

সাফাত আহমদ চৌধুরী বলেছেন: পৃথিবীর সব খারাপ ছেলেরা ও তো একদিন বাবা হতে পারে । বাবা হলেই যে একজন মানুষ ভালো হয়ে যায়, তা কিন্তু নয় । আমি আপনি ও একদিন বাবা হতে পারি, সুতরাং ভালো বাবা দুষ্ট বাবা, সবকিছুই থাকবেন । যাই হোক আমার বাবা জোস একজন ব্যাক্তি, একদম সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি ।

৩| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৫৩

মাহের ইসলাম বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ্‌।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:০৫

সাফাত আহমদ চৌধুরী বলেছেন: এটা কোন গল্প না, এটা আমার বাবার ছায়া ।

৪| ০১ লা জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৩৮

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: বাবা ভালো থাকুক।

০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ৯:০৫

সাফাত আহমদ চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.