নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"তোমার হৃদয়ে থাকিবো আমি, ভাসিবো চোখের পলকে।তোমাকে ভুলে যাইবো আমি, তবু আমাকে দেবোনা ভুলিতে !! \" -সাইফুল্যাহ আমিন

সাইফুল্যাহ আমিন

সাইফুল্যাহ আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"লং ট্যুর" একটা স্বপ্নের নাম !!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩২

ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার কিছুদিন পরেই "লং ট্যুর" নামক একটা শব্দ শুনি। ধীরে ধীরে জানতে পারি লং ট্যুর টা হচ্ছে ফাইনাল ইয়ারের ভাইদের মিড ভেকেশনে প্রায় ৮-১০ দিন দেশের বা বাহিরের দেশের বিভিন্ন পর্যটন এরিয়া গুলোতে ভ্রমণ। যদিও আমার জানা নেই অন্যান্য ভার্সিটি গুলোতে ভার্সিটি থেকেই এমন নির্ধারিত ট্যুর আছে কিনা। সেক্ষেত্রে বলতেই হবে, নিঃসন্দেহে এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের এবং সেই সাথে আনন্দের।

সেই প্রথম বর্ষ থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু, কবে আসবে ফাইনাল ইয়ার, কবে লং ট্যুর নামক স্বপ্নে হারাবো ব্যাচের বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে। সময় ঘনিয়ে আসে, ফাস্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার এমনি করে শেষ হতে হতে কখন যে ফাইনাল ইয়ারের সেকেন্ড সেমিষ্টার ও চলে এলো টেরই পেলাম না, অথচ মনে হলো এইতো সেদিন চান্স পেলাম ভার্সিটিতে, এইতো সেদিন চান্স পাওয়ার খবর বাবাকে জানাতে গিয়ে তাকে কাঁদিয়েই ফেলেছি।

ফাইনাল ইয়ার এলো, শেষ সেমিষ্টার এলো, কিন্তু মিড ভেকেশান আসেনা, অবশেষে সেটাও আসলো। অনেক প্লান, অনেক ঝল্পনা, কল্পনা, কোন বন্ধু যাবে, কোন বন্ধু যাবেনা, কার কিসের ব্যাস্ততা, সাথে কোন কোন স্যার গাইড টিচার হিসেবে যাবে? কোন স্যার গেলে মজা বেশি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি.

সবকিছু ঠিক হলো, ভিসি স্যার থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্ট অনুমতি দিলো, গাইড টিচার ঠিক হলো, আমাদের ও শপিং শেষ হলো, প্লানিং হয়ে গেলো। এবার যাত্রার পালা, পহেলা নভেম্বরের সন্ধায় ডিপার্টমেন্ট হেড স্যারের সাক্ষাতে আমাদের বাস ক্যাম্পাসের গেইট থেকে গাবতলী, গাবতলী থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে হাইয়ওয়ে রোডের গাড়ি ঠিক করাই ছিলো, যথারীতি ২ তারিখ দুপুর ২ টায় আমরা খাগড়াছড়ি, পথে জ্যাম আর একটা জামেলায় পড়াতে এতো দেরি, নয়তো ৭ টায় আমরা খাগড়াছড়ি পৌছানোর কথা। খাগড়াছড়ি শহরে লান্স শেষে আমরা জিপ ভাড়া করে যাত্রা শুরু করলাম সাজেকের উদ্দেশ্য।

২ তারিখ বিকালে ট্রিপে সন্ধায় সাজেকে পৌঁছে যাই, স্বপ্নচূড়া রিসোর্টে আমাদের বুকিং নেওয়াই ছিলো। সবাই ফ্রেশ হয়ে ৮ টার দিকে হ্যালিফেডে যাই, সেখানে আমরা বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে গান গাওয়ায় মেতে উঠি। ছেলেরা গান করবে, যে বর্ণ দিয়ে গান শেষ হবে মেয়েরা সেই বর্ণ দিয়ে শুরু করে অন্য গান গাইবে, এমনি করে ছেলেরাও। যারা শেষ অক্ষর দিয়ে গান গাইতে পারবেনা, সেই পক্ষ বিপক্ষদের গানের সাথে নাচতে হবে। যদিও আমরা ছেলেরা একবার হেরে যাই এবং নাচতে হয়, তবুও বিষয়টা ছিলো বেশ মজার এবং উপভোগ্য !!

তারপর রাত ৯ টায় এসে আমরা সবাই স্বপ্নচূড়া রিসোর্টের নির্ধারিত হোটেল থেকেই স্যাজেক ভ্যালির বিখ্যাত 'ব্যাম্বো চিকেন' আলুর ভর্তা, ডাল এবং সাদা ভাত দিয়েই ডিনার শেষ করি, ব্যাম্বো চিকেনটা ছিলো খুব টেস্টি, অনেক ভালো লেগেছে আমাদের সবার কাছে, ভুলে যাওয়ার মতো না। এরপরে রিসোর্টে গিয়ে যে যার মতো ঘুমানোর কথা, কিন্তু এমন জায়গায়তো কেউ ঘুমাতে আসেনা। কেউ কেউ রাতে ঘুমাতে পারেনি, মেতেছিলো আড্ডায়, মাস্তিতে। কেউ কেউ একটু ঘুমিয়ে নিয়েছে, অপেক্ষায় ছিলাম মেঘগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখবো বলে, ছুঁয়ে দেখবো বলে, খুব ভোরে ঘুম ভাঙতেই জানালা খুলে দেখি মেঘ আমার রুমে ডুকছে, আমি হারিয়ে যাচ্ছি মেঘের দেশে। এরপরে সবাই মিলে রেডি হয়ে জিপে উঠে যাই। তারপর আর কি? ও হ্যাঁ,সাজেকের বর্ণনাতো রয়েই গেলো !!

আসলে "সাজেক ভ্যালি" জায়গাটা সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়ার মতো লেখক বা মানুষ আমি নই। তবে কাছ থেকে দেখার পরে মনে হলো জায়গাটা স্বপ্নের মতো সুন্দর। বর্ণমালার সাহায্যে সাজেকের সৌন্দর্য বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার মত অধমের নেই। সাহিত্যিক কিংবা কবি হলে হয়তো উপযুক্ত উপমা ব্যবহার করতে পারতেন।

সাজেকের প্রবেশমুখে টিকিট কাটতে হয়। প্রবেশমুখ থেকে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত প্রায় দুই কি.মি. রাস্তা। আর রাস্তা গুলো সব পাহাড়ে ঘেরা, মনে হবে এইতো উটছেন আবার এইতো নামছেন। কখনো কখনো মনে হবে উটতেই আছেন, সাজেকে উটতে সর্বশেষ চার কিঃ মিঃ তো শুধু উপরের দিকেই উঠা লাগে। বুকের ভেতর দূরু দূরু, অনেকক্ষন উঠার পর গাড়ির ব্রেক থেমে যায়, দক্ষ ড্রাইভার আবার নিজ দক্ষতায় গাড়ি চালায়। থেমে যাওয়ার পর মনে হয়, এই বুঝি গাড়ি উলটে গেলো, "এ যেনো টাকা দিয়ে টেনশন কেনা", কিন্তু যত যাই বলুন না কেন, মনে শাহস রাখল এগুলা কিছুইনা, জাস্ট এনজয় এন্ড মাস্তি। তার আগে দুই কি.মি. এর অর্ধেক রাস্তার দু পাশে স্থানীয়দের বাড়ীঘর আর বাকী অর্ধেকে আর্মি, বিজিবি ক্যাম্প, হেলিপ্যাড, বিভিন্ন রিসোর্ট ও অন্যান্য স্থাপনা। পুরো এলাকাটাকে সেনা ও বিজিবি সদস্য এবং স্থানীয়রা মিলে প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে সুন্দর করার চেষ্টা করেছে এবং করে চলেছে।

আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি যে এই সৌন্দর্যের মধ্যে একটি শৈল্পিক ছোঁয়াও খুঁজে পাওয়া যায়। এর সাথে ভৌগলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্থানীয়দের সমাজব্যবস্থা আর ভালোমনুষী মিলে জায়গাটাকে কল্পনার বিভ্রম বলে মনে হয়। আসলেই বিভ্রম, যেটা না দেখলে বুঝতেই পারবেন না।

সাজেকের প্রবেশমুখেই হাতের ডানপাশে শিব মন্দির। মন্দিরের শেষপ্রান্তে মেঘ মাচাং কটেজ। সকালে প্রায় কটেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় নীচের পাহাড়গুলো সাদা মেঘের ভীড়ে হারিয়ে গেছে, জানালা খুলে দিলে মেঘগুলো আপনার রিসোর্টে কক্ষে ডুকে আপনাকে ছুঁয়ে দিয়ে যায়, সাদা মেঘগুলো পাহাড় গুলোকে ক্যাঙ্গারুর বাচ্চার মতো করে নিজের পেটে ডুকিয়ে ফেলেছে।

মনে দূর থেকে দূরে উঁচু উঁচু কতগুলো পাহাড়ের চূড়া দ্বীপের মতন করে তাদের অস্তিত্ত্ব জনান দেয়, আসলেই তাই। সেগুলো ইন্ডিয়ার মিজোরামের পাহাড়। মাঝখানে মেঘের সমুদ্র। যেন এইকূলে প্রিয় আর ঐকূলে প্রেয়সী , দুজনার দেখা হবে কাটাতারের ফাঁকে, কিন্তু ইতড় মেঘগুলো সেটাও হতে দেয়না, প্রেয়সীকে দেখা যায়না, এ যেনো স্বর্গরাজ্যে এসেও তাকে ছুঁতে না পারার ব্যার্থ চেষ্টা।

মূলত ত্রিপুরা আর লুসাই জাতির বসবাস সাজেকে। যদিও সংখ্যায় কম তবুও শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লুসাইরা ত্রিপুরাদের থেকে বেশ এগিয়ে। আসলে মিজোরামের লুসাই পাহাড়কে কেন্দ্র করেই লুসাই জাতিগোষ্ঠীর এগিয়ে চলা। দেশভাগ আর রাজনীতির মারপ্যাচে পড়ে কিছু লুসাই জনগন তাদের তীর্থ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বাংলাদেশে আটকে গেছে।

১৯৪৭ সালের কোন এক সকালে ঘুম থেকে উঠে বাংলাদেশে বসবাসকারী লুসাইরা জানতে পারে পাশের পাহাড়টি অন্য একটি দেশ, সেখোনে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা আরো কিসব লাগবে। অথচ সেখানেই তাদের তীর্থ, আত্মীয় স্বজন, সম্পত্তি, স্মৃতি সবকিছু। কি এক আজব রেখা দিয়ে দেশের সীমারেখা টেনে দিলেন রেডক্লীফ মশাই !! পাহাড়, ঝরনা, বৃক্ষরাজি, পাখি, প্রেম, নদী, স্মৃতি, ঐতিহ্য, সঙ্গীত এদের কি সীমারেখা আর কাঁটাতার দিয়ে আটকানো সম্ভব ?? অথচ আমরা বোকার দল যুগ যুগ ধরে সেই চেষ্টা করেই যাচ্ছি...
(লেখার মধ্যে সাজেক নিয়ে কিছু কিছু তথ্য সংগৃহীত)
#SajekValley
#LongTour2K18
#CSE_Dept_DUET
#Dated: 03-11-2018

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫

তারেক ফাহিম বলেছেন: বেশ উপভোগ করছেন ছবি দেখে মনে হচ্ছে।

বর্ণনা ভালো হয়েছে।

যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও একসাথে তিনজেনের দেখা মিলেনা :(

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:১৯

সাইফুল্যাহ আমিন বলেছেন: জায়গাটা সত্যিই অসাধারণ, এক কথায় মনোমুগ্ধকর।
মেঘের রাজ্য, মেঘের উড়াউড়ি।
যদি সম্ভব হয় যাবেন এবং পারলে একান্ত প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে যাবেন।

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩

ডার্ক ম্যান বলেছেন: আপনার সময় যে বেশ কেটেছে , সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২০

সাইফুল্যাহ আমিন বলেছেন: জায়গাটা সত্যিই অসাধারণ, এক কথায় মনোমুগ্ধকর।
মেঘের রাজ্য, মেঘের উড়াউড়ি।
যদি সম্ভব হয় যাবেন এবং পারলে একান্ত প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে যাবেন।

৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: গুড।
ঘুরে এবড়ানো ভালো।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২০

সাইফুল্যাহ আমিন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
জায়গাটা সত্যিই অসাধারণ, এক কথায় মনোমুগ্ধকর।
মেঘের রাজ্য, মেঘের উড়াউড়ি।
যদি সম্ভব হয় যাবেন এবং পারলে একান্ত প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে যাবেন।

৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৩

ভুয়া মফিজ বলেছেন: বেশ আনন্দ-ফুর্তি করেছেন বোঝা যাচ্ছে। ছবিগুলোও সুন্দর, তবে শেষ ছবি দেখে থমকালাম। না, আপনার চেহারা দেখে না। ''সাজেক রিজোট'' দেখে। নামের ফলকে এমন ভুল মানায় না, বিশেষ করে সেনাবাহিনী প্রধান যেটা উদ্বোধন করেছেন সেটার ফলকে! :(

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২৬

সাইফুল্যাহ আমিন বলেছেন: আসলে ভাই ইংলিশ শব্দ বাংলায় লিখলে ভুল ধরতে কেমন খটকা লাগে। মনে করে ইংলিশের "Result" শব্দটাকে কিন্তু আমরা বাংলায় রেজাল্ট-ই লিখি।এই জন্য হয়তো Resort শব্দটাকে রিজোট লিখছে, নয়তো সেনাবাহিনীর মতো মানুষরা এমন ভুল ধরবেনা, এটা আমি মানতে নারাজ। তবে জায়গাটা সত্যিই অসাধারণ, এক কথায় মনোমুগ্ধকর। মেঘের রাজ্য, মেঘের উড়াউড়ি। যদি সম্ভব হয় যাবেন এবং পারলে একান্ত প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে যাবেন।

৫| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০

তারেক ফাহিম বলেছেন: যদি সম্ভব হয় যাবেন এবং পারলে একান্ত প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে যাবেন।

আগে তিনজনের দেখা মিলুক সময়, অর্থ, সুযোগ। তারপর না হয় প্রিয় :D

৬| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৪

সাইফুল্যাহ আমিন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। দোয়া রইলো,আশা পূর্ণ হোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.