নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এক খণ্ড সাদা পাতায় পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম ধরেছি। এক খণ্ড কাঁদা মাটিতে পুরো সবুজ ফলাবো বলে হাল বেয়েছি। এক খণ্ড রঙিন কাগজে পুরো বিশ্ব আঁকবো বলে রং তুলি এনেছি। এক খণ্ড হৃদয়ে পুরো দুনিয়া পুষবো বলে দৃঢ়প্রত্যয়ি হয়েছি।

সাইফ নাদির

এক টুকরো কাগজে পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম হাতে বসে আছি

সাইফ নাদির › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুমিন, মুশরিক ও নাস্তিক

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:২১

স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের দিক থেকে পৃথিবীতে দুই শ্রেণির মানুষ রয়েছে। আস্তিক ও নাস্তিক। যারা পৃথিবীর স্রষ্টা ও পরিচালক আছে বলে বিশ্বাস করে এরা আস্তিক।

আর যারা দাবি করে পৃথিবীর কোন স্রষ্টা ও পরিচালক নেই বরং এই পৃথিবী প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে এবং অটোমেটিক্যালি পরিচালিত হচ্ছে তারা নাস্তিক। এরা নিরীশ্বরবাদী; পরকাল ও ঈশ্বর মানে না এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। এরা নিজেদেরকে মুক্তমনা বলে দাবি করে।

আস্তিক আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে, মুমিন ও মুশরিক।

মুমিন হচ্ছে তারা পৃথিবীর পরিচালক শুধু মাত্র একজনই আছে বলে বিশ্বাস করে যারা। অর্থাৎ আল্লাহই হচ্ছেন এই পৃথিবীর এক মাত্র পরিচালক। এক মাত্র স্রষ্টা।

মুশরিক হচ্ছে তারা যারা বিশ্বাস করে বিশ্ব জগতের পরিচালক একজন নয় বরং একাধিক পরিচালক রয়েছে।

আসুন আমরা সর্ব প্রথম মুমিন সম্পর্কে আলোচনা করি। ঈমানদার বা মুমিন হতে হলে তিনটি শর্ত পালন করতে হবে। প্রথমত জোবান দিয়ে আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। দ্বিতীয়ত অন্তর দিয়ে আল্লাহর একত্ববাদকে সত্যায়ন করতে হবে আর তৃতীয়ত সিস্টেমমত আমল করতে হবে।

কেউ পূর্ণ মুমিন হতে পারলে মহান আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখেরাতের সব ধরনের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা আসরের মধ্যে ইরশাদ করেন :

وَالْعَصْرِ۔ إِنَّ الْإِنْسٰنَ لَفِى خُسْرٍ۔إِلَّا الَّذِينَ ءَامَنُوا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ۔

By time, Indeed, mankind is in loss, Except for those who have believed and done righteous deeds and advised each other to truth and advised each other to patience.

অর্থাৎ, আসরের শপথ। নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তারা ছাড়া ঈমান আনে ও নেক আমল করে যারা। আর যারা নিজেরা সত্য- ন্যায়ের পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং অন্যকে থাকার উপদেশ দেয়। যারা নিজেরা ধৈর্য ধারন করে এবং অন্যকে ধৈর্য ধারনের উপদেশ দেয়। ( সূরা আসর)

এই সূরার মাধ্যমে বোঝা যায় যে, মহান আল্লাহ পূর্ণ মুমিন ব্যক্তিকে সমস্ত বিপদ থেকে হেফাযত করবেন। হোক সেটা দুনিয়াবি বিপদ বা পরকালের বিপদ। আর যারা পরকালের মহা বিপদ থেকে মুক্তি পাবে তাদেরচে’ ভাগ্যবান আর কে হতে পারে! কেউ-ই হতে পারে না।
মুমিন হতে পারলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া'লা আরো অসংখ্য অগণিত পুরস্কার দান করবেন।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ সূরা কাহাফের ১০৭-১০৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন :

إِنَّ الَّذِينَ ءَامَنُوا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنّٰتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا۔ خٰلِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا

Indeed, those who have believed and done righteous deeds - they will have the Gardens of Paradise as a lodging, Wherein they abide eternally. They will not desire from it any transfer.

অর্থাৎ, যারা ঈমান আনায়ন করেছে এবং নেক আমল করেছে তাদের মন জয় করার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল, কখনো স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না। ( সূরা কাহাফ- আয়াত ১০৭-১০৮)

এই আয়াতে কারিমা দ্বয়ের মাধ্যমে জানা যায় যে, ঈমানদারগণ জান্নাত লাভ করবে। এবং ঈমানের পূর্ণতার উপর ভিত্তি করে সবচে’ বড় জান্নাত, জান্নাতুল ফেরদাউস পুরস্কার হিসেবে লাভ করবে।
দেখুন, মহান আল্লাহ কত মেহেরবান! কত বেশি দয়া ও করুণার মালিক! তিনি মানব- দানবের জন্য জান্নাত বানিয়ে রেখেছেন আটটি কিন্তু জাহান্নাম বানিয়েছেন তিনি সাতটি। তার মানে হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা জিন ও ইনসানকে জান্নাত দান করতে চান। তবে আমরা অকৃতজ্ঞতার ঘৃণ্য পরিচয় দিয়ে চলেছি। সেই দয়াময় রবের নাফরমানি করে চলেছি। তাঁর দয়া- করুণা উপলব্ধি করার চেষ্টা আমরা কখনো করি না।
৮ টি জান্নাতের মধ্যে সর্ব বৃহৎ জান্নাত হচ্ছে জান্নাতুল ফেরদাউস। এভাবে পর্যায়ক্রমে দারুল মাকাম, জান্নাতুল মাওয়া, দারুল কারার, দারুস সালাম, জান্নাতুল আদন, দারুন নাঈম ও দারুল খুলদ বানিয়ে নেককারদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে পূর্ণাঙ্গ মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন...

আসুন, এবার আমরা মুশরিক সম্পর্কে আলোচনা করি।
যার অন্তরে সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারে শিরকীয়াতের অভিশপ্ত মতাদর্শ রয়েছে তাকে মুশরিক বলা হয়। এদের বিশ্বাস, বিশ্ব জগতের একাধিক পরিচালক রয়েছে। অর্থাৎ একজন প্রধান ইলাহের সাথে আরো ইলাহ রয়েছে। তারা সকলে মিলে গোটা বিশ্ব পরিচালনা করছে। এই মতাদর্শ সম্পূর্ণরূপে বাতিল ও ভ্রান্ত মতাদর্শ। এই ধরণের ভ্রান্ত বিশ্বাস যার হৃদয়ে থাকবে সে হবে কাফের।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ২২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন :

لَوْ كَانَ فِيهِمَآ ءَالِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا فَسُبْحٰنَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ

Had there been within the heavens and earth gods besides Allah, they both would have been ruined. So exalted is Allah, Lord of the Throne, above what they describe.

অর্থাৎ, যদি আসমান ও যমিনে আল্লাহ ছাড়া আরো একাধিক ইলাহ থাকত তাহলে আসমান ও যমিন ধ্বংস হয়ে যেত। সুতরাং আরশের মালিক আল্লাহ তাদের দেয়া অপবাদ থেকে চির পবিত্র। (সূরা আম্বিয়া-আয়াত ২২)
যেহেতু আসমান, যমিন ও বিশ্বজগতে যা কিছু আছে, তা সবই সুসৃঙ্খলভাবে চলছে সেহেতু এটা একথাই প্রমাণ করে যে, এগুলোর পরিচালক, নিয়ন্ত্রক একজন-ই হবেন। একাধিক নন।
এই আয়াতে কারিমা-ই প্রমাণ করছে বিশ্বজগতের পরিচালক একজন, তিনি হচ্ছেন রাব্বুল আলামিন, আল্লাহ।

বর্তমান বিশ্বে ইহুদী, খৃষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু ও এদের মত আকিদা যারা পোষণ করে তারা সকলেই মুশরিক।
মহান আল্লাহ ইহুদী ও খৃষ্টানদের ভ্রান্ত আকিদা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সূরা তাওবার ৩০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন :

وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللَّهِ وَقَالَتِ النَّصٰرَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللَّهِ ۖ ذٰلِكَ قَوْلُهُمْ بِأَفْوٰهِهِمْ ۖ يُضٰهِئُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَبْلُ ۚ قٰتَلَهُمُ اللَّهُ ۚ أَنّٰى يُؤْفَكُونَ

The Jews say, Ezra is the son of Allah ; and the Christians say, The Messiah is the son of Allah. That is their statement from their mouths; they imitate the saying of those who disbelieved [before them]. May Allah destroy them; how are they deluded?

অর্থাৎ, ইহুদীরা বলে উযাইর আল্লাহর পুত্র আর খৃষ্টানরা বলে ঈসা ইবনে মরয়ম আল্লাহর পুত্র। এটা তাদের মুখের কথা। এরা পূর্ববর্তী কাফেরদের মত কথা বলে। আল্লাহ এদেরকে ধ্বংস করুন, এদেকে যে কোথায় ঘোরানো ফেরানো হচ্ছে! (সূরা তাওবা- আয়াত ৩০)

এটা সম্পূর্ণরূপে ভ্রান্ত মতবাদ। কেননা, আল্লাহ তায়া'লা সন্তান-সন্ততি থেকে পবিত্র। তাঁর সাথে সন্তানের নিসবত করা সম্পূর্ণরূপে হারাম, এটা শিকর। এদের দাবি হচ্ছে, বিশ্বজগৎ পরিচালা করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালাকে উযাইর ও ঈসা সন্তান হিসেবে সাহায্য করে। যেহেতু পিতাকে সাহায্য করা সন্তানের কর্তব্য সেহেতু আল্লাহকে সাহায্য করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। এটা মহান আল্লাহর সাথে প্রকাশ্য নাফরমানি। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা ইখলাসে স্বীয় পরিচয় তুলে ধরেছেন। এবং তাঁর একক হওয়ার দলিল উপস্থাপন করেছেন।
আল্লাহ বলেন :

قل هو اللّه احد۔ اللّه الصمد۔ لم یلد و لم یولد و لم یکن له کفوا احد۔

Say, He is Allah, who is One, Allah, the Eternal Refuge. He neither begets nor is born, He neither begets nor is born.

অর্থাৎ, বলুন, আল্লাহ এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকে কেউ জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। (সূরা ইখলাস)

এই সূরাতে মহান আল্লাহ তাঁর একত্ববাদের ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং কেউ যদি তাঁর একত্ববাদের মধ্যে অন্য কারো দখলদারিত্ব আছে বলে দাবি করে বা মনে করে কিংবা তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরিক সাব্যস্ত করে তারচে’ নাফরমান তারচে' জালিম আর কে হতে পারে!
একইভাবে হিন্দু সম্প্রদায় আল্লাহর সাথে শিরক করে। তারা নিজ হাতে মাটি দিয়ে তাদের দেবদেবীর মূর্তি তৈরী করে। তাদের পূঁজা করে। এবং জোর দাবি করে যে, বিশ্বজগৎ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে এই সমস্ত দেবদেবীর অংশীদারিত্ব রয়েছে। ঈশ্বরের (আল্লাহ) সাথে তাদের একটা পার্টনারশিপ রয়েছে। এটাও শিরক, ভ্রান্ত মতবাদ। ভ্রষ্ট আকিদা। এরা মুশরিক। গোটা বিশ্বে এ ধরনের শিরকী মতাদর্শ যে সমস্ত ধর্মের লোকদের রয়েছে তারা সবাই মুশরিক। সৃষ্টিকর্তার সাথে শরীক সাব্যস্ত করা অনেক বড় অন্যায়, অনেক বড় জুলুম। হযরত লোকমান হাকিম স্বীয় পুত্রকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার উপদেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহর কাছে লোকমান হাকিমের উপদেশবাণী এত বেশি ভালো লেগেছে যে, তিনি সেই বাণী পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের সূরা লোকমানের ১৩ নম্বর আয়াতে কারিমায় লোকমান হাকিমের উপদেশবাণী উদ্ধৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,

یا بنی لا تشرك باللّه ان الشرك لظلم عظیم۔

O my son, do not associate [anything] with Allah. Indeed, association [with him] is great injustice.

হযরত লোকমান হাকিম বলছেন, হে আমার পুত্র! তুমি আল্লাহর সাথে শিরক করো না। নিশ্চয় শিরক অবশ্যই বড় জুলুম। (সূরা লুকমান- আয়াত ১৩)
অর্থাৎ, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা মারাত্মক রকমের জুলুম। সৃষ্টি কর্তৃক স্রষ্টার উপর জুলুম। এরচে' খারাপ কাজ আর কী হতে পারে!
শিরক গোনাহ আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১১৬ নম্বর আয়াতে কারিমায় ইরশাদ হয়েছে,

ان اللّه لا یغفر ان یشرك به و یغفر ما دون ذالك لمن یشاء۔

Indeed, Allah does not forgive association with Him, but He forgives what is less than that for whom He wills.

অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করা গোনাহ মাফ করবেন না। এছাড়া অন্য সব গোনাহ ইচ্ছে করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন। (সূরা নিসা- আয়াত ১১৬)

বোঝা গেল শিরক আল্লাহ কখনো মাফ করবেন না। মুশরিকরা আল্লাহর একক মালিকানা অস্বীকার করার কারণে কাফের। তারা আল্লাহকে বিশ্বজগতের একক মালিক বা অধিপতি হিসেবে বিশ্বাস করে না।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কাফেরদের ভয়ানক পরিণতির কথা উল্লেখ করে কোরআনের সূরা যুমারের ৭১ ও ৭২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন,

و سیق الذین کفروا الی جهنّم زمرا۔ حتی اذا جاٶها فتحت ابوابها و قال لهم خزنتها الم یاتکم رسل منکم یتلون علیکم آیات ربّکم و ینذرونکم لقاء یومکم هذا۔ قالوا بلی و لکن حقّت کلمة العذاب علی الکافرین۔ قیل ادخلوا ابواب جهنّم خالدین فیها فباس مثوی المتکبرین۔

And those who disbelieved will be driven to Hell in groups until, when they reach it, its gates are opened and its keepers will say, Did there not come to you messengers from yourselves, reciting to you the verses of your Lord and warning you of the meeting of this Day of yours? They will say, Yes, but the word of punishment has come into effect upon the disbelievers. it will be said, Enter the gates of Hell to abide eternally therein, and wretched is the residence of the arrogant.

আর কাফেরদেরকে দলবদ্ধভাবে জাহান্নামের পথে টেনে হেঁচড়ে নেয়া হবে, এভাবে যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে তখন তার দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং সেখানকার প্রহরীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদেরই মধ্য থেকে এমন সব রসূলগণ আগমন করেননি, যারা তোমাদেরকে তোমাদের রবের আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনাতেন এবং আজকের এই সাক্ষাতের ব্যাপারে সতর্ক করতেন। তারা বলবে হ্যাঁ অবশ্যই! তবে কাফেরদের উপর শাস্তি অবধারিত হয়ে গেছে। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ করো। সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। সুতরাং অহংকারীদের ঠিকানা কতই না মন্দ! (সূরা যুমার- আয়াত ৭১-৭২)

তাহলে বোঝা গেল, মুশরিকরা কখনো মুক্তি পাবে না। তারা চিরকাল জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। কখনো তাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে না। এরা বেঈমান, নিমকহারাম, অকৃতজ্ঞ। এদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা আরাফের ১৭৯ নম্বর আয়াতে কারিমায় ইরশাদ করেন,

ولقد ذرانا لجهنّم کثیرا من الجنّ و الانس لهم قلوب لا یفقهون بها و لهم اعین لا یبصرون بها ولهم اٰذان لا یسمعون بها أولاءك کالانعام بل هم اضلّ۔ أولاءك هم الغافلون۔

And We have certainly created for Hell many of the jinn and mankind. They have hearts with which they do not understand, they have eyes with which they do not see, and they have ears with which they do not hear. Those are like livestock; rather, they are more astray. It is they who are the heedless.

অর্থাৎ, এদেরকে আল্লাহ অন্তর দিয়েছেন কিন্তু এরা এদের অন্তরদৃষ্টি দিয়ে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না। এদেরকে আল্লাহ চর্ম চক্ষু দিয়েছেন কিন্তু এরা এদের দিব্য চক্ষু দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্ব অবলোকন করার চেষ্টা করে না। এদেরকে আল্লাহ কর্ণশক্তি দিয়েছেন কিন্তু এরা এদের কর্ণমূলে আল্লাহর অস্তিত্বের কথামালা প্রবিষ্ট করে না। এরা হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তু। বরং তারচে'ও নিকৃষ্ট এরা। এরাই চরম উদাসীন। (সূরা আরাফ- আয়াত ১৭৯)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া'লা আমাদের সকলকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন...

বন্ধুরা, আসুন এবার আমরা নাস্তিক সম্পর্কে আলোচনা করি।
যারা স্রষ্টাতে বিশ্বাসী নয় তারাই নাস্তিক। যারা দাবি করে পৃথিবী একা একা অটোমেটিক্যালি তৈরী হয়েছে, এর পিছনে কোন স্রষ্টার হাত নেই, তারাই হচ্ছে নাস্তিক।
এরা নিরীশ্বরবাদী; যারা পরকাল ও ঈশ্বর মানে না এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। এরা নিজেদেরকে মুক্ত চিন্তার অধিকারী বলে মনে করে। কিন্তু তারা জানে না যে, তারাই পৃথিবীর সবচে' বড় বোকা।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে সর্ব প্রথম পৃথিবীতে নাস্তিক্যবাদ বা Atheism (এইথিজম) এর সূচনা হয়। এরপর একবিংশ শদাব্দীতে কয়েকজন নাস্তিক গবেষক ও সাংবাদিক নাস্তিক্যবাদের একটি নতুন ধারা প্রবর্তন করেন, যাকে ‘‘নব নাস্তিক্যবাদ’’ বা ‘‘New Atheism’’ বলা হয়।
২০০৪ সালে নাস্তিক স্যাম হ্যারিসের ‘‘দি ইন্ড অব ফেইথ: রিলিজন টেরর, এন্ড দ্যা ফিউচার অব রিজন'' বইয়ের মাধ্যমে নব নাস্তিক্যবাদের যাত্রা শুরু হয় বলে ধারনা করেন প্রখ্যাত নাস্তিক ভিক্টর স্টেংগার। নব নাস্তিকরা ধর্মের সরাসরি বিরোধিতা করে। তারা ধর্মকে প্রমাণবিহীন বিশ্বাস বলে আখ্যায়িত করে এবং এ ধরনের বিশ্বাসকে সমাজে যে ধরনের মর্যাদা দেয়া হয় সেটার বিরোধিতা করে। (এটা তাদের তথাকথিত মুক্ত মনার কালো থাবা বৈ কিছু নয়।) বর্তমান বিশ্বের ২.৩% মানুষ নিজেকে নাস্তিক বলে পরিচয় দিয়ে থাকে।
(তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)

নাস্তিকদের দাবি হচ্ছে যা দেখি না তা মানি না। বিশ্বাস করি না। এই দাবি মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয়। এটা অজ্ঞতার পরিচয়। এই সমস্ত নির্বোধ মুক্ত মনাদের কথার জবাব অভিনব পদ্ধতিতে দিয়েছেন সাম্প্রতিককালের আলোচিত লেখক আরিফ আজাদ ভাই, তাঁর লেখা বই ‘‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’’ এর ৬ নম্বর পৃষ্ঠার ‘‘একজন অবিশ্বাসীর বিশ্বাস’’ শিরোনামের কলামে।

আরিফ আজাদ ও সাজিদের কথোপকথনের কিছু অংশ লেখার সুবিধার্থে সামান্য পরিবর্তনসহ তুলে ধরা হল।
বিশ্বাস দু ধরনের। একটা হলো প্রমাণের ভিত্তিতে বিশ্বাস। আরেকটা, শর্তারোপে বিশ্বাস বলা যায়। অন্যটি হলো প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস। নাস্তিকদের ভাষায় যাকে অন্ধ বিশ্বাস বলা হয়ে থাকে। প্রমাণের ভিত্তিতে যে বিশ্বাস, সেটা মূলত বিশ্বাসের মধ্যে পড়ে না। পড়লেও খুবই ট্যাম্পোরারি। এই বিশ্বাস এতই দূর্বল যে, এটা হঠাৎ হঠাৎ পাল্টায়। যেমন ধরুন, সূর্য আর পৃথিবীকে নিয়ে মানুষের আদিম কৌতূহল রয়েছে। আমরা আদিকাল থেকেই জানতে চাইতাম যে, সূর্য আর পৃথিবীর রহস্যটা আসলে কি। সেই সুবাধে, পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা নানান সময়ে নানান তত্ব আমাদের সামনে এনেছেন। সূর্য নিয়ে প্রথম ধারণা দিয়েছিল গ্রীক জ্যোতির বিজ্ঞানী টলেমি। সে বলেছিল সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে। তার এই থিওরি পৃথিবীতে পুরো ২৫০ বছর টিকে ছিল। ভাবা যায়! ২৫০ বছর পৃথিবীর মানুষ, যাদের মধ্যে আবার বড় বড় বিজ্ঞানী, ডাক্টার ইঞ্জিনিয়ার ছিল, তারাও বিশ্বাস করতো যে, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে। এই ২৫০ বছরে যারা মারা গেছে, তারা এই বিশ্বাস নিয়েই মারা গেছে যে, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। অথচ এটা ছিল একটা ভুল থিওরি যা টলেমি তার বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণ করে অনেক সুনাম-সুখ্যাতি কুঁড়িয়েছিল। ২৫০ বছর পর নিকোলাস কোপারনিকাস এসে টলেমির থিওরিকে ভুল প্রমাণ করে। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই কোপারনিকাসও মস্তবড় ভুল করে গেছে যা আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করে দিয়েছে। সে তার বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণ করেছিল যে, সূর্য নয় বরং পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে। তার এই মতবাদ ৫০ বছর পর্যন্ত পৃথিবীতে স্থায়িত্ব লাভ করেছিল। অথচ আজকের বিজ্ঞান বলছে যে, সূর্যও স্থির নয় বরং সদা ঘুর্ণয়মান। অর্থাৎ, সূর্য বা পৃথিবী কোনটাই স্থির নয় বরং আপন আপন কক্ষপথে প্রতিনিয়ত ঘুরছে। তার মানে কি? মানে হচ্ছে, বিজ্ঞানের এটাই নিয়ম যে, এটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হবে। এখানে শেষ বা ফাইনাল বলতে কিছুই নেই। একটা বৈজ্ঞানিক থিওরি ২ সেকেন্ডও টিকে না, আবার আরেকটা ২৫০ বছরও টিকে যায়। তাই দলিল বা প্রমাণ দিয়ে যা বিশ্বাস করা হয় তাকে আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস বলি না। এটাকে বড়জোর চুক্তি বলতে পারি। চুক্তিটা এরকম, - তোমায় ততোক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাস করবো যতক্ষণ তোমার চেয়ে অথেনটিক কিছু আমাদের সামনে না আসে।

আরিফ আজাদ ভাই সাজিদকে বললেন :
- তুইও অনেক কিছু না দেখেই বিশ্বাস করিস সাজিদ! এবং এটা নিয়ে তোর মধ্যে কখনো কোন প্রশ্নও জাগে নি। এবং আজকে এই আলোচনা না হলে কখনো এমন প্রশ্ন তোর মনের মধ্যে আসতোও না।
- কি প্রশ্ন! সেটা বল।
- সাজিদ, তোর থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কিছু মনে করিস না। তর্কের খাতিরে বলতে হচ্ছে তাই বলছি।
- হু বল।
- আচ্ছা, তোর বাবা-মা'র মিলনেই যে তোর জন্ম হয়েছে, সেটা তুই দেখেছিলি? বা এই মুহূর্তে কোন এভিডেন্স আছে তোর কাছে? হতে পারে, তোর মা তোর বাবা ছাড়া অন্য কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক করেছে তোর জন্মের আগে। হতে পারে, তুই অই ব্যক্তিরই জৈব ক্রিয়ার ফল। তুই এটা দেখিসনি, কিন্তু কোনদিনও কি তুই তোর মা'কে এটা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলি? করিস নি। সেই ছোট বেলা থেকে যাকে বাবা হিসেবে দেখে আসছিস, এখনো তাকে বাবা ডাকছিস। যাকে ভাই হিসেবে জেনে আসছিস তাকে ভাই। বোনকে বোন। তুই না দেখেই এসবে বিশ্বাস করিস কিনা? অবশ্যই করিস। কখনো জানতে চেয়েছিস তুই এখন যাকে বাবা বলে ডাকছিস, তুই আসলে তার ঔরসজাত কিনা? জানতে চাসনি। বিশ্বাস করে গেছিস। এখনো করছিস। ভবিষ্যতেও করবি। স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসটাও ঠিক এমনই রে। এটা নিয়ে প্রশ্ন করা যায় না। সন্দেহ করা যায় না। এটাকে হৃদয়ের গভীরে ধারণ করতে হয়। এটার নামই বিশ্বাস। আরিফের মুখে এই কথাগুলো শুনে সাজিদ সেই রাতে ঘুমোতেই পারেনি। এপিঠ-ওপিঠ করেই সারা রাত কাটিয়েছে।

পরের দিন এই সাজিদ ফজরের নামাজে আরিফ আজাদ ভাইয়ের পাশেই দাঁড়িয়েছিল নামাজ আদায় করতে। (সুবহানআল্লাহ)

চলুন, আস্তিক ও নাস্তিকের মধ্যকার কয়েকটা মজার কথোপকথন পড়ে আসি।

১.
আস্তিক: আচ্ছা বলেন তো টিভি-র আবিষ্কারক কে?
নাস্তিক: এইটা জানেন না! জন বেয়ার্ড।
আস্তিক: আপনি নিজে কি জন বেয়ার্ডকে টিভি তৈরি করতে দেখেছেন?
নাস্তিক: না তো!
আস্তিক: তাহলে জন বেয়ার্ড-ই যে টিভি-র আবিষ্কারক তা আপনি নিশ্চিত হলেন কী করে? জন বেয়ার্ড এর সময় আরো মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ ছিল। তাছাড়া এলিয়েন বা ভুতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না! তার মানে আপনি স্রেফ শোনা কথায় কিংবা বই-পুস্তকে পড়ে জন বেয়ার্ডকে টিভি-র আবিষ্কারক হিসেবে বিশ্বাস করেন, যদিও তাকে স্বচক্ষে টিভি তৈরি করতে দেখেননি!
নাস্তিক: হুম…!

২.
আস্তিক: এসিডের মধ্যে হাত দিলে যে হাত পুড়ে যায়, তা কি আপনি নিজে পরীক্ষা করে দেখেছেন?
নাস্তিক: না তো! এইটা আবার কেমন প্রশ্ন!
আস্তিক: তাহলে আপনি নিজে কী করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, এসিডে হাত পোড়ে?
নাস্তিক: ওয়েল, লোকে যে বলে! তাছাড়া বই-পুস্তকেও লিখা আছে!
আস্তিক: বাহ্! আপনি নিজে পরীক্ষা না করে লোকের কিংবা বই-পুস্তকের কথায় বিশ্বাস করেন! এমনও তো হতে পারে যে, এসিডে আর দশ জনের হাত পুড়লেও আপনার হাত পুড়বে না! আপনি এ বিষয়ে অন্ধ বিশ্বাসী না থেকে নিজে পরীক্ষা করে দেখেন না কেন, যে পরীক্ষা খুব সহজেই করা সম্ভব?
নাস্তিক: বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর!

৩.
আস্তিক: আসিফ নামে কোনো এক নাস্তিকের দাবি অনুযায়ী সে নাকি দেবতাদেরকে স্বচক্ষে দেখেনি। অথচ সনাতন ধর্মের দেবতাদেরকে সবাই স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছেন। তার এই দাবি কি তাহলে সত্য?
নাস্তিক: না, তার এই দাবি সত্য নয়।
আস্তিক: তার অসত্য দাবির বিরুদ্ধে আপনারা প্রতিবাদ করেন না কেন? সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরাই বা কিছু বলে না কেন?
নাস্তিক: ওয়েল, আমরা একই গোয়ালের প্রজাতি কি-না! আমরা সত্য-মিথ্যাকে পরোয়া করি না!
(সূত্রঃ সদালাপ)

এসব কথোপকথনের মাধ্যমেও প্রমাণিত হয় যে, এই নাস্তিকরা কত বোকা, কত নির্বোধ। কত অজ্ঞ এরা। তবে এরা মূলত বোকা বা অজ্ঞ নয় বরং এরা এই শান্ত পৃথিবীতে অশান্তির আগুন দাউদাউ করে জ্বালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত মানুষরূপী শয়তান। এবং এরা আল্লাহ প্রদত্ত সত্য ধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে সদা তৎপর। কারণ, এরা জানে, যদি পৃথিবীতে ইসলাম না থাকে, তাহলে মানুষকে ভ্রষ্ট করা এক সেকেন্ডেরও ব্যাপার নয়। তাই এরা বারবার ইসলামের উপরই আঘাত হানছে। কোরআন ও বিশ্ব নবী মোহাম্মদ সাঃ কে বিশ্ব মানবতার সামনে কলুষিত করার পায়তারা করে যাচ্ছে। কিন্তু কস্মিনকালেও তারা তাদের এই অভিশপ্ত অপচেষ্টায় সফল হতে পারবে না। চূড়ান্ত ব্যর্থ বলেই প্রমাণিত হবে শতবার। কারণ, মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা আস সফের ৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেনঃ

یریدون لیطفیوا نور اللّه بافواههم و اللّه متمّ نوره ولو کره المشرکون

They want to extinguish the light of Allah with their mouths, but Allah will perfect His light, although the disbelievers dislike it.

অর্থাৎ, তারা (বেঈমান) চায় ফুঁ দিয়ে আল্লাহর আলো (ইসলাম) নিভিয়ে দিবে। তবে আল্লাহ তাঁর নূরকে (ইসলাম) পূর্ণতা দান করবেন। যদিও মুশরিকরা এটা অপছন্দ করে।(এটার বিরোধিতা করে) (সূরা আস সফ- আয়াত ৮)

সুতরাং যতই তারা এই ভ্রান্ত মতবাদ, নাস্তিক্যবাদের প্রচার করুক না কেন এটা কখনো টিকে থাকতে পারবে না। কারণ, অসত্য কখনো টিকে থাকতে পারে না। আন্দাজ ও অনুমাণ নির্ভর জ্ঞান দিয়ে কখনো প্রভূত কল্যাণ সাধণ করা সম্ভব হয় না। তাই, যত কিছুই তারা করুক না কেন, বিশ্ব মানবতা এটাকে ময়লা স্তুপে ছুড়ে ফেলে দেবেই দেবে।

দেখুন, আমাদের ঈমাম, ঈমাম আবু হানিফা রহঃ কিভাবে একজন নাস্তিককে বিতর্ক অনুষ্ঠানে হারিয়ে দিয়েছিলেন এবং নাস্তিক ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে আশ্রয় নিয়ে নিজেকে ধন্য করেছিল।
চলুন তাহলে, সেই ঐতিহাসিক বিতর্ক অনুষ্ঠানটি শুনে আসি।

বাহাস অনুষ্ঠানের মাঠ কানায় কানায় ভরে উঠেছে। নেতৃস্থানীয় লোকেরা মঞ্চে আসন গ্রহণ করেছে। নাস্তিক মুখপাত্র অনেক আগেই বাহাস মঞ্চে এসে গেছে, আসেনি শুধু ঈমাম আবু হানিফা। সবাই তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু তাঁর কোন খবর নেই। এদিকে নাস্তিক মুখপাত্র বলতে লাগলো ঈমাম ভয়ে আসছেন না। তিনি যুক্তিতর্কে হেরে যাবেন, তাই হয়ত দূরে কোথাও পালিয়ে গেছেন।

নির্ধারিত সময় প্রায় শেষ। নাস্তিক মুখপাত্রের চোখে-মুখে বিজয়ের হাসি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। হঠাৎ দেখা গেল ধীর পায়ে বাহাস মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসছেন ঈমাম আবু হানিফা। উপস্থিত জনতা যেন প্রাণ ফিরে পেল। তাঁর আগমনে নারায়ে তাকবির ধ্বনি ভেসে আসতে লাগলো মাঠের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। নাস্তিক মুখপাত্র ঈমামকে বলল, ঈমাম! আপনার তো কোন সময়ানুবর্তীতা নেই। আসার কথা কখন আর আসলেন কখন। আপনার সাথে কী আর বাহাস করবো!

ঈমাম বললেন, আগে আপনি শুনুন কেন আমার আসতে এত দেরি হলো। আমি বাড়ি থেকে সময়মতই বেরিয়েছিলাম বাহাস অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে। কিন্তু পথিমধ্যে ঘটলো এক আজব কান্ড। এখানে আসতে হলে আমায় একটি নদী পার হতে হয়। কিন্তু নদী পারাপারের কোন ব্যবস্থা ছিল না। আমি নদীর পারে একটি গাছের নিচে বসে ছিলাম। কিন্তু কী আশ্চর্য ব্যাপার! কোন ঝড় নাই ঝাপটা নাই হঠাৎ গাছটি শেকড়সহ মাটি থেকে উপড়ে পড়ে গেল। এরপর দেখলাম, কোত্থেকে যেন একটি কড়াত আসলো। কড়াত এসে গাছটিকে ফালি-ফালি করে কেটে তক্তা বানিয়ে ফেলল। দেখলাম, তক্তাগুলো অটোমেটিক্যালি একটি ডিঙ্গি নৌকার আকার ধারণ করলো। এরপর কোত্থেকে যেন পেরেগ আসলো। পেরেগ এসে তক্তার জয়েন্টে জয়েন্টে ফিটিং হয়ে গেল এবং একটি হাতুড়ি এসে পেরেগের মাথায় বারি মেরে মেরে পেরেগগুলো জয়েন্টে জয়েন্টে ঢুকিয়ে দিল। এভাবে করে আমার সামনে একটি সুন্দর ডিঙ্গি নৌকা তৈরি হয়ে গেল। এরপর ধপাস করে নৌকাটি নদীতে পড়ে গেল আর আমি লাফ দিয়ে নৌকায় উঠে পড়লাম। কিছু সময় পূর্বে নৌকাটি আমায় এপারে এনে পৌঁছে দিয়েছে। তাই আসতে আমার দেরি হয়েছে।

নাস্তিক মুখপাত্র ঈমাম আবু হানিফাকে বলল, ঈমাম! আপনার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে নাকি? কোন ঝড় নাই ঝাপটা নাই জলজ্যান্ত একটি গাছ শেকড়সহ উপড়ে পড়বে এটা তো কস্মিনকালেও হতে পারে না। আবার মিস্ত্রী ছাড়াই একটি নৌকার অস্তিত্ব, এটাও কখনো ভাবা যায় না। এরকম অলিক কথাবার্তা বলা বন্ধ করুন। শুধু আমি নই, অন্যরাও আপনাকে পাগল বলবে।

ঈমাম আবু হানিফা বললেন, জনাব! আপনার যুক্তিমতে যদি ঝড়-ঝাপটা ছাড়া একটি গাছ মাটি থেকে উপড়ে পড়তে না পারে এবং মিস্ত্রী ছাড়া একটি নৌকাও তৈরি হতে না পারে, তাহলে বলুন তো! এই বিশ্বজগত With Out Any Creator বা কোন প্রকার স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হলো কিভাবে? এ কথা শুনে নাস্তিক স্তম্ভিত হয়ে গেল। চুপচাপ কোন সাড়াশব্দ নেই। মাথা নিচু করে কী যেন ভাবতে লাগলো নাস্তিক। কিছুক্ষণ পরে নাস্তিক মাথা উঠিয়ে ঈমাম আবু হানিফার দিকে তাকিয়ে বলল, ঈমাম! বুঝতে পেরেছি। আপনি তো আমায় একটি রূপক উদাহরণ দিয়েছেন মাত্র। এটা তো বাস্তব কোন ঘটনা নয়। আমার দিব্য চক্ষু খোলা ছিল, কিন্তু সেই চক্ষু দিয়ে আমি আমার স্রষ্টার অস্তিত্ব কখনো উপলব্ধি করতে পারিনি। কিন্তু আজ আপনি আমার অন্তরচক্ষু উন্মেলিত করে দিয়েছেন, উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, খুলে দিয়েছেন। এখন আমি আমার অন্তরচক্ষু দিয়ে আমার স্রষ্টার অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারছি। ঈমাম! বলুন কী পড়লে পড়ে আমি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে পারবো। ঈমাম আজম, ঈমাম আবু হানিফা বললেন, আপনি পড়ুন কালিমা; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।

বন্ধুরা! সত্যিই সত্যিই আমরা যদি অন্তরচক্ষু দিয়ে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব উপলব্ধি করি তাহলে নাস্তিক্যবাদ বা Atheism পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মিটে যাবে। আমরা মানুষেরা পাবো সত্য ও শান্তির ধর্ম ইসলামের উজ্জ্বল পথ।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে নাস্তিক্যবাদ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.